ঢাকা   শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৬ আশ্বিন ১৪৩১
ইউক্রেনীয় সেনাদের মধ্যে দলত্যাগের হিড়িক বাখমুতে বেসামরিক অবস্থানে বোমা পেতে রেখে গেছে ইউক্রেনীয় সেনারা ইউক্রেনের জয়ের কোন আশা নেই : হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী ইউক্রেনকে নতুন সামরিক সহায়তার বিরোধিতা হাঙ্গেরির দীর্ঘ সময় ধরে সামরিক অভিযান পরিচালনা করতে সক্ষম রাশিয়া : জার্মান গোয়েন্দা প্রধান রুশ সীমান্তের গ্রামে বেসামরিকদের ওপরে ইউক্রেনীয় সশস্ত্র দলের হামলা

পাল্টা আক্রমণের জবাব দিতে প্রস্তুত রাশিয়া

Daily Inqilab ইনকিলাব ডেস্ক :

২৩ মে ২০২৩, ১১:৪০ পিএম | আপডেট: ২৪ মে ২০২৩, ১২:০০ এএম


সমুদ্র সৈকতের একটি অবকাশ কেন্দ্রে গড়ে তোলা হয়েছে প্রতিরক্ষা দুর্গ। প্রতিপক্ষের অগ্রসরমান ট্যাঙ্ক ঠেকাতে প্রধান একটি সড়ক ধরে খনন করা হয়েছে পরিখা। স্যাটেলাইট থেকে তোলা কিছু ছবি বিশ্লেষণ করে বিবিসির ভ্যারিফাই বিভাগ বলছে ইউক্রেনের পাল্টা আক্রমণ ঠেকাতে রাশিয়া এধরনের ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে।

কয়েক মাসের অচলাবস্থার পর ধারণা করা হচ্ছে যে রাশিয়ার বিরুদ্ধে পরিকল্পিত এই আক্রমণ ইউক্রেনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা হয়ে উঠতে পারে। কারণ এই পাল্টা আক্রমণের মাধ্যমে কিয়েভ প্রমাণ করতে চাইছে যে পশ্চিমাদের কাছ থেকে পাওয়া অত্যাধুনিক অস্ত্র দিয়ে তারা রণক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য রকমের বিজয় অর্জন করতে সক্ষম। স্যাটেলাইট থেকে তোলা এরকম শত শত ছবি পরীক্ষা করে বিবিসি ইউক্রেনের দক্ষিণাঞ্চলে কিছু গুরুত্বপূর্ণ স্থান চিহ্নিত করেছে যেখানে রাশিয়া পরিখা খনন করাসহ অন্যান্য প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তুলেছে। এরকম চারটি স্থান বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় ইউক্রেন কী ধরনের পাল্টা আক্রমণ চালাতে পারে বলে রাশিয়া ধারণা করছে এবং এসব ইউক্রেনীয় বাহিনী কী ধরনের প্রতিরোধের মুখে পড়তে পারে। ১. ক্রিমিয়ার পশ্চিম উপকূল : রাশিয়া ২০১৪ সালে ক্রিমিয়া দখল করে নেয় যা একসময় সমুদ্র সৈকতে গড়ে ওঠা অবকাশ কেন্দ্রের জন্য সুপরিচিত ছিল। এখন এই দ্বীপের ১৫ মাইল দীর্ঘ উপকূলে রোদ-নিবারক ছাতা যেমন নেই, তেমনি নেই সূর্যস্নান করতে যাওয়া লোকজনও। তার পরিবর্তে সেখানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে রুশ সৈন্যদের স্থাপিত প্রতিরক্ষা স্থাপনা। প্রথমত সৈকতের তটরেখা ধরে আছে ‘ড্রাগন্স টিথ’। ড্রাগন্স টিথ হচ্ছে পিরামিড আকৃতির কংক্রিটের ব্লক। ট্যাঙ্কসহ অন্যান্য সামরিক যানের অগ্রযাত্রা থামিয়ে দেয়ার জন্য এসব ব্লক ব্যবহার করা হয়।

তার পেছনেই আছে এক সারি পরিখা যা প্রতিপক্ষের আক্রমণ থেকে সৈন্যদের রক্ষা করবে। দীর্ঘ এই পরিখার বিভিন্ন স্থানে কিছু বাঙ্কারও দেখা যায়। এছাড়াও আছে কাঠের স্তূপ, খনন করার যান এবং ড্রাগন্স টিথের মজুত। এসব দেখে ধারণা করা যায় যে উপকূলজুড়ে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলার কাজ এখনও চলছে। স্যাটেলাইট থেকে এসব ছবি তোলা হয়েছে গত মার্চ মাসে। কোনো কোনো সামরিক বিশেষজ্ঞ বলছেন, রাশিয়া সতর্কতা হিসেবেই সেখানে এই প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তুলছে বলে তারা ধারণা করছেন। এর অর্থ এই নয় যে রাশিয়া সমুদ্রপথে আসা কোনো আক্রমণ প্রতিহত করতে সেখানে এসব স্থাপনা বসিয়েছে। কারণ ইউক্রেনের নৌ ক্ষমতা খুবই সীমিত।

২. টকমাক: ইউক্রেনের ছোট্ট একটি শহর টকমাক যা দেশটির দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ একটি পথের মধ্যে পড়ে। রাশিয়ার মুক্ত করা অন্যান্য অঞ্চল থেকে ক্রিমিয়াকে বিচ্ছিন্ন করার জন্য ইউক্রেনীয় সৈন্যরা এই শহরটিকে ব্যবহার করতে পারে। খবরে জানা যাচ্ছে এই শহরটিকে একটি সামরিক দুর্গে পরিণত করার লক্ষে সেখান থেকে বেসামরিক ইউক্রেনীয় নাগরিকদের সরিয়ে নেয়া হয়েছে। এর ফলে সৈন্যদের কাছে রসদ সরবরাহ করা যাবে এবং একই সাথে প্রয়োজনের সৈন্যরা পিছু হটে এই ঘাঁটিতে এসে অবস্থান নিতে পারবে।

স্যাটেলাইট থেকে তোলা উপরের ছবিতে দেখা যায়, টকমাক শহরের উত্তরে দুটো রেখায় পরিখা নেটওয়ার্ক খনন করা হয়েছে। ইউক্রেনীয় বাহিনী এই দিক থেকে রুশ সৈন্যদের ওপর আক্রমণ চালাতে পারে। এসব পরিখার পেছনে এই শহরের চারপাশ ঘিরে আরো কিছু প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা তৈরি করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ট্যাঙ্ক-প্রতিরোধী পরিখা। এগুলো সাধারণত আড়াই মিটার গভীর। শত্রুপক্ষের কোনো ট্যাঙ্ক এগুলো পার হয়ে আসার চেষ্টা করলে এসব পরিখার মাধ্যমে ট্যাঙ্কগুলোকে আটকে দেয়া হয়। এই পরিখার পেছনে আছে ড্রাগন্স টিথের আরো কয়েকটি সারি। এবং তারপরে পরিখার আরো একটি নেটওয়ার্ক। টকমাক শহরের তিনটি প্রতিরক্ষা স্তরের মধ্যবর্তী স্থানে স্থল-মাইন লুকিয়ে রাখার সম্ভাবনাও অনেক বেশি- বলছেন সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক এন্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের মার্ক ক্যানসিয়ান। বিবিসি ভেরিফাই বিভাগ টকমাক শহরের কাছে এরকম আরো তিনটি ছোট ছোট শহর চিহ্নিত করেছে যেগুলোতে একইভাবে প্রতিরক্ষা ব্যূহ গড়ে তোলা হয়েছে।

৩. ই১০৫ মহাসড়ক: স্যাটেলাইট থেকে তোলা ছবিতে টকমাক শহরের পশ্চিম দিকে ই১০৫ প্রধান মহাসড়কের পাশ দিয়ে ২২ মাইল দীর্ঘ ট্যাঙ্ক-প্রতিরোধী পরিখা দেখা যাচ্ছে। এ মহাসড়ক কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ। এই সড়কটি ইউক্রেনের দক্ষিণাঞ্চলে রাশিয়ার দখল করে নেয়া মেলিটোপল শহরকে উত্তরের খারকিভ শহরের সঙ্গে যুক্ত করেছে। খারকিভ এখনও ইউক্রেনীয় সৈন্যদের নিয়ন্ত্রণে। এই সড়কটি যে পক্ষ নিয়ন্ত্রণ করবে তাদের সৈন্যরা এই অঞ্চলে ও তার আশেপাশে সহজে চলাচল করতে পারবে।

৪. রিভনোপিল, মারিউপোলের উত্তরে: ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে রাশিয়ার দখল করে নেয়া অঞ্চল এবং দক্ষিণের ক্রিমিয়ার মাঝখানে অবস্থিত মারিউপোল বন্দরের অবস্থান কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়াও ইউক্রেনীয় সৈন্যরা শহরটির পতনের আগে কয়েক মাস ধরে নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে পারার কারণে এটি তাদের প্রতিরোধের প্রতীকেও পরিণত হয়েছে। রাশিয়া মনে করছে ইউক্রেন হয়তো এখন এই শহরের পুনর্দখল নেয়ার চেষ্টা চালাতে পারে। বিবিসি ভেরিফাই বিভাগ এই শহরের আশেপাশের এলাকা দেখার চেষ্টা করলে সেখানে কয়েকটি বৃত্তাকার পরিখার সন্ধান পাওয়া যায়। মারিউপোলের ৩৪ মাইল উত্তরে ছোট্ট একটি গ্রাম রিভনোপোলে এসব পরিখা খনন করা হয়েছে। এগুলোর মাঝখানে মাটির স্তূপ। সম্ভবত কামান রক্ষা কিম্বা কামানের বন্দুক স্থিতিশীল রাখার জন্য মাটির এই স্তূপ বসানো হয়েছে। এছাড়াও শত্রুপক্ষের আক্রমণের মুখে সৈন্যরা এসব বৃত্তাকার পরিখায় আশ্রয় নিতে পারবে এবং তাদের কামান সরিয়ে নিতে পারবে। এসব পরিখা থেকে তারা যে কোনো দিকে আক্রমণ করতে পারবে।

এদিকে, ইউক্রেনীয় সৈন্যরা যারা ডোনেৎস্ক পিপলস রিপাবলিকের আর্টিওমভস্ক (ইউক্রেনের বাখমুত নামে পরিচিত) এর জন্য যুদ্ধে অংশ নিয়েছিল তারা শহরের নিয়ন্ত্রণ হারানোর পরে আরও ঘন ঘন দল ত্যাগ করছে। লুহানস্ক পিপলস রিপাবলিকের পিপলস মিলিশিয়ার অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল আন্দ্রে মারাচকো গতকাল এ তথ্য জানিয়েছেন। ‘আর্টিওমভস্ককে হস্তান্তর করার পরে, ইউক্রেনীয় সশস্ত্র বাহিনীর যারা শহর রক্ষা করেছিল, তারা কমান্ডের আদেশ অমান্য করছে, আরও ঘন ঘন অবস্থান পরিত্যাগ করছে এবং পালিয়ে যাচ্ছে,’ এলপিআর অফিসার রাশিয়ান পুনরুদ্ধারের তথ্য উল্লেখ করে বলেছেন।

বাখমুতে বেসামরিক অবস্থানে বোমা পেতে রেখে গেছে ইউক্রেনীয় সেনারা : ডোনেৎস্ক পিপলস রিপাবলিকের (ডিপিআর) আইন প্রয়োগকারী কর্মকর্তা সোমবার জানিয়েছেন, আর্টিওমভস্ক (ইউক্রেনে বাখমুত নামে পরিচিত) থেকে পিছু হঠার সময় ইউক্রেনের সামরিক কর্মীরা কয়েক ডজন অ্যাপার্টমেন্ট বিল্ডিং এবং আবাসিক বাড়িতে বোমা পেতে রেখে গিয়েছে। ‘আর্টিওমভস্কের আশেপাশে বোমা নিষ্ক্রিয়কারী প্রকৌশলীরা পরীক্ষা করে বিস্ফোরক ভর্তি কয়েক ডজন বেসমেন্ট খুঁজে পেয়েছেন। এটি ব্যক্তিগত বাড়ি এবং অ্যাপার্টমেন্ট বিল্ডিং উভয়ের জন্যই প্রযোজ্য। কিছু ক্ষেত্রে, বেসামরিক লোকের উপস্থিতি এ ধরনের বেসমেন্ট স্পেসগুলিতে লুকিয়ে থাকা মাইন ক্লিয়ারেন্স অপারেশনকে জটিল করে তুলেছে। ইউক্রেনীয়রা বেসামরিক নাগরিকদের (নিরাপত্তার) প্রতি কোন কর্ণপাত না করে তাদের পশ্চাদপসরণ করার সময় সেখানে বোমাগুলো পেতে রেখে যায়,’ কর্মকর্তা বলেছেন।

ডিপিআর আইন প্রয়োগকারী কর্মকর্তার মতে, যুদ্ধ-বিধ্বস্ত শহরের পশ্চিম উপকণ্ঠে সবচেয়ে বেশি পরিমাণ বিস্ফোরক পাওয়া গেছে। বিস্ফোরকগুলি গৃহস্থালীর যন্ত্রপাতির বাক্সের ভিতরে রাখা হয়েছিল এবং অ্যাপার্টমেন্ট বিল্ডিংয়ের বেসমেন্টগুলিতে ইউটিলিটি সিস্টেমের মধ্যে স্থাপন করা হয়েছিল। কর্মকর্তা উল্লেখ করেছেন যে, মাইন ক্লিয়ারেন্স অপারেশন পর্যায়ক্রমে হচ্ছে। ডিপিআর-এর উত্তর অংশে অবস্থিত আর্টিওমভস্ক, ডনবাসে ইউক্রেনীয় সামরিক বাহিনী সরবরাহের জন্য একটি মূল লজিস্টিক হাব হিসাবে কাজ করেছিল এবং এটি একটি প্রধান সুরক্ষিত ইউক্রেনীয় ফাঁড়ি ছিল। শহরের জন্য যুদ্ধ, যা ১ আগস্ট, ২০২২-এ শুরু হয়েছিল এবং ২০ মে, ২০২৩-এ শেষ হয়েছিল, রাশিয়ার বিশেষ সামরিক অভিযানের সময় এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বড় যুদ্ধ হিসাবে প্রমাণিত হয়েছে।

ইয়ান গ্যাগিন, ভারপ্রাপ্ত ডিপিআর প্রধান ডেনিস পুশিলিনের উপদেষ্টা, এর আগে বলেছিলেন যে ইউক্রেনীয় সৈন্যরা শহরের পশ্চিম উপকণ্ঠ থেকে পিছু হটানোর সময় প্রধান অবকাঠামো সুবিধাগুলোতে বোমা পেতে রেখেছিল, যার ফলে শিশু সহ কয়েক ডজন বেসামরিক লোক মারা গিয়েছিল। পুশিলিন, পরিবর্তে, বলেছিলেন যে, যুদ্ধ-বিধ্বস্ত শহরে খুব কম বিল্ডিং অক্ষত ছিল, তবে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে, এটি সম্পূর্ণরূপে পুনর্র্নিমাণ করা হবে।

ইউক্রেনের জয়ের কোন আশা নেই : ইউক্রেন রাশিয়ার সঙ্গে সংঘাতে জয়ী হতে পারবে না, গতকাল হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর অরবান বলেছেন। তিনি ইউক্রেনে জোটের সৈন্য মোতায়েন করার জন্য ন্যাটোর অনাগ্রহের কথা উল্লেখ করে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব একটি শান্তিপূর্ণ মীমাংসা করার আহ্বান জানিয়েছে।

গতকাল দোহায় কাতার ইকোনমিক ফোরামে একটি পাবলিক বিতর্কে ভাষণ দেয়ার সময়, হাঙ্গেরির সরকার প্রধান বলেছেন, ‘ইউক্রেনের পরিস্থিতি বাস্তবে কীভাবে দাঁড়িয়েছে, পরিসংখ্যানগুলো যদি দেখেন, এবং ন্যাটো সেখানে সেনা পাঠাতে অনিচ্ছুক, এ সব কিছু বিবেচনা করলে আপনি স্পষ্ট দেখতে পাবেন যে, ইউক্রেনীয়রা যুদ্ধক্ষেত্রে বিজয় অর্জন করতে সক্ষম হবে না।’ তিনি আসলে ইউক্রেনের সাফল্যের কোন সম্ভাবনা নেই বলে মনে করেন কিনা সেই প্রশ্নের জবাবে এ মন্তব্য করেন।

দোহাতে অরবানের বক্তৃতা, সংক্ষেপে, ফোরামের মডারেটরের সাথে একটি সাক্ষাতকারে রূপান্তরিত হয়েছিল এবং ফেসবুকে হাঙ্গেরিয়ান সরকারের পৃষ্ঠায় লাইভ স্ট্রিম করা হয়েছিল (মেটা দ্বারা এটির মালিকানার কারণে রাশিয়ায় নিষিদ্ধ, যেটিকে একটি চরমপন্থী সংগঠন হিসাবে মনোনীত করা হয়েছে)। ইউক্রেনের সংঘাত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে, হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী পুনর্ব্যক্ত করেন যে, বুদাপেস্ট অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়ে সংঘাতের শুরু থেকেই একটি শান্তিপূর্ণ সমাধানের পক্ষে। ‘আমাদের অবশ্যই ভাবতে হবে কিভাবে মানুষের জীবন বাঁচানো যায়। এটা আমার অবস্থান,’ অরবান জোর দিয়ে বলেছিলেন।

ইউক্রেনকে নতুন সামরিক সহায়তার বিরোধিতা হাঙ্গেরির : বুদাপেস্ট ইউরোপীয় কমিশন কর্তৃক দেয়া রাশিয়ার উপর নিষেধাজ্ঞার ১১ তম প্যাকেজের বেশ কয়েকটি মূল বিধানের বিরোধিতা করে এবং যতক্ষণ না তার ওটিপি ব্যাঙ্ককে ইউক্রেনের আন্তর্জাতিক যুদ্ধের পৃষ্ঠপোষকদের তালিকা থেকে সরিয়ে না দেয়া হয় ততক্ষণ পর্যন্ত ইউরোপীয় শান্তি সুবিধা থেকে কোনও অতিরিক্ত সামরিক সহায়তা দেয়া সমর্থন করবে না, হাঙ্গেরির পররাষ্ট্রমন্ত্রী পিটার সিজ্জার্তো সোমবার একথা জানিয়েছেন।

তিনি স্মরণ করেন যে, ইইউ দেশগুলি ইউক্রেনকে ইউরোপীয় শান্তি সুবিধা থেকে ৫০০ মিলিয়ন ইউরোর সামরিক সহায়তা বাড়াতে চায়। ব্রাসেলসে ইইউ পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকের বিরতিতে তিনি হাঙ্গেরিয়ান সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা ইউক্রেনীয়দের আন্তর্জাতিক যুদ্ধের পৃষ্ঠপোষকদের তালিকা থেকে ওটিপি অপসারণ করার দাবি জানাচ্ছি। যতক্ষণ না তা না হয়, আমরা ইউক্রেনের অস্ত্রে ব্যয়ের ক্ষতিপূরণ হিসাবে ইইউ দেশগুলিকে এই ৫০০ মিলিয়ন ইউরো বরাদ্দ করতে আমাদের সম্মতি দেব না।।’

শীর্ষ কূটনীতিকের প্রেস কনফারেন্স তার ফেসবুক পেজে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়েছিল (ফেসবুক রাশিয়ায় নিষিদ্ধ করা হয়েছে মেটার মালিকানার কারণে, যেটিকে চরমপন্থী হিসাবে মনোনীত করা হয়েছে)। ৪ মে, ইউক্রেনের ন্যাশনাল এজেন্সি অন করাপশন প্রিভেনশন হাঙ্গেরির ওটিপি ব্যাংক গ্রুপকে, যা রাশিয়ায় কাজ করে চলেছে, যুদ্ধের আন্তর্জাতিক পৃষ্ঠপোষকদের তালিকায় রেখেছে। সিজ্জার্তো এ সিদ্ধান্তকে ‘কলঙ্কজনক এবং অগ্রহণযোগ্য’ বলে নিন্দা করেছেন।

দীর্ঘ সময় ধরে সামরিক অভিযান পরিচালনা করতে সক্ষম রাশিয়া : জার্মান ফেডারেল ইন্টেলিজেন্স সার্ভিসের (বিএনডি) প্রেসিডেন্ট ব্রুনো কাহল বলেছেন, রাশিয়া ইউক্রেনে ‘দীর্ঘ সময় ধরে’ সামরিক অভিযান চালিয়ে যেতে সক্ষম। ডিপিএ সংবাদ সংস্থা গোয়েন্দা প্রধানকে উদ্ধৃত করে বলেছে, ‘রাশিয়া, আগের মতোই, দীর্ঘ সময় ধরে (তার বিশেষ সামরিক অভিযানে) নেতৃত্ব দিতে সক্ষম।

কাহল আরও উল্লেখ করেছেন যে, গোয়েন্দা পরিষেবা দেখতে পাচ্ছে না যে, সংঘাত কোনওভাবে রাশিয়ান রাষ্ট্রের কর্তৃত্বকে নাড়া দিয়েছে। একটি সামরিক অভিযান অবশ্যই শুরু হবে কিনা বা এ বিষয়ে বিএনডি সচেতন ছিল কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘শুরু হওয়ার চৌদ্দ দিন আগে (সংঘাতের) আমরা এমন ঘটনা রেকর্ড করেছি যা অন্য কোনো উপায়ে ব্যাখ্যা করা যায় না।’

রুশ সীমান্তের গ্রামে বেসামরিকদের উপরে ইউক্রেনীয় সশস্ত্র দলের হামলা : ইউক্রেনের ভেতর থেকে সশস্ত্র একটি দল রাশিয়ার বেলগোরদ অঞ্চলে ঢুকে সংঘাতে লিপ্ত হয়েছে এবং তাতে সেখানকার বেশ কয়েকজন বাসিন্দা আহত হয়েছে বলে রাশিয়ার কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। স্থানীয় গভর্নর ভিচেসøাভ গ্লাদকোভ বলেছেন, গ্রাভোরোনস্কি সীমান্ত এলাকায় যারা হামলা করেছে, সেই ‘নাশকতাকারীদের’ খুঁজতে শুরু করেছে রাশিয়ান বাহিনী।

ভøাদিমির পুতিনের একজন মুখপাত্র জানিয়েছেন, প্রেসিডেন্টকে এ বিষয়ে অবহিত করা হয়েছে। এই ঘটনার দায় অস্বীকার করে ইউক্রেন দাবি করেছে, ওই ঘটনার পেছনে রাশিয়ার দুইটি আধাসামরিক বাহিনীর সদস্যরাই জড়িত। গভর্নর ভিচেসøাভ গ্লাদকোভ বলেছেন, ওই ঘটনায় আটজন আহত হয়েছে, যাদের মধ্যে দুটি শিশু রয়েছে। একটি গ্রামে গোলা নিক্ষেপ করার পর দুইজন বাসিন্দাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আরেকটি ঘটনায় গ্রেভোরন শহরে আহত হয়েছে তিনজন।

সংঘর্ষের ঘটনায় তিনটি বাড়ি এবং একটি প্রশাসনিক ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেখানকার পরিস্থিতি ‘খুবই উত্তেজনাকর অবস্থায়’ রয়েছে বলে তিনি জানিয়েছেন। গভর্নর জানিয়েছেন, ওই এলাকায় সন্ত্রাসীদের খুঁজতে একটি পাল্টা অভিযান শুরু করা হয়েছে। যারা এই অভিযানে রয়েছেন, তাদের বিশেষ ক্ষমতা দেয়া হয়েছে যাতে পরিচয় যাচাই এবং যোগাযোগ ব্যবস্থায় নজরদারি করতে পারে।

বেলদোরদ অঞ্চলের যেসব ভিডিও ফুটেজ সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে, সেগুলো যাচাই করে দেখেছে বিবিসি ভেরিফাই। একটি ড্রোন থেকে তোলা ভিডিওতে বেলগোরদের দক্ষিণ সীমান্তের একটি চেক পয়েন্টের কাছাকাছি বেশ কয়েকটি সাঁজোয়া গাড়ি দেখা যাচ্ছে। সেই এলাকায় হেলিকপ্টার ব্যবহার করা হচ্ছে, এমন ভিডিও পেয়েছে বিবিসি। এসব ভিডিও সাম্প্রতিক সময়ে ধারণ করা। কিন্তু সেখানে আসলে কি হচ্ছে, সেটা এসব ভিডিও দেখে নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না। সূত্র : তাস, রয়টার্স, বিবিসি।


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিহত করার আহ্বান উপদেষ্টা নাহিদের

দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিহত করার আহ্বান উপদেষ্টা নাহিদের

মালয়েশিয়া আন্তর্জাতিক হালাল শোকেসের ২০তম আসরে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ

মালয়েশিয়া আন্তর্জাতিক হালাল শোকেসের ২০তম আসরে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের জেলা প্রতিনিধি সম্মেলন অনুষ্ঠিত দেশকে অস্থিতিশীল করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে পরাজিত শক্তি

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের জেলা প্রতিনিধি সম্মেলন অনুষ্ঠিত দেশকে অস্থিতিশীল করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে পরাজিত শক্তি

শ্রীলঙ্কায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচন কাল

শ্রীলঙ্কায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচন কাল

‘মব জাস্টিস’ বন্ধের আহ্বান বাংলাদেশ তরুণ কলাম লেখক ফোরামের

‘মব জাস্টিস’ বন্ধের আহ্বান বাংলাদেশ তরুণ কলাম লেখক ফোরামের

সাত দফা দাবিতে মানববন্ধন ও সমাবেশ

সাত দফা দাবিতে মানববন্ধন ও সমাবেশ

গৌরনদীর দই, একবার খাইলেও আর একবার খাই

গৌরনদীর দই, একবার খাইলেও আর একবার খাই

নোয়াখালীতে জীবাশ্ম জ্বালানিতে বিনিয়োগ বন্ধের দাবি

নোয়াখালীতে জীবাশ্ম জ্বালানিতে বিনিয়োগ বন্ধের দাবি

স্বর্ণের দাম বেড়ে রেকর্ড ২,৬০৯ ডলার ছাড়িয়েছে

স্বর্ণের দাম বেড়ে রেকর্ড ২,৬০৯ ডলার ছাড়িয়েছে

বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধ ও বিচার দাবিতে খুলনায় মানববন্ধন

বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধ ও বিচার দাবিতে খুলনায় মানববন্ধন

গাজায় অব্যাহত ইসরাইলি গণহত্যা ওআইসির নেতারা চেয়ে চেয়ে দেখছেন

গাজায় অব্যাহত ইসরাইলি গণহত্যা ওআইসির নেতারা চেয়ে চেয়ে দেখছেন

চাঁদপুর শহরে সড়ক সংস্কার কাজে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ

চাঁদপুর শহরে সড়ক সংস্কার কাজে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ

সেনা কর্মকর্তাদের ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেয়া প্রসঙ্গে

সেনা কর্মকর্তাদের ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেয়া প্রসঙ্গে

নোয়াখালীতে ৪৪ দিন পর লাশ উত্তোলন

নোয়াখালীতে ৪৪ দিন পর লাশ উত্তোলন

ভারতের দোসর ও হাসিনামিডিয়ার প্রশ্নবিদ্ধ ভূমিকা

ভারতের দোসর ও হাসিনামিডিয়ার প্রশ্নবিদ্ধ ভূমিকা

আশাশুনিতে হাজরাখালির নেটপাটায় পানিবন্দি ২শ’ পরিবার

আশাশুনিতে হাজরাখালির নেটপাটায় পানিবন্দি ২শ’ পরিবার

জামায়াত ক্ষমতায় গেলে নারীদের অধিকার খর্ব হবে না: সেলিম উদ্দিন

জামায়াত ক্ষমতায় গেলে নারীদের অধিকার খর্ব হবে না: সেলিম উদ্দিন

গাছে গাছে আফ্রিকান জায়ান্ট শামুক

গাছে গাছে আফ্রিকান জায়ান্ট শামুক

ঈশ্বরগঞ্জে মহাসড়কে কাঁচাবাজার

ঈশ্বরগঞ্জে মহাসড়কে কাঁচাবাজার

উখিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অস্ত্রসহ আরসা সন্ত্রাসী গ্রেফতার

উখিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অস্ত্রসহ আরসা সন্ত্রাসী গ্রেফতার