১৫ বছর ধরে পুরুষদের হিজড়া বানাতেন ভুয়া ডাক্তার হাদিউজ্জামান
২৫ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৭:২৪ পিএম | আপডেট: ২৫ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৭:৩১ পিএম
ঢাকার জেলার আশুলিয়ায় রাকিব হাসান নামে এক যুবককে হত্যা করায় চম্পা ওরফে স্বপ্না হিজড়াকে গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি স্বাভাবিক পুরুষ থেকে হিজড়ায় রূপান্তরিত হয়েছিলেন। পুরুষ থেকে হিজড়া বানানোর রহস্য উদঘাটন করতে চঞ্চল্যকর তথ্য পায় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। মোহাম্মদ হাদিউজ্জামান। খুলনায় একটি ফার্মেসীর দোকান ছিল তার। এক পর্যায়ে খুলনায় সার্জারি চিকিৎসক গৌরাঙ্গ চন্দ্রের সহকারী হিসেবে কাজ করতেন। গৌরাঙ্গ সেখানে গোপনে স্বাভাবিক পুরুষের শরীরে অস্ত্রোপচার ও ওষুধ প্রয়োগের মাধ্যমে তৃতীয় লিঙ্গের (হিজড়া) মানুষে পরিণত করতেন। তার সহকারী (কম্পাউন্ডার) হিসেবে কাজ করে এ বিদ্যা শিখে নেন হাদি। গৌরাঙ্গ খুন হওয়ার পর তিনি নিজেই চিকিৎসক সেজে এই লাইনে নেমে পড়েন। এরপর গত ১৫ বছরে এক হাজারের বেশি পুরুষকে হিজড়ায় রূপান্তর করেছেন হাদিউজ্জামান।
নিজে নিউরো বা কসমেটিকস সার্জন না হলেও পরিচয় দিতেন স্বীকৃত মেডিকেলের চিকিৎসক হিসেবে।
সম্প্রতি একটি হত্যা মামলার তদন্তের সূত্র ধরে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। গ্রেপ্তার পর এমন সব চাঞ্চল্যকর তথ্য পেয়েছে পিবিআই।
হাদিউজ্জামানকে জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে পিবিআই বলছে, ঢাকার নিকেতন, আফতাবনগর ও খুলনায় ক্লিনিক বা ভাড়া বাসায় তার হিজড়ায় রূপান্তরের অপারেশন থিয়েটার রয়েছে। প্রতিটি অস্ত্রোপচারের জন্য তিনি দেড় থেকে ২ লাখ টাকা নিতেন।
এ বিষয়ে পিবিআই ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার কুদরত-ই-খুদা ইনকিলাবকে বলেন, ঢাকার আশুলিয়ায় রাকিব হাসান নামে এক যুবককে হত্যার মামলায় জড়িত চম্পা ওরফে স্বপ্না হিজড়াকে সম্প্রতি গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি স্বাভাবিক পুরুষ থেকে হিজড়ায় রূপান্তরিত হয়েছিলেন।
হাদিউজ্জামানকে জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে পিবিআইয়ের এই কর্মকর্তা জানায়, একজন চিকিৎসক তাকেসহ অনেককে হিজড়ায় রূপান্তর করেছেন। পিবিআই প্রধান বনজ কুমার মজুমদারের নির্দেশনা ও তত্ত্বাবধানে তখন থেকে সেই চিকিৎসককে খোঁজার চেষ্টা শুরু হয়। একপর্যায়ে দুই সপ্তাহ আগে যশোর থেকে কথিত চিকিৎসক হাদিউজ্জামানকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর বড় একটি চক্রের সন্ধান পাওয়া গেছে, যারা দীর্ঘদিন ধরে অনৈতিক ও ঝুঁকিপূর্ণ এ ধরনের জেন্ডার রূপান্তর প্রক্রিয়ায় জড়িত। তাদের আইনের আওতায় আনার পাশাপাশি বিস্তৃত এ চক্রের মূলোৎপাটনের উদ্দেশ্যে কাজ করছে পিবিআই।
পিবিআই সুত্রে জানা যায়, হাদিউজ্জামান প্রতিদিন এক থেকে ২ জনকে থেকে হিজড়া বানাতে অপারেশন করতেন। তার জবানবন্দিতেই তিনি এক হাজারের বেশি পুরুষকে হিজড়ায় রূপান্তরের কথা স্বীকার করেছন। কিন্তু বাস্তবে এই চিত্র আরও বেশি। সপ্তাহে ৫-৭ জনকে সে রুপান্তরিত করতো।
সূত্রে আরও জানা যায়, দেশের বিভিন্ন স্থানে তার ক্লিনিক বা অস্ত্রোপচারের ব্যবস্থা রয়েছে। এর মধ্যে খুলনার প্রত্যন্ত এলাকায় তার মালিকানাধীন একটি ক্লিনিক অন্যতম। এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন জায়গায় সে চুক্তিতে বাসা বা ক্লিনিক ভাড়া নিয়ে এসব কার্যক্রম চালাতো। রাজধানীর নিকেতন ও আফতাবনগরের দুটি স্থানে অভিযান চালায় পিবিআই।
পিবিআই বলছে, নিকেতনের এই বাসা থেকে গেলে অচেতন করাসহ বিভিন্ন ধরনের ওষুধ, লোম ও আঁচিল অপসারণের সরঞ্জাম, চিকিৎসকদের ব্যবহৃত আধাশোয়া করে রাখার আরামকেদারা গোছের সেটআপ পাওয়া গেছে। আবার আফতাবনগরের একটি ভাড়া বাসাতেও হরমোন ইনজেকশন, স্যালাইন, অস্ত্রোপচারে ব্যবহৃত ওষুধ ও সরঞ্জাম পাওয়া গেছে।
পিবিআই ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার কুদরত-ই-খুদা বলেন, ঘটনার অনুসন্ধানে নেমে দেখা যায়, সমাজে হিজড়া হিসেবে পরিচিতদের ৯০ থেকে ৯৫ শতাংশই ভুয়া। এদের মধ্যে তিনটি ধরন রয়েছে। একটি হলো হরমোন ইনজেকশন ও অন্যান্য ওষুধ দিয়ে পুরুষ থেকে নারীস্বভাবে রূপান্তর করা। আরেকটি ধরনের ক্ষেত্রে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে পুরুষের গোপনাঙ্গ বাদ দেয়া এবং নারীসুলভ শারীরিক গড়ন তৈরি করা হয়। আর কিছু ক্ষেত্রে অস্ত্রোপচার ও ওষুধ-ইনজেকশন দুই পদ্ধতিই ব্যবহার করা হয়। এর বাইরে থাকা ৫ থেকে ১০ শতাংশ হয়তো জন্মগতভাবেই হিজড়া।
পিবিআই এর অনুসন্ধান বলছে, গ্রেপ্তারের পর চম্পা ওরফে স্বপ্না জানিয়েছেন, তিনি একজন স্বাভাবিক পুরুষ ছিলেন। তার নাম ছিল নওশাদ মিয়া। তার ১২ বছর বয়সী ছেলে রয়েছে। তবে স্ত্রীর মৃত্যুর পর তিনি বিষণ্নতায় ভুগতে থাকেন আর্থিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েন। এবং কর্মবিমুখ হয়ে বেকার জীবনযাপন করেন। ওই সময় দেলু হিজড়ার সঙ্গে তার পরিচয় হয়। দেলু প্রকৃতপক্ষে হিজড়া নন, তিনি স্বাভাবিক পুরুষ। হিজড়া সেজে নানা অপকর্ম করেন। তিনি নওশাদকে হিজড়া হওয়ার প্রস্তাব দেন।
দেলু জানান, হিজড়া হলে তিনি সহজে অনেক টাকা আয় করতে পারবেন। সেই সঙ্গে আনন্দ-ফুর্তিতে দিনযাপন করতে পারবেন। তার কথায় প্রলুব্ধ হয়ে নওশাদ হিজড়াদের দলে যোগ দেন।
পিবিআই পুলিশ সুপার কুদরত-ই-খুদা বলেন, সাধারণ পুরুষদের নানা রকম প্রলোভনের ফাঁদে ফেলে হিজড়াদের দলে ভেড়ানো হয়। পরে অস্ত্রোপচার বা ওষুধের মাধ্যমে তাদের হিজড়ায় রূপান্তর করা হয়। একইভাবে দেলুর দলে যোগ দেয়ার দেড় বছর পর নওশাদ অস্ত্রোপচার করে মেয়ে হিজড়া হন। এটি অপরাধ।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
ভিনিসিউস-এমবাপ্পে ঝলকে রিয়ালের বড় জয়
ফের বিবর্ণ ইউনাইটেড হারাল পয়েন্ট
দিয়াজের জোড়া গোলে চূড়ায় অলরেডসরা
এবার বুন্দেসলীগায়ও বায়ার্নের গোল উৎসব
দিয়াজের জোড়া গোলে চূড়ায় অলরেডসরা
দ্বিতীয় ওয়ানডেতেও অজিদের অনায়স জয়
প্লটবঞ্চিত পূর্বাচলের আদিবাসিন্দাদের ৩শ’ ফুট সড়কে অবস্থান : বিক্ষোভ অব্যাহত
দেশে সংস্কার ও জবাবদিহি প্রতিষ্ঠার আহ্বান
ছাত্রলীগের হামলার শিকার শিক্ষার্থীদের মামলা করতে বললেন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ
উম্মাহর কল্যাণে মুসলমানদের ঐক্যের বিকল্প নেই
বৈরুতে ইসরাইলি হামলায় হিজবুল্লাহর শীর্ষ কমান্ডারসহ নিহত ১৪
পুলিশের লুট হওয়া অস্ত্র অপরাধে ব্যবহারের আশঙ্কা
মস্কোয় হামলার উপযুক্ত ক্ষেপণাস্ত্র কিয়েভে পাঠাবে না জার্মানি
জিয়ার ভূমিকাকে অবহেলা করায় পাহাড়ে সমস্যা হচ্ছে : জামায়াত নেতা শাহজাহান চৌধুরী
মানুষের প্রত্যাশা পূরণ করতে ঐক্যবদ্ধ থাকার কোনো বিকল্প নেই: তারেক রহমান
বিচার বিভাগে দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা প্রধান বিচারপতির
একদিনে ৮৪৩ জনের ডেঙ্গু শনাক্ত, মৃত্যু ১
কুষ্টিয়ায় বিদ্যুৎস্পৃষ্টে সুগার মিলের নিরাপত্তা প্রহরীর মৃত্যু
সাজেক ভ্রমণে আটকা পড়েছেন ৮০০ পর্যটক
‘শুধু সংস্কারে থেমে থাকলেই চলবে না, অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জন করতে হবে’ : তারেক রহমান