হাসিনার বিরুদ্ধে মামলা
১৩ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০৮ এএম | আপডেট: ১৩ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০৮ এএম
ভারতে পালিয়ে যাওয়া শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। দুর্নীতির মাধ্যমে পূর্বাচলে প্লট বরাদ্দ নেয়ার অভিযোগে গতকাল রোববার এ মামলা দায়ের করে সংস্থাটি। মামলায় শেখ হাসিনা ছাড়াও তার পরিবারের সদস্যসহ ১৬ জনকে আসামি করা হয়েছে। অন্য আসামিরা হলেনÑ হাসিনা তনয়া সায়মা ওয়াজেদ (পুতুল), জাতীয় গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের তৎকালীন সচিব মো. শহীদ উল্যাহ খন্দকার, অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) কাজী ওয়াছি উদ্দিন, প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম সরকার, সিনিয়র সহকারী সচিব পূরবী গোলদার, রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যান মো. আনিছুর রহমান মিঞা, সাবেক সদস্য (এস্টেট ও ভূমি) মোহাম্মদ খুরশীদ আলম, সদস্য (প্রশাসন ও অর্থ) কবির আল আসাদ, সদস্য (উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণ) তন্ময় দাস, সদস্য (এস্টেট ও ভূমি) মো. নূরুল ইসলাম, তৎকালীন সদস্য (পরিকল্পনা) মোহাম্মদ নাসির উদ্দীন, তৎকালীন সদস্য মেজর (ইঞ্জিনিয়ার) সামসুদ্দীন আহমদ চৌধুরী (অব.), পরিচালক (এস্টেট ও ভূমি-২) শেখ শাহিনুল ইসলাম, উপ-পরিচালক মো. হাফিজুর রহমান ও হাবিবুর রহমান।
রক্তাক্ত গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ক্ষমতা থেকে উৎখাত হয়ে গত ৫ আগস্ট ভারত পালিয়ে যাওয়ার পর শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে এটি প্রথম দুর্নীতি মামলা। গতকাল রোববার মামলার এ তথ্য জানান সংস্থার মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) মো. আক্তার হোসেন। সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ, জাতীয় গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ ১৬ জনকে এ মামলায় আসামি করা হয়েছে। ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে পূর্বাচলে ৬০ কাঠা প্লট বরাদ্দ নেয়ার প্রমাণ মেলায় দুদক এ মামলা করে। মামলার বাদি দুদকের সহকারী পরিচালক আফনান জান্নাত কেয়া।
অপরাধের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দিয়ে এজাহারে বলা হয়, রাজনৈতিক বিবেচনায় সরকারের বিশেষ ক্ষমতাবলে শেখ হাসিনা ক্ষমতার অপব্যবহার করে অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের যোগসাজশে নিজের ও পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়, কন্যা সায়মা ওয়াজেদ পুতুল, বোন শেখ রেহানা, রেহানার পুত্র রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি ও মেয়ে আজমিনা সিদ্দিক রূপান্তরিত নামে পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পের ২৭ সেক্টরের কূটনৈতিক জোনের ২০৩ নম্বর রোড থেকে ১০ কাঠা করে মোট ৬০ কাঠার ছয়টি প্লট বরাদ্দের কথা বলা হয়েছে। এদিন শুধু শেখ হাসিনার মেয়ে পুতুলের নামে ১০ কাঠা প্লট বরাদ্দে অনিয়মের অভিযোগে মামলা দায়ের করা হয়েছে। অনুসন্ধানে বাকিদের বিরুদ্ধেও প্লট বরাদ্দে প্রমাণ পাওয়া গেছে বলে জানা গেছে। শিগগিরই বাকিদের বিরুদ্ধে পর্যায়ক্রমে মামলা দায়ের হতে পারে।
এফআইআরে বলা হয়, সরকারের সর্বোচ্চ পদাধিকারী ও পাবলিক সার্ভেন্ট হিসেবে বহাল থাকাকালে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার উপর অর্পিত ক্ষমতার অপব্যবহার করে বরাদ্দ পাওয়ার যোগ্য না হওয়া সত্ত্বেও অসৎ উদ্দেশ্যে পূর্বাচল আবাসন প্রকল্পের ২৭ নং সেক্টরের ২০৩ নং রাস্তার প্লট নং ১৭ সায়মা ওয়াজেদের নামে বরাদ্দ নিয়ে এবং প্লটের বাস্তব দখলসহ রেজিস্ট্রিয়াল প্লট গ্রহণ করেছেন। আসামিদের বিরুদ্ধে দ-বিধির ১৮৬০ এর ১৬১/১৬৩/১৬৪/৪০৯/১০৯ ধারাসহ দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন, ১৯৪৭ এর ৫(২) ধারা প্রয়োগ করা হয়েছে।
অভিযোগে বলা হয়, রাজনৈতিক বিবেচনায় সরকারের বিশেষ ক্ষমতাবলে শেখ হাসিনা ক্ষমতার অপব্যবহার করে অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের যোগসাজশে নিজের ও পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়, মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল, বোন শেখ রেহানা, বোনের ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি ও কন্যা আজমিনা সিদ্দিক রূপান্তির নামে পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পের ২৭ সেক্টরের কূটনৈতিক জোনের ২০০৩ নম্বর রোড থেকে ১০ কাঠা করে মোট ৬০ কাঠার ছয়টি প্লট বরাদ্দ নিয়েছেন। দেড় দশক দেশ শাসনের পর ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়ে ভারতে আশ্রয় নেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। এরপর থেকে সেখানেই রয়েছেন তিনি।
দুদক গত ২২ ডিসেম্বর শেখ হাসিনা এবং তার পুত্র সজীব ওয়াজেদের বিরুদ্ধে ওঠা ৩০০ মিলিয়ন ডলার (৩০ হাজার কোটি টাকা) বিদেশে পাচারের অভিযোগ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয়। তার আগে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা পরিবারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন প্রকল্পের ৮০ হাজার কোটি টাকা দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধানে পাঁচ সদস্যের একটি অনুসন্ধান দল গঠন করেছে। একই দলকে নতুন করে আসা ৩০০ মিলিয়ন ডলার পাচারের অভিযোগটি অনুসন্ধানের নির্দেশ দেয় কমিশন। সবগুলোই অনুসন্ধান পর্যায়ে রয়েছে বলে জানা গেছে।
শেখ হাসিনাসহ তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে রূপপুর পরমাণু বিদ্যুৎ প্রকল্পে কয়েক বিলিয়ন ডলার দুর্নীতির অভিযোগকে ‘সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন’ বলে দাবি করেছেন তার পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়, যিনি যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান করছেন। একই সঙ্গে এই ‘দুর্নীতি’র প্রমাণ দিতে দুদকের প্রতি চ্যালেঞ্জ জানিয়েছেন তিনি।
জুলাই অভ্যুত্থান হত্যা-নিপীড়নের ঘটনাগুলোর জন্য আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার বিচার করতে আন্দোলনকারীরা তাকে ফেরত আনার জোর দাবি জানাচ্ছেন। গত ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের পর দেশের বিভিন্ন স্থানে ছাত্র-জনতার হত্যা, গুম ও গণহত্যার দায়ে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে, এখনো হচ্ছে।
জুলাই-আগস্টে হত্যা, গণহত্যাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে এবং গত দেড় দশকে আওয়ামী লীগের শাসনামলে গুম-খুনের অভিযোগে দুই মামলায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল থেকে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেফতার পরোয়ানা জারি করেছে।
এরই মধ্যে শেখ হাসিনার পাসপোর্ট বাতিল করেছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। তাকে ফেরত পাঠাতে বেশ কিছুদিন কথাবার্তার পর আনুষ্ঠানিকভাবে দিল্লিতে চিঠি পাঠিয়েছে সরকার। নরেন্দ্র মোদি সরকার চিঠি পাওয়ার কথা স্বীকার করলেও কোনো সিদ্ধান্ত জানায়নি।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
জুলাই বিপ্লবে আহত ১৪ জনকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানো হচ্ছে : পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়
আইএমএফসহ আন্তর্জাতিক সংস্থার শীর্ষ পদে এখনো ভারতীয়রা
ভারতে নির্যাতনের ভিডিও বাংলাদেশের সা¤প্রতিক ঘটনা হিসেবে প্রচার
দাদাবাড়ি বেড়াতে এসে খুন হলো শিশু সাফওয়ান, আটক ২
নরসিংদীতে ভ্রাম্যমাণ আদালতকে লক্ষ্য করে বালুদস্যুদের গুলিবর্ষণ
নরসিংদীতে রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির মানববন্ধন
রাঙামাটিতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ
আখাউড়ায় মর্টার সেল উদ্ধার
রাজবাড়ীতে আ.লীগ দুই নেতা কারাগারে
কমলগঞ্জে ৮২ শতক সরকারি খাস জমি উদ্ধার
প্রিমিয়ার ভার্সিটি ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান হলেন চসিক মেয়র
কুষ্টিয়ায় প্লাইউড বোর্ড কারখানায় আগুন
বিএনপি নেতা কায়কোবাদের দারুল উলূম হাটহাজারীসহ বিভিন্ন মাদরাসা পরিদর্শন
মাদারীপুরে পদ্মা-আড়িয়াল খাঁ নদীতে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন অব্যাহত
গফরগাঁও সাবেক এমপি বাবেল গোলন্দাজ দম্পতির বিরুদ্ধে দুদকের ২ মামলা
ময়মনসিংহে পুলিশ রেঞ্জ কমান্ড অ্যান্ড কন্ট্রোল সেন্টারের উদ্বোধন
নওফেল পরিবারের ২৫টি ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ
নিজ বাড়িতে ক্ষতিগ্রস্ত বন্ধুদের থাকার ব্যবস্থা করেছেন অ্যাঞ্জেলিনা জোলি
যুবদল নেতার বিরুদ্ধে মিথ্যা অপপ্রচারের অভিযোগ
ট্রাভেল ব্যান্ড হ্যালির ধুমকেতুর দুই গান