গণহত্যা দিবসের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়ে সকলকে ভূমিকা রাখতে হবে : প্রেসিডেন্ট

Daily Inqilab অনলাইন ডেস্ক

২৪ মার্চ ২০২৩, ০৯:৫৪ পিএম | আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২৩, ১১:২৯ পিএম

২৫ মার্চ গণহত্যা দিবসের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়ে বিদেশে বাংলাদেশ মিশনসমূহসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে ফলপ্রসূ ভূমিকা রাখার আহ্বান জানিয়েছেন প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ।
২৫ মার্চ ‘গণহত্যা দিবস’ উপলক্ষে আজ দেয়া এক বাণীতে রাষ্ট্রপতি বলেন ১৯৭১ সালের এই দিনে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ঢাকাসহ সারাদেশে ইতিহাসের নৃশংসতম হত্যাকান্ড পরিচালনা করে। বাঙালির মুক্তি আন্দোলনকে স্তব্ধ করতে কাপুরুষের দল সেদিন নিরস্ত্র ও ঘুমন্ত বাঙালির ওপর নির্বিচারে হামলা চালায়। এ গণহত্যায় শহিদ হন ছাত্র, শিক্ষক, বুদ্ধিজীবী, বিভিন্ন বাহিনী, বিশেষ করে পুলিশ ও তৎকালীন ইপিআর সদস্যসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার অগণিত মানুষ। এ দিনটিকে গণহত্যা দিবস হিসেবে পালন বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামে ত্রিশ লাখ বাঙালির আত্মত্যাগের মহান স্বীকৃতির পাশাপাশি তৎকালীন পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর নির্মম গণহত্যার বিরুদ্ধে চরম প্রতিবাদের প্রতীক।
রাষ্ট্রপতি এ দিনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে পরম শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করে বলেন, তার নেতৃত্ব ও দিকনির্দেশনায় দীর্ঘ ন'মাস সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত হয় আমাদের মহান স্বাধীনতা। তিনি সশ্রদ্ধচিত্তে স্মরণ করেন ২৫ মার্চ কালরাতের নৃশংস হত্যাকান্ডসহ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হাতে নির্মম গণহত্যার শিকার সকল শহিদকে এবং জাতীয় চার নেতা, বীর মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক-সমর্থকসহ দেশের জনগণকে, যাঁদের অসামান্য অবদান ও আত্মত্যাগের বিনিময়ে অর্জন হয়েছে স্বাধীনতা।
তিনি বলেন, ১৯৭০ সালের ৭ ডিসেম্বর তৎকালীন অবিভক্ত পাকিস্তানে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সে নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। বঙ্গবন্ধুকে সরকার গঠনে আহ্বান জানানোর পরিবর্তে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান ১৯৭১ সালের ১ মার্চ জাতীয় পরিষদ অধিবেশন অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত ঘোষণা করেন। পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী সেই নির্বাচনে বিজয়ী শেখ মুজিবের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরে টালবাহানা শুরু করে। এর প্রতিবাদে সমগ্র পূর্ব পাকিস্তানে অসহযোগ আন্দোলন শুরু হয়। ইয়াহিয়া খান বঙ্গবন্ধুর সাথে আলোচনায় বসলেও বাঙালি জাতিকে চিরতরে স্তব্ধ করে দিতে পর্দার অন্তরালে গণহত্যার পরিকল্পনা করতে থাকে, যা বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয় বালুচিস্তানের কসাই খ্যাত জেনারেল টিক্কা খানকে।
রাষ্ট্রপতি বলেন, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ অত্যাধুনিক অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে তৎকালীন পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী নিরস্ত্র বাঙালির ওপর নির্বিচারে গণহত্যা চালায়। ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামে অভিযানটি পরিচালনার মাধ্যমে তারা স্বাধীনতাকামী ছাত্রজনতার প্রতিরোধকে স্তব্ধ করে দিতে চেয়েছিল। এর ব্যাপ্তি ছিল ঢাকাসহ সারাদেশ। হায়েনার দল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস, রাজারবাগ পুলিশ লাইনস, পিলখানাসহ (বর্তমানে বিজিবি সদর দপ্তর) যশোর, খুলনা, রাজশাহী, রংপুর, সৈয়দপুর, কুমিল্লা, সিলেট, চট্টগ্রামে একযোগে গণহত্যা চালায়। বিশ্বের সকল গণমাধ্যমেই গুরুত্বের সাথে স্থান পায় এ গণহত্যার খবর। ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তার আগেই তিনি স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে যান, যার পথ ধরে শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ।
তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধকালীন ন’মাসে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের এদেশীয় দোসরদের নৃশংস হত্যাকান্ডের শিকার হন ত্রিশ লাখ মানুষ। হত্যা-নিপীড়নের ভয়াবহতায় এক কোটি বাঙালি আশ্রয় নিয়েছিল প্রতিবেশী দেশ ভারতে। একাত্তরের বীভৎস গণহত্যা শুধু বাংলাদেশের নয়, বিশ্বমানবতার ইতিহাসেও একটি কালো অধ্যায়। এমন গণহত্যা আর কোথাও যাতে না ঘটে, গণহত্যা দিবস পালনের মাধ্যমে সে দাবিই বিশ্বব্যাপী প্রতিফলিত হবে।
সকল বাধা পেরিয়ে মুক্তিযুদ্ধের মন্ত্রে উজ্জীবিত হয়ে বাংলাদেশ আজ এগিয়ে চলেছে উন্নতি আর সমৃদ্ধির পথে উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, বাংলাদেশ ইতোমধ্যে স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হয়েছে। বাংলাদেশকে ২০৪১ সালে উন্নত-সমৃদ্ধ স্মার্ট বাংলাদেশে পরিণত করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘রূপকল্প ২০৪১' ঘোষণা করেছেন। এ লক্ষ্য অর্জনে রাষ্ট্রপতি দলমত নির্বিশেষে সকলকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে কার্যকর অবদান রাখার আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, দেশকে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলায় পরিণত করার মধ্য দিয়েই আমরা একাত্তরের গণহত্যায় জীবনদানকারী প্রতিটি প্রাণের প্রতি জানাতে পারি আমাদের চিরন্তন শ্রদ্ধাঞ্জলি।


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

সময় টিভির সাংবাদিকদের চাকরিচ্যুতি: ওই দিনের প্রকৃত ঘটনা তুলে ধরলেন হাসনাত
সরকারের জনপ্রিয়তা থাকলেও প্রশাসনিক অসহযোগিতা রয়েছে: তথ্য উপদেষ্টা
কাদায় পড়ে থাকা নবজাতকের ঠাঁই হচ্ছে ছোটমনি নিবাসে
চোখে বিদ্ধ গুলির যন্ত্রণা নিয়ে বেঁচে আছেন মাদরাসাশিক্ষার্থী মেহেদী
‘তুই প্রফেসরগিরি দেখাস আমার সাথে’
আরও

আরও পড়ুন

সন্তান প্রাপ্তবয়স্ক হলেই বিয়ে দিন

সন্তান প্রাপ্তবয়স্ক হলেই বিয়ে দিন

চট্টগ্রামের প্রবীণ আলেম আল্লামা জালাল উদ্দীনের ইন্তেকাল

চট্টগ্রামের প্রবীণ আলেম আল্লামা জালাল উদ্দীনের ইন্তেকাল

খানবাহাদুর আহ্ছানউল্লা : শিক্ষায় তার অবদান

খানবাহাদুর আহ্ছানউল্লা : শিক্ষায় তার অবদান

ভারত কি শেখ হাসিনাকে ফেরত দেবে?

ভারত কি শেখ হাসিনাকে ফেরত দেবে?

ভারতকে সীমান্ত হত্যা বন্ধ করতে হবে

ভারতকে সীমান্ত হত্যা বন্ধ করতে হবে

মহাবিশ্বের সুদূর পারে মিলল অতিকায় মহাসাগরের সন্ধান

মহাবিশ্বের সুদূর পারে মিলল অতিকায় মহাসাগরের সন্ধান

না ফেরার দেশে সুজুকি কোম্পানির সাবেক চেয়ারম্যান ওসামু সুজুকি

না ফেরার দেশে সুজুকি কোম্পানির সাবেক চেয়ারম্যান ওসামু সুজুকি

প্রথম উভচর অ্যাসল্ট জাহাজ উদ্বোধন চীনে

প্রথম উভচর অ্যাসল্ট জাহাজ উদ্বোধন চীনে

মাত্র ২ ডলার টিপস দেয়ায় গর্ভবতী মহিলাকে ১৪ বার ছুরিকাঘাত

মাত্র ২ ডলার টিপস দেয়ায় গর্ভবতী মহিলাকে ১৪ বার ছুরিকাঘাত

ইরাকে গণকবরে ১০০ কুর্দি নারী ও শিশুর লাশের সন্ধান

ইরাকে গণকবরে ১০০ কুর্দি নারী ও শিশুর লাশের সন্ধান

টুইটার থেকে এক্স, ইলন মাস্কের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের নতুন যুগ

টুইটার থেকে এক্স, ইলন মাস্কের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের নতুন যুগ

অস্ট্রেলিয়ায় দাবানলে পুড়ে গেছে সিঙ্গাপুরের আয়তনের সমান এলাকা

অস্ট্রেলিয়ায় দাবানলে পুড়ে গেছে সিঙ্গাপুরের আয়তনের সমান এলাকা

মরক্কোয় অভিবাসী নৌকাডুবিতে ৭০ জন নিখোঁজ

মরক্কোয় অভিবাসী নৌকাডুবিতে ৭০ জন নিখোঁজ

সানা বিমানবন্দরে ইসরাইলি হামলা অক্ষত আছেন ডব্লিউএইচও প্রধান

সানা বিমানবন্দরে ইসরাইলি হামলা অক্ষত আছেন ডব্লিউএইচও প্রধান

জাপানে বয়স্ক জনসংখ্যা ও প্রতিরক্ষা খাতে রেকর্ড বাজেট অনুমোদন

জাপানে বয়স্ক জনসংখ্যা ও প্রতিরক্ষা খাতে রেকর্ড বাজেট অনুমোদন

ট্রাম্পের অধীনে সম্ভাব্য পারমাণবিক পরীক্ষা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে রাশিয়ার সতর্কতা

ট্রাম্পের অধীনে সম্ভাব্য পারমাণবিক পরীক্ষা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে রাশিয়ার সতর্কতা

হুথি-ইসরাইল সংঘাত বৃদ্ধির নিন্দা জাতিসংঘ মহাসচিবের

হুথি-ইসরাইল সংঘাত বৃদ্ধির নিন্দা জাতিসংঘ মহাসচিবের

দক্ষিণ কোরিয়ার ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্টও অভিশংসিত

দক্ষিণ কোরিয়ার ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্টও অভিশংসিত

সময় টিভির সাংবাদিকদের চাকরিচ্যুতি: ওই দিনের প্রকৃত ঘটনা তুলে ধরলেন হাসনাত

সময় টিভির সাংবাদিকদের চাকরিচ্যুতি: ওই দিনের প্রকৃত ঘটনা তুলে ধরলেন হাসনাত

প্রশ্ন : কেউ ৫০০০ টাকায় একটি আবাদী জমি ভাড়া নিল। বছরে ৫০০ টাকা ভাড়া বাবদ কাটা হবে। তিন বছর পর ১৫০০ টাকা ভাড়া কেটে বাকি ৩৫০০ টাকা ফেরত দিল। এ নিয়ম বৈধ কিনা?

প্রশ্ন : কেউ ৫০০০ টাকায় একটি আবাদী জমি ভাড়া নিল। বছরে ৫০০ টাকা ভাড়া বাবদ কাটা হবে। তিন বছর পর ১৫০০ টাকা ভাড়া কেটে বাকি ৩৫০০ টাকা ফেরত দিল। এ নিয়ম বৈধ কিনা?