তিস্তার পানি তুলে নিতে পশ্চিমবঙ্গে দুই খাল

নয়াদিল্লির জবাবের অপেক্ষা

Daily Inqilab স্টাফ রিপোর্টার

২৪ মার্চ ২০২৩, ১১:৫৯ পিএম | আপডেট: ২৮ এপ্রিল ২০২৩, ০২:৩৫ এএম

জাতিসংঘের আয়োজনে প্রথমবারের মতো শুরু হয়েছে আন্তর্জাতিক পানি সম্মেলন। এতে সহ-সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালনের জন্য সর্বসম্মতিক্রমে নির্বাচিত হয়েছে বাংলাদেশ। জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশন থেকে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বিগত ৫০ বছরে জাতিসংঘ আয়োজিত এটি প্রথম আন্তর্জাতিক পানি সম্মেলন। জাতিসংঘের বিভিন্ন অঙ্গ-সংস্থাসমূহ, সদস্য রাষ্ট্র এবং অন্য সব অংশীজনের সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে বৈশ্বিক পানি বিষয়ক কর্মসূচির বাস্তবায়নে কাঙ্খিত অগ্রগতি অর্জনই সম্মেলনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। এ প্রসঙ্গে জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ আবদুল মুহিত বলেছেন, সহ-সভাপতি পদে নির্বাচিত হওয়ায় বৈশ্বিক পানি বিষয়ক এজেন্ডায় আমাদের জাতীয় অগ্রাধিকারগুলো অর্জনের লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বাড়ানোর পথ প্রশস্ত হবে।
জাতিসংঘের পানি সম্মেলনে বাংলাদেশের সহ সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই সফল্য নিয়ে বেশ তোড়জোড় চলছে। তবে এর বিপক্ষ্যে বক্তব্য দিচ্ছেন নেটিজেনরা। তারা বলছেন, জাতিসংঘের পানি সম্মেলনের সহ-সভাপতির পদ দিয়ে কি তিস্তার পানি চুক্তির জন্য ভারতের ওপর চাপ প্রয়োগ করতে পারবেন? নাকি কুগুজে ওই পদ নিয়ে ভারতের অনুগ্রহের জন্য মুখিয়ে থাকবে। একজন লিখেছেন, আওয়ামী লীগ ক্সমতায় থাকার জন্য বাংলাদেশকে ভারতের অনুগত এবং একান্ত বাধ্যগত প্রতিবেশি দেশে পরিণত করেছে। যার জন্য আন্তর্জাতিক নদীর পানি নিয়ে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করছে না।
জানা যায়, তিস্তার উজানে গজলডোবা ছাড়াও পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকার জলপাইগুড়ি এবং কোচবিহার জেলায় সেচের উদ্দেশ্যে তিস্তার পানি সরানোর জন্য দুটি নতুন খাল খননের নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ নিয়ে ভারতের পত্রপত্রিকায় লেখালেখি হচ্ছে ওই দুটি খাল খনন প্রক্রিয়ার পর চালু হলে তিস্তার দিয়ে পানি বাংলাদেশ অংশে পৌঁছাতে বাধাপ্রাপ্ত হবে। এতে বাংলাদেশ তিস্তার পানি পাবে না। এতে বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের কৃষির ব্যপক ক্ষতি হবে এবং বাংলাদেশের একটি অংশ মরুভুমি হতে পারে।
এ নিয়ে দেশ-বিদেশের গণমাধ্যমে লেখালেখির পর তিস্তায় প্রবাহ হ্রাস করার বিষয়ে পশ্চিমবঙ্গের প্রস্তাবিত প্রকল্পগুলোর ব্যাখ্যা চেয়ে বাংলাদেশ নয়াদিল্লিতে নোট ভারবাল পাঠিয়েছে। কিন্তু ভারত এখনো কোনো সাড়া দেয়নি। বাংলাদেশ পরবর্তী পদক্ষেপ নির্ধারণের জন্য অভিন্ন তিস্তা নদীর বিষয়ে ভারবাল নোটের জবাবের অপেক্ষায় আছে নয়াদিল্লির কাছ থেকে। গত বৃহস্পতিবার সাপ্তাহিক ব্রিফিংকালে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সেহেলি সাবরিন বলেন, আমরা এখনও কোন জবাব (নোট ভারবাল) পাইনি। (নয়াদিল্লি থেকে) উত্তর পাওয়ার পর, আমরা আমাদের পরবর্তী পদক্ষেপ নেব।
পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন গণমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন, তিস্তায় প্রবাহ হ্রাস করার বিষয়ে পশ্চিমবঙ্গের প্রস্তাবিত প্রকল্পগুলোর ব্যাখ্যা চেয়ে বাংলাদেশ নয়াদিল্লিতে নোট ভারবাল পাঠিয়েছে। দিল্লির জবাবের অপেক্ষায় ঢাকা মুখিয়ে রয়েছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সেহেলি সাবরিন বলেন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় স¤প্রতি ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশনের মাধ্যমে তিস্তার পানির প্রবাহ হ্রাসের বিষয়ে ভারবাল নোটটি পাঠিয়েছে এবং আন্তঃসীমান্ত অভিন্ন নদীর পানি বণ্টনের জন্য দীর্ঘ প্রত্যাশিত চুক্তি করার জন্য বাংলাদেশের বিশেষ আগ্রহরে কথা পুনর্ব্যক্ত করেছে।
ভারত সব ধরণের সুবিধা এবং ফেনি নদীর পানি চুক্তি করে তুলে নিলেও এক যুগের বেশি সময় ধরে তিস্তা চুক্তির কলা ঝুলিয়ে রেছেছে। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তির বিষয়ে আলোচনায় রয়েছে। ২০১১ সালে ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিংয়ের বাংলাদেশ সফরের সময় ঢাকা এবং নয়াদিল্লি তিস্তা চুক্তিটি স্বাক্ষর করার জন্য নির্ধারিত ছিল। তখন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জিরও তার সফরসঙ্গী হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু মমতা ব্যানার্জি চুক্তির বিরোধিতা করে শেষ মুহ‚র্তে সফরসঙ্গী হওয়া থেকে বিরত থাকায় চুক্তি হয়নি। তিস্তা চুক্তি না হওয়ায় হতাশা সঞ্চারিত হয় এবং সেই সময়ে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর সফর আশানুরূপ হয়নি। ভারত ও বাংলাদেশ চুক্তি স্বাক্ষর করতে সম্মত হলেও পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের বিরোধিতার কারণে তা বাস্তবায়িত হতে পারেনি। নরেন্দ্র মোদীর বিজেপি সরকারের সঙ্গে বর্তমান সরকারের সুসম্পর্ক থাকলেও তিস্তা চুক্তির জন্য দিল্লিকে চাপ দেয়ার সাহস দেখাতে পারেনি বাংলাদেশ। বরং বিভিন্ন ইস্যুতে দিল্লিকে তোয়াজ করতে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে। সেটা দেখা গেছে বৈশ্বিক মহামারি করোনার সময়। দেশের পানি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তিস্তার চুক্তি করতে না পারা সরকারের ব্যর্থতা। সরকারের উচিত ছিল আন্তর্জাতিক নদীগুলোর পানির ন্যায্য হিস্যার জন্য আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা করা বা জাতিসংঘে অভিযোগ তোলা। তা না করে সরকার দিল্লির কাছে দেনদরবার করছে। এখন পশ্চিমবঙ্গ তিস্তার নদীর পানি তুলে নেয়ার ঘোষণা দেয়ার পর সরকার দিল্লির কাছে জানতে চেয়েছে। কখন দিল্লি চিঠির জবাব দেবে সে অপেক্ষায় করছে ঢাকা।

 

 


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

দেশবাসীকে আশ্বস্ত করছি, আমরা বসে নেই: পিনাকী ভট্টাচার্য
আজও ঢাকার বাতাস ‘খুব অস্বাস্থ্যকর’
আকাশ মণ্ডল থেকে ইরফান, তদন্তে জানা গেলো আসল পরিচয়
জনগণের অংশগ্রহণেই নির্ধারিত হবে আমরা আসলে কী চাই : জোনায়েদ সাকি
নাগরিক কমিটির ৩৬ সদস্য বিশিষ্ট ‘নির্বাহী কমিটি’ ঘোষণা
আরও

আরও পড়ুন

দেশবাসীকে আশ্বস্ত করছি, আমরা বসে নেই: পিনাকী ভট্টাচার্য

দেশবাসীকে আশ্বস্ত করছি, আমরা বসে নেই: পিনাকী ভট্টাচার্য

৪১ বছর ইমামতি করা ইমামকে রাজকীয় বিদায়

৪১ বছর ইমামতি করা ইমামকে রাজকীয় বিদায়

ট্রাম্পের সমর্থকদের মধ্যে বিদেশি কর্মী, ভিসা নিয়ে বিতর্ক

ট্রাম্পের সমর্থকদের মধ্যে বিদেশি কর্মী, ভিসা নিয়ে বিতর্ক

আজও ঢাকার বাতাস ‘খুব অস্বাস্থ্যকর’

আজও ঢাকার বাতাস ‘খুব অস্বাস্থ্যকর’

মাদারীপুরের মুখে গামছা বাঁধা অবস্থায় শিশু শিক্ষার্থীর লাশ উদ্ধার

মাদারীপুরের মুখে গামছা বাঁধা অবস্থায় শিশু শিক্ষার্থীর লাশ উদ্ধার

বাংলাদেশের মানুষ ভারতের আধিপত্যবাদ রুখে দিবে: মিজানুর রহমান আজহারী

বাংলাদেশের মানুষ ভারতের আধিপত্যবাদ রুখে দিবে: মিজানুর রহমান আজহারী

টেনিস বল ক্রিকেট চ্যাম্পিয়নশিপ টুর্নামেন্টে অংশ নিতে নেপাল গেল সৈয়দপুরের দল

টেনিস বল ক্রিকেট চ্যাম্পিয়নশিপ টুর্নামেন্টে অংশ নিতে নেপাল গেল সৈয়দপুরের দল

আকাশ মণ্ডল থেকে ইরফান, তদন্তে জানা গেলো আসল পরিচয়

আকাশ মণ্ডল থেকে ইরফান, তদন্তে জানা গেলো আসল পরিচয়

পর্তুগালে জাসাসের ৪৬ তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উদযাপন

পর্তুগালে জাসাসের ৪৬ তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উদযাপন

আজারবাইজানের বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় ইউক্রেনকে দায়ী করলেন রুশ বিমান প্রধান

আজারবাইজানের বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় ইউক্রেনকে দায়ী করলেন রুশ বিমান প্রধান

প্রকাশ্যে এলো হানি-বাদশার দ্বন্দ্ব, গুরুতর অভিযোগ হানির

প্রকাশ্যে এলো হানি-বাদশার দ্বন্দ্ব, গুরুতর অভিযোগ হানির

বন্ধ হয়ে গেলো গাজার শেষ হাসপাতালটিও

বন্ধ হয়ে গেলো গাজার শেষ হাসপাতালটিও

মনমোহন সিংহ,ভারতকে নেতৃত্ব দেওয়া এক সাহসী ও দৃঢ় সংকল্পের নেতা

মনমোহন সিংহ,ভারতকে নেতৃত্ব দেওয়া এক সাহসী ও দৃঢ় সংকল্পের নেতা

জনগণের অংশগ্রহণেই নির্ধারিত হবে আমরা আসলে কী চাই : জোনায়েদ সাকি

জনগণের অংশগ্রহণেই নির্ধারিত হবে আমরা আসলে কী চাই : জোনায়েদ সাকি

নাগরিক কমিটির ৩৬ সদস্য বিশিষ্ট ‘নির্বাহী কমিটি’ ঘোষণা

নাগরিক কমিটির ৩৬ সদস্য বিশিষ্ট ‘নির্বাহী কমিটি’ ঘোষণা

সচিবালয়ের কাগজ ভেবে দুটি ট্রাক আটকালো জনতা

সচিবালয়ের কাগজ ভেবে দুটি ট্রাক আটকালো জনতা

মাত্র সাত মাসেই হাফেজ হলেন ১০ বছরের আব্দুল্লাহ

মাত্র সাত মাসেই হাফেজ হলেন ১০ বছরের আব্দুল্লাহ

সিরিয়ায় আসাদের পতন, ঘরে ফিরছে ৩০ হাজার শরণার্থী

সিরিয়ায় আসাদের পতন, ঘরে ফিরছে ৩০ হাজার শরণার্থী

কুড়িগ্রামের উলিপুরে বিএনপির দুই গ্রুপের সংঘর্ষে যুবদল নেতা নিহত

কুড়িগ্রামের উলিপুরে বিএনপির দুই গ্রুপের সংঘর্ষে যুবদল নেতা নিহত

ভুল তথ্যে চায়ের দোকানে ফায়ার সার্ভিস, অথচ পানের বরজ পুড়ে ছাই

ভুল তথ্যে চায়ের দোকানে ফায়ার সার্ভিস, অথচ পানের বরজ পুড়ে ছাই