নিষিদ্ধ পলিথিনের অবাধ ব্যবহার
১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:১২ এএম | আপডেট: ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:১২ এএম
চলছেই নিষিদ্ধ পলিথিনের অবাধ ব্যবহার। ছোট দোকান থেকে নামিদামি শপিংশল সবখানেই রয়েছে পলিথিনের ব্যবহার। পলিথিনের অবাধ ব্যবহারের কারণে নষ্ট হচ্ছে পরিবেশ। রাজধানীর ড্রেনেজ ব্যবস্থার করুণ অবস্থার জন্য অনেকাংশে দায়ী এই পলিথিন। নিষিদ্ধ ঘোষিত পলিথিন উৎপাদন ও ব্যবহারের অপরাধে ২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত মোট ২ হাজার ৫১৬টি অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। এসব অভিযানে ৪ হাজার ২০৭টি মামলায় জরিমানা আদায় করা হয়েছে ৬ কোটি ১৭ লাখ ৮৭ হাজার ২৫০ টাকা। এছাড়া ১৭০ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে বিনাশ্রম কারাদন্ড এবং ২ হাজার ৭১ দশমিক ৩৭ মেট্রিক টন পলিথিন, দানা ও কাঁচামাল জব্দ করা হয়েছে। একই সঙ্গে এ বিষয়ে নিয়মিত মামলা হয়েছে ১৬টি। জনসচেতনতা বাড়াতে নেওয়া হয়েছে নানান উদ্যোগ। পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী এ তথ্য জানান।
সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, বর্তমান সরকারের নির্বাচনী ইশতেহারে পরিবেশের ওপর প্লাস্টিক পণ্যের বিরূপ প্রভাব নিয়ন্ত্রণে প্লাস্টিক পণ্যের পরিবর্তে পরিবেশবান্ধব পচনশীল প্লাস্টিকের ব্যবহার প্রচলনের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। সারাদেশের কঠিন বর্জ্যের সুষ্ঠু ও পরিবেশসম্মত ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে এরই মধ্যে সরকার কর্তৃক ‘কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিধিমালা-২০২১’ প্রণয়ন করা হয়েছে।
তিনি বলেন, কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিধিমালা, ২০২১ এ মৌলনীতি হিসেবে ফাইভ-আর পলিসি (রিফিউজি, রিডিউস, রিইউজ, রিসাইকেল ও রিকভারি পলিসি) নেওয়া হয়েছে। সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিকের ব্যবহার বন্ধে হাইকোর্টের আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় কর্তৃক গত ২১ জুন উপক‚লীয় অঞ্চলের ১২ জেলার ৪০টি উপজেলাকে কোস্টাল এরিয়া হিসেবে চিহ্নিত করে ওই এলাকায় সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিকের ব্যবহার বন্ধে ৩ বছর মেয়াদি কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়েছে।
মন্ত্রী বলেন, পলিথিনের ক্ষতিকর দিক বিবেচনায় সরকার এরই মধ্যে পরিবেশ বিনষ্টকারী পলিথিনের উৎপাদন ও বিপণন এবং ব্যবহার বন্ধে বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ১৯৯৫ এ বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। আইন অনুযায়ী ক্ষেত্রবিশেষ বিভিন্ন পুরুত্বের পলিথিনের উৎপাদন ও বিপণন কার্যক্রম এবং ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, পলিথিন বন্ধে বেশকিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম নিষিদ্ধ ঘোষিত পলিথিন শপিং ব্যাগ বন্ধে অধিদফতরের নিজস্ব ম্যাজিস্ট্রেট বা জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়ে নিয়মিত ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা। তাছাড়া পরিবেশ অধিদফতরের এনফোর্সমেন্ট কার্যক্রমের আওতায় ২০১০ সালের জুলাই থেকে নিষিদ্ধ ঘোষিত পলিথিন উৎপাদনকারী কারখানা উচ্ছেদ বা কারখানার মালিকের কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ আদায় করা হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্বাস্থ্য ও পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর পলিথিন ব্যাগের উৎপাদন, ব্যবহার, বিপণন ও বাজারজাতকরণে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও ফের এই ব্যাগের অবাধ ব্যবহার শুরু হয়েছে। এমন এলাকা পাওয়া দুষ্কর, যেখানে পলিথিন ব্যাগের ব্যবহার নেই। প্রকাশ্যে এখন এর ব্যবহার চলছে দেদারছে। সহজলভ্য ও ব্যবহারে সুবিধা, বিধায় ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়ই অভ্যস্ত এটি ব্যবহার করতে। অভিজাত রেস্টুরেন্ট, মুদির দোকান, কাঁচাবাজার থেকে শুরু করে ফুটপাথের প্রায় সব দোকানের পণ্য বহনে ব্যবহৃত হচ্ছে পলিথিন ব্যাগ। এমনকি নির্বাচনী প্রচারণায় নিষিদ্ধ পলিথিন ব্যবহৃত হচ্ছে। প্রার্থীরা নিজেদের পোস্টারগুলো দীর্ঘস্থায়ী করার জন্য পলিথিন মুড়িয়ে এলাকার বিভিন্ন স্থানে ঝুলিয়ে নির্বাচনী প্রচারণা চালান। সর্বত্রই নিষিদ্ধ পলিথিনের ছোট-বড় ব্যাগের ছড়াছড়ি। পলিথিনের ব্যবহার পুরোপুরি নিষিদ্ধ থাকার পরও কেবল রাজধানী ঢাকাতেই দৈনিক ব্যবহৃত হচ্ছে ১ কোটি ৪০ লাখ পলিথিন। প্রতিমাসে ব্যবহার হচ্ছে ৪২ কোটি পিস পলিথিন। সারাদেশে তা ছড়িয়ে পড়ছে মহামারি আকারে। আইন ভঙ্গ করে পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যকে হুমকির মুখে ঠেলে দেয়া হচ্ছে।
পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর বিবেচনা করে ২০০২ সালে পলিথিনের উৎপাদন ও বাজারজাতকরণ নিষিদ্ধ করে সরকার। ২০০২ সালের পরিবেশ সংরক্ষণ আইনে বলা আছে, পলিথিন ব্যাগ বিক্রয়, প্রদর্শন, মজুদ ও বাণিজ্যিকভাবে বিতরণ করা যাবে না। কিন্তু এরপরও বিভিন্ন ব্যবসায়ী পলিথিন ব্যাগ বিক্রি ও পণ্য পরিবেশনে ব্যবহার করছেন। ওই বছরের ১ জানুয়ারি ঢাকা ও ১ মার্চ সারা দেশে পরিবেশ রক্ষায় পলিথিনের তৈরি ব্যাগ ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়। পরিবেশ সংরক্ষণ আইন (সংশোধিত) ২০০২ অনুযায়ী, এ আইন অমান্য করলে ১০ বছরের সশ্রম কারাদÐ ও ১০ লাখ টাকা জরিমানা করার বিধান রয়েছে। আর বাজারজাত করলে ৬ মাসের জেল ও ১০ হাজার টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে। কিন্তু বর্তমানে বাজারগুলোতে প্রকাশ্যে পলিথিন ব্যবহার করা হলেও এ আইনের কোন প্রয়োগ নেই।
পরিবেশবাদীদের অভিযোগ, এ আইন বাস্তবায়নে সরকারের সদিচ্ছার অভাব রয়েছে। তাদের অভিযোগ, বাজারে পলিথিন ব্যাগের বিরুদ্ধে নিয়মিত মনিটরিং নেই। এ কারণে অসাধু পলিথিন ব্যাগ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো রাজধানীসহ বিভিন্ন জেলাশহরে দেদারছে উৎপাদন করছে অপচনশীল এসব ব্যাগ। পলিথিন তৈরির কারখানাগুলোর বেশির ভাগই পুরান ঢাকা কেন্দ্রিক। ঢাকার পলিথিন ব্যবসা নিয়ন্ত্রণে একাধিক প্রভাবশালী সিন্ডিকেট রয়েছে। মিরপুর, কারওয়ান বাজার, তেজগাঁও, কামরাঙ্গীচর ও টঙ্গীতে বেশ কিছু কারখানা রয়েছে। যাত্রাবাড়ী থেকে নারায়ণগঞ্জ পর্যন্ত গড়ে উঠেছে শতাধিক কারখানা। এছাড়া চট্টগ্রামসহ জেলা শহরগুলোতে গড়ে উঠেছে শতাধিক কারখানা। পলিথিন বাজারজাতকরণে পরিবহন সিন্ডিকেট নামে আরেকটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট কাজ করছে।
বুড়িগঙ্গা, শীতল²্যা, তুরাগ ও বালু নদীর তলদেশে জমে থাকা কয়েক ফুট পলিথিনের স্তর নদীর তলদেশের পলি আটকে শুধু নদীর নাব্যতাই নষ্ট করছে না, বরং মাছ ও জীববৈচিত্র ধ্বংস করে পানিতে স্বাভাবিক অক্সিজেনের মাত্রা আশঙ্কাজনক হারে হ্রাস করছে। কৃষি পলিথিন ব্যাগ জমির উৎপাদন ক্ষমতা কমিয়ে দিচ্ছে। ঢাকা শহরের পয়ঃনিষ্কাশনের ৮০ ভাগ ড্রেন পলিথিন ব্যাগ কর্তৃক জমাট বেঁধে আছে। যার দরুন সামান্য বৃষ্টি হলেই ঢাকা শহরে দেখা দেয় অসহনীয় জলাবদ্ধতা। বৃষ্টির সময় অনেক ম্যানহোল থেকে শত শত পলিথিন ভেসে বের হতে দেখা যায়। শুধু বুড়িগঙ্গাই নয় বরং ঢাকার চারদিক দিয়ে প্রবাহিত সকল নদীর তলদেশেই পলিথিনের দুষণ ও ধ্বংসাত্মক কর্মকান্ড চলছে লাগামহীনভাবে। নদী থেকে শুরু করে শাখা নদী ও ছোট ছোট খাল বিল জলাশয়ের তলদেশেও রয়েছে পলিথিন ব্যাগের মোটা স্তর। নষ্ট হচ্ছে পানির প্রাকৃতিক গুণ।
বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সমিতির (বেলার) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, আমাদের নগরীরর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা একেবারেই দুর্বল। তার উপর নিষিদ্ধ ও ক্ষতিকর পলিথিন অবাধে ব্যবহার করে যত্রতত্র ফেলে দেওয়া নগরীর ড্রেনেজ ব্যবস্থাকে বাধাগ্রস্ত করছে। এতে নগরীতে পানিবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে। এ বিষয়ে সিটি করপোরেশনের দায়িত্বশীল ব্যক্তিরাও উদাসীন। পলিথিন ও প্লাস্টিকের ব্যবহার আমাদের পরিবেশকে মারাত্মকভাবে দূষিত করছে। এটা একধরনের আত্মহত্যার শামিল, তাই এগুলোর ব্যবহার বন্ধ করতে হবে। পলিথিন ও প্লাস্টিকের ব্যবহার এতে ধ্বংস হচ্ছে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র। অথচ পরিবেশ অধিদফতর এ বিষয়ে নিরব। তারা পলিথিন উৎপাদন ও বিপনন বন্ধে কার্যকর কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করছে না।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
ময়মনসিংহে মহিলালীগনেত্রীর ভিডিও ভাইরাল, ৬ জনকে আসামি করে মামলা
টুঙ্গিপাড়ায় কমিউনিটি ক্লিনিক উদ্বোধন
বিমানযাত্রীর পকেটে মিলল জ্যান্ত সাপ
ডেঙ্গু সচেতনতা সৃষ্টিতে কাউন্সিলররা পাবেন ৫০ হাজার টাকা
হামলা আসন্ন, নাগরিকদের রাফা ছাড়তে বলল ইসরায়েল
স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের দাবিতে দেশটির পতাকা উত্তোলন ছাত্রলীগের
মিল্টন সমাদ্দার মাদকসেবী, তার টর্চার সেলে অত্যাচারের মাত্রা অমানবিক: ডিবি
সম্পদ অর্জনে এমপিদের চেয়ে চেয়ারম্যানরা এগিয়ে : টিআইবি
দেখতে ঢেউটিনের মতো মনে হলেও এটা ঝিনাইদহ-যশোর মহাসড়ক!
বিএনপির ভাবনায় ক্লান্ত ওবায়দুল কাদের: রিজভী
ইউপি চেয়ারম্যানকে ‘ডিও লেটার’ বন্ধের হুমকি এমপি একরামের স্ত্রীর
মাগুরায় বিএনপির উপজেলা নির্বাচন বর্জনের আহবান
২৫ বৈশাখ বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬৩তম জন্ম জয়ন্তী
স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র ও ইজরায়েলের বর্বর নির্যাতনের প্রতিবাদে সাতক্ষীরায় পদযাত্রা
বরগুনায় 'গণমাধ্যমে হলুদ সাংবাদিকতা প্রতিরোধ ও বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতা' শীর্ষক প্রশিক্ষণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত
আসছে ঘূর্ণিঝড়, দেশজুড়ে কালবৈশাখীর সতর্কতা
কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে ২ ইউনিয়নে প্রখর রোদ আর তীব্র গরম।।দুর্বিষহ চরবাসীর জীবন
বিশ্বের অন্যতম ভয়ঙ্কর প্রাণী অনুপ্রবেশ করতে যাচ্ছে ব্রিটেনে
পিরিয়ডে হেভি ফ্লো নিয়ে হ্যাসেল-ফ্রি থাকতে, কী করবেন
নাঙ্গলকোট উপজেলা নির্বাচন চেয়ারম্যান পদে ত্রিমুখী লড়াইয়ের সম্ভাবনা