প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির অনুরোধের পরেও সোমবার ইউক্রেনের সেনাপ্রধান ভ্যালেরি জালুঝনি পদত্যাগ করতে অস্বীকার করেছেন বলে জানা গেছে। জেলেনস্কি এমন দাবি অস্বীকার করলেও সোমবার, ইউক্রেনস্কা প্রাভদা, ইউক্রিনফর্ম এবং দ্য কিয়েভ ইন্ডিপেনডেন্ট, সেইসাথে বেশ কয়েকটি নেতৃস্থানীয় টেলিগ্রাম চ্যানেল সহ ইউক্রেনীয় নিউজ আউটলেটগুলিতে রিপোর্ট প্রকাশিত হতে শুরু করে যে, সেনাপ্রধানকে জেলেনস্কি তলব করেছিলেন।

ফিন্যান্সিয়াল টাইমস পরিস্থিতির সাথে পরিচিত চারটি সূত্রের বরাত দিয়ে দাবি করেছে যে, প্রেসিডেন্ট ইউক্রেনের জনপ্রিয় জেনারেলকে প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা হিসাবে নতুন ভ‚মিকার প্রস্তাব করেছিলেন কিন্তু তিনি প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। দুটি সূত্র দাবি করেছে, এটি পরিষ্কার করা হয়েছে যে, জালুঝনি নতুন ভ‚মিকা প্রত্যাখ্যান করলেও তাকে তার বর্তমান অবস্থান থেকে সরানো হবে। নভেম্বরে, রাশিয়ান সৈন্যদের সাথে বিশাল যুদ্ধক্ষেত্রের পরিস্থিতি অচলাবস্থায় ছিল বলে পরামর্শ দেয়ার জন্য জেলেনস্কি কমান্ডারকে তিরস্কার করেছিলেন, যখন গত মাসে জালুঝনি সেনা নিয়োগের প্রক্রিয়া নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছিলেন, মন্তব্য করেন যে, তাদের রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য আরও সৈন্য সংগ্রহ করা উচিত।

জালুঝনির বরখাস্তের রিপোর্ট সত্য কিনা জানতে চাইলে জেলেনস্কির মুখপাত্র সের্গেই নাইকিফোরভ বলেছেন, ‘অবশ্যই নয়। প্রেসিডেন্ট কমান্ডার-ইন-চিফকে বরখাস্ত করেননি।’ ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় টেলিগ্রাম চ্যানেলে বলেছে, ‘প্রিয় সাংবাদিকরা, আমরা অবিলম্বে সবাইকে উত্তর দিই: না, এটি সত্য নয়।’ জেনারেল জালুঝনি তার বরখাস্তের প্রতিবেদনের বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টও সোমবার তার রাতের ভিডিও ভাষণে এমন জল্পনার কোন সমাধান করেননি।

জালুঝনির জুলাই ২০২১ সাল থেকে ইউক্রেনের কমান্ডার-ইন-চিফ হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন এবং তিনি দেশের একজন জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব। ইউক্রেনীয় সৈন্য এবং জনসাধারণের মধ্যে তার বিশাল সমর্থন রয়েছে। ‘একজন লৌহ জেনারেল হিসাবে জালুঝনির খ্যাতি রয়েছে... তিনি ইউক্রেনীয় সশস্ত্র বাহিনীর মূর্ত প্রতীক যে দেশটিকে রাশিয়ার মতো ভয়ঙ্কর শত্রæর বিরুদ্ধে রক্ষা করেছিল। জালুঝনির ব্যক্তিগতভাবে ৮৮ শতাংশ ইউক্রেনীয়দের সমর্থন রয়েছে। ৯৭ শতাংশ ইউক্রেনীয় তার কমান্ডের অধীনে সশস্ত্র বাহিনীকে বিশ্বাস করে,’ এক্স-এ ইউক্রেনীয় সাংবাদিক ইলিয়া পোনোমারেনকো বলেছেন।

ডিসেম্বরের প্রথম দিকে স্থানীয় সংবাদ প্রতিবেদনে বলা হয় যে, জেলেনস্কি কিছু সামরিক কমান্ডারের সাথে যোগাযোগের ক্ষেত্রে তার শীর্ষ কমান্ডারকে ‘বাইপাস’ করছেন। নভেম্বরে জেনারেলের সঙ্গে তার মতামতের পার্থক্য প্রকাশ্যে আসে। জালুঝনি দ্য ইকোনমিস্টের সাথে একটি সাক্ষাতকারে বলেছিলেন যে, ইউক্রেন এবং রাশিয়া যুদ্ধ একটি অচলাবস্থায় পৌঁছেছে। তবে জেলেনস্কি এ বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করেছিলেন এবং যুদ্ধক্ষেত্রের পরিস্থিতি সম্পর্কে তার শীর্ষ কমান্ডারের মন্তব্যের বিরোধিতা করেছিলেন।

ডিসেম্বরে একটি সাক্ষাতকারে, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, তিনি ইউক্রেনের সশস্ত্র বাহিনীর নেতৃত্বে খুশি নন। ‘আমি যুদ্ধক্ষেত্রে খুব সুনির্দিষ্ট কিছুর জন্য অপেক্ষা করছি, আমি তাদের সিদ্ধান্তের জন্য অপেক্ষা করছি। কৌশল স্পষ্ট; আমি বিস্তারিত দেখতে চাই. আমি মনে করি এটা ন্যায্য,’ তিনি বলেন। এদিকে, ইউক্রেনীয় এক সূত্রের বরাতে বুধবার রয়টার্স জানিয়েছে, ইউক্রেনের পদাতিক বাহিনীর কমান্ডার কর্নেল জেনারেল ওলেক্সান্ডার সিরস্কিকে সেনাপ্রধান ভ্যালেরি জালুঝনির দায়িত্ব নেয়ার প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল। কিন্তু তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেছেন।

জালুঝনি দায়িত্ব ছাড়লে তা ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনীতে বড় ধরনের রদবদলের ইঙ্গিত হবে। রাশিয়ার বিরুদ্ধে চলমান যুদ্ধে একাধিক ফ্রন্টে লড়ছে দেশটি। গুরুত্বপূর্ণ মিত্র যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহযোগিতা নিয়ে অনিশ্চয়তার মধ্যে প্রেসিডেন্ট ও সেনাপ্রধানের মধ্যকার বিরোধের কথা প্রকাশ্যে আসলো। কিয়েভের পশ্চিমা মিত্ররা জালুঝনিকে দায়িত্ব থেকে অপসারণে কেমন প্রতিক্রিয়া জানাবে তা তাৎক্ষণিকভাবে স্পষ্ট না। ইউক্রেনের সেনাপ্রধানের ব্যাপক জনপ্রিয়তা রয়েছে। রাশিয়া বলেছে, জালুঝনির ভবিষ্যৎ নিয়ে জল্পনা যুদ্ধের প্রায় দুই বছর ধরে যে সমস্যার মুখোমুখি হয়েছিল তা প্রতিফলিত হচ্ছে। সূত্র : দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট।