খাল উদ্ধারে পদক্ষেপ
১৮ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০৪ এএম | আপডেট: ১৮ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০৪ এএম
রাজধানীতে বৃষ্টি হলেই পুরো ঢাকায় ব্যাপক পানিবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। নাগরিকদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়। অপর্যাপ্ত নিষ্কাশনব্যবস্থার কারণে পানি নামতে দেরি হয়। কোনো কোনো এলাকায় পরদিন পানিবদ্ধতা দেখা যায়।
কোনো শহরের মোট আয়তনের ১২ শতাংশের মতো জলাধার থাকতে হয়। ঢাকায় আছে মাত্র ২ শতাংশ। তাও ভরাট হওয়ার পথে। রাজধানীর অনেক খালের এখন কোনো অস্তিত্বই নেই। যেগুলো আছে সেগুলোও দখল, দূষণ ও ভরাট হয়ে অবস্থা এমন হয়েছে যে অতিবৃষ্টির পানি সেগুলো দিয়ে নামতে পারে না।
নাগরিক অসচেতনতা ও অনিয়ন্ত্রিত পলিথিন দূষণের কারণে ভূগর্ভস্থ ড্রেনের মুখগুলো পলিথিন ও আবর্জনায় ঢেকে যায়। ভূগর্ভস্থ ড্রেনে পানি নামতে পারে না কিংবা নামতে দেরি হয়। আবার যত্রতত্র নির্মাণসামগ্রী বা বালু-মাটি এমনভাবে রাখা হয় সেগুলো বৃষ্টিতে ধুয়ে ড্রেনে গিয়ে পড়ে এবং ড্রেন ভরাট হয়ে যায়। দুই সিটি করপোরেশন বলছে, খালগুলো পরিষ্কার করা হলেও কিছুদিনের মধ্যেই ময়লা-আবর্জনা ফেলে সেগুলো ঢেকে দেওয়া হয়। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, নিকট অতীতে ক্ষমতায় থাকা ব্যক্তিদের অদূরদর্শিতা, অপরিকল্পনা, ভুল পরিকল্পনা এবং স্বার্থপরতা ঢাকা মহানগরের এমন দুরবস্থার জন্য অনেকটাই দায়ী। অনেকগুলো খাল ভরাট করে রাস্তা বানানো হয়েছে। ভাবা হয়নি নগরের পানি নামবে কিভাবে? কিছু এলাকায় খাল ভরাট করে বিপুল ব্যয়ে বক্স কালভার্ট বানানো হয়েছে। বানানো শেষ হওয়ার আগেই সেগুলো ময়লায় ঠেসে গেছে। সেগুলো দিয়েও এখন পানি নামছে না। বরং বক্স কালভার্টের বাইরে থাকা খালের অংশ দখলদারদের কবলে চলে গেছে। আর লোভী মানুষজন খাল ভরাট করে বহুতল ভবনও বানিয়েছে। কোনো রকমে অস্তিত্ব ধরে রেখেছে এমন অনেক খালের অবস্থা এতটাই শোচনীয় যে ৫০ ফুট প্রস্থের খাল ১০-১৫ ফুটে এসে দাঁড়িয়েছে। আবার অনেক জায়গায় এমন অপরিকল্পিতভাবে ঘরবাড়ি তৈরি হয়েছে যে সেসব জায়গায় পানি নামার মতো নালা তৈরি করারও সুযোগ নেই। ঢাকার খালগুলো দখল-দূষণ ও অরিকল্পিত নিয়ন্ত্রণের জন্য উদ্যোগ হাতে নিতে যাচ্ছে সরকার।
ঢাকার ১৯টি খাল উদ্ধারের পরিকল্পনা চূড়ান্ত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। তিনি বলেন, আমরা ঢাকার খালগুলো উদ্ধারের পরিকল্পনাতে ১৯টি খালকে বেছে নিয়ে ১৯টির কর্মপরিকল্পনা চূড়ান্ত করে ফেলেছি বাজেটসহ। এটা হয়ত এ মাসের শেষের দিকে উপস্থাপন করবো। আর দুটি কমিটি কাজ করছে ঢাকার চারপাশের চারটি নদীকে দখল-দূষণমুক্ত করতে কি কি কাজ বাকি আছে, সেটা নিয়ে। দখল অনেকটাই মুক্ত হয়েছে, দূষণমুক্তি করতে আমরা কি কি কাজ করতে পারি, ফেব্রুয়ারির আগে এই রিপোর্ট চূড়ান্ত হবে না। জিপিএস দিয়ে আমাদের প্রত্যেকটি পয়েন্ট দেখতে হচ্ছে, শিল্পকারখানা শনাক্তকরণ করতে হচ্ছে। পুরো শহরের স্যুয়ারেজ গিয়ে পড়ছে নদীগুলোতে। ঢাকার খালগুলো ব্যাপারে আমরা দ্রুতই কাজে নামতে পারবো। বাকিগুলোর ব্যাপারে আমরা উন্নয়ন সহযোগীদের সঙ্গে কথাবার্তা চালিয়ে যাচ্ছি।
জানা যায়, ঢাকার দুই মেয়র, কাউন্সিলর ও অনেক কর্মকর্তারা এখন কাজে নেই। ঢাকার খাল উদ্ধারে নেই কোনো কার্যক্রম। খাল উদ্ধারে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের কর্মকান্ড থাকলেও বেশকিছুদিন ধরে এসব কর্মসূচি যেন স্থবির হয়ে পড়েছে। দুই সিটি করপোরেশনের কোনো এলাকাতেই নেই খাল উদ্ধার কর্মসূচি। এমনকি খাল উদ্ধারের জন্য সিটি করপোরেশনের কোনো কর্মী বা কর্মকর্তাদের এখন আর দেখা যাচ্ছে না। সিটি করপোরেশন কর্তৃক খাল উদ্ধার একটি চলমান কর্মসূচি বলা হলেও সেই চলমান কর্মসূচি এখন স্থবির। খাল উদ্ধার বা খালের ময়লা-আবর্জনা পরিস্কার কোনটাই এখন হচ্ছে না। দুই সিটি করপোরেশনের এই নিরবতার কারণে ভূমিদস্যু সুধিাবাদি ও প্রভাবশালীরা এই সুযোগ কাজে লাগাতে পারে। খালের জায়গা আবার দখলে নিতে পারে। উদ্ধারকৃত খাল আবার দখল হয়ে যেতে পারে। ময়লা-আবর্জনা ফেলার কারণে পরিস্কার করা খাল আবার ময়লার ভাগাড়ে পরিনত হতে পারে। তাই সিটি করপোরেশনের দায়িত্বরত কর্মীদের খাল উদ্ধার ও ময়লা-আবর্জনা পরিস্কারের কাজ চলমান রাখার দাবি নগরবাসীর।
দুই সিটি করপোরেশন এলাকায় খালের সংখ্যা ৪৭। আবার রিভার অ্যান্ড ডেলটা রিসার্চ সেন্টারের হিসাব অনুযায়ী, ঢাকা শহরে ৫৬টি খাল। এর মধ্যে দখল হয়ে গেছে ২৬টি। রামচন্দ্রপুর খালের অংশ আবার দখলের পথে। কাজলা খাল, মাতুয়াইল কবরস্থান খাল, মৃধা বাড়ি খাল, শ্যামপুর খালের ২৪ ফুট রাস্তার সম্মুখ প্রান্ত থেকে মোহাম্মদী ব্রিজ পর্যন্ত পরিষ্কার করা হয়। শ্যামপুর খালের ২৪ ফুট রাস্তার সামনের প্রান্ত থেকে বটতলা পর্যন্ত, শাজাহানপুর ঝিল থেকে বাসাবো কদমতলা শুকনগর খাল, মান্ডা খালের শুকনগর থেকে শাপলা ব্রিজ হয়ে আমিন মোহাম্মদ ব্রিজ পর্যন্ত, স্টাফ কোয়ার্টার খাল, সুখনগর-নন্দীপাড়া-ত্রিমোহনী (জিরানি) খালে এবং জিয়া সরণি খালে বিশেষভাবে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন কার্যক্রম চালানো হয়। কিন্তু আবারও মানুষের ফেলা ময়লা-আবর্জনায় পরিপূর্ণ হয়ে গেছে। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের সুতিভোলা খাল স্থানীয় বাসিন্দাদের নির্বিচারে ফেলা ময়লা-আবর্জনা ও কচুরিপানার নিচে এই খালে যে পানি আছে সেটাই বোঝা মুশকিল। পুরো খালজুড়ে শুধুই ময়লা-আবর্জনা আর কচুরিপানা। ডিএনসিসির উদ্যোগকে তোয়াক্কা না করে দখল-দূষণের উৎসবে ফিরে গেছে স্থানীয়রা।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের সভাপতি ড. আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, ঢাকা শহরের খালগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ ও ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব ঢাকা ওয়াসার কাছ থেকে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের হাতে হস্তান্তর হয়েছে। নগর পরিকল্পনার দৃষ্টিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। ঢাকা শহরের খালগুলোর মালিকানা নগরীর বিভিন্ন কর্তৃপক্ষের হাতে ন্যস্ত আছে। ঢাকা মহানগরের বৃদ্ধি ও সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে খালগুলোকে কেন্দ্র করে যে নগর পরিকল্পনার সম্ভাবনা ছিল, সেই সম্ভাবনাকে নষ্ট করে দিয়ে অব্যাহত দখল আর দূষণের মাধ্যমে খাল ও জলাশয়গুলোকে আমরা উন্নয়নের নামে ক্রমাগত ধ্বংস করেছি। ফলে একদিকে যেমন নগরীর পরিবেশ-প্রতিবেশ ধ্বংস হয়েছে, ঠিক তেমনি নগরায়ণের চাপে শহরের খালগুলো ক্রমান্বয়ে দখলের শিকার হয়েছে।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
খুশদীলের অলরাউন্ড নৈপুণ্যে রংপুরের আটে আট
বন্ধ হয়ে যাচ্ছে অনেক দেশের ভিসা
মেডিকেল কলেজে শিক্ষক বাড়ানোর কথা ভাবছে সরকার
ছাত্রদলের ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ কর্মসূচি আজ
গাজার স্বাস্থ্য ব্যবস্থা পুনর্গঠনে ১০ বিলিয়ন ডলার প্রয়োজন
অন্তর্বর্তী সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোর দিকে তাকিয়ে ইইউ
ভারতের উদ্বেগের মধ্যে হাসিনা পরবর্তী বাংলাদেশের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হচ্ছে পাকিস্তান
সান্ত¡না খুঁজে পাচ্ছেন না, দুই দেশে কলঙ্কিত টিউলিপ
দুর্নীতির মামলায় ইমরান খান ও বুশরা বিবির কারাদণ্ড
বিদেশে টাকা পাচারের রাজনীতি মানুষ চায় না : পীর সাহেব চরমোনাই
শেখ পরিবারের রক্তের জন্যই দুর্নীতিতে জড়িয়েছেন টিউলিপ -রিজভী
নামাজ মু’মিনের জন্য মেরাজস্বরূপ
ক্রেডিট কার্ডে বিদেশে বাংলাদেশিদের লেনদেন কমেছে
স্বনির্ভর অর্থনীতির পথে দেশ
বগুড়ার বিমানবন্দর দ্রুত চালুর দাবি
আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে বাংলাদেশকে মানবাধিকার লংঘন বন্ধ করতে হবে : হিউম্যান রাইটস ওয়াচ
হাজারীবাগের ট্যানারির গোডাউনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড
জুলাই বিপ্লব ঘোষণাপত্র দেওয়া জরুরি : নুরুল হক নুর
গণঅভ্যুত্থানের ইশতেহারে বিএনপির ভূমিকা লিখতে হবে : জয়নুল আবদিন
নির্বাচনে রাজনৈতিক নেতাদের পরিবেশ রক্ষায় প্রতিশ্রুতি দিতে হবে