ভাগাভাগির খেলায় ভোট দেয়া ‘নাজায়েজ’ : চরমোনাই পীর
০৪ জানুয়ারি ২০২৪, ০৪:০৩ পিএম | আপডেট: ০৪ জানুয়ারি ২০২৪, ০৪:০৩ পিএম
ইসলামী আন্দোলনের আমীর ও চরমোনাই পীর মুফতী সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম বলেছেন, ২০১৪ সালে একতরফা নির্বাচন হয়েছে, ২০১৮ সালে রাতে আর ২০২৪ সালে হচ্ছে ডামি নির্বাচন। নিজ দলের একাধিক প্রার্থী বিভিন্ন নামে দাঁড় করানো, জেল থেকে মুক্তি দেওয়ার লোভ দেখিয়ে বিরোধী নেতাদের নির্বাচনে দাঁড় করানো, কিংস পার্টি গড়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা বাড়ানোর অপচেষ্টাও হয়েছে। পৃথিবীর ইতিহাসে এমন নির্বাচন কেউ কখনো দেখেছে বলে মনে হয় না।
বৃহস্পতিবার (৪ জানুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর পুরান পল্টনের নোয়াখালী টাওয়াস্থ দলীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। নির্বাচন তামাশায় পরিণত হয়েছে বলে মন্তব্য করে চরমোনাই পীর বলেন, ক্ষমতাসীনদের পারস্পরিক ক্ষমতা ভাগাভাগির খেলা এটি। এখানে নির্বাচনে ভোট দেওয়া মানে তাদের অন্যায়, জুলুম ও দুর্নীতিকে বৈধতা দেওয়া। যা কোনভাবেই জায়েজ নয়। যাদের মধ্যে দেশপ্রেম আছে, যারা দুর্নীতি, জুলুম-লুটতরাজকে ঘৃণা করেন, যারা মানুষের অধিকারকে সম্মান করেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে লালন করেন তারা কেউ ৭ জানুয়ারি ভোট কেন্দ্রে যাবেন না।
সংবাদ সম্মেলন থেকে তিনি একতরফা নির্বাচন বন্ধ, বিদ্যমান পার্লামেন্ট ভেঙে দিয়ে জাতীয় সরকার গঠনের দাবি এবং চলমান রাজনৈতিক সংকট উত্তরণে সুনির্দিষ্ট দাবি তুলে ধরেন। সংবাদ সম্মেলনের লিখিত বক্তব্যে চরমোনাই পীর বলেন, দায়িত্বশীল রাজনৈতিক সংগঠন হিসেবে আমরা সরকারকে বারবার সতর্ক করেছি। নির্বাচন নামের তামাশা, জুলুম, নির্যাতন, লুটতরাজ ও দুর্নীতি থেকে সরিয়ে রাখার জন্য এবং দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণ, গণ অধিকারসমূহ রক্ষায় সব পন্থা অবলম্বন করেছি। রাজপথে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন, জনমত গঠন ও জনমতের প্রকাশসহ সম্ভাব্য সব কিছুই আমরা করেছি। প্রত্যাশা ছিলো, সরকারে থাকা ব্যক্তিবর্গের বোধোদয় ঘটবে; তারা দেশকে গৃহযুদ্ধ ও সংঘাতের দিকে ঠেলে দেবে না। দেশের অর্থনীতি এবং জনগণের জীবনযাত্রাকে বিপর্যয়ের দিকে নিয়ে যাবে না।
কিন্ত সরকার দেশের সার্বভৌমত্ব বিকিয়ে দিয়ে, অর্থনীতিকে ধ্বংস করে হলেও ক্ষমতায় থেকে যাওয়ার ব্যাপারে বদ্ধপরিকর। রাজনীতিতে হীন থেকে হীনতর সব কৌশল অবলম্বন করে তারা ক্ষমতায় থাকার চেষ্টা করে যাচ্ছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে যেভাবে ক্ষমতায় থাকার একটা অসুস্থ প্রতিযোগিতা দেখা যায়, তারই একটি বিকৃত ও নোংরা উপস্থাপনা হিসেবে আমরা বর্তমান সমস্যাকে বিবেচনা করছিলাম। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, বর্তমান সরকারের কার্যক্রম আরো বেপরোয়া।
রেজাউল করীম বলেন, আমি আগেও একাধিকবার বলেছি, এবারের সমস্যা বহুমাত্রিক ও জটিল। ইতিহাস থেকে আমরা জানি, কোনো কোনো সমস্যা নতুন সম্ভাবনার দুয়ার উন্মুক্ত করে দেয়। জাতিকে আরো উচ্চতর রাজনৈতিক স্তরে নিয়ে যায়। আর এবার স্বয়ং রাজনীতিকেই ধ্বংস করা হচ্ছে। সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানসমূহকে হত্যা করা হয়েছে। দেশের সম্পদ লুটেপুটে খেয়ে নিয়েছে। অর্থনৈতিক সম্পর্কগুলোকে হুমকির মুখে ফেলেছে এবং ইতিহাসের নিকৃষ্টতম প্রহসনমূলক নির্বাচনের অপচেষ্টা করছে। একই সঙ্গে শিক্ষা সিলেবাসের নামে জাতির ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে শেষ করার পাঁয়তারা করছে।
নির্বাচন নিয়ে কতবড় নোংরামি হয়েছে তার উদাহরণ হয়ে থাকবে কৃষিমন্ত্রীর বক্তব্য। তিনি প্রকাশ্যেই বলেছেন, নির্বাচনে অংশ নেওয়ার শর্তে কারাগারে থাকা সকল বিরোধী নেতাকে মুক্তির প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিলো। তার এই বক্তব্য প্রমাণ করে যে, কারাগারে থাকা না থাকার মতো যে বিষয় আদালতের ওপরে নির্ভরশীল তাও এখন এই সরকার কুক্ষিগত করে নিয়েছে।
গবেষণা সংস্থা সিপিডির সদ্য প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, গত ১৫ বছরে ক্ষমতাসীন দলের লোকেরা শুধু ব্যাংক খাত থেকে ৯২ হাজার ২৬১ কোটি টাকা লুট করেছে। খেলাপি ঋণের নামে যা লুট করা হয়েছে তার হিসাব আলাদা। অবৈধ ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে আওয়ামী লীগের লোকেরা কত অবৈধ সম্পদ কামিয়েছে; তার একটা ছোট দৃষ্টান্ত হলো, এই নির্বাচনে অংশ নেওয়া আওয়ামী প্রার্থীদের ৮৭ শতাংশই কোটিপতি। ১৮ জনের সম্পদ শতকোটি টাকার ওপরে। এক মন্ত্রীর একারই বিদেশে দুই হাজার তিনশ বারো কোটি টাকার সম্পদ রয়েছে, যা হলফনামায় গোপন করা হয়েছে। এর আগে এস আলম গ্রুপের এক বিলিয়ন ডলার বিদেশে পাচার করার কথাও জাতি জেনেছে। ফলে এই নির্বাচন তাদের লুটতরাজ বহাল রাখা এবং আইনের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার অবলম্বন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নেতা ও এক প্রার্থী নিজেকে ভারতের প্রার্থী দাবি করে দাপট দেখাচ্ছেন। সরকারি কর্মকর্তারা প্রকাশ্যে নৌকার পক্ষে ভোট চাচ্ছেন। সার্বিকভাবে এই নির্বাচন এতো জঘন্যমাত্রায় এতো বেশি অনিয়ম, মাস্তানি ও অবৈধ ক্ষমতা প্রয়োগের ঘটনা ঘটছে, এটাকে আর নির্বাচন বলার কোনো সুযোগ নেই। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, সিনিয়র প্রেসিডিয়াম সদস্য প্রিন্সিপাল মাওলানা সৈয়দ মুহাম্মদ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানী, মহাসচিব প্রিন্সিপাল হাফেজ মাওলানা ইউনুছ আহমাদ, প্রেসিডিয়াম সদস্য গোলাম মাওলা, অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন, অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব ও মুখপাত্র মাওলানা গাজী আতাউর রহমানসহ অনেকে।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
সিলেটে প্রখ্যাত আলেম ইসহাক আল মাদানির ইন্তেকাল!
গাজার ধ্বংসস্তূপে নতুন স্বপ্ন বুনছেন যুদ্ধবিধ্বস্ত মানুষ
গাজা চুক্তিকে যেকারণে ‘হামাসের জয়’ বলছে ইসরায়েলি গণমাধ্যম
সত্যিকারের সুখী হওয়া অনেক কঠিনঃ মিশা
গাজায় ব্যাংক সেবা পুনরায় চালুর প্রস্তুতি শুরু ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের
বদলে যাচ্ছে পুলিশ, র্যাব ও আনসার সদস্যদের পোশাক
লক্ষ্মীপুরে ড্রামট্রাকের চাপায় প্রাণ গেল দুই অটোরিকশা যাত্রীর
মানিকগঞ্জে পদ্মায় বড়শিতে ধরা পরল ৯ কেজি ওজনের বোয়াল
রাজশাহী নার্সিং কলেজের ১৪ শিক্ষার্থী ফেল করে অধ্যক্ষের কক্ষে তালা দিলেন
মেলানিয়া ট্রাম্প বাজারে আনলেন নিজস্ব ক্রিপ্টোকারেন্সি
সাবেক এমপি মোস্তফা জালাল গ্রেপ্তার
শরীয়তপুর পৌরসভার বিএনপি কার্যালয়ে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা
সাইফ ইস্যুতে মেজাজ হারালেন অভিনেতা জাকি শ্রফ
হাজীগঞ্জে কুমড়ার বাম্পার ফলন দাম না পেয়ে কৃষকরা হতাশ
ইবিতে 'কর্মচারীদের পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধি ও শৃঙ্খলা বিধানে করণীয়' শীর্ষক কর্মশালা
সারা দেশে কমবে রাতের তাপমাত্রা,জানালো আবহাওয়া অধিদপ্তর
চুয়াডাঙ্গায় দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৯ দশমিক ৬ ডিগ্রী সেলসিয়াস
ব্যাটিং ব্যর্থতায় অস্ট্রেলিয়ার কাছে বাংলাদেশের হার
সোনা দিয়েছে ‘নীল ভাই’ ১১ কোটি হারাল বিজয় কুমার
অস্ত্র মামলায় ১০ বছরের দণ্ড থেকে খালাস পেলেন মামুন