ঢাকা   বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৪ আশ্বিন ১৪৩১

বাংলাদেশে মানবাধিকার সংগঠনগুলোর টিকে থাকা নিয়েই কেন উদ্বেগ?: বিবিসি বাংলা

Daily Inqilab অনলাইন ডেস্ক

২২ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৩:৩৯ পিএম | আপডেট: ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৩:৩৯ পিএম

নিরাপত্তা হেফাজতে নির্যাতন, গুম, বিচার বহির্ভুত হত্যা ও নারী নির্যাতনসহ যে কোন মানবাধিকার লংঘনের বিষয়ে সোচ্চার একটি বেসরকারি সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্র।মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে তথ্য সংগ্রহ, অনুসন্ধান ও ধারাবাহিকভাবে এগুলো জনসম্মুখে তুলে ধরার কাজ করে এই বেসরকারি সংস্থাটি এখন আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় পড়ে টিকে থাকার লড়াই করছে।বিবিসি বাংলার আবুল কালাম আজাদের করা প্রতিবেদনটি ইনকিলাব পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো।-বিবিসি বাংলা

 

সংস্থাটির অফিস পরিদর্শন করে দেখা যায়, এর অনুসন্ধান, প্রকাশনা এবং বিভিন্ন বিভাগের কাজ বন্ধ।গোটা অফিসে কাজ করছেন হাতেগোনা কয়েকজন কর্মী।আইন ও সালিশ কেন্দ্রের সিনিয়র আইনজীবী সেলিনা আক্তার বলেন, ইমারজেন্সি কাজ যেমন ছোট বাচ্চা উদ্ধার, যারা নোটিশ পেয়ে আসছে না প্রতিপক্ষ, তাদেরকে বাই হেন্ড নোটিশ পাঠানো, কোনো হিউম্যান রাইটস ভায়োলেশন হলে টিম যেতো, আমরা চলে যেতাম, সেটা আমরা পারছি না। ঢাকার মধ্যেও যে হাত নোটিশগুলো আমরা সার্ভ করি, সেটাও আমরা পারছি না।

 

বাংলাদেশের অধিকারভিত্তিক সুপরিচিত সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের এই পরিস্থিতি কি করে হলো সে সম্পর্কে আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক নুর খান লিটন বলেন, আমরা অর্থ ছাড় পাচ্ছি না এনজিও ব্যুরো থেকে।এটি যদি চলমান থাকে তাহলে আইন ও সালিশ কেন্দ্রের মত একটি সংস্থা কার্যক্রম থেকে বিরত থাকা ছাড়া তাদের পথ থাকবে না।আমরা খুব সীমিত করে চেষ্টা করছিলাম টিকে থাকার জন্য। কিন্তু সাম্প্রতিক কালে আমাদের কোনো অর্থ ছাড় হচ্ছে না।ফলে আমরা আমাদের অফিস স্পেস কমিয়ে ফেলেছি। অর্ধেকেরও কম করে ফেলেছি।অন্যান্য খরচ নেই। গত জুন মাস থেকে আমাদের কোন সহকর্মীর অফিসিয়ালি চাকরি নেই।যারা কাজ করছেন আসলে একেবারে ভলান্টিয়ার হিসেবে কাজ করছেন।

আইন ও সালিশ কেন্দ্রের মতো প্রকল্পের অর্থ ছাড় সমস্যায় ভুগতে হয়েছে দুর্নীতিবিরোধী সংগঠন ট্রান্সফারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল, টিআইবিকেও।বিশেষ করে বাংলাদেশে মানবাধিকার, সুশাসন ও নাগরিক অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠনগুলোই মূলত তহবিল ছাড় করতে গিয়ে বিপাকে পড়ছে।এসম্পর্কে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, তহবিল দেয়ার জন্য দাতাসংস্থাগুলো তৈরি। প্রকল্পের অনুমোদনও আছে। কিন্তু ষান্মাসিক যে ছাড়করণ, সেটা যেহেতু সুনিশ্চিত না, যথাসময়ে ছাড় করতে পারব কিনা নিশ্চয়তা নেই সেহেতু পরিকল্পনা অনুযায়ী কার্যসম্পাদন বাস্তবায়ন করা সম্ভব হচ্ছে না।এক ধরনের স্থবিরতা সৃষ্টি হচ্ছে।এক ধরনের অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হচ্ছে।এক ধরনের মনস্তাত্বিক চাপ সৃষ্টি হচ্ছে।

আইন ও সালিশ কেন্দ্র ও টিআইবি ছাড়াও বাংলাদেশে অধিকার নিয়ে বাজ করে এমন বেশ কয়েকটি বেসরকারি সংস্থার সাথে যোগাযোগ করে তাদের কাছ থেকে অর্থ ছাড় নিয়ে জটিলতার অভিযোগ পাওয়া গেছে।পরিস্থিতি এতটাই খারাপ যে, অধিকারভিত্তিক সংগঠনগুলো থেকে একটি বাড়তি চাপ হিসেবে বিবেচনা করছে।এসম্পর্কে মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা সুলতানা কামাল বলেন, অনেক সংগঠনের হয়তো এখনও সেটা বন্ধ করা হয়নি।তবে একটা ভয়ের মধ্যে তো রাখা হয়েছে।অধিকারভিত্তিক সংগঠন করতে গিয়ে আমার ব্যক্তিগত ধারনা এবং আমার অনেক সহকর্মী একই কথা বলেন যে, মনে হয় সরকারের ইচ্ছা যেন কোন অধিকারভিত্তিক সংগঠন কাজ না করুক।আমার মনে হয় সেটা তারা সরাসরিভাবে বলেই দিক। এনজিও ব্যুরোর মাধ্যমে হয়রানি করার কি প্রয়োজন আছে?

বেসরকারি সংস্থার অর্থছাড় এবং তাদের অডিট রিপোর্ট মূল্যায়ন ও প্রকল্পের ব্যয় পর্যালোচনা ও তদারকি করে এনজিও বিষয়ক ব্যুরো।প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীনস্থ এই সংস্থার মহাপরিচালকের সাথে দেখা করে অর্থছাড় নিয়ে জানতে চাইলে এনজিও বিষয়ক ব্যুরোর মহাপরিচালক ক্যামেরার সামনে কথা বলতে অপারগতা জানান।তবে তিনি এটি বলছেন যে, বাংলাদেশের যে কোন এনজিও বা বেসরকারি সংস্থার ক্ষেত্রে তারা একই আইন ও নিয়ম অনুযায়ি কাজ করে থাকেন।মহাপরিচালক এটি স্বীকার করেছেন যে, কাজের ধরন ও প্রকল্পের বিচার বিশ্লেষণ পর্যালোচনা করে তারা ধাপে ধাপে প্রকল্পের অর্থ ছাড় করে থাকেন।এনজিও ব্যুরো দাবি করছে, অর্থ ছাড়ে কোনো সংস্থাকে হয়রানি করা বা বেকায়দায় ফেলা তাদের উদ্দেশ্য নয়। কিন্তু অধিকারভিত্তিক সংগঠনগুলো বলছে, নিয়ম অনুযায়ি সবকিছু করার পরও যে বাস্তবতার মুখোমুখি তাদের হতে হচ্ছে সেটি উদ্বেগের।

এবিষয়ে নুর খান লিটন বলেন, কোথায় যেন একটি বাধা। সেই বাধাটা অদৃশ্য।যারা বাধা দিচ্ছেন তারা কিন্তু দৃশ্যমান নয়। তারা সামনে আসছেন না।

ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, অনেক সময় মনে হয় এনজিও নিয়ন্ত্রণের কতৃত্ব কি এমন কতৃপক্ষের হাতে যারা দেশীয় আইন বা আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল নয় বা আইন মানতে বাধ্য নয়? এরকম একটা প্রশ্ন ওঠা খুবই স্বাভাবিক।

বাংলাদেশে অধিকারভিত্তিক সংস্থাগুলোকে কাজ করতে দিতে সরকারের পক্ষ থেকে কোন বাধা নেই দাবি করা হয়। তবে দেশের স্বার্থেই বেসরকারি সংস্থার কাজের মনিটরিং জোরদার করা হয়েছে বলে জানান আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। তিনি বলেন, এনজিওগুলোকে মনিটরিং করা, আইনটাকে কঠোর করা হয়ে।এনজিওকে কাজ করতে দিতে সরকারের কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু সবকিছুরই তো একটা আইনী কাঠামো আছে।সবকিছুই একটা বাউন্ডারির মধ্যে করতে হয়। সেটা হচ্ছে রাষ্ট্রের স্বার্থে যদি এনজিওগুলো কাজ করে তাহলে রাষ্ট্রের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, এনজিও ব্যুরো এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তো দায়িত্বই হচ্ছে এসব এনজিও কি কাজ করছে তা দেখা।

বাংলাদেশে সব সরকারের আমলেই মানবাধিকার নিয়ে কাজ করতে গিয়ে ক্ষমতাসীনদের রোষানলে পড়তে হয়েছে বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থাকে। অধিকারভিত্তিক সংগঠনগুলো বলছে, গণতন্ত্র, সুশাসন ও মানবাধিকার নিশ্চিত করতে করতে হলে এধরনের সংগঠনগুলোকে স্বাখাবিকভাবে কাজ করতে দিতে হবে।এবিষয়ে সুলতানা কামাল বলেন, এরকমভাবে চলতে থাকলে দেশ একটি সমাজ বোবা সমাজে পরিণত হবে। গণতন্ত্রে মানুষ যদি কথা বলতে না পারে, মানুষের যদি বাক স্বাধীনতা না থাকে, সেটা ক্রমশ একনায়কতন্ত্রে পরিণত হয়।যেটার প্রবণতা আমরা লক্ষ্য করছি।এখন কিন্তু একজনের বাইরে আর কেউ কোন কথা বলতে পারেন না।

নুর খান লিটন বলেন, ধরেন এই সংগঠনগুলো যদি না থাকে, ক্রসফায়ার হবে, কেউ প্রশ্ন তুলবে না।থানায় নিয়ে মানুষকে পিটিয়ে মেরে ফেলবে, এখন যে দুয়েকটি ঘটনা আমরা সামনে আনছি, সেগুলো আসবে না।প্রশ্নবিদ্ধ হবে না প্রশাসন বা সরকারের অন্যায় কাজগুলো।তখন কি হবে? কতৃত্ববাদ এমনভাবে প্রতিষ্ঠা পেয়ে যাবে, যা একেবারেই ফ্যাসিজম।

তহবিল ছাড় নিয়ে অধিকারভিত্তিক প্রতিষ্ঠানগুলোর এ সঙ্কট বেড়েছে গত এক বছরেরও বেশি সময় ধরে।বিশেষ করে র‌্যাবের উপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা আসার পর মানবাধিকার সংগঠনগুলোর তহবিল মনিটরিংয়ে একটা তৎপরতা শুরু হয়।জানা গেছে, সরকারের নিরাপত্তা সংক্রান্ত জাতীয় কমিটি ২০২২ সালের প্রথম সভায় অধিকারভিত্তিক কয়েকটি এনজিওর বিদেশি তহবিল নি্বিড়ভাবে মনিটরিং করার সিদ্ধান্ত নেয়। সেখানে যে এনজিওগুলোর তালিকা করা হয় তার মধ্যে আইন ও সালিশ কেন্দ্র অন্যতম। বর্তমানে অর্থ ছাড় না হওয়ায়, সবচেয়ে বিপাকে রয়েছে এই মানবাধিকার সংস্থাটি।


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

ইত্তিহাদেই সিটিকে রুখে দিল ইন্টার

ইত্তিহাদেই সিটিকে রুখে দিল ইন্টার

রোনালদোদের নতুন কোচ পিওলি

রোনালদোদের নতুন কোচ পিওলি

দক্ষিণ আফ্রিকাকে গুড়িয়ে আফগানদের ঐতিহাসিক জয়

দক্ষিণ আফ্রিকাকে গুড়িয়ে আফগানদের ঐতিহাসিক জয়

যেই গৌরব কেবল শারজাহ ক্রিকেট স্টেডিয়ামের

যেই গৌরব কেবল শারজাহ ক্রিকেট স্টেডিয়ামের

রিট করে ‘খেলাপি ঋণ স্থগিত’ বন্ধ চান ব্যাংক-মালিকরা

রিট করে ‘খেলাপি ঋণ স্থগিত’ বন্ধ চান ব্যাংক-মালিকরা

বিদেশি ঋণ ফের ১০০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে

বিদেশি ঋণ ফের ১০০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে

টাকা উদ্ধারের নামে ‘ঘুষ’ চাওয়ার অভিযোগ জিএম শাহজাহান চৌধুরীর’র বিরুদ্ধে

টাকা উদ্ধারের নামে ‘ঘুষ’ চাওয়ার অভিযোগ জিএম শাহজাহান চৌধুরীর’র বিরুদ্ধে

জাতীয় ঐক্য বিনষ্টকারী কর্মকান্ড থেকে বিরত থাকতে হবে

জাতীয় ঐক্য বিনষ্টকারী কর্মকান্ড থেকে বিরত থাকতে হবে

৬০ হাজার টন ইউরিয়া সার কিনবে সরকার, ব্যয় ২৩৬ কোটি টাকা

৬০ হাজার টন ইউরিয়া সার কিনবে সরকার, ব্যয় ২৩৬ কোটি টাকা

আইকনিক লিডার তারেক রহমান ও বাংলাদেশের রাজনীতি

আইকনিক লিডার তারেক রহমান ও বাংলাদেশের রাজনীতি

পতিত স্বৈরাচার ও ভারতের চক্রান্ত চলছেই

পতিত স্বৈরাচার ও ভারতের চক্রান্ত চলছেই

তারেক রহমানের রাষ্ট্রনায়কোচিত বক্তব্য ও দিকনির্দেশনা

তারেক রহমানের রাষ্ট্রনায়কোচিত বক্তব্য ও দিকনির্দেশনা

ইসরাইলের দখলদারিত্ব বন্ধের প্রস্তাব বিবেচনা জাতিসংঘের

ইসরাইলের দখলদারিত্ব বন্ধের প্রস্তাব বিবেচনা জাতিসংঘের

উত্তপ্ত মণিপুরে অত্যাধুনিক অস্ত্র দিয়ে নতুন করে গোলাগুলি

উত্তপ্ত মণিপুরে অত্যাধুনিক অস্ত্র দিয়ে নতুন করে গোলাগুলি

২৭ দেশে ছড়িয়ে পড়েছে করোনার নতুন ভ্যারিয়্যান্ট

২৭ দেশে ছড়িয়ে পড়েছে করোনার নতুন ভ্যারিয়্যান্ট

২০০ হাতি নিধনের সিদ্ধান্ত জিম্বাবুয়ের

২০০ হাতি নিধনের সিদ্ধান্ত জিম্বাবুয়ের

কলেরাসহ মারাত্মক রোগের ঝুঁকিতে সুদানের ৩৪ লাখ শিশু

কলেরাসহ মারাত্মক রোগের ঝুঁকিতে সুদানের ৩৪ লাখ শিশু

১১ হাজার ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থীর প্রাণ গেছে

১১ হাজার ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থীর প্রাণ গেছে

বেলারুশে হামলা হলে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হবে : লুকাশেঙ্কো

বেলারুশে হামলা হলে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হবে : লুকাশেঙ্কো

তাইওয়ান প্রণালীতে চীনের যুদ্ধবিমান

তাইওয়ান প্রণালীতে চীনের যুদ্ধবিমান