বিদেশে ৩৫ ভাগই কাজ পায় না
২৪ নভেম্বর ২০২৩, ১২:০৩ এএম | আপডেট: ২৪ নভেম্বর ২০২৩, ১২:০৩ এএম
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশী শ্রমিকরা যচ্ছেন। এদের মধ্যে অনেকেই কাজ না পেয়ে দেশে ফিরে আসছেন। এই বিদেশফেরতদের ৩৫ শতাংশ এসেছেন কাজ না পেয়ে। করোনা মহামারির প্রভাবে চার লাখের বেশি কর্মী দেশে ফিরে এসেছিলেন। গত বছর থেকে প্রতি মাসে প্রায় এক লাখ কর্মী যাচ্ছেন বিভিন্ন দেশে। তবে তাঁদের মধ্যে অনেকেই গিয়ে কাজ পাচ্ছেন না। নানা কারণে তারা দেশে ফিরে আসছেন। দেশে ফিরে আসা কর্মীদের মধ্যে ৩৫ শতাংশ প্রবাসী দেশটিতে গিয়ে তাঁদের কাজ পাননি বলেই ফিরে এসেছেন। ২০২০ সালের পর বিদেশে গিয়ে ফিরে আসা ২১৮ কর্মীর ওপর জরিপ চালিয়ে এ তথ্য পেয়েছে অভিবাসন খাতের বেসরকারি গবেষণা সংস্থা রামরু। এই কর্মীদের মধ্যে ৪২ জন নারী। গত অক্টোবর থেকে নভেম্বর সময়ের মধ্যে এ জরিপ চালায় তারা। গতকাল রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত অসময়ে ফিরে আসা নিয়ে পরামর্শ সভায় জরিপের প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে।
সুইস এজেন্সি ফর ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড কো-অপারেশন ও হেলভেটাসের সহায়তায় গবেষণাটি করেছে রামরু। অনুষ্ঠানে অভিবাসন নিয়ে কাজ করা বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা ও বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার প্রতিনিধিরা বিভিন্ন পরামর্শ দেন। এতে নিবন্ধ উপস্থাপনার পাশাপাশি সঞ্চালনা করেন রামরুর প্রতিষ্ঠাতা চেয়ার ড. তাসনিম সিদ্দিকী। তিনি বলেন, বছরে কত কর্মী পাঠানো হলো, তা সরকারের সফলতা নয়। বরং গুণগত অভিবাসন নিশ্চিত করা হলো সরকারের জন্য সফলতা।
নানা কারণে কর্মীরা দেশে ফিরে এসেছেন বলে জানিয়েছে রামরুর প্রতিবেদন। এতে বলা হয়, কাজ না পেয়ে ফিরে এসেছেন একটি বড় অংশ। এর মধ্যে বিদেশে গিয়ে কোনো কাজ পাননি ১৫ শতাংশ কর্মী। আর ২০ শতাংশ কর্মী তাঁদের চুক্তি অনুসারে কাজ পাননি। কম বেতনের জন্য ফিরেছেন ১৪ শতাংশ কর্মী। আটক হয়ে দেশে ফিরতে বাধ্য হয়েছেন ১৬ শতাংশ কর্মী। বৈধ ভিসা না থাকায় সাড়ে ১০ শতাংশ ও শারীরিক অসুস্থতার কারণে ফিরে এসেছেন ১২ দশমিক ৮ শতাংশ কর্মী।
ফিরে আসা কর্মীদের কয়েকজনের ভিডিও সাক্ষাৎকার তুলে ধরা হয় অনুষ্ঠানে। এর মধ্যে সুমা আকতার নামের এক নারী বলেন, ২০২০ সালে সউদী আরবে যান। তার নিয়োগকর্তার (কফিল) চরিত্র ভালো ছিল না। তাঁকে নিয়মিত যৌন নির্যাতন করেছেন। তিনি অনেক কষ্টে ছয় মাস পার করেছেন। এরপর পালিয়ে গিয়ে দূতাবাসে আশ্রয় নিলে সরকারি ব্যবস্থাপনায় দেশে ফিরে আসেন।
জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সার্বক্ষণিক সদস্য মো. সেলিম রেজা বলেন, বর্তমান প্রক্রিয়ায় লোক পাঠাতে থাকলে ফিরে আসবেই। এটা শুধু মাথা গুনে লোক পাঠানোর প্রক্রিয়া। পুরো প্রক্রিয়ার সংস্কার দরকার। বৈধভাবে বিদেশি গিয়ে কর্মী কেন কাজ পাবেন না? কাজ না থাকলে ভিসা কেন দেওয়া হলো। তারা ভিসা–বাণিজ্য করে কিন্তু স্বীকার করে না। এর জন্য সংশ্লিষ্ট দেশকে জবাবদিহি করাতে হবে। তিনি আরো বলেন, প্রবাসীরা টাকা না পাঠালে কী হয়, তা এখন সবাই টের পাচ্ছেন। হাহাকার এখন। তাই তাঁদের গুরুত্ব দেওয়ার সময় এসেছে। প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র, পররাষ্ট্র ও বেসামরিক বিমান পরিবহন মন্ত্রণালয়কে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে।
রামরুর প্রতিবেদন অনুযায়ী, ফিরে আসা কর্মীদের সবাই অদক্ষ শ্রমিক। বিদেশে গিয়ে নির্মাণ অবকাঠামো, পরিচ্ছন্নতাকর্মী, গৃহকর্মী, দৈনিক শ্রমিক, কৃষি ও কাঠমিস্ত্রির কাজ করেছেন তারা। মাত্র ৩ শতাংশ কর্মী স্বেচ্ছায় ফিরে এসেছেন। আর যাঁরা আটক হয়ে ফিরতে বাধ্য হয়েছেন, তাঁদের ৪৭ শতাংশের বৈধ কাজের অনুমতিপত্র (ইকামা) ছিল না। আগে ফিরে আসায় আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলেও দেশে ফিরে ৭২ শতাংশ ব্যক্তি কোনো ক্ষতিপূরণ পাননি। তাঁদের মধ্যে অনেকেই ফিরে এসে শারীরিক ও মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে গেছেন। তবে এ জরিপে একটা ক্ষেত্রে কিছুটা উন্নতি দেখা গেছে। একসময় বিদেশফেরত কর্মীরা শুধু দালালের নাম বলতেন। এখন সাড়ে ১৫ শতাংশ কর্মী তাঁদের এজেন্সির নাম বলেছেন। ৭৪ শতাংশ কর্মী বলেছেন দালালের মাধ্যমে যাওয়ার কথা।
বিএমইটির মহাপরিচালক সালেহ আহমদ মোজাফফর বলেন, তিন লাখ টাকা খরচ করে বিদেশ গিয়ে যিনি কাজ না পেয়ে ফিরে আসেন, তিনি আসলে পাচারের শিকার। এর জন্য সচেতনতা আরও বাড়াতে হবে। দালালদের জবাবদিহির আওতায় আনা যায় না। তাই জেলা প্রশাসক থেকে শুরু করে ইউনিয়ন তথ্যকেন্দ্র পর্যন্ত বৈধ রিক্রুটিং এজেন্সির তালিকা পাঠানো হচ্ছে। এতে করে কর্মীরা যাচাই করে বিদেশে যেতে পারবেন।
বাংলাদেশ মহিলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি সালমা আলী বলেন, অধিকাংশ নারী কর্মী নানাভাবে নির্যাতিত হয়েছেন। তাই বিমানবন্দরে তাঁদের বিস্তারিত তথ্য নিয়ে দূতাবাসে জানাতে হবে। দূতাবাস থেকে নিয়মিত খোঁজ রাখতে হবে, তাহলে এটি কমবে।
সরকারি মালিকানাধীন রিক্রুটিং এজেন্সি বোয়েসেলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মল্লিক আনোয়ার হোসেন বলেন, দূতাবাসের মাধ্যমে নিয়োগকর্তা কোম্পানির সব তথ্য যাচাই-বাছাই করে চুক্তি করা হয়। তাই বোয়েসেল থেকে পাঠানো কর্মীরা অসুস্থতা ছাড়া ফিরে আসেন না। তবে ৯৯ শতাংশ কর্মী পাঠায় বেসরকারি খাত। তাদের জন্য যাচাই করা কঠিন।
বেসরকারি রিক্রুটিং এজেন্সি মালিকদের সংগঠন বায়রার মহাসচিব আলী হায়দার চৌধুরী বলেন, বছরে একবার অন্তত দূতাবাসের কর্মকর্তাদের সঙ্গে অংশীজনদের বৈঠক করা উচিত। এতে করে অনেক সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
ফিরেই গোলের দেখা পেলেন রোনালদো,নাসেরের সহজ জয়
কোহলি রিভিউ না নেওয়ার যে কারণ জানালেন সঞ্জয় মাঞ্জরেকার
মাঠের বাইরে নতুন পরিচয়ে মেসি
দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিহত করার আহ্বান উপদেষ্টা নাহিদের
মালয়েশিয়া আন্তর্জাতিক হালাল শোকেসের ২০তম আসরে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের জেলা প্রতিনিধি সম্মেলন অনুষ্ঠিত দেশকে অস্থিতিশীল করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে পরাজিত শক্তি
শ্রীলঙ্কায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচন কাল
‘মব জাস্টিস’ বন্ধের আহ্বান বাংলাদেশ তরুণ কলাম লেখক ফোরামের
সাত দফা দাবিতে মানববন্ধন ও সমাবেশ
গৌরনদীর দই, একবার খাইলেও আর একবার খাই
নোয়াখালীতে জীবাশ্ম জ্বালানিতে বিনিয়োগ বন্ধের দাবি
স্বর্ণের দাম বেড়ে রেকর্ড ২,৬০৯ ডলার ছাড়িয়েছে
বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধ ও বিচার দাবিতে খুলনায় মানববন্ধন
গাজায় অব্যাহত ইসরাইলি গণহত্যা ওআইসির নেতারা চেয়ে চেয়ে দেখছেন
চাঁদপুর শহরে সড়ক সংস্কার কাজে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ
সেনা কর্মকর্তাদের ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেয়া প্রসঙ্গে
নোয়াখালীতে ৪৪ দিন পর লাশ উত্তোলন
ভারতের দোসর ও হাসিনামিডিয়ার প্রশ্নবিদ্ধ ভূমিকা
আশাশুনিতে হাজরাখালির নেটপাটায় পানিবন্দি ২শ’ পরিবার
জামায়াত ক্ষমতায় গেলে নারীদের অধিকার খর্ব হবে না: সেলিম উদ্দিন