বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শে দেশ শাসন করছি : আল জাজিরাকে প্রধানমন্ত্রী
১২ মার্চ ২০২৩, ০১:১৮ পিএম | আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২৩, ১১:৫৮ পিএম
আল জাজিরাকে প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন, ২০০৯ সালে সরকার গঠনের পর থেকেই গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রেখেছেন তিনি। আর এ কারণেই দেশ এমন অভূতপূর্ব উন্নতি করেছে। তিনি বলেছেন, ‘দেখুন ২০০৫-২০০৬ সালে আমাদের আমাদের দারিদ্রতার লেভেল ছিল ৪১ শতাংশ। সেটি কমিয়ে আমরা ২০ শতাংশে নিয়ে এসেছি। আমাদের জিডিপি খুবই নিচে ছিল। কিন্তু এটি এখন বেড়েছে। করোনা মহামারির আগে আমাদের জিডিপি দাঁড়িয়েছিল ৮ দশমিক ১ শতাংশে। কিন্তু মহামারির কারণে এটি কমে এসেছে।’
এছাড়া প্রধানমন্ত্রীকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিষয়ে প্রশ্ন করা হয়। তাকে জিজ্ঞেস করা হয় বিরোধী দলগুলো তত্ত্বাবধায়ক সরকার ফিরিয়ে আনার যে দাবি করছে সেটি তিনি মেনে নেবেন কিনা। এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন। ‘দেখুন তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে আমাদের খুবই বাজে অভিজ্ঞতা আছে।‘ এরপর বিএনপির ব্যাপারে কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেছেন, ‘বিএনপি যখন ২০০১ সালে ক্ষমতায় ছিল তখন সারা দেশে অসংখ্য মানুষকে হত্যা করা হয়েছে, মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়েছে। তারা এমনকি আমাকে প্রকাশ্যে হত্যা করতে চেয়েছে। আমার দলের নেত্রী আইভি রহমানসহ ২২ জনকে হত্যা করা হয়েছে। কিন্তু এগুলোর কোনো বিচার ও তদন্ত হয়নি। তাদের দুর্নীতি শুধু দেশ নয়, বিদেশি দেশগুলোও জানত। এরপর শুরু হলো জঙ্গিবাদ। বিএনপির আমলে মাত্র এক ঘণ্টার ব্যবধানে ৫০০ জায়গায় বোমা হামলা হয়েছিল। তারা আসলে বাংলাদেশকে একটি ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করতে চেয়েছিল। আর তাদের অব্যবস্থাপনার কারণে দেশে জরুরি অবস্থা জারি হয়েছিল। আমি আপনাকে একটা কথা বলতে পারি আমি মানুষের ভোটাধিকার নিশ্চিত করেছি।’
প্রধানমন্ত্রীকে আরও প্রশ্ন করা হয়, সামনে যে জাতীয় নির্বাচন আসছে সেটি সুষ্ঠু হবে কিনা? এর জবাবে তিনি বলেছেন, ‘অবশ্যই। ১০০ ভাগ নিশ্চিত। আগের দুটি নির্বাচনে তারা কারচুপির অভিযোগ তুলেছিল। কিন্তু তারা তা প্রমাণ করতে পারেনি। নির্বাচন স্বচ্ছ ছিল এবং মানুষ আমার দলকে ভোট দিয়েছে। বিএনপি ২০১৪ সালের নির্বাচনে অংশ নেয়নি। তাদের নেতা কে? তাদের নেতাদের দুর্নীতি, অস্ত্র চোরাচালান এবং গ্রেনেড হামলার দায়ে শাস্তি হয়েছে।’
জাতিসংঘের আয়োজিত স্বল্পোন্নত দেশগুলোর সম্মেলনে যোগ দিতে মার্চের প্রথম সপ্তাহে কাতারে যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই সম্মেলনের ফাঁকে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার সাংবাদিক নিক ক্লার্ক প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎকার নেন। শনিবার (১১ মার্চ) সাক্ষাৎকারটি প্রচার করেছে সংবাদমাধ্যমটি। সেখানে রোাহিঙ্গা সমস্যাসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন তিনি।
সাক্ষাৎকারটির শেষ অংশে প্রধানমন্ত্রী জানান তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শে দেশ শাসন করছেন। আর বঙ্গবন্ধুর দোয়া থাকার কারণেই ২০০৯ সাল থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত দেশের সাধারণ মানুষদের সেবা দিয়ে যেতে পারছেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোহিঙ্গাদের সম্পর্কে বলেছেন, ‘যখন রোহিঙ্গাদের ওপর নিপীড়ন শুরু হয়, রোহিঙ্গারা নির্যাতন, হত্যা ও ধর্ষণের শিকার হচ্ছিল…তাদের প্রতি আমাদের মায়া কাজ করে। এরপর আমরা আমাদের সীমান্ত খুলে দেই…তাদের আসতে দেই। তাছাড়া মানবিক দিক চিন্তা করে আমরা তাদের বাসস্থান এবং চিকিৎসা দেই।’
প্রধানমন্ত্রী সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, পাশাপাশি মিয়ানমার সরকারের সঙ্গেও কথা বলতে থাকে বাংলাদেশ। তবে, ‘দুঃখজনকভাবে তারা ইতিবাচকভাবে সাড়া দেয়নি। তাদের অবশ্যই নিজ দেশে ফিরে যেতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেছেন, ‘আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় মিয়ানমারের ওপর চাপ দিচ্ছে, কিন্তু এটি খুবই কঠিন। আমরা রোহিঙ্গাদের জন্য আলাদা থাকার ব্যবস্থা করেছি। ভাসান চর থাকার জন্য খুবই ভালো জায়গা। বাচ্চাদের জন্য আমরা খুবই সুন্দর বাড়ি এবং অসাধারণ সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা করেছি।’
এরপর কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সাম্প্রতিক আগুন নিয়ে কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। যে ঘটনায় প্রায় ১২ হাজার রোহিঙ্গা বাসস্থান হারিয়েছে। তিনি বলেছেন, ‘আসলে কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের অবস্থা খুব ভালো নয়। রোহিঙ্গারা একে-অপরের সঙ্গে মারামারি করছে। তারা মাদক, মানব ও অস্ত্র পাচারের মতো বিভিন্ন অপরাধ কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েছে।’
এছাড়া রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নজর ইউক্রেন এবং ইউক্রেনীয় শরণার্থীদের দিকে চলে গেছে বলেও অভিযোগ করেছেন তিনি।
সাংবাদিক নিক ক্লার্ক প্রধানমন্ত্রীকে জিজ্ঞেস করেন রোহিঙ্গাদের কাজ করার ব্যবস্থা করে দেবেন কিনা। এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন, রোহিঙ্গাদের অনেক সুবিধা দিলেও এটি তিনি করতে পারবেন না। কারণ সেখানকার স্থানীয় বাংলাদেশিরাই ভালো নেই।
প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎকার গ্রহণকারী নিক ক্লাক স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশের অভূতপূর্ব উন্নতি নিয়েও কথা বলেন। তিনি জানান, করোনার আগে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ৭ শতাংশ যা প্রায় চীনের সমান ছিল। বর্তমানে ঢাকার জিডিপির পরিমাণ ভারতের চেয়ে বেশি। এছাড়া বাংলাদেশে পাওয়ার প্ল্যান্ট এবং মেট্রো চলার কথা উল্লেখ করেছেন তিনি।
উন্নতির ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘শুনুন। আসলে বাংলাদেশে… আমাদের সম্পদ সীমাবদ্ধ। কিন্তু আমি একটি কথা বলতে পারি… আমাদের মানুষ খুবই ভালো। কিন্তু এটি নির্ভর করে নীতির ওপর। আমরা যা করেছি সেটি হলো একটি পরিকল্পনা হাতে নিয়ে নিয়েছি। স্বল্পমেয়াদী, মাঝারি এবং দীর্ঘমেয়াদি পকিরল্পনা।’
বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাত এবং এর ওপর নির্ভরতার কথা বলেছেন নিক ক্লাক। তিনি জিজ্ঞেস করেছেন, তৈরি পোশাক খাত ছাড়া বাংলাদেশ আরও কোনো কিছুর ওপর জোর দিচ্ছে কিনা।
এর জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘আমাদের প্রধান প্রাধান্য বিষয় ছিল, আমাদের সম্পদের মাধ্যমে খাদ্য বাড়ানো। আমাদের লক্ষ্য ছিল খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। এরপর শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা...চাকরির ব্যবস্থা করা। আমি যা করেছি তা হলো সবকিছু বেসরকারি খাতে উন্মুক্ত করে দিয়েছি। হ্যাঁ সরকারি খাতও আছে। কিন্তু আমি প্রায় সবকিছু বেসরকারি খাতে উন্মুক্ত করে দিয়েছি। আমরা আমাদের মানুষদের উদ্বুদ্ধ করেছি, বিদেশিদের, সঙ্গে নিজ দেশের বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছি। আমরা ২০০৮ সালের নির্বাচনের ইস্তেহারে বলেছিলাম, বাংলাদেশ হবে ডিজিটাল বাংলাদেশ। মানে তথ্য ও প্রযুক্তি খাতে গুরুত্ব দেব। এখন পুরো বাংলাদেশে ওয়াইফাই সুবিধা রয়েছে। সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে মানুষের কাছে ব্রডব্যান্ড পৌঁছে দিয়েছি। এখন আমরা নিজেরা বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু করেছি। আমি আপনাকে বলতে পারি এখন প্রত্যেকটি বাড়িতে মানুষ বিদ্যুৎ পাচ্ছে।’
এরপর বাংলাদেশের বৈদশিক মুদ্রার রিজার্ভ, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের কাছ থেকে ৫ বিলিয়ন ডলার ঋণ সহায়তা এবং জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধির ব্যাপারে প্রশ্ন করা হয়। এর জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘শুনুন আমাদের মুদ্রা নীতি সময় উপযোগী এবং বাস্তবিক। আমি যেটি বলেছি, প্রথমে আপনার জনগণকে শিক্ষিত করে গড়ে তুলুন। এরপর চাকরির সুযোগ তৈরি করুন। তরুণরা নিজেরাই তাদের ভবিষ্যৎ গড়ে তুলবে। আমরা স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করেছি, ইন্টারনেট সেবা দিয়েছি। এগুলো পুরো দেশে চাকরি তৈরি করবে।’
‘আর তৈরি পোশাক ছাড়াও অন্য রপ্তানিযোগ্য পণ্য তৈরির ব্যাপারে আমরা ধীরে ধীরে উন্নতি করছি। আমরা খাদ্যের ওপর জোর দিচ্ছি। এছাড়া প্রযুক্তি খাতে জোর দিচ্ছি। এই প্রযুক্তিই আমাদের পরবর্তী রপ্তানির প্রধান বিষয় হবে।’
প্রধানমন্ত্রীকে পশ্চিমাদের বিভিন্ন অভিযোগ ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের ব্যাপারেও প্রশ্ন করা হয়। তিনি জানান, যখনই এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটে, তখনই সরকার ব্যবস্থা নেয়। তাছাড়া ইচ্ছাকৃতভাবেও এসব করে সরকারকে বেকায়দায় ফেলার চেষ্টা করা হয় বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
এনার্জিপ্যাকের বার্ষিক সাধারণ সভায় ব্যবসায়িক প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনার ওপর গুরুত্বারোপ
আমার খাবার কি ফর্টিফায়েড?
হাসিনা পরিবারের নামে ১৩ বিশ্ববিদ্যালয়, ইউজিসি তাকিয়ে আছে সরকারের দিকে
ব্র্যাক ব্যাংকের রেমিটেন্স অ্যাওয়ার্ড অর্জন
দিনাজপুর জেলা শিক্ষা অফিসারের বিদায়ী সংবর্ধনা
নরসিংদীর শিবপুরে প্লাস্টিক কারখানা আগুনে পুড়ে ছাই
ডিসেম্বরে রেমিট্যান্স শূন্য যে ১০ ব্যাংকে
বিএনপি নির্বাচন ছাড়া ক্ষমতায় আসতে চায় না: আব্দুস সালাম
সরকারের আশ্বাসে শাহবাগ থেকে সরে গেলেন বিএসএমএমইউ ট্রেইনি চিকিৎসকরা
সাকাকে হারিয়ে চিন্তিত আর্সেনাল কোচ
৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারের প্রস্তাব জমা হবে : বদিউল আলম মজুমদার
সিনিয়র সচিব ড. নাসিমুল গনিকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বদলী
মানিকগঞ্জের ঘিওরে ছাত্রদল নেতা লাভলু হত্যাকারীদের ফাঁসির দাবিতে মানববন্ধন
বঙ্গবাজার পুড়ে যাওয়া মামলায় একজন গ্রেফতার
জনগণের প্রত্যাশা পূরণে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ধীর গতিতে চলছে: আমিনুল হক
জমকালো আয়োজনে পালিত হলো বান্দরবান সেনাবাহিনীর ৬৯ ব্রিগেডের ৪৮ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী
সাবেক মন্ত্রী কায়কোবাদের সঙ্গে তুর্কী এমপির সাক্ষাৎ
বিহারীরা কেমন আছে
ব্রাহ্মণপাড়ায় ধর্ষণের শিকার হতদরিদ্র প্রতিবন্ধী যুবতীর সন্তান প্রসব! আতংকে ভুক্তভোগী পরিবার
মোরেলগঞ্জে উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতির ১৩ তম মৃত্যুবার্ষিকী পালিত