ইউটিউব দেখে কুমারখালীতে ক্যাপসিকাম চাষ
০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:০৪ এএম | আপডেট: ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:০৪ এএম
কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে ক্যাপসিকাম চাষ করে চমক দেখিয়েছেন সবুজ আলী (৩৫)। ইউটিউব দেখে উপজেলার চাঁদপুর ইউনিয়নের কাঞ্চনপুর গ্রামে প্রথমবার চাষ করেছেন উচ্চফলনশীল এই সবজি। প্রথমবারই সফলতা পেয়েছেন। দুই মাসে দুই লাখ টাকার ক্যাপসিকাম বিক্রি করেছেন। আগামী তিন মাসে আরো পাঁচ লাখ টাকার সবজি বিক্রির আশা করছেন। এতে তার লাভ হবে পাঁচ লাখ টাকার মতো।
চাষাবাদ শুরুর দিকে স্থানীয়দের নানা কথা শুনতে হয়েছে। কেউ কেউ বলেছেন, এখানে এই ফসল হবে না। চাষ করলে লোকসান গুণতে হবে। এখন ফলন দেখে অবাক হয়েছেন তারাও। চাষ সম্পর্কে ধারণা নিতে আসছেন এলাকার কৃষকরা। প্রতিদিন বাগানে ভিড় করছেন দর্শনার্থীরাও।
খাবারে বাড়তি স্বাদ যোগ করতে ক্যাপসিকাম ব্যবহার হয়। বাজারে সবুজ, লাল ও হলুদ; তিন রঙের ক্যাপসিকাম পাওয়া যায়। প্রতি ১০০ গ্রাম ক্যাপসিকামে ৮৬০ মিলিগ্রাম প্রোটিন থাকে। সেইসঙ্গে থাকে শর্করা বা কার্বোহাইড্রেট, ভিটামিন সি, ভিটামিন বি, ই, কে, থিয়ামিন, ফলিক অ্যাসিড, রাইবোফ্ল্যাভিন ইত্যাদি। এরমধ্যে সবুজ ক্যাপসিকাম অল্পবয়সীদের জন্য উপকারী। এতে ক্যাপসাইসিন নামক এক ধরনের উপাদান থাকে, যা ডিএনএর সঙ্গে যুক্ত হয়ে ক্যানসার সৃষ্টিকারী উপাদানের সংযুক্ত হওয়াতে বাধা দেয়। এটি ক্যানসার প্রতিরোধেও কাজ করে। এছাড়া মাইগ্রেন, সাইনাস, সংক্রমণ ও দাঁতে ব্যথা দূর করে।
ইউটিউবে ক্যাপসিকাম চাষের ভিডিও দেখে চাষে উদ্বুদ্ধ হয়েছি উল্লেখ করে সবুজ আলী বলেন, ‘গত জুন-জুলাই মাসে মোবাইলে কৃষিবিষয়ক ভিডিও দেখতে দেখতে ক্যাপসিকাম চাষের ভিডিও সামনে আসে। তা দেখি এবং চাষের চিন্তাভাবনা করি। কিন্তু কীভাবে শুরু করবো, তার বিস্তারিত জানতে উপজেলা কৃষি অফিসে যাই। সেখানে বিস্তারিত ধারণা দেন কৃষি কর্মকর্তারা। গত সেপ্টেম্বর মাসে যশোর অঞ্চলে টেকসই কৃষি স¤প্রসারণ প্রকল্প থেকে নিরাপদ উপায়ে সবজি চাষের প্রশিক্ষণ নিই। প্রশিক্ষণে কীটনাশক ছাড়া আবাদ ও ক্যাপসিকাম চাষ সম্পর্কে জানতে পারি। অক্টোবর মাসের শুরুতে ক্যাপসিকাম চাষের জন্য আমাকে ২০ শতাংশ জমির প্রদর্শনী দেন কৃষি স¤প্রসারণ প্রকল্পের কর্মকর্তারা। তার সঙ্গে আরো ৪০ শতাংশ যোগ করে প্রথমবার ৬০ শতাংশ জমিতে চাষ শুরু করি।’
জমিতে গাছ লাগানোর বর্ণনা দিয়ে এই যুবক বলেন, ‘ভালোভাবে জমি চাষ করে অক্টোবর মাসের শুরুতে চারা লাগাই। ৬০ শতাংশ জমিতে সারিবদ্ধভাবে ছয় হাজার ৫০০টির মতো চারা লাগিয়েছি। প্রতিটি গাছের মাঝে ফাঁকা রেখেছি। পোকামাকড় এবং তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে নেট দিয়েছি। এতে পাখির আক্রমণ থেকেও রক্ষা পাওয়া যাচ্ছে। সেচের অপচয় কমাতে মালচিং পদ্ধতি ব্যবহার করেছি। ফলে বাগানে আগাছা হয়নি এবং সার ও পানি কম লেগেছে। চাষের খরচও অনেক কমে হয়েছে। জমিতে কোনও ধরনের কীটনাশক দিইনি। পোকামাকড় দমনের জন্য কৃষি অফিসের দেওয়া হলুদ ও সাদা আঠাযুক্ত ফাঁদ ব্যবহার করেছি।’
কৃষি অফিস থেকে ২০ শতাংশ জমির জন্য চারা, মালচিং পেপার, বাঁশ-খুঁটি, নেট ও সার দিয়েছিল উল্লেখ করে সবুজ আলী বলেন, ‘বাকি ৪০ শতাংশ জমির জন্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র আমি কিনেছি। সব মিলিয়ে দুই লাখ পাঁচ হাজার টাকার মতো খরচ হয়েছে। ডিসেম্বরে ফলন আসতে শুরু করে। ১ জানুয়ারি থেকে তুলতে শুরু করেছি। বেশ ভালো ফলন হয়েছে। আকারেও বড়। এখন পর্যন্ত এক হাজার কেজি তুলেছি। সেগুলো কুষ্টিয়া শহরে ২০০-২৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেছি। গড়ে ২০০ টাকা ধরলেও দুই লাখ টাকার বেশি বিক্রি হয়েছে। এখনও যে পরিমাণ ফলন গাছে আছে, তাতে দুই হাজার কেজির বেশি হবে। নতুন করে আরও ধরছে। গাছগুলো তিন-চার ফুট লম্বা। একটি গাছ থেকে তিন-চার কেজি ফলন পাওয়া যাবে। কেজিতে তিন-চারটা ধরে। আশা করছি, আরও পাঁচ-ছয় লাখ টাকার ফলন বিক্রি করতে পারবো।’
চাষ সম্পর্কে ধারণা দিয়ে তিনি বলেন, ‘ক্যাপসিকাম চাষ খুবই সহজ। যেভাবে মরিচ চাষ করা হয়, একইভাবে এটিও করা যায়। তবে খেয়াল রাখতে হবে গাছে পোকামাকড় যাতে আক্রমণ না করে এবং রোগবালাই ছড়িয়ে না পড়ে। তাহলে কিন্তু ফলন আসার আগেই গাছ মরে যাবে। এটি সালাদ ও কাঁচা খাওয়া যায় বিধায় কীটনাশকমুক্ত চাষ করতে হবে। কোনো ধরনের ওষুধ কিংবা কেমিক্যাল ব্যবহার করা যাবে না।’
গ্রামের মানুষ এখনও ক্যাপসিকাম চেনে না, রান্নায় ব্যবহার করে না জানিয়ে এই কৃষক বলেন, ‘গ্রামের মানুষকে চেনাতে স্থানীয় বাজারের এক দোকানে চার কেজি রেখে দিয়েছি। যাতে মানুষের আগ্রহ তৈরি হয়। ওই দোকানি আমাকে বলেছেন, এটি কী ফল জিজ্ঞাসা করতে করতে মানুষজন তাকে বিরক্ত করে ফেলেছেন। এখনও বিক্রি হয়নি। তবে জেলা শহরের মানুষজন এটি চেনেন এবং কিনছেন।’
কাঞ্চনপুর গ্রামের কৃষক হাফিজুর রহমান বলেন, ‘সবুজ যখন ক্যাপসিকাম গাছ লাগানোর কথা জানায়, তখন এর নামই মনে থাকতো না। আগে কোনোদিন দেখা তো দূরের কথা নামও শুনিনি। যখন ফলন আসতে শুরু করলো, তখন সবার দেখার আগ্রহ তৈরি হলো। এখন দেখছি, খুবই লাভজনক চাষ। আগামীতে এই এলাকায় আরো চাষ হবে। কারণ অনেক কৃষক সবুজের কাছ থেকে চাষাবাদ সম্পর্কে ধারণা নিচ্ছেন।’
সরেজমিনে সবুজের ক্যাপসিকামের বাগান ঘুরে দেখা যায়, জাল দিয়ে ঘেরা পুরো বাগান। গাছের ফাঁকে ফাঁকে পোকা মারার ফাঁদ। মাটিতে পলিথিন বিছানো। পরিচ্ছন্ন বাগানজুড়ে পাতার ফাঁকে উঁকি দিচ্ছে ক্যাপসিকাম। আবার কিছু কিছু গাছে ফুলও দেখা গেছে। সেগুলোতেও কয়েকদিনের মধ্যে ফলন আসবে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, কাঞ্চনপুর গ্রামে প্রথমবার উচ্চফলনশীল জাতের ক্যাপসিকাম চাষ হয়েছে। গ্রামীণ পর্যায়ে যেহেতু উৎপাদন ভালো হয়েছে, সেহেতু ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলার ক্রেতাদের কাছে বিক্রির ব্যবস্থা করলে আগামীতে উপজেলায় চাষাবাদ আরো বাড়বে।
উপজেলার উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘কৃষি অফিস থেকে কৃষকদের আধুনিক চাষাবাদে উদ্বুদ্ধকরণে জৈব উপায়ে আবাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। প্রথমবার নিরাপদ উপায়ে ক্যাপসিকাম চাষ করেছেন কৃষক সবুজ আলী। তার বাগানের ফলনের অবস্থা খুবই ভালো এবং লাভবান হবেন।’
যশোর অঞ্চলে টেকসই কৃষি স¤প্রসারণ প্রকল্প থেকে নিরাপদ উপায়ে সবজি চাষের প্রশিক্ষণ নিয়ে দারুণ সফলতা পেয়েছেন সবুজ এমনটি জানিয়েছেন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা দেবাশীষ কুমার দাস।
মালচিং পদ্ধতিতে যেকোনো কৃষি আবাদে সফলতা আছে উল্লেখ করে টেকসই কৃষি স¤প্রসারণ প্রকল্পের জুনিয়র পরামর্শক উম্মে উমারা বলেন, ‘মাটি থেকে পানি বাষ্প হয়ে বাতাসে উড়ে যায়। মালচিং পেপার ব্যবহারের মাধ্যমে আবাদ করলে পানির অপচয়রোধ হয়। এতে সেচ খরচ কমে যায়। কৃষকরা লাভবান হন।’
টেকসই কৃষি স¤প্রসারণ প্রকল্পের মাধ্যমে প্রযুক্তি ও পরিবেশবান্ধব চাষাবাদে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে বলে জানালেন প্রকল্পের মনিটরিং ও মূল্যায়ন কর্মকর্তা মাসুম আব্দুল্লাহ। তিনি বলেন, ‘এর পাশাপাশি উচ্চমূল্যের ফসল আবাদে বীজ ও সার থেকে শুরু করে প্রয়োজনীয় উপকরণ সহায়তা দিচ্ছি আমরা।’
ক্যাপসিকাম উচ্চমূল্যের সবজি উল্লেখ করে জেলা কৃষি স¤প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক ড. হায়াত মাহমুদ বলেন, ‘কম খরচে এটি চাষ করে সফল হওয়া যায়। জেলার অনেক বেকার যুবক ক্যাপসিকাম চাষ করে স্বাবলম্বী হয়ে উঠছেন। আগামীতে জেলাজুড়ে এর আবাদ আরও বাড়বে বলে আশা করছি।’
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
কারাগার থেকে পালিয়ে যাওয়া ফাঁসির আসামি গ্রেপ্তার হলো ধামরাইয়ে
দুই বিশ্ববিদ্যালয়ে দুইজনকে পিটিয়ে হত্যার বিচার দাবিতে চাটমোহরে ছাত্র-জনতার মানববন্ধন
বায়তুল মোকাররমের অপ্রীতিকর ঘটনা নিয়ে যা বললেন খতিব রুহুল আমীন
গোদাগাড়ী সরকারি ডিগ্রী কলেজের শিক্ষক, সাবেক এমপি লুৎফুন নেসা হোসেন মারা গেছেন।
দেড়শর আগেই শেষ বাংলাদেশের ইনিংস
ঝিনাইদহে ৮ মামলায় পুলিশের ৪৩ কর্মকর্তা আসামী
পাহাড়িদের ওপর হামলার প্রতিবাদে রাজধানীর শাহবাগে বিক্ষোভ
গণপিটুনিকে নরমালাইজ করা নিয়ে অভিনেত্রী মেহজাবীনের পোস্ট
গোয়ালন্দে গলায় ফাঁস নিয়ে যুবকের আত্মহত্যা
হবিগঞ্জে ৫ সাংবাদিক নাশকতার মামলায় আসামি
ঢাবিতে বর্বরোচিত গণপিটুনিতে নিহত তোফাজ্জলের জানাজা শেষে পাথরঘাটায় পারিবারিক কবরস্থানে দাফন সম্পন্ন
তারাকান্দায় প্রাইভেটকার ও সিএনজির সংঘর্ষে নিহত-২
রাঙামাটিতে পৌর এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি
ভারতের সুপ্রিম কোর্টের ইউটিউব চ্যানেল হ্যাকড
দৌলতপুর সীমান্তে অস্ত্র ও মাদক সহ আটক-১
রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি পদে নিয়োগ পেলেন ড. এস এম হাসান তালুকদার
৮ উইকেট হারিয়ে চা বিরতিতে বাংলাদেশ
২০ কোটি সহায়তা দিয়ে এখনও বিএনপির ত্রাণ তহবিলে ৭ কোটি টাকা জমা রয়েছে : ডা. জাহিদ
বায়তুল মোকাররমে তুমুল হট্টোগোল-মারামারি (ভিডিওসহ)
কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে পলাতক মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামী ফিরোজ হোসেনকে গ্রেফতার