ঢাকা   শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৬ আশ্বিন ১৪৩১
আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা

সুশাসনের অঙ্গীকার

Daily Inqilab স্টাফ রিপোর্টার

২৮ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৮:৪৫ পিএম | আপডেট: ২৮ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৮:৪৫ পিএম

১১ দফা অগ্রাধিকারসহ আর্থিক খাতের দূর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স, মানবাধিকার লঙ্ঘন প্রতিহতের গুরুত্বারোপ :: ঋণ খেলাপির শাস্তি, বিদেশে পাচার করা অর্থ ফেরত আনা এবং কর্মসংস্থান ও দ্রব্যমূল্য কমানো বিশেষ অঙ্গীকার :: বিগত ১৫ বছরের সরকার পরিচালনায় যা কিছু ভুলত্রুটি যদি হয়ে থাকে তার দায়ভার আমি নিচ্ছি : শেখ হাসিনা

কর্মসংস্থানের পাশাপাশি দ্রব্যমূল্য কমানোসহ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারের সেøাগান ‘স্মার্ট বাংলাদেশ, উন্নয়ন দৃশ্যমান, বাড়বে এবার কর্মসংস্থান’। ১১টি দফাকে অগ্রাধিকার নিয়ে সুশাসন নিশ্চিত করার অঙ্গীকার করা হয়েছে। নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণার সময় আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বর্তমান সরকারের ১৫ বছরের ভুলত্রুটির প্রসঙ্গ তুলে ধরে বলেন, বিগত ১৫ বছরের সরকার পরিচালনার পথপরিক্রমায় যা কিছু ভুলত্রুটি, যদি হয়ে থাকে তার দায়ভার আমি নিচ্ছি। সাফল্যের কৃতিত্ব আপনাদের, দেশের মানুষের, বাংলাদেশের জনগণের। আমাদের ভুলত্রুটিগুলো ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। আমরা কথা দিচ্ছি, অতীতের ভুলভ্রান্তি থেকে শিক্ষা নিয়ে আপনাদের প্রত্যাশা অনুযায়ী ভবিষ্যৎ কর্মকা- পরিচালনা করব।

নির্বাচনী ইশতেহারে মানবাধিকার লঙ্ঘনের চেষ্টা প্রতিহত, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও অবাধ তথ্য প্রবাহের অঙ্গীকার করা হয়েছে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতির অঙ্গীকার করেছে ক্ষমতাশীন দলটি। এর মধ্যে আর্থিক খাতে দুর্নীতি প্রতিরোধ অত্যতম অঙ্গীকার। যার মধ্যে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে যেসব অর্থ-সম্পদ পাচার হয়েছে তা ফেরত আনার উদ্যোগ নেওয়া অন্যতম। গতকাল বুধবার সকাল সাড়ে ১০টায় রাজধানীর একটি হোটেলে দলের নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেন দলের সভাপতি শেখ হাসিনা।

২০০৮ সালে ‘দিন বদলের সনদ’ শিরোনামে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখিয়ে ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ। এরপর ২০১৪ সালেও ‘এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ’ শিরোনামে ১০টি মেগাপ্রকল্প বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দিয়ে টানা দ্বিতীয়বার ক্ষমতারোহণ করে দলটি। একইভাবে ২০১৮ সালে ‘সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ’ শিরোনামে ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ ও ২১০০ সালের মধ্যে নিরাপদ ব-দ্বীপ গড়ে তোলার পরিকল্পনা দেওয়া হয়। যদিও এবারের টার্গেট ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গঠন, যেখানে কর্মসংস্থান নিশ্চিত করবে আওয়ামী লীগ।

আওয়ামী লীগের এবারের নির্বাচনী ইশতেহারে বিশেষ অঙ্গীকার করা হয়েছে, দ্রব্যমূল্য সকালের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখা, কর্মোপযোগী শিক্ষা ও যুবকদের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করা, আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ে তোলা, লাভজনক কৃষির লক্ষ্যে সমন্বিত কৃষিব্যবস্থা, যান্ত্রিকীকরণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণে বিনিয়োগ বৃদ্ধি, দৃশ্যমান কাঠামো সুবিধা নিয়ে এবং বিনিয়োগ বৃদ্ধি করে শিল্পের প্রসার ঘটনানো, ব্যাংকসহ আর্থিক খাতে দক্ষতা ও সক্ষমতা বৃদ্ধি করা, নিম্ন আয়ের মানুষদের স্বাস্থ্যব্যবস্থা সুলভ করা, সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থায় সকলকে যুক্ত করা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কার্যকারিতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা, সাম্প্রদায়িকতা এবং সকল ধরনের সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ রোধ, সর্বস্তরে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা সুরক্ষা এবং চর্চার প্রসার ঘটানো।

দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি নিয়ে নির্বাচনী ইশতেহারে বলা হয়েছে, দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি অব্যাহত থাকবে। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে দুর্নীতি মোকাবিলায় কার্যকর পন্থা ও উপায় নির্বাচনপূর্বক তা বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। জ্ঞাত আয়বহির্ভূত অবৈধ সম্পদ অর্জন, ঘুষ, ক্ষমতার অপব্যবহার, স্বজনপ্রীতি, পেশিশক্তির দৌরাত্ম্য ও দুর্বৃত্বায়ন নির্মূলে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ চলমান থাকবে। প্রশাসনে দুর্নীতি নিরোধের জন্য ভূমি প্রশাসন, পুলিশ বিভাগ, আদালত, শিক্ষা, স্বাস্থ্য সেবাসহ সকল ক্ষেত্রে সূচিত তথ্যপ্রক্তির ব্যবহার সম্প্রসারণ করা হবে। শিক্ষার্থীদের মধ্যে দুর্নীতিবিরোধী মনোভাব গড়ে তোলার জন্য পাঠ্যক্রমে দুর্নীতির কুফল ও দুর্নীতি রোধে করণীয় বিষয়ে অধ্যায় সংযোজন করা হবে।

এ সময় আগামী ৭ জানুয়ারি নির্বাচনের পর সরকারের চ্যালেঞ্জ উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, এ মুহূর্তে বাংলাদেশ এক ক্রান্তিকালে দাঁড়িয়ে। স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে শামিল হতে যাচ্ছে দেশ। এ উত্তোরণ যেমন একদিকে সম্মানের, অন্যদিকে বিশাল চ্যালেঞ্জের। ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত সরকারকে এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার সক্ষমতা থাকতে হবে। সে সমক্ষতা একমাত্র আওয়ামী লীগেরই আছে। আওয়ামী লীগই পারবে এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে দেশকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে। যে কোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে দেশকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়াই আমাদের লক্ষ্যে।

আওয়ামী লীগের ঐতিহাসিক অর্জনগুলো তুলে ধরে আওয়ামী লীগ প্রধান বলেন, মায়ের ভাষায় কথা বলার অধিকার আদায়, মাতৃভূমির স্বাধীনতা থেকে শুরু করে এ দেশের যা কিছু মহৎ অর্জন, তা এসেছে আওয়ামী লীগের হাত ধরে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ধারক-বাহক বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের হাত ধরেই ২০৩১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ উচ্চ মধ্যম আয়ের এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত-সমৃদ্ধ স্মার্ট সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠিত আমরা করবো।

শেখ হাসিনা বলেন, যত দিন আল্লাহ বাঁচিয়ে রাখেন, সুস্থ রাখেন, ততদিন যা কর্তব্য হিসেবে আমি গ্রহণ করেছি, সেখান থেকে সরে আসব না। আপনাদের সেবক হিসেবে কাজ করার মধ্য দিয়েই আমি আমার বাবার স্বপ্ন পূরণ করতে চাই। তিনি আরো বলেন, মা-বাবা ভাই, আত্মীয় স্বজন সকলকে হারিয়ে আমি রাজনীতিতে এসেছি শুধু আমার বাবা, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অসমাপ্ত কাজ শেষ করে এ দেশের মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে। এ কাজ করতে গিয়ে আমাকে মৃত্যুর মুখোমুখি হতে হয়েছে বারবার। কিন্তু বাবার কথা ভেবে, আপনাদের কথা ভেবে আমি পিছপা হইনি। আওয়ামী লীগ সফলভাবে দেশ পরিচালনা করছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেছেন, গত ১৫ বছরে বাংলাদেশের রূপান্তর ঘটেছে। আজকের বাংলাদেশ দারিদ্র্যক্লিষ্ট ও অর্থনৈতিকভাবে ভঙ্গুর বাংলাদেশ নয়, আজকের বাংলাদেশ বদলে যাওয়া বাংলাদেশ। সম্ভাবনার হাতছানি দেওয়া দুর্বার গতিতে এগিয়ে চলা দুরন্ত বাংলাদেশ।

বিএনপি-জামায়াতের জ্বালাও-পোড়াওয়ের সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, হরতাল-অবরোধের নামে যানবাহন পোড়ানো, মানুষ হত্যা, রেললাইন উপড়ে ফেলাসহ বিভিন্ন নাশকতা চালিয়ে যাচ্ছে। মা ও শিশুর অগ্নিদগ্ধ লাশ সবার বিবেককে প্রচ-ভাবে নাড়া দিয়েছে। এ ধরনের হীন কাজ আর সহ্য করা যায় না। তিনি আরো বলেন, জনগণের সাড়া না পেয়ে ভাড়াটে বাহিনী দিয়ে এসব নাশকতা চালিয়ে জানমালের ক্ষতি করছে। সন্ত্রাস করে নির্বাচন বানচাল করার স্বপ্ন-সাধ কোনোদিনই তাদের পূরণ হতে দেবে না এ দেশের জনগণ। বিএনপি-জামায়াতের দিকে ইঙ্গিত করে তিনি আরো বলেন, নির্বাচন বানচালের স্বপ্নসাধ কোনোদিন পূরণ হবে না কিংবা জনগণ পূরণ হতে দেবে না।

শেখ হাসিনা বলেন, শত বাধাবিপত্তি অতিক্রম করে আওয়ামী লীগ সফলভাবে দেশ পরিচালনা করে আসছে। ছোটখাটো অভিঘাত আমাদের অগ্রযাত্রা বাধাগ্রস্ত করতে পারবে না। করোনা মহামারিসহ নানা অভিঘাত মোকাবিলা করে সেই প্রমাণ আমরা রেখেছি।

লিখিতভাবে প্রকাশিত আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে আর্থিকখাতে শৃঙ্খলা ফেরানোর বিষয়েও জোর দেওয়া হয়েছে। নির্বাচনী ইশতেহারে বলা হয়েছে, আর্থিক লেনদেনসংক্রান্ত অপরাধ এবং অন্যায় ও অবৈধ সুযোগ গ্রহণ কঠোরভাবে দমন করা হবে। রাষ্ট্র ও সমাজের সকল স্তরে ঘুষ-দুর্নীতি উচ্ছেদ, অনুপার্জিত আয় রোধ, ঋণ-কর-বিলখেলাপি ও দুর্নীতিবাজদের বিচারব্যবস্থার মাধ্যমে শাস্তি প্রদান এবং তাদের অবৈধ অর্থ ও সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হবে। খেলাপি ঋণ বারবার পুনঃ তফসিল করে ঋণ নেওয়ার সুযোগ নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা অব্যাহত থাকবে। রুগ্ন শিল্প-বাণিজ্য অবসায়নের জন্য দেউলিয়া এবং অন্যান্য আইন সংশোধন ও কার্যকর প্রয়োগের উদ্যোগ অব্যাহত থাকবে। ব্যবস্থাপনা এবং ঋণ প্রস্তাব মূল্যায়ন যাতে বস্তুনিষ্ঠ হয়, সেজন্য বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে প্রভাবমুক্ত রাখা হবে।

আমদানি-রফতানিতে আন্ডার ও ওভার ইন ভয়েজ, শুল্ক ফাঁকি, বিদেশে অর্থ পাচার, হুন্ডির মাধ্যমে লেনদেন, মজুতদারি ও সিন্ডিকেটের মাধ্যমে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি এবং অতি মুনাফা প্রতিরোধের কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ অব্যাহত থাকবে। আওয়ামী লীগ সরকার মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসী অর্থায়ন প্রতিরোধে যেসব আইনি ও প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো করেছে, সেগুলো প্রয়োগ করে পুঁজি পাচার অপরাধীদের বিচারের অধীনে আনা হবে এবং সংশ্লিষ্ট সকলের সহযোগিতায় পাচার করা অর্থ-সম্পদ ফেরত আনার উদ্যোগ নেওয়া হবে।

শেখ হাসিনা বলেন, খেলাপি ঋণ আদায়ে কঠোর আইন প্রয়োগ এবং এক্ষেত্রে ব্যাংক যাতে বিধি নির্ধারিত সঞ্চিতি রাখে তা নিশ্চিত করা হবে। পুঁজি পাচারকারীদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, রাষ্ট্র ও সমাজের সব স্তরে ঘুষ- দুর্নীতি উচ্ছেদ, অনুপার্জিত আয় রোধ, ঋণ-কর-বিল খেলাপি ও দুর্নীতিবাজদের বিচার ব্যবস্থার মাধ্যমে শাস্তিÍ প্রদান এবং তাদের অবৈধ অর্থ ও সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হবে।

আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে আইনের শাসন ও মানবাধিকারের সুরক্ষার বিষয়ে অঙ্গীকার করে বলা হয়েছে, সর্বজনীন মানবাধিকার সুনিশ্চিত করার পাশাপাশি মানবাধিকার লঙ্ঘনের যে কোনো চেষ্টা প্রতিহত করার বা অব্যাহত থাকবে। বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে বহির্বিশ্বে যে প্রোপাগান্ডা এবং মিসরিপ্রেজেন্টেশন রয়েছে, সে বিষয়ে দৃঢ় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা সংরক্ষণ ও মর্যাদা সমুন্নত রাখা হবে। মহান সংবিধানকে সমুন্নত রেখে মানবাধিকার নিশ্চিত করা হবে। জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের স্বাধীনতা এবং কার্যকারিতা সুনিশ্চিত করার ব্যবস্থা অব্যাহত থাকবে।

অপরদিকে ইশতেহারে গণমাধ্যমে স্বাধীনতা ও অবাধ তথ্য প্রবাহের বিষয়ে বলা হয়েছে, আওয়ামী লীগ সরকার স্বাধীন ও অবাধ তথ্যপ্রবাহ নিশ্চিত করেছে এবং এ ধারা অব্যাহত রাখবে। আওয়ামী লীগ সরকার সাংবাদিক হত্যার বিচার ত্বরান্বিত এবং অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির পদক্ষেপ নিয়েছে। সাংবাদিক নির্যাতন, তাদের প্রতি ভয়ভীতি-হুমকি প্রদর্শন এবং মিথ্যা মামলা রোধ করা হবে। আওয়ামী লীগ ডিজিটালাইজেশন নীতির আলোকে সংবাদপ্রবাহে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার সমর্থন করে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের পরিবর্তে নতুন প্রণীত আইন ‘সাইবার নিরাপত্তা আইন, ২০২৩’ অনুযায়ী ব্যক্তির গোপনীয়তা ও তথ্য সংরক্ষণ করা হবে এবং অপব্যবহার রোধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ অব্যাহত থাকবে। সাংবাদিকদের জন্য নবম ওয়েজ বোর্ডের সুপারিশ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। দশম ওয়েজ বোর্ড গঠনের মাধ্যমে সাংবাদিকদের বেতন ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা সময়োপযোগী করার ধারা অব্যাহত থাকবে। ওয়েজ বোর্ড বাস্তবায়নে বৈষম্য মেনে নেওয়া হবে না। সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টোর আওতায় সাংবাদিকদেরকে আর্থিক ও চিকিৎসা সহায়তাকে আরো সম্প্রসারণ করা হবে। জাতীয় প্রেসক্লাবের অবকাঠামোগত উন্নয়নে ও অন্যান্য সহযোগিতা আরও বৃদ্ধি করা হবে। সুষ্ঠু ও সুষম বিজ্ঞাপন বণ্টন নীতি অব্যাহত রাখা হবে।

সন্ত্রাস দমনের বিষয়ে আওয়ামী লীগের এবারের নির্বাচনী ইশতেহারে বলা হয়েছে, রাষ্ট্র পরিচালনায় সংবিধানের প্রাধান্য, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা এবং সন্ত্রাসমুক্ত সমাজ গঠন সুনিশ্চিত করা হবে। আওয়ামী লীগ শান্তিপূর্ণ ও আইনি পন্থায় সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও সাম্প্রদায়িকতা প্রতিরোধে সকল মত ও পেশার জনগণকে সম্পৃক্ত করবে। জোট সরকারের আমলে সংঘটিত সকল সন্ত্রাসী কর্মকা--প্রায় ৬০০ স্থানে একই সময়ে বোমাবাজি, অগ্নিসংযোগ, গ্রেনেড হামলা সুষ্ঠুভাবে তদন্ত ও প্রচলিত আইনে বিচার কার্যক্রম বিভিন্ন পর্যায়ে আছে এবং বিচার সম্পন্ন করার ব্যবস্থা ত্বরান্বিত করা হবে। সপরিবারে বঙ্গবন্ধু হত্যাকারী শাস্তিপ্রাপ্ত বিদেশে পলাতক আসামিদের দেশে ফিরিয়ে এনে রায় বাস্তবায়নের সর্বাতœক প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে।

ইশতেহারে সুশাসসের অঙ্গীকারও করা হয়েছে। সেখানে রাষ্ট্র পরিচালনার সকল ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা, জবাবদিহি, সুশাসন ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের চর্চা সুপ্রতিষ্ঠা করা হবে। শিক্ষিত, দক্ষ, চৌকস ও দুর্নীতিমুক্ত মানুষদের রাজনীতিতে অংশগ্রহণের জন্য আগ্রহী করে তোলা হবে।

আওয়ামী লীগের আরো কিছু অঙ্গীকারের মধ্যে রয়েছে- ভাড়াভিত্তিক, অদক্ষ বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ এবং নিরবচ্ছিন্ন ও মানসম্মত বিদ্যুৎ সরবরাহের অঙ্গীকার। এ ছাড়া দলের নির্বাচনী ইশতেহারের পটভূমিতে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার লুণ্ঠন, দুঃশাসন ও দুর্বৃত্বায়নের বিরুদ্ধে গণপ্রতিরোধ গড়ে তোলার অঙ্গীকারের বিষয়টি তোলা হয়েছে। ইশতেহারের পটভূমিতে বিএনপির জোট সরকারের আমলের বিভিন্ন বিষয়ে ব্যাপক সমালোচনা করা হয়েছে।

আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে ইশতেহার ঘোষণার অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। এছাড়া সূচনা বক্তব্য রাখেন ইশতেহার প্রণয়ন কমিটির আহ্বায়ক ও সভাপতিম-লীর সদস্য ড. আবদুর রাজ্জাক। এর আগে গত ৩ অক্টোবর ইশতেহারে বিশিষ্ট ব্যক্তিসহ জনসাধারণের মতামত চেয়ে গণবিজ্ঞপ্তি দিয়েছিল আওয়ামী লীগ। যা পরবর্তীতে চূড়ান্ত করে ক্ষমতাশীন দলটি।


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

ছক্কা হাঁকানোর পরের বলেই আউট মুশফিক

ছক্কা হাঁকানোর পরের বলেই আউট মুশফিক

ঝাড়খন্ডে কথিত বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী নিয়ে বিস্ফোরক মন্তব্য অমিত শাহের

ঝাড়খন্ডে কথিত বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী নিয়ে বিস্ফোরক মন্তব্য অমিত শাহের

মুমিনুলকেও হারিয়ে বিপদে বাংলাদেশ

মুমিনুলকেও হারিয়ে বিপদে বাংলাদেশ

রাবির মাদার বখ্শ হলের পানির ট্যাংক থেকে উদ্ধার হলো দেশীয় অস্ত্র

রাবির মাদার বখ্শ হলের পানির ট্যাংক থেকে উদ্ধার হলো দেশীয় অস্ত্র

জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে ড. ইউনূসের ভাষণ ২৭ সেপ্টেম্বর

জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে ড. ইউনূসের ভাষণ ২৭ সেপ্টেম্বর

ঢাবির হত্যার ঘটনায় প্রভোস্টকে অব্যাহতি

ঢাবির হত্যার ঘটনায় প্রভোস্টকে অব্যাহতি

আইন-শৃঙ্খলা অবনতির চেষ্টা করলে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না: রাঙামাটিতে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

আইন-শৃঙ্খলা অবনতির চেষ্টা করলে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না: রাঙামাটিতে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

মেক্সিকোতে মাদক কারবারিদের মধ্যে সংঘর্ষে দুই সপ্তাহে নিহত ৫৩

মেক্সিকোতে মাদক কারবারিদের মধ্যে সংঘর্ষে দুই সপ্তাহে নিহত ৫৩

বিদ্যুৎ সাত-আট ঘণ্টা পর্যন্ত গ্রামে থাকে না

বিদ্যুৎ সাত-আট ঘণ্টা পর্যন্ত গ্রামে থাকে না

দুর্গাপূজায় ভারতে ৩ হাজার টন ইলিশ রপ্তানির সিদ্ধান্ত

দুর্গাপূজায় ভারতে ৩ হাজার টন ইলিশ রপ্তানির সিদ্ধান্ত

জাকিরের পর ফিরলেন সাদমানও

জাকিরের পর ফিরলেন সাদমানও

খুবিতে ক্যাম্পাস টু ক্যারিয়ার শীর্ষক সেমিনার

খুবিতে ক্যাম্পাস টু ক্যারিয়ার শীর্ষক সেমিনার

জাতিসংঘে যাওয়ার আগে হুঙ্কার দিলেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান

জাতিসংঘে যাওয়ার আগে হুঙ্কার দিলেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান

ফ্যাসিবাদের দোসররা এখনো বিচারবিভাগের গুরুত্বপূর্ণ গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় রয়েছেন: অ্যাটর্নি জেনারেল

ফ্যাসিবাদের দোসররা এখনো বিচারবিভাগের গুরুত্বপূর্ণ গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় রয়েছেন: অ্যাটর্নি জেনারেল

গার্মেন্টস ও অন্যান্য শিল্প থেকে ভারতীয়দের অপসারণের দাবি গণঅধিকার পরিষদের

গার্মেন্টস ও অন্যান্য শিল্প থেকে ভারতীয়দের অপসারণের দাবি গণঅধিকার পরিষদের

পঞ্চগড়ে তীব্র তাপদাহে হাঁসফাঁস বিপর্যস্ত জনজীবন

পঞ্চগড়ে তীব্র তাপদাহে হাঁসফাঁস বিপর্যস্ত জনজীবন

দীর্ঘ ১৭ বছর পর প্রকাশ্যে তালতলীতে জামায়াতে ইসলামীর কর্মী সম্মেলন

দীর্ঘ ১৭ বছর পর প্রকাশ্যে তালতলীতে জামায়াতে ইসলামীর কর্মী সম্মেলন

আমরা ১৫ বছর কথা বলতে পারিনি - মুশফিকুর রহমান

আমরা ১৫ বছর কথা বলতে পারিনি - মুশফিকুর রহমান

ফিরলেন জাকির, এসেই শান্তর ছক্কা

ফিরলেন জাকির, এসেই শান্তর ছক্কা

মাগুরায় গৃহবধূকে বিষপানে হত্যার অভিযোগ

মাগুরায় গৃহবধূকে বিষপানে হত্যার অভিযোগ