বাংলাদেশে স্তব্ধ করা হচ্ছে গণমাধ্যমকে
২৫ আগস্ট ২০২৩, ১২:১৫ এএম | আপডেট: ২৫ আগস্ট ২০২৩, ১২:১৫ এএম
জাতিসংঘের মানবাধিকার পর্যালোচনা অধিবেশনের প্রাক্কালে বাংলাদেশে সাংবাদিকদের সুরক্ষার আহŸান জানিয়েছে সাংবাদিকদের অধিকার রক্ষায় কাজ করা বৈশ্বিক সংগঠন কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্ট-সিপিজে। জাতিসংঘের ইউনিভার্সাল পিরিয়ডিক রিভিউ-ইউপিআর (সর্বজনীন নিয়মিত পর্যালোচনা) ওয়ার্কিং গ্রæপের ৪৪তম অধিবেশনের জন্য পাঠানো এক প্রতিবেদনে এই আহŸান জানানো হয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ (ক্ষমতাসীন সরকার) বেআইনি আটক, হয়রানি এবং বিধিনিষেধ আরোপের মাধ্যমে গণমাধ্যমকে স্তব্ধ করতে ক্রমবর্ধমানভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। সিপিজে, রবার্ট এফ কেনেডি হিউম্যান রাইটস ও এশিয়ান লিগ্যাল রিসোর্স সেন্টার এই তিনটি প্রতিষ্ঠান যৌথভাবে প্রতিবেদনটি দাখিল করেছে। আগামী নভেম্বরে ইউপিআর অধিবেশন বসার কথা রয়েছে। সিপিজের ওয়েবসাইটে গত বুধবার প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়।
প্রতিবেদনে সাংবাদিক হত্যা ও অপহরণের ক্ষেত্রে দায়মুক্তি, নিরাপত্তা হেফাজতে সংবাদকর্মীদের সঙ্গে সহিংস আচরণ এবং ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে কারাগারে লেখক মুশতাক আহমেদের মৃত্যুর বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে। এতে সরকারের সমালোচক নির্বাসিত সাংবাদিকদের পরিবারের সদস্যদের বেআইনি আটক, হয়রানি এবং তাঁদের সঙ্গে সহিংস আচরণের ঘটনাও তুলে ধরা হয়।
প্রতিবেদনের সূচনায় বলা হয়, এই প্রতিবেদনে ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় নির্বাচনকে সামনে রেখে বাংলাদেশের উদ্বেগজনক মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে নিজেদের মূল্যায়ন তুলে ধরেছে এই তিনটি সংস্থা। এর মধ্যে রয়েছে সুশীল সমাজের কাজের পরিধি সংকুচিত হওয়া; নির্বাচনের আগে মানবাধিকার সংগঠন, নাগরিক সংগঠন, সাংবাদিক ও বিরোধীদের লক্ষ্যবস্তু করা এবং র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞার প্রতিক্রিয়ায় প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে পরবর্তী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। আগের নির্বাচনের মতো ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সুশীল সমাজের কাজের পরিধি সংকুচিত করেছে এবং রাজনৈতিক দমন ও সহিংসতা বাড়িয়েছে।
সংস্থাগুলোর অভিযোগ, ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিরোধী দলের সদস্যদের ওপর আক্রমণ, ভোটারদের ভয় দেখানো এবং নির্বাচনী কর্মকর্তাদের পক্ষপাতমূলক আচরণসহ নানা অনিয়মের ঘটনা ঘটেছিল। ওই নির্বাচনে র্যাব ও অন্যান্য নিরাপত্তা বাহিনী ভীতি ছড়ানো এবং ভোট জালিয়াতির কেন্দ্রে ছিল।
প্রতিবেদনে বলা হয়, তৃতীয় ইউপিআরে সম্মতি দেওয়া সুপারিশ বাস্তবায়নে ব্যর্থ হয়ে বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ ডিএসএ (ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন), তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) আইন এবং ঔপনিবেশিক আমলের অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টের (ওএসএ) অধীনে সাংবাদিকদের গ্রেপ্তার ও হয়রানি করছে। নির্বাসিত সাংবাদিকদের স্বজনদের হয়রানি; সাংবাদিক ও বিরোধী নেতাদের ওপর সহিংসতার মামলায় দায়মুক্তির সুযোগ প্রদান, ২০২৪ সালের জানুয়ারির জাতীয় নির্বাচনের আগে গণনজরদারি ও অনলাইন সেন্সরশিপসংক্রান্ত নতুন আইন প্রণয়ন এবং সংবাদমাধ্যমের ওপর বিধিনিষেধ বিস্তৃত করছে।
সংস্থাগুলোর অভিযোগ, ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগের মতো একইভাবে বিরোধী সদস্যদের রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত গ্রেপ্তার এবং সহিংসতার লক্ষ্যবস্তু বানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, কোভিড-১৯ মহামারির শুরুতে জনস্বাস্থ্য খাতের দুর্নীতি নিয়ে প্রতিবেদন করায় ২০২০ সালের মে মাসে সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে ঔপনিবেশিক আমলের অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট ও দÐবিধির অধীনে সাত দিন কারাগারে আটকে রাখা হয়েছিল। ফৌজদারি কার্যবিধিতে শর্তসাপেক্ষ জামিনের কোনো বিধান না থাকলেও পাসপোর্ট জমা দেওয়ার শর্তে তাঁকে জামিন দেওয়া হয়েছিল।
এতে বলা হয়, ২০২২ সালের জানুয়ারিতে আদালত ছয় মাসের জন্য অস্থায়ীভাবে রোজিনা ইসলামের পাসপোর্ট ফেরত দেওয়ার অনুমতি দিয়েছিলেন। এর পর থেকে যখনই তিনি বিদেশ ভ্রমণ করেন, পাসপোর্ট ফেরত দেওয়ার জন্য আদালতের কাছে তাঁকে অনুরোধ করতে হয়েছিল।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২২ সালের জুলাইয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখা আদালতে চ‚ড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেয় এবং প্রমাণ না থাকায় মামলা থেকে রোজিনা ইসলামকে অব্যাহতি দিতে বলেছিল। কিন্তু ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে আদালত পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) অধিকতর তদন্তের নির্দেশ দেন। ২০২৩ সালের শুরুর দিকে কর্তৃপক্ষ তাকে বিচারিক হয়রানি করতে থাকে। অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টের অধীনে অভিযুক্ত ও দোষী সাব্যস্ত হলে রোজিনা ইসলামের ১৪ বছর পর্যন্ত কারাদÐ কিংবা সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদÐ হতে পারে।
প্রতিবেদনে বেশ কয়েকটি সুপারিশ করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে বলপূর্বক গুম, অপহরণ, নির্যাতন, বিচারবহির্ভ‚ত হত্যা ও হেফাজতে মৃত্যুর সব অভিযোগ তদন্তের জন্য একটি স্বাধীন তদন্ত কমিশন গঠন করা। পরিস্থিতির শিকার, তাঁদের পরিবার ও স্বাধীন বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে পরামর্শ করে এই কমিশন গঠন করতে হবে।
মানবাধিকার সংগঠন, নাগরিক সংগঠন ও সাংবাদিকদের সব ধরনের হয়রানি, ভীতি প্রদর্শন ও তাঁদের ওপর আক্রমণ বন্ধ করা। দায়ীদের জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে।
এ ছাড়া প্রতিবেদনে বিরোধী নেতা ও সমর্থকদের সব ধরনের বেআইনি গ্রেপ্তার, আটক, হয়রানি ও তাঁদের ওপর আক্রমণ বন্ধ এবং শান্তিপূর্ণ সমাবেশ ও ২০২৪ সালের জানুয়ারির নির্বাচনে অংশগ্রহণের অধিকার নিশ্চিতেরও সুপারিশ করা হয়েছে। ##
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
পাকিস্তানিদের জন্য ভিসার শর্ত শিথিল করল বাংলাদেশ
মুসলিম রাষ্ট্রপ্রধানদের ঐক্যবদ্ধ কার্যকরী ভূমিকা সময়ের অপরিহার্য দাবি
রাজনীতি হওয়া উচিত জনমানুষের কল্যাণে -বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আসলাম চৌধুরী
বিএনপির সাথে জামায়াতের দূরত্ব নয় বরং সুসম্পর্ক রয়েছে -চাঁদপুরে ডা. তাহের
আদমদীঘিতে খালেদা জিয়ার রোগ মুক্তি কামনায় দোয়া
ছাত্রাবাস থেকে রুয়েট শিক্ষার্থীর লাশ উদ্ধার
দেশীয় চোলাই মদের ট্রানজিট বোয়ালখালী
সোনারগাঁওয়ে বিনামূল্যে চক্ষু শিবির
রূপগঞ্জ অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সভা, সংবর্ধনা ও বার্ষিক মিলনমেলা অনুষ্ঠিত
ইসলামিক ফাউন্ডেশনের কর্মীরাও ফ্যাসিস্ট সরকারের নিপীড়নের শিকার : অধ্যাপক মুজিবুর রহমান
সাম্প্রদায়িক হামলার অভিযোগে ১১৫টি মামলা, ১০০ জন গ্রেফতার
উন্মুক্ত মঞ্চে তরুণদের উচ্ছ্বাস
শুল্ক-কর বাড়ানোর অধ্যাদেশ প্রত্যাহার দাবি নাগরিক কমিটির
আহসানউল্লাহ মাস্টার হত্যা মামলার পুনঃতদন্ত দাবিতে টঙ্গীতে বিক্ষোভ মিছিল
বন্দরে সাবেক কাউন্সিলর আ. লীগ নেতা সিরাজকে সমাজচ্যুত ঘোষণা
ফ্যাসিবাদের দরজা বন্ধ ছাড়া কোনো নির্বাচন নয় -ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ
‘নির্দোষ প্রমাণে ব্যর্থ হলে মৃত্যুদণ্ড চেয়ে নেবো’
ড. ইউনূসের পাঁচ মামলা বাতিলে কোনো আইনি দুর্বলতা নেই
কেরানীগঞ্জে হত্যা করে অটোরিকশা ছিনতাই ঘাতক বন্ধু গ্রেফতার
৪৩তম বিসিএসের ২৬৭ কর্মকর্তার পদায়ন