১০১ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ঋণ কত?
১৫ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:০৯ এএম | আপডেট: ১৫ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:০৯ এএম
বিপিডিবির কাছে বিদ্যুৎ কোম্পানিগুলোর বিপুল অংকের বিল বকেয়া পড়েছে। এতে অর্থসংকটে পড়ে পরিচালন ব্যয় মেটাতে হিমশিম খাওয়ার পাশাপাশি ব্যাংক ঋণ পরিশোধ করতে পারছে না এসব কোম্পানি। আগের বকেয়া পরিশোধ না হওয়ায় ব্যাংকে জ্বালানি আমদানির জন্য নতুন এলসি খুলতে গিয়েও কোম্পানিগুলোকে বিপাকে পড়তে হচ্ছে। এদিকে সারাদেশের শতাধিক জ্বালানি তেলভিত্তিক (এইচএফও) সরকারি ও বেসরকারি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কাছে চলতি মূলধন ও প্রকল্প অর্থায়ন সংক্রান্ত ঋণের তথ্য জানতে চেয়েছে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি)। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে এ তথ্য জানতে চেয়েছে সংস্থাটি। বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর ঋণের তথ্য পাওয়ার পর সে অনুযায়ী তাদের বকেয়া অর্থ পরিশোধের উদ্যোগ নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন সংস্থাটির কর্মকর্তারা।
সম্প্রতি বিপিডিবির প্রধান প্রকৌশলী (প্রাইভেট জেনারেশন) এবিএম জিয়াউল হক স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এ তথ্য জানা গেছে। চিঠিতে বলা হয়, দেশের ১০১টি বিদ্যুৎ কোম্পানির কাছে চলতি মূলধন ও প্রকল্প অর্থায়ন বাবদ মেয়াদোত্তীর্ণ ঋণের তথ্য জানতে চাওয়া হয়েছে। এতে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের স্মারকের বরাত দিয়ে নির্ধারিত ফরম্যাটে ঋণের তথ্য দিতে বিদ্যুৎ কোম্পানিগুলোর চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কাছে অনুরোধ করা হয়। এক্ষেত্রে চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত বিপিডিবির কাছে বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর বকেয়া অর্থের বিপরীতে কী পরিমাণ চলতি মূলধন ঋণ নেয়া হয়েছে, সে তথ্য জানতে চাওয়া হয়েছে। এ সময় পর্যন্ত নেয়া প্রকল্প অর্থায়ন ঋণের তথ্য দিতে বলা হয়েছে চিঠিতে। পাশাপাশি চলতি মূলধন ও প্রকল্প অর্থায়ন বাবদ মেয়াদোত্তীর্ণ ঋণের তথ্যও চেয়েছে বিপিডিবি। সামিট পাওয়ার, ইউনাইটেড পাওয়ার, কনফিডেন্স পাওয়ার, ডরিন পাওয়ার, বারাকা পাওয়ার, শাহজিবাজার পাওয়ার, ওরিয়ন পাওয়ার, মিডল্যান্ড পাওয়ার, খুলনা পাওয়ার ও এসএস পাওয়ারের মতো বেসরকারি খাতের আরো বেশকিছু বিদ্যুৎ কোম্পানির কাছে ঋণের তথ্য জানতে চাওয়া হয়েছে। নর্থ-ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি লিমিটেড, রুরাল পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড, ইলেকট্রিসিটি জেনারেশন কোম্পানি অব বাংলাদেশ, আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন কোম্পানি লিমিটেডের মতো সরকারি কোম্পানিও চিঠি পেয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশ-চায়না পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড, বাংলাদেশ-ইন্ডিয়া ফ্রেন্ডশিপ পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড, আরপিসিএল-নরিনকো ইন্টারন্যাশনাল পাওয়ার লিমিটেড (আরএনপিএল) এবং আদানি পাওয়ার (ঝাড়খ-) লিমিটেডের মতো দেশী-বিদেশী মালিকানাধীন বিদ্যুৎ কোম্পানির ঋণের তথ্যও জানতে চাওয়া হয়েছে।
নাম অপ্রকাশ না করার শর্তে বিপিডিবির একজন কর্মকর্তারা জানান বিপিডিবির কাছে বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর বিভিন্ন বিল বাবদ বড় অংকের অর্থ পাওনা রয়েছে। অবস্থায় সরকার তেলভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর আর্থিক অবস্থা কেমন সেটি মূল্যায়ন করতে চায়। কোম্পানিগুলো যাতে সামনে তেল কিনতে গিয়ে অর্থ সংকটে না পড়ে, সেজন্যই তাদের কাছে ঋণের তথ্য জানতে চাওয়া হয়েছে। এর ভিত্তিতে পরবর্তী সময়ে কোম্পানিগুলোর বকেয়া অর্থ পরিশোধের উদ্যোগ নেয়া হবে। বেসরকারি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ ইনডিপেনডেন্ট পাওয়ার প্রডিউসারস অ্যাসোসিয়েশন (বিআইপিপিএ) সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বিদ্যুৎ ক্রয় বাবদ বিপিডিবির কাছে বেসরকারি কোম্পানিগুলোর আট মাসের বকেয়া পাওনা রয়েছে। বকেয়া এ অর্থের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা। গত এপ্রিল থেকে এ বকেয়া পাওনা পরিশোধ করা হয়নি। প্রতি মাসে বিপিডিবিতে যে পরিমাণ বিল জমা পড়ছে তার ২৫-৩০ শতাংশ দেয়া হচ্ছে বলে দাবি করেছেন আইপিপি উদ্যোক্তারা। বিল না পাওয়ায় এরই মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর অর্থ সংকট তীব্র হয়ে উঠেছে। শীর্ষস্থানীয় বিদ্যুৎ কোম্পানিগুলোও এখন কর্মীদের বেতন-ভাতা পরিশোধে হিমশিম খাচ্ছে। আবার বিদ্যুৎ কেন্দ্রে বিনিয়োগ করা ব্যাংকগুলোর ঋণের কিস্তিও মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে যাচ্ছে। এতে দেশের অনেক বিদ্যুৎ কোম্পানিই খেলাপির ঝুঁকিতে রয়েছে। বিল বকেয়া থাকার কারণে তারা ব্যাংকের অর্থ পরিশোধ করতে পারছেন না। এ অবস্থায় ব্যাংকের কর্মকর্তারা কোম্পানিতে এসে টাকার জন্য তাগাদা দিচ্ছেন। অন্যদিকে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জ্বালানি হিসেবে তেল আমদানির জন্য নতুন করে এলসি খুলতে হয়। কিন্তু ব্যাংকের আগের পাওনা পরিশোধ না করার কারণে ব্যাংকগুলো নতুন করে এলসি খুলতে অপারগতা জানাচ্ছে। এ অবস্থায় বেসরকারি বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোকে দেয়া ঋণ নিয়ে ব্যাংকারদের উদ্বেগও বাড়ছে। বেসরকারি বিদ্যুৎ খাতের উদ্যোক্তা ও কনফিডেন্স গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান ইমরান করিম জানান, বিপিডিবির কাছ থেকে আমরা ঋণের তথ্য প্রদানসংক্রান্ত একটি চিঠি পেয়েছি।
বেসরকারি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের পাশাপাশি সরকারি বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর অর্থও পরিশোধ করতে পারছে না বিপিডিবি। এতে করে সরকারি বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোও অর্থ সংকটে ভুগছে। ঋণের কিস্তি পরিশোধের জন্য তহবিলের অর্থ ও ব্যাংকে গচ্ছিত আমানতের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে এসব কোম্পানিকে। দেশের অন্যতম বৃহৎ পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের বিদ্যুৎ বিল বাবদ চলতি বছরের মে থেকে নভেম্বর পর্যন্ত ৬ হাজার কোটি টাকার বেশি বকেয়া জমেছে বিপিডিবির। এর আগে গত বছরের ডিসেম্বরে অর্থ সংকটের কারণে পায়রা বিদ্যুৎ কেন্দ্র কয়লার দাম ও ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে ব্যর্থ হয়েছিল। পাশাপাশি সংস্থাটির কাছে আদানি পাওয়ারের ঝাড়খ- বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বড় অংকের বিদ্যুৎ বিল বকেয়া হয়ে পড়েছে।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
অতিরিক্ত সময়ে এন্দ্রিকের জোড়া গোলে জিতে শেষ আটে রিয়াল
গ্রিক সাইপ্রিয়ট প্রশাসনকে অস্ত্র বিক্রয়ের মার্কিন সিদ্ধান্তে টিআরএনসি-এর ক্ষোভ ও উদ্বেগ
নরসিংদীতে বাস-ট্রাকের ত্রিমুখী সংঘর্ষ, আহত ৮
পাবনায় জনজীবনে ভয়াবহ হচ্ছে ভার্চুয়াল আসক্তি
মাঝ আকাশে ভেঙে টুকরো ইলন মাস্কের ‘স্টারশিপ’
বাংলাদেশ-ভারতকে অতীত কবর দিয়ে নতুন করে শুরু করতে হবে: সুনন্দা কে দত্ত রায়
সুপ্রিম কোর্টের বিচারক নিয়োগ অধ্যাদেশের খসড়া অনুমোদন
সাইফ ইস্যুতে কেজরিওয়ালের বিস্ফোরক মন্তব্য, পাল্টা প্রতিক্রিয়া বিজেপি নেতার
ট্রাম্পের শুল্ক ছাড়াও চীনের অর্থনৈতিক সংকটে তিনটি বড় চ্যালেঞ্জ !
খেজুরের রস খেতে গিয়ে গাড়িচাপায় মোটরসাইকেলের ৩ আরোহী নিহত
দিয়ালোর দুর্দান্ত হ্যাটট্রিকে ইউনাইটেডের নাটকীয় জয়
আজারবাইজান-জর্জিয়া সম্পর্ক শক্তিশালীকরণে উচ্চপর্যায়ের বৈঠক
আসাদগেটে সিএনজি-ট্রাক সংঘর্ষ, একজনের মৃত্যু
মরক্কোতে নৌকা ডুবে ৪৪ পাকিস্তানির মৃত্যু
'বন্ধী মুক্তির চুক্তি' চূড়ান্ত জানিয়েছে নেতানিয়াহুর দপ্তর
সুদানের সেনাপ্রধানের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ যুক্তরাষ্ট্রের
উ. কোরিয়ার ইউক্রেনে সামরিক অংশগ্রহণ একটি কৌশলগত ভুল : রব বাউয়ার
সাইফ তো লিস্টে ছিল না,হঠাৎ হামলা হয়ে গেছেঃ মমতা
ঘণকুয়াশায় সাড়ে ৫ ঘন্টা আরিচা-কাজিরহাট এবং ৪ ঘন্টা পর পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুটে ফেরি চলাচল শুরু হয়েছে
মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা আজ, মানতে হবে যেসব নির্দেশনা