ঋণ করে ডলার সংকটের সমাধান সম্ভব নয়

বিদ্যুতের ক্যাপাসিটি চার্জ থেকে বের হয়ে আসা দরকার : সিপিডি

Daily Inqilab ইনকিলাব

১৭ নভেম্বর ২০২৩, ১২:১০ এএম | আপডেট: ১৭ নভেম্বর ২০২৩, ১২:১০ এএম

জ্বালানি খাতে ক্যাপাসিটি চার্জের নামে বিপুল পরিমাণ ডলার অপচয় করা হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলেছে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি)। প্রতিষ্ঠানের গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেছেন, জ্বালানি খাতে ডলারের অপচয় বন্ধ না করলে ডলারের ক্ষয় কমিয়ে আনা কঠিন। অর্থাৎ বিকল্প জ্বালানিতে না গেলে দেশে ডলার সংকট বাড়তে থাকবে। ডলার সংকট সহজে সমাধান হবে না। এটা দীর্ঘমেয়াদি চ্যালেঞ্জ। এ চ্যালেঞ্জের বড় উৎস জ্বালানি খাত। গতকাল বৃহস্পতিবার ‘পরিবর্তনের ¯্রােত: বাংলাদেশের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের ত্রৈমাসিক সংক্ষিপ্ত বিবরণ’ শীর্ষক বিবরণী প্রকাশ অনুষ্ঠানে তিনি এ অভিমত ব্যক্ত করেন। ধানম-িতে সিপিডির কার্যালয়ে বিবরণী প্রকাশ করা হয়। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির সহযোগী গবেষক হেলেন মাশিয়াত প্রিয়তী।
প্রতিবেদন জানানো হয়, গত ১২ বছরে বিদ্যুৎ খাতে ১ লাখ ৪ হাজার কোটি টাকা ক্যাপাসিটি চার্জ দিয়েছে সরকার। এখন আর ক্যাপাসিটি চার্জ দেয়ার যৌক্তিকতা নেই। এখন ক্যাপাসিটি চার্জ থেকে বেরিয়ে আসা দরকার। এটি একটি বড় রকমের অপচয়। এ অপচয় নেয়ার মতো সামর্থ্য আমাদের অর্থনীতিতে নেই। দেশের গ্যাসের নতুন কূপ অনুসন্ধান ও গ্যাস উত্তোলনে নিরুৎসাহিত করার পেছনে এলএনজি আমদানির লবি কাজ করছে বলে সন্দেহ সিপিডির। গবেষণা সংস্থাটি বলছে- একই ধরনের চক্র কাজ করছে বিদ্যুতের ক্যাপাসিটি চার্জের ক্ষেত্রেও।
সিপিডি বলছে, বাংলাদেশে গ্যাস থেকে কার্বন নিঃসরণ বেড়েছে। বেড়েছে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন থেকে কার্বন নিঃসরণও। গত ১১ বছরে যা ৬৮ শতাংশ বেড়েছে। বায়ু দূষণের কারণে গড় আয়ু হারাচ্ছে মানুষ। নবায়নযোগ্য জ্বালানি মধ্যম ও দীর্ঘ মেয়াদের জন্য সবচেয়ে লাভজনক। সবকিছু মিলিয়ে বলতে পারি জ্বালানি রূপান্তরের জন্য পরিবর্তনের পথে যাওয়া দরকার। গত তিন মাসে সেটা প্রত্যাশার চেয়ে অনেক নিচে। অর্থাৎ জ্বালানি ও বিদ্যুৎখাত এখনও দুর্বলতম অবস্থায় রয়েছে।
ক্যাপাসিটি চার্জকে বড় রকমের অপচয় উল্লেখ করে খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, আমরা মনে করি ২০০৯ সালে বিদ্যুতের ঘাটতি ছিল। সে সময়ে ক্যাপাসিটি চার্জ দিয়ে বেসরকারি খাতকে আকৃষ্ট করার যুক্তি ছিল। তখন আমাদের ঘাটতি ছিল। কিন্তু পর্যায়ক্রমে বেসরকারি খাত উদ্বৃত্ত হয়েছে। উদ্বৃত্ত থেকে এখন বাহুল্য হয়েছে। এটা বাহুল্য বা মাথা ব্যথার জায়গা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ড. গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, আমরা খুঁজছি কোন জায়গা থেকে একটা ডলার বাঁচানো যায়। কিন্তু সেখানে ক্যাপাসিটি চার্জের নামে বিপুল পরিমাণ অর্থ দিতে হচ্ছে, অথবা বাকি রাখতে হচ্ছে। অন্যদিকে এলএনজি ও কয়লা আমদানি করতেও খরচ হচ্ছে বিপুল পরিমাণ অর্থ। তিনি বলেন, আমরা এক ধরনের জ্বালানি সংকটে রয়েছি। জীবাশ্ম জ্বালানি আমদানি না করা ছাড়া আমাদের উপায় নেই। ডলার সংকট সহজে সমাধান হবে না। এটা দীর্ঘমেয়াদি চ্যালেঞ্জ। এ চ্যালেঞ্জের বড় উৎস জ্বালানি খাত। এ খাতে যতক্ষণ পর্যন্ত না ডলার অপচয় বন্ধ করতে পারছি, বিকল্প জ্বালানি না খুঁজতে পারি, তাহলে ডলার ক্ষয় কমিয়ে আনা কঠিন। ডলার সংকট বাড়তে থাকবে যদি না আমরা বিকল্প জ্বালানিতে যাই। ঋণ করে কয়েক মাসের সংস্থান করতে পারবো, কিন্তু সংকট দীর্ঘমেয়াদি হবে।
জ্বালানি খাতের বিভিন্ন দিক উল্লেখ করে সিপিডির গবেষণা সহযোগী হেলেন মাশিয়াত প্রিয়তি বলেন, অতিরিক্ত অব্যবহৃত বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও, বিপিডিবি ইনস্টলড বিদ্যুৎ সম্প্রসারণ করেছে। সঞ্চালন লাইন ও সাবস্টেশনে অগ্রগতি সত্ত্বেও জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন ও বিভ্রাট বেড়েছে। এসব সমস্যা দূরীকরণে স্মার্ট গ্রিড এবং আধুনিক ট্রান্সমিশন ও ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেম গড়ে তোলা প্রয়োজন। তিনি আরো বলেন, ব্যয়বহুল গ্যাসের ওপর নির্ভরতা কমাতে ৪৬টি গ্যাস কূপ খনন ত্বরান্বিত করা জরুরি। ৪৬টি গ্যাস কূপ খননের কাজ ত্বরান্বিত করার জন্য সরকারের আরো অর্থ বরাদ্দ করা উচিত। উচ্চ মূল্যের পেট্রোলিয়াম তেল এবং এলএনজির কারণের আমদানি ব্যয় বাড়ছে। এ ক্ষেত্রে সরকারের পদক্ষেপ প্রয়োজন। রিনিউএবেল জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে অগ্রগতি প্রত্যাশার চেয়ে কম।
গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, জ্বালানি খাত এখন দুর্বলতম অবস্থায় রয়েছে। সরকারের নীতি প্রণয়নেও অনেক ক্ষেত্রে এক শ্রেণির প্রভাব পেছনে থেকে কাজ করছে। তিনি বলেন, জ্বালানি পরিস্থিতির জন্য ৭টি বিষয় আমরা তুলে ধরতে পারি। এগুলোর মধ্যে রয়েছে দুর্বল জ্বালানি নিরাপত্তা। আলোচ্য সময়ে প্রচুর লোডশেডিং হচ্ছে, জ্বালানি আমদানির অসমর্থ দেখতে হচ্ছে। কয়লা ব্যবহারের প্রবণতা তৈরি হয়েছে। জ্বালানি রূপান্তরে সরকার উল্টো যাত্রা করছে। জ্বালানি সঞ্চালন ও বিতরণের ইতিবাচক হলেও তা অপর্যাপ্ত।
এলএনজি আমদানির প্রবণতা বাড়ছে।
নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্রসঙ্গে মোয়াজ্জেম বলেন, নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎপাদনে সরকারের আগ্রহ দেখা গেলেও নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত প্রতিষ্ঠানগুলোর দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। দক্ষতা বৃদ্ধি ছাড়া দেশি-বিদেশি বিনিয়োগের যে সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে, তাতে কার্যত লাভবান হওয়া যাবে না। প্রতিযোগিতামূলক বাজার তৈরি করা না গেলে উচ্চমূল্যের বিদ্যুতে ভোক্তার ওপর চাপ বৃদ্ধি পাবে।

 

 


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

জাপানে রেকর্ড বৃষ্টিপাত, সরিয়ে নেওয়া হলো হাজারো মানুষকে

জাপানে রেকর্ড বৃষ্টিপাত, সরিয়ে নেওয়া হলো হাজারো মানুষকে

জন্মভূমির বিপক্ষে মুরের ফিফটি, মাডান্ডের অনাকাঙ্ক্ষিত রেকর্ড

জন্মভূমির বিপক্ষে মুরের ফিফটি, মাডান্ডের অনাকাঙ্ক্ষিত রেকর্ড

ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ২৮২ রানে থামিয়েও দিনশেষে অস্বস্তিতে ইংল্যান্ড

ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ২৮২ রানে থামিয়েও দিনশেষে অস্বস্তিতে ইংল্যান্ড

পদ্মায় নিখোঁজ নৌপুলিশের সন্ধান মেলেনি ৭ দিনেও

পদ্মায় নিখোঁজ নৌপুলিশের সন্ধান মেলেনি ৭ দিনেও

বেতাগী দরবারে ওরশ আজ

বেতাগী দরবারে ওরশ আজ

সন্ধ্যা হলেই দ্বিগুণ ভাড়া ভোগান্তিতে যাত্রীরা

সন্ধ্যা হলেই দ্বিগুণ ভাড়া ভোগান্তিতে যাত্রীরা

কারফিউ শিথিল করায় টাঙ্গাইলে জনজীবনে কর্মচাঞ্চল্য ফিরেছে

কারফিউ শিথিল করায় টাঙ্গাইলে জনজীবনে কর্মচাঞ্চল্য ফিরেছে

নদী ভাঙনে ৪৫৮ পরিবারের আহাজারি

নদী ভাঙনে ৪৫৮ পরিবারের আহাজারি

বিটিভি ভবনে অগ্নিসংযোগের অভিযোগে টুকুসহ বিএনপি জামায়াতের ৬ নেতা কারাগারে প্রেরণ

বিটিভি ভবনে অগ্নিসংযোগের অভিযোগে টুকুসহ বিএনপি জামায়াতের ৬ নেতা কারাগারে প্রেরণ

শনিবার সজীব ওয়াজেদ জয়ের ৫৩তম জন্মবার্ষিকী

শনিবার সজীব ওয়াজেদ জয়ের ৫৩তম জন্মবার্ষিকী

মেট্রোরেল স্টেশনে হামলার ঘটনায় আসামিদের ৫ দিনের রিমান্ড

মেট্রোরেল স্টেশনে হামলার ঘটনায় আসামিদের ৫ দিনের রিমান্ড

গণবিরোধী কারফিউ দিয়ে মানুষের কণ্ঠকে স্তব্ধ করে দিতে চাইছে : ডা. মনীষা

গণবিরোধী কারফিউ দিয়ে মানুষের কণ্ঠকে স্তব্ধ করে দিতে চাইছে : ডা. মনীষা

নিহত রুদ্রের নামে শাবির প্রধান ফটকের নামকরণ

নিহত রুদ্রের নামে শাবির প্রধান ফটকের নামকরণ

তিনটি গুলি খেয়ে বিনা চিকিৎসায় আমার ছেলেটা মরে গেছে’

তিনটি গুলি খেয়ে বিনা চিকিৎসায় আমার ছেলেটা মরে গেছে’

মালয়েশিয়া ও প্রবাসী আর্ট মেলায় প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের অংশগ্রহণ

মালয়েশিয়া ও প্রবাসী আর্ট মেলায় প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের অংশগ্রহণ

সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে মাঠে থাকুন- ইঞ্জিনিয়ার আব্দুস সবুর এমপি

সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে মাঠে থাকুন- ইঞ্জিনিয়ার আব্দুস সবুর এমপি

কুড়িগ্রামে তিন লাশ দাফন, পরিবারের আহাজারি

কুড়িগ্রামে তিন লাশ দাফন, পরিবারের আহাজারি

কুষ্টিয়ায় বছরে পাটের আবাদ কমেছে ৯০ হাজার বিঘা জমিতে

কুষ্টিয়ায় বছরে পাটের আবাদ কমেছে ৯০ হাজার বিঘা জমিতে

ভাঙন আতংকে যমুনা পাড়ের মানুষ

ভাঙন আতংকে যমুনা পাড়ের মানুষ

দীর্ঘ পানিবদ্ধতায় হাকালুকি হাওর তীরের ৩ উপজেলা

দীর্ঘ পানিবদ্ধতায় হাকালুকি হাওর তীরের ৩ উপজেলা