জামিনে কারাগার থেকে বেরোনোর পরদিনই আওয়ামী লীগে যোগ দিলেন বিএনপির ভাইস-চেয়ারম্যান মুহাম্মদ শাহজাহান ওমর। বিএনপির বর্জন করা আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী হিসেবে ঝালকাঠি-১ আসনে মনোনয়নপত্র জমাও দিয়েছেন তিনি। গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর কাওরানবাজারের ইউটিসি ভবনে নিজের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি একথা জানান। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, বিএনপি থেকে পদত্যাগ করেছেন। আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছেন। তারপর আওয়ামী লীগ তাঁকে ঝালকাঠি-১ আসন থেকে দলীয় মনোনয়ন দিয়েছে। তিনি অনলাইনে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।

বিএনপির নেতা শাহজাহান ওমরকে ৪ নভেম্বর রাতে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরদিন তাঁকে ঢাকার নিউমার্কেট থানার বাসে আগুন দেওয়ার একটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে হাজির করে পুলিশ। ওই মামলায় তাঁকে তিন দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়। গত বুধবার ঢাকার প্রথম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালত থেকে জামিন পান শাহজাহান ওমর। সন্ধ্যার পরই কেরানীগঞ্জে ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্তি পান তিনি।
এরপর গতকাল বিএনপি ছেড়ে আওয়ামী লীগে যোগ দেন শাহজাহান ওমর। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে গতকাল দেখা হয়েছে কি না, এ প্রশ্নের জবাবে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘দেখা হতেই পারে।’

ঝালকাঠি-১ আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য বজলুল হক হারুন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত যে প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে, তাতেও এই আসনে বজলুল হক হারুনকেই মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। কিন্তু কারাগার থেকে বের হয়ে তার দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক দল বিএনপি থেকে বেরিয়ে আওয়ামী লীগে যোগ দেন শাহজাহান ওমর এবং ঝালকাঠি-১ আসন থেকে নৌকা প্রতীকে মনোনয়নও জমা দেন।

শাহজাহান ওমর আওয়ামী লীগে যোগদানের ঘোষণা দেওয়ার পর তাঁকে বহিষ্কার করেছে বিএনপি। দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলেছেন, বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার মুহাম্মদ শাহজাহান ওমর দলের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে গুরুতর দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করেছেন। তাই বিএনপির গঠনতন্ত্র মোতাবেক মুহাম্মদ শাহজাহান ওমরকে দলের প্রাথমিক সদস্য পদসহ সকল পর্যায়ের পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।

শাহজাহান ওমর ছাড়াও বিএনপির সদ্য বহিষ্কৃত নির্বাহী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার আবুল কাশেম ফখরুল স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ঝালকাঠি-১ আসনে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন।
আওয়ামী লীগে যোগদানের বিষয়ে তিনি বলেন, জিয়াউর রহমানের রাজনীতির চেয়ে বঙ্গবন্ধুর রাজনীতি উন্নত। জিয়ার রাজনীতি থেকে বঙ্গবন্ধুর রাজনীতিতে যোগদান করাকে তো আমি প্রমোশন মনে করি। বিএনপির বর্তমান নেতৃত্বের সমালোচনা করে তিনি বলেন, জিয়াউর রহমান ছিলেন আমার শিক্ষক আর বেগম খালেদা জিয়া আমাকে ¯েœহ করতেন। তাদের সঙ্গে আমি রাজনীতি করেছি। আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা, আমার ভিন্ন অহঙ্কার রয়েছে। কিন্তু বর্তমানে বিএনপির নেতৃত্ব কচিকাচার হাতে চলে গেছে।

২৮ অক্টোবর পর্যন্ত আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন ও সমালোচনা করলেও কি কারণে আবার আওয়ামী লীগে গেলেন? এবিষয়ে সাংবাদিকরা জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, আমার বয়স ৭৭ বছর। বিএনপি নির্বাচন বর্জন করেছে। কবে আবার নির্বাচন করবে বা আমি করতে পারবো? আমার নির্বাচনী আসনের মানুষ আমার জন্য অনেক কিছু করেছে, এবার আমি তাদের জন্য নির্বাচনে অংশ নিচ্ছি এবং তাদের জন্য কিছু করতে চাই। তাহলে স্বতন্ত্র কেন নয়? প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়াটা আমার কাছে কিছু মনে হয় না। শুধু এমপি হওয়ার জন্যই দল পরিবর্তন করেছেন কিনা এমন প্রশ্নে তিনি সুস্পষ্ট কোন বক্তব্য দেননি।