আমরা যুদ্ধ ও সংঘাত চাই না : প্রধানমন্ত্রী

Daily Inqilab অনলাইন ডেস্ক

২৪ মার্চ ২০২৩, ০৮:৫৩ পিএম | আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২৩, ০১:১৩ পিএম

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সকল প্রকার বৈষম্য ও সাম্প্রদায়িকতামুক্ত সমতা ভিত্তিক সমাজ বিনির্মাণে দেশবাসীসহ বিশ্ববাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।


তিনি বলেন, ‘আমরা যুদ্ধ ও সংঘাত চাই না, নর-নারী-শিশু হত্যা আমাদের তীব্রভাবে ব্যথিত করে। আমরা শান্তিতে বিশ্বাস করি। টেকসই শান্তি বিরাজমান থাকলে দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত হয়। রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে আমরা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর শান্তির নীতি অনুসরণ করি।’ তিনি সকল প্রকার বৈষম্য ও সাম্প্রদায়িকতামুক্ত সমতা ভিত্তিক সমাজ বিনির্মাণে দেশবাসীসহ বিশ্ববাসীর প্রতি আহ্বান জানান।


প্রধানমন্ত্রী আগামীকাল ‘গণহত্যা দিবস’ উপলক্ষ্যে আজ দেয়া এক বাণীতে এ আহবান জানান। আগামীকাল ‘গণহত্যা দিবস’। ১৯৭১ সালের এই দিনে পাকিস্তান হানাদার বাহিনী বাংলাদেশে বিশ্বের বর্বরতম হত্যাযজ্ঞ পরিচালনা করে। অত্যন্ত দুঃখ ভারাক্রান্ত হৃদয়ে তিনি স্মরণ করেন একাত্তরের ২৫ মার্চের কালরাতে আত্মোৎসর্গকারী সকল শহীদদের, যাদের তাজা রক্তের শপথ বীর বাঙালিদের অস্ত্রধারণ করে স্বাধীনতা অর্জন না করা পর্যন্ত জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ চালিয়ে যেতে অনুপ্রাণিত করেছিল।


শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হাজার বছর ধরে শৃঙ্খলিত বাঙালি জাতিকে মুক্ত করার প্রয়াসে সারা জীবন ত্যাগ স্বীকার করেছেন। তিনি বাংলা ভাষার মর্যাদা রক্ষা করতে গিয়ে ১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ প্রথম গ্রেফতার হন এবং কারাবরণ করেন। সেই থেকে '৫২-এর ভাষা আন্দোলন, '৫৪-এর একুশ দফা, '৬২-এর আইয়ুব বিরোধী আন্দোলন, '৬৬-এর ছয় দফা, '৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানসহ সকল আন্দোলন সংগ্রামে অত্যন্ত দূরদর্শীতার সঙ্গে নেতৃত্ব প্রদান করেছেন।


তিনি ১৯৬৯ সালের ৫ ডিসেম্বর হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর মৃত্যুবার্ষিকীতে ঘোষণা করেছিলেন, 'আজ হতে পাকিস্তানের পূর্বাঞ্চলীয় এদেশটির নাম হবে পূর্ব-পাকিস্তানের পরিবর্তে শুধু মাত্র বাংলাদেশ।' তিনি মন্ত্রিত্ব ছেড়ে দলকে সুসংগঠিত ও শক্তিশালী করেছিলেন এবং স্বাধীনতা অর্জনের জন্য পুরো জাতিকে প্রস্তুত করেছিলেন। জাতির পিতার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ '৭০-এর নির্বাচনে জাতীয় পরিষদে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। কিন্তু, পাক- সামরিক জান্তা ক্ষমতা হস্তান্তরে নানা টালবাহানা শুরু করে। বৈঠকের মাধ্যমে সময় ক্ষেপণ করে তারা নিরস্ত্র বাঙালি নিধনের উদ্দেশ্যে গোপন ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়।


শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ২ মার্চ থেকে অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেন; ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণে দীর্ঘ ২৩ বছরের শাসন-শোষণ থেকে মুক্তির লক্ষ্যে সুনির্দিষ্ট রূপরেখা প্রদান করেন এবং ১৫ মার্চ থেকে ৩৫ দফা নির্দেশনা পালনের আহ্বান জানান। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের নির্দেশ সারা পূর্ব-বাংলায় অক্ষরে অক্ষরে পালিত হয়। শুধু তাই নয়, বাংলাদেশের সকল প্রশাসনিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক কর্মকান্ড তাঁর আদিষ্ট পথেই পরিচালিত হতে থাকে। বাংলাদেশে ইয়াহিয়ার শাসন সম্পূর্ণ অচল হয়ে যায়। ইয়াহিয়া-ভুট্টো বারবার সমঝোতার প্রস্তাব দিতে থাকে। কিন্তু বাংলাদেশের অবিসংবাদিত নেতা ক্ষমতার মোহ ত্যাগ করে এদেশের মুক্তিকামী মানুষের পক্ষে অটল থাকেন। ২৩শে মার্চ পাকিস্তান দিবসে সারা দেশে বাংলাদেশের মানচিত্র খচিত পতাকা উত্তোলন করা হয়।
তিনি বলেন, ২৫ মার্চ সন্ধ্যায় অসহযোগ আন্দোলনের মধ্যেই ইয়াহিয়া গোপনে ঢাকা ত্যাগ করেন। মধ্যরাতে পাকিস্তানি সৈন্যরা সাঁজোয়া ট্যাঙ্ক নিয়ে 'অপারেশন সার্চ লাইট' পরিচালনা করে ঘুমন্ত নিরস্ত্র বাঙালিদের হত্যা করতে শুরু করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, পিলখানা এবং রাজারবাগে অতর্কিতে হামলা চালিয়ে ছাত্র-শিক্ষক, বাঙালি পুলিশ ও সামরিক সদস্যদের হত্যা করতে থাকে। ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে গ্রেফতার করে। এর অব্যবহিত পূর্বেই জাতির পিতা স্বাধীনতার চূড়ান্ত ঘোষণা বার্তা লিখে যান- “ইহাই হয়তো আমার শেষ বার্তা, আজ হইতে বাংলাদেশ স্বাধীন-চূড়ান্ত বিজয় অর্জন না করা পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাও। যা প্রথমে ইপিআর এর ওয়্যারলেস এর মাধ্যমে প্রচারিত হয় এবং সঙ্গে সঙ্গে আওয়ামী লীগ ও ছাত্র লীগের নেতা-কর্মীদের মাধ্যমে এই বার্তা দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে।


প্রধানমন্ত্রী বলেন, পাকিস্তানিরা বন্দি নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব-এর ওপর অমানুষিক নির্যাতন চালায়; এমনকি তাঁকে হত্যা করার চেষ্টা করে। ১৩ জুন সাংবাদিক অ্যান্থনি মাসকারেনহাস যুক্তরাজ্যের একটি পত্রিকার প্রথম পাতায় বাঙালিদের ওপর পাকিস্তানিদের নির্মম বর্বরতার বাস্তব চিত্র নির্ভর একটি বিস্তারিত নিবন্ধ প্রকাশ করলে বাংলাদেশের পক্ষে বিশ্বজনমত সৃষ্টি ত্বরান্বিত হয়। দীর্ঘ ৯ মাস সশস্ত্র যুদ্ধে ৩০ লাখ মানুষ শহীদ হয়, ২ লাখ মা-বোন সম্ভ্রম হারায় এবং গোটা দেশ ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়। অবশেষে ১৬ ডিসেম্বর চূড়ান্ত বিজয় অর্জনের মাধ্যমে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা লাভ করে।


শেখ হাসিনা বলেন, দীর্ঘ ২১ বছর আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ জনগণের বিপুল ভোটে জয়লাভ করে সরকার গঠন করে। ১৯৯৮ সালের ৫ অক্টোবর আমরা জাতিসংঘের গণহত্যা বিরোধী কনভেনশন অনুস্বাক্ষর করি। ১৯৯৭ সালে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে শান্তির সংস্কৃতির ওপর রেজুল্যুশন গ্রহণের প্রস্তাব করি, যা ১৯৯৯ সালে গৃহীত হয়। সে অনুযায়ী জাতিসংঘ ২০০০ সালকে 'আন্তর্জাতিক শান্তির সংস্কৃতির বর্ষ এবং ২০০১-২০১০ সময়কে 'শান্তির সংস্কৃতি এবং অহিংস দশক' ঘোষণা করে।


প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা ২০০৮ সাল থেকে সবকটি নির্বাচনে জনগণের অকুণ্ঠ সমর্থন নিয়ে গত ১৪ বছরের বেশি সময় একটানা তাঁদের ভাগ্যোন্ননের জন্য কাজ করছি। এরই মধ্যে আমরা 'আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল' প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে মানবতা বিরোধী অপরাধী ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করেছি। সংবিধানে পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে জনগণের ভোটের অধিকার নিশ্চিত করেছি, ফলে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলের পথ বন্ধ হয়েছে।’


তিনি বলেন, ‘আমরা ২৫ মার্চকে 'গণহত্যা দিবস' হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করেছি। প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমারে গণহত্যা এড়াতে ভীত-সন্ত্রস্ত ১১ লাখের বেশি বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে আশ্রয় দিয়েছি। আমরা জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদ নির্মূলে 'জিরো টলারেন্স' নীতিতে কাজ করে যাচ্ছি। ইতোমধ্যেই বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত করেছি। ২০৪১ সালের বাংলাদেশ হবে “স্মার্ট বাংলাদেশ”। আমরা 'বাংলাদেশ ব-দ্বীপ পরিকল্পনা-২১০০' প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করছি: ভবিষ্যত প্রজন্ম এই পরিকল্পনাকে সময়োপযোগী করে বাস্তবায়ন করতে পারবে।


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

বিএনপির নিগৃহীত নেতাকর্মীদের তালিকা চাইলেন ওবায়দুল কাদের
কাল জামায়াতের ইফতার, বিএনপির ইফতারে নেতাদের ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য
মার্কিন প্রধান বিচারপতির সঙ্গে বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতির বৈঠক
এবার বেশি দামেই খেতে হবে আলু
প্রাথমিকের শেষ ধাপের পরীক্ষা আজ
আরও

আরও পড়ুন

'দুর্নীতির টাকায় কেনা', মঙ্গোলিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রীর ফ্ল্যাট জব্দ করতে চায় যুক্তরাষ্ট্র

'দুর্নীতির টাকায় কেনা', মঙ্গোলিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রীর ফ্ল্যাট জব্দ করতে চায় যুক্তরাষ্ট্র

লোহাগড়ায় আওয়ামীলীগ নেতাকে ইয়াবা দিয়ে ফাঁসাতে যেয়ে জিয়া চৌধুরী নামে এক যুবক গ্রেফতার

লোহাগড়ায় আওয়ামীলীগ নেতাকে ইয়াবা দিয়ে ফাঁসাতে যেয়ে জিয়া চৌধুরী নামে এক যুবক গ্রেফতার

বেনাপোলে পায়ূপথে মিলল ৬টি স্বর্ণেরবার, পাচারকারী আটক

বেনাপোলে পায়ূপথে মিলল ৬টি স্বর্ণেরবার, পাচারকারী আটক

গাজীপুরে ককটেল ফাটিয়ে স্বর্ণালংকার ও টাকা লুটের চেষ্টা

গাজীপুরে ককটেল ফাটিয়ে স্বর্ণালংকার ও টাকা লুটের চেষ্টা

বিএনপির নিগৃহীত নেতাকর্মীদের তালিকা চাইলেন ওবায়দুল কাদের

বিএনপির নিগৃহীত নেতাকর্মীদের তালিকা চাইলেন ওবায়দুল কাদের

কাল জামায়াতের ইফতার, বিএনপির ইফতারে নেতাদের ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য

কাল জামায়াতের ইফতার, বিএনপির ইফতারে নেতাদের ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য

নোয়াখালীতে ইফতার মাহফিলে যাবার পথে সড়কে ট্রাকচাপায় মৃত্যু প্রবাসীর

নোয়াখালীতে ইফতার মাহফিলে যাবার পথে সড়কে ট্রাকচাপায় মৃত্যু প্রবাসীর

ইসরায়েলে অস্ত্র বিক্রি বন্ধে ১৩০ ব্রিটিশ এমপির চিঠি

ইসরায়েলে অস্ত্র বিক্রি বন্ধে ১৩০ ব্রিটিশ এমপির চিঠি

মিরজাফরের পাশে ছিলেন রাজা কৃষ্ণচন্দ্র! পূর্বপুরুষের ‘বেঈমানি’ নিয়ে বিপাকে বিজেপি প্রার্থী

মিরজাফরের পাশে ছিলেন রাজা কৃষ্ণচন্দ্র! পূর্বপুরুষের ‘বেঈমানি’ নিয়ে বিপাকে বিজেপি প্রার্থী

কপালে ব্যান্ডেজ নিয়ে ইফতার পার্টিতে মমতা

কপালে ব্যান্ডেজ নিয়ে ইফতার পার্টিতে মমতা

মেঘনায় লঞ্চের ধাক্কায় ট্রলার ডুবে চালকের মৃত্যু

মেঘনায় লঞ্চের ধাক্কায় ট্রলার ডুবে চালকের মৃত্যু

গাজীপুরে প্যাকেজিং কারখানায় আগুন

গাজীপুরে প্যাকেজিং কারখানায় আগুন

বিএনপির সাবেক এমপি নজির হোসেন মারা গেছেন

বিএনপির সাবেক এমপি নজির হোসেন মারা গেছেন

মাগুরায় চোরাই মোটরসাইকেল ও চোরাই মালামাল উদ্ধার, ৩ চোর আটক

মাগুরায় চোরাই মোটরসাইকেল ও চোরাই মালামাল উদ্ধার, ৩ চোর আটক

মার্কিন প্রধান বিচারপতির সঙ্গে বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতির বৈঠক

মার্কিন প্রধান বিচারপতির সঙ্গে বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতির বৈঠক

গরুচোর সন্দেহে গাজীপুরে গণপিটুনিতে দুই যুবক নিহত

গরুচোর সন্দেহে গাজীপুরে গণপিটুনিতে দুই যুবক নিহত

যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্য-অস্ট্রেলিয়া ত্রিপক্ষীয় নিরাপত্তা ইস্যুতে উদ্বিগ্ন চীন

যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্য-অস্ট্রেলিয়া ত্রিপক্ষীয় নিরাপত্তা ইস্যুতে উদ্বিগ্ন চীন

এবার বেশি দামেই খেতে হবে আলু

এবার বেশি দামেই খেতে হবে আলু

এশিয়ার সবচেয়ে ধনী নারীর কংগ্রেস ছেড়ে বিজেপিতে যোগদান

এশিয়ার সবচেয়ে ধনী নারীর কংগ্রেস ছেড়ে বিজেপিতে যোগদান

সিরিয়াতে ইসরায়েলি বিমান হামলায় ৩৩ সেনা নিহত

সিরিয়াতে ইসরায়েলি বিমান হামলায় ৩৩ সেনা নিহত