সমাজকল্যাণমন্ত্রীর বকেয়া বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ, সৎভাইয়ের বকেয়া ৭ লাখ
০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৮:৪১ পিএম | আপডেট: ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:০১ এএম
সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদসহ তার পরিবারের তিনজনের নামে থাকা চারটি বিদ্যুৎ সংযোগের বিপরীতে নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানির (নেসকো) সব পাওনা পরিশোধ করা হয়েছে। ওই চারটি মিটারের বিপরীতে পাওনা ছিল এক লাখ ৭১ হাজার ৭৩৬ টাকা। তবে মন্ত্রীর সৎভাই সদস্য সামসুজ্জামান আহমেদ ভুট্টুর বকেয়া সাত লাখ ২৫ হাজার ১৪৪ টাকা পরিশোধ করা হয়নি। এর দায় মন্ত্রী বা তার ছেলে নেবেন না বলে জানানো হয়েছে।
সমাজকল্যাণমন্ত্রীর বাড়ি লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার তুষভান্ডার ইউনিয়নের কাশিরাম এলাকায়।
এদিকে কোনো কোনো মাসে নেসকোর বিল শিটে মন্ত্রীর বাড়ির মাসিক বিল মাত্র ৩২, ৩৭, ৫২, ৬৫ বা ৭২ টাকা দেখানো হলেও তা বিদ্যুৎ ব্যবহারের ওপর নয়, নেসকো এটিকে বলছে ‘ডিমান্ডচার্জ’। বিদ্যুৎ ব্যবহার না হলে শুধু ডিমান্ডচার্জ করা হয় বলে জানিয়েছে নেসকো। করোনাকালসহ গত কয়েক বছরের বেশিরভাগ সময় মন্ত্রী ও তার পরিবার রাজধানীতে অবস্থান করায় সেসব সময় বিদ্যুৎ ব্যবহার হয়নি বলে জানা গেছে।
জানা গেছে, সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ, তার ছেলে রাকিবুজ্জামান আহমেদ এবং মন্ত্রীর প্রয়াত বাবা করিম উদ্দিন আহমেদের নামে একটি সেচপাম্পসহ চারটি সংযোগের বিপরীতে নেসকোর মোট বকেয়ার পরিমাণ ছিল এক লাখ ৭১ হাজার ৭৩৬ টাকা। এই টাকা বৃহস্পতিবার রাতে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে পরিশোধ করা হয়েছে লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ বাজারের ‘আল আমিন টেলিকম’ নামের একটি দোকান থেকে।
ওই দোকানের মালিক আল-আমিন হোসেন বলেন, গত ৩১ আগস্ট মন্ত্রী পরিবারের ম্যানেজার মোহাম্মদ হোসেন খোকন বিল পরিশোধের জন্য ওই টাকা আমাকে দিয়ে যান। টাকা পেয়ে ওই দিনই আমি বিল পরিশোধের কাগজ সরবরাহ করি। কিন্তু স্ত্রীর অসুস্থতার কারণে সেদিন মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে নেসকোর অনুকূলে টাকা পরিশোধ করতে পারিনি। তবে বৃহস্পতিবার (৭ সেপ্টেম্বর) বিকাশসহ বিভিন্ন মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে তা পরিশোধ করা হয়েছে। গতকাল নেসকোর অ্যাপে ঢুকেও বিল পরিশোধের সত্যতা পাওয়া গেছে।
নেসকো জানিয়েছে, সংযোগ বিচ্ছিন্ন বা আইনি পদক্ষেপ নেওয়া না হলেও বিল পরিশোধের জন্য মৌখিকভাবে জানানো হয়েছিল। তবে রাষ্ট্রীয়কাজে মন্ত্রী ও তার পরিবার বেশিরভাগ সময়ই ঢাকায় থাকেন ফলে বিলগুলো হয়তো বকেয়া পড়েছিল।
জানা গেছে, দোতলা বাড়ির একাংশের নিচ তলায় থাকেন মন্ত্রী, সেই বাসায় মন্ত্রীর নিজ নামে রয়েছে বিদ্যুৎ সংযোগ। ওই অংশের ওপর তলায় থাকেন রাকিবুজ্জামান আহমেদ। তার নামে রয়েছে অপর একটি আবাসিক সংযোগ। মন্ত্রীর বাবার নামে কালীগঞ্জ বাজারের ‘গদিঘরে’ রয়েছে একটি বাণিজ্যিক সংযোগ। অপরদিকে উপজেলার দক্ষিণ ঘনেশ্যাম এলাকায় মন্ত্রীর নামে রয়েছে একটি সেচ পাম্পের সংযোগ।
নেসকোর ওয়েবসাাইট ঘেঁটে দেখা যায়, সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদের নামে আবাসিক সংযোগটির বিপরীতে ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর থেকে গত জুলাই পর্যন্ত মোট বকেয়া ১১ হাজার ৬২০ টাকা। এই সময়ের মধ্যে সর্বনিম্ন ৩২ ও সর্বোচ্চ দুই হাজার ৪০৮ টাকা বিল এসেছে। ওই সময়ে রাকিবুজ্জামান আহমেদের আবাসিক সংযোগে নেসকোর পাওনা ৭৯ হাজার ৯৯৫ টাকা। এ বছরের জুলাই মাসে তার বিল এসেছে ১৩ হাজার ৫৬১ টাকা। মার্চ থেকে জুন পর্যন্ত প্রতি মাসের বিল ১০ হাজার ৭৭৭ টাকা করে। তার সর্বনিম্ন বিল দেখানো হয়েছে ২০২১ সালের এপ্রিলে ৭২ টাকা। মন্ত্রীর নামে থাকা সেচ সংযোগে নেসকোর মোট পাওনা ৬১ হাজার ৩৪৪ টাকা। প্রয়াত করিম উদ্দিন আহমেদের নামে থাকা বাণিজ্যিক সংযোগের বিপরীতে পাওনা রয়েছে ১৮ হাজার ৫৭৭ টাকা। মন্ত্রীর সৎভাই সামসুজ্জামান আহমেদের ‘ক্ষুদ্রশিল্প প্রতিষ্ঠানের’ একটি সংযোগে নেসকোর বকেয়া সাত লাখ ২০ হাজার ১৩৩ টাকা এবং অস্থায়ীভাবে সংযোগ বিচ্ছিন্ন থাকা অপর একটি সেচ সংযোগের বিপরীতে পাওনা রয়েছে এক লাখ ৫ হাজার ১১ টাকা। নুরুজ্জামান আহমেদের অপর চার ভাইয়ের কাছে নেককোর কোনো পাওনা আছে কিনা তা জানা যায়নি।
গতকাল বিকেলে নেসকোর বিতরণ ও বিক্রয় কেন্দ্রে গিয়ে ছুটিতে থাকায় সদ্য যোগদানকারী নির্বাহী প্রকৌশলী মজিবুর রহমানকে না পেয়ে কথা হয় উপ-সহকারী প্রকৌশলী রেজোয়ানুল ইসলামের সাথে। এসি-ফ্রিজসহ নানা ইলেকট্রনিক্স যন্ত্র ব্যবহারকারী একটি পরিবারের মাসিক বিল ৩২ টাকা কেন- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সেটা ব্যবহৃত বিদ্যুতের বিপরীতে কোনো বিল নয়, এটা ডিমান্ডচার্জ। যদি কোনো ব্যবহারকারী মাসজুড়ে বিদ্যুৎ ব্যবহার না করে তাহলে সংযোগ চালু রয়েছে মর্মে ডিমান্ডচার্জ হয়। মন্ত্রী মহোদয়ের পরিবার বেশিরভাগ সময়ে ঢাকাতেই থাকেন ফলে শুধুই ডিমান্ডচার্জ বা সামান্য বিল হবে এটাই স্বাভাবিক। আবার যখন ব্যবহার বেশি হয়েছে তখন সে অনুযায়ী বিল হয়েছে। বকেয়া পরিশোধের বিষয় নোটিশ দেওয়া হয়েছিল কিনা তা সদ্য বারখাস্তকৃত নির্বাহী প্রকৌশলী রকি চন্দ্র দাস ভালো বলতে পারবেন বলে জানিয়েছেন তিনি।
নেসকোর কালীগঞ্জ বিতরণ ও বিক্রয় কেন্দ্রের উপ-সহকারী প্রকৌশলী রেজোয়ানুল ইসলাম বলেন, ৩২, ৩৭ বা ৫৭ টাকা ব্যবহৃত বিদ্যুতের বিপরীতে কোনো বিল নয়। এটাকে বলা হয় ডিমান্ডচার্জ। ব্যবহারকারীর বিদ্যুৎ সংযোগ সচল আছে কিন্তু গোটা মাসে ব্যবহার হয়নি এমন ক্ষেত্রে ডিমান্ডচার্জ করা হয়। পরিবারটি বলতে গেলে ঢাকাতেই থাকে, তাই ডিমান্ডচার্জ বা সামান্য বিল হবে এটাই স্বাভাবিক। যখন তারা বাড়িতে থাকেন সেসব মাসে ব্যবহৃত ইউনিট অনুযায়ী বিল করা হয়েছে। এতে কোনো অনিয়ম হয়নি।
রাকিবুজ্জামান আহমেদ বলেন, বিদ্যুৎসহ সার্বিক বিষয়ে দেখাশোনার জন্য পারিবারিকভাবে আমাদের দুজন ম্যানেজার আছে গ্রামের বাড়িতে। এ বিষয়ে তারাই ভালো বলতে পারবেন। আর আমার চাচার বকেয়ার দায় একান্তই তার।
ম্যানেজার মোহাম্মদ হোসেন খোকন বলেন, আমার হাতে ঠিকভাবে বিল পৌঁছায়নি বলেই তা পরিশোধ করা হয়নি। এ ক্ষেত্রে আমিও উদাসীন ছিলাম। আর সেচপাম্পের সংযোগটি স্থায়ীভাবে বন্ধ করতে প্রায় দুই বছর আগে নেসকোতে আবেদন করা হয়েছিল, কিন্তু তারা তা না করে এতদিন বিল করে গেছে।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
যুক্তরাষ্ট্র ও লন্ডনে ৩শ’ কোটি টাকা পাচারের অভিযোগে হাসিনা-জয়ের বিরুদ্ধে দুদকের অনুসন্ধান শুরু
রাজশাহী মহানগরীতে ঘন কুয়াশা
আবারও ভানুয়াতুতে দ্বীপপুঞ্জে ৬.২ মাত্রার ভূমিকম্প
হাজীগঞ্জে ভরাট মিঠানিয়া খালের মুখ, হুমকিতে ফসলি জমি
রাহাতের সুরের মুর্ছনায় বিমোহিত দর্শক, বাংলায় বললেন 'আমরা তোমাদের ভালোবাসি'
‘প্রশাসন ক্যাডার নিয়ে ষড়যন্ত্র চলছে’
যুক্তরাজ্যে ট্রাম্পের বিশেষ দূত হিসেবে মার্ক বার্নেট নিযুক্ত
ফাইনালে ভারতের কাছে বাংলাদেশের হার
ফ্রেন্ডলি ফায়ার দুর্ঘটনায় লোহিত সাগরে মার্কিন যুদ্ধবিমান ধ্বংস
ইরানে যাত্রীবাহী বাস খাদে পড়ে নিহত ১০
বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে ধনী নারী কে, জানেন?
বাংলাদেশি রোগী পেতে সীমান্ত পর্যন্ত মেট্রো চালু করবে ভারত
হাত ফসকে আইফোন পড়ে গেল মন্দিরের দানবাক্সে, ফেরত দিতে অস্বীকৃতি
কুয়াশায় ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে একাধিক দুর্ঘটনা: নিহত ১, আহত ১৫
ঢাকার বায়ুমানে উন্নতির কোনো লক্ষণ নেই, বিপজ্জনকের কাছাকাছি
উগ্রবাদী সন্ত্রাসী 'সাদ' পন্থীদের কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে সাতক্ষীরায় মানববন্ধন
বাংলাদেশ সীমান্তে অত্যাধুনিক ড্রোন মোতায়েন ভারতের
নরসিংদীতে দুর্বৃত্তের গুলিতে ছাত্রদলকর্মী নিহত
সিনেটে প্রার্থী হতে সরে দাঁড়ালেন লারা ট্রাম্প
আমাদেরকে আর স্বৈরাচার হতে দিয়েন না : পার্থ