‘সর্বজনীন’ পেনশন স্কিমে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে অন্তর্ভুক্তি বৈষম্য তৈরি করবে: ইউট্যাব

Daily Inqilab স্টাফ রিপোর্টার

০৬ মে ২০২৪, ১২:৫৬ পিএম | আপডেট: ০৬ মে ২০২৪, ১২:৫৬ পিএম

 

‘সর্বজনীন পেনশন স্কিমে’ দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে অন্তর্ভুক্ত করার যে সিদ্ধান্ত সরকার নিয়েছে তার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ এবং উদ্বেগ জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সংগঠন ইউনিভার্সিটি টিচার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ইউট্যাব)। একইসঙ্গে আগামী জুলাই থেকে বিশ্ববিদ্যালয়গগুলোতে নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত সবাইকে সর্বজনীন পেনশনের ‘প্রত্যয়’ স্কিমে অন্তর্ভুক্ত করার বাধ্যবাধকতা থেকে সরকারকে সরে আসার আহ্বান জানিয়েছে সংগঠনটি। আজ সোমবার (৬ মে) এক বিবৃতিতে ইউট্যাবের প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ড. এবিএম ওবায়দুল ইসলাম ও মহাসচিব অধ্যাপক ড. মো. মোর্শেদ হাসান খান এই আহ্বান জানান।
নেতৃদ্বয় বলেন, গত বছর নিম্ন-আয় ও অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে নিয়োজিত পেনশনের বাইরে থাকা জনগোষ্ঠীকে পেনশনের আওতায় আনার উদ্দেশ্যে ‘সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনা আইন ২০২৩ (২০২৩ সনের ৪নং আইন)’ প্রণয়ন করা হয়। কিন্তু হঠাৎ করেই গত ১৩ মার্চ ২০২৪ ইং তারিখে অর্থ মন্ত্রণালয়ের জারিকৃত প্রজ্ঞাপনে (এস.আর.ও. নং ৪৮-আইন/২০২৪) আগামী ১ জুলাই ২০২৪ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত সবাইকে সর্বজনীন পেনশনের ‘প্রত্যয়’ স্কিমে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
তারা বলেন, আগামী ১ জুলাই ২০২৪ ইং থেকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নতুন নিয়োগপ্রাপ্তরা নতুন স্কিমে অন্তর্ভুক্ত হলে পুরনোদের সঙ্গে তাদের বৈষম্য তৈরি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এছাড়া নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত চাকরি করার পর পদোন্নতির পরিবর্তে বিজ্ঞাপিত শূন্য পদে সরাসরি নিয়োগ লাভ করলে পেনশন ব্যবস্থাপনার কি হবে তা নতুন প্রজ্ঞাপনে সুস্পষ্ট করা হয়নি! এমনকি সর্বজনীন পেনশন স্কিমে অবসরের পর শিক্ষকগণ বর্তমান ব্যবস্থার মতো এককালীন অর্থ পাবেন না। অন্যদিকে সরকারি কর্মচারীরা এককালীন অর্থ প্রাপ্তির সুবিধার পাশাপাশি মাসিক ভাতা পাবেন। যা বৈষম্যমূলক এবং অন্যায়। কেননা, বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় এবং ক্ষেত্র বিশেষে চতুর্থ স্থান অর্জনকারী মেধাবী শিক্ষার্থীরা পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতা পেশায় যুক্ত হন। কিন্তু এ ধরনের পেনশন স্কিমের ফলে মেধাবীরা শিক্ষকতা পেশায় আসতে আগ্রহ হারিয়ে বিলাসী জীবন যাপন করা যায় এমন পেশার দিকে ঝুঁকবে। ফলে এই বৈষম্যমূলক পেনশন স্কিমের কারণে শিক্ষকগণের সামাজিক অবস্থানের আরেক দফা অবনমন হবে বলে আমরা মনে করি।
ইউট্যাবের শীর্ষ দুই নেতা বলেন, সরকারের ‘সর্বজনীন’ স্কিমে প্রশাসন, পুলিশ, প্রতিরক্ষা, বিচার-বিভাগসহ রাজস্ব খাতের অন্যান্য কর্মচারীদের অন্তর্ভুক্ত না করে একতরফা-ভাবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে অন্তর্ভুক্ত করায় পুরো দেশজুড়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মাঝে চরম ক্ষোভ ও হতাশা তৈরি হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে একটি সন্তোষজনক পেনশন স্কিম কার্যকর থাকা সত্ত্বেও নতুন ‘প্রত্যয় স্কিম' চাপিয়ে দেওয়া দীর্ঘদিন ক্ষমতা জবরদখল করে থাকা আওয়ামী সরকারের শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংস করার আরেকটি নজির মাত্র!
তারা বলেন, বর্তমানে একজন সিলেকশন গ্রেডের অধ্যাপক গ্রেড বিবেচনায় সরকারের অনেক জুনিয়র কর্মকর্তার তুলনায় পেশাগত নানান সুবিধাদিতে (দাপ্তরিক গাড়ি, ব্যক্তিগত গাড়ি ক্রয়ের জন্য প্রায় বিনা সুদে লোণ এবং গাড়ি ব্যবহারের জন্য মাসিক ৫০ হাজার টাকা ব্যয়) অনেক পিছিয়ে আছেন। তাই সুযোগ-সুবিধার চরম বৈষম্যের কারণে মেধাবীরা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতায় আসতে নিরুৎসাহিত হচ্ছেন। এটা গোটা জাতির জন্য একটি অশনিসংকেত। জাতির মেরুদণ্ড শিক্ষাকে ধ্বংস করার জন্য একটি প্রভাবশালী চক্রের বৈরী মনোভাব নতুন নয়। অথচ দক্ষ ও যুগোপযোগী জনশক্তি গড়ে তুলতে নিবেদিতপ্রাণ মেধাবী শিক্ষকের বিকল্প নেই! তবে এটি স্পষ্ট যে, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর নিজস্ব বেতন কাঠামো, নিজস্ব পেনশন ব্যবস্থাসহ সব ক্ষেত্রেই স্বায়ত্তশাসন আজ হুমকির মুখে। তাই দল-মত নির্বিশেষে সকল সহকর্মীকে এই শিক্ষা বিধ্বংসী তৎপরতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

তীব্র হচ্ছে রুশ হামলা, গোলাবারুদের জন্য অধীর আগ্রহে ইউক্রেনীয় সেনারা

তীব্র হচ্ছে রুশ হামলা, গোলাবারুদের জন্য অধীর আগ্রহে ইউক্রেনীয় সেনারা

কুড়িগ্রামে নির্বচনী সংঘর্ষে আহত ১০

কুড়িগ্রামে নির্বচনী সংঘর্ষে আহত ১০

সোনারগাঁয় ভোট কিনতে এসে টাকাসহ যুবক আটক

সোনারগাঁয় ভোট কিনতে এসে টাকাসহ যুবক আটক

তিন দশক পর ঢাকা আসছেন অস্ট্রেলিয়ার কোনো পররাষ্ট্রমন্ত্রী

তিন দশক পর ঢাকা আসছেন অস্ট্রেলিয়ার কোনো পররাষ্ট্রমন্ত্রী

এভারেস্ট জয় করলেন বাংলাদেশি বাবর আলী

এভারেস্ট জয় করলেন বাংলাদেশি বাবর আলী

গাজায় ২৪ ঘণ্টায় অন্তত ১২১ ফিলিস্তিনিকে হত্যা ইসরায়েলের

গাজায় ২৪ ঘণ্টায় অন্তত ১২১ ফিলিস্তিনিকে হত্যা ইসরায়েলের

সউদীতে আরো এক বাংলাদেশি হজযাত্রীর মৃত্যু

সউদীতে আরো এক বাংলাদেশি হজযাত্রীর মৃত্যু

স্মার্টফোনের আয়ু আর দশ বছর! বিস্ফোরক দাবি মেটার শীর্ষ এআই বিজ্ঞানীর

স্মার্টফোনের আয়ু আর দশ বছর! বিস্ফোরক দাবি মেটার শীর্ষ এআই বিজ্ঞানীর

গাজার নুসেইরাত শরণার্থী শিবিরে ইসরায়েলের হামলা, নিহত অন্তত ১৭

গাজার নুসেইরাত শরণার্থী শিবিরে ইসরায়েলের হামলা, নিহত অন্তত ১৭

বিশ্বের দীর্ঘতম ট্রেন, একদিকে থেকে অন্যদিকে হেঁটে যেতে কতক্ষণ লাগবে জানেন?

বিশ্বের দীর্ঘতম ট্রেন, একদিকে থেকে অন্যদিকে হেঁটে যেতে কতক্ষণ লাগবে জানেন?

অপরাজিত থেকেই শাবির লেভারকুসেনের শিরোপা উৎসব

অপরাজিত থেকেই শাবির লেভারকুসেনের শিরোপা উৎসব

বদলে যাবে পূর্ব অভিজ্ঞতা, ২০২৪ সালেই স্মার্ট গ্লাসে ‘বিপ্লব’ আনতে চলেছে গুগল!

বদলে যাবে পূর্ব অভিজ্ঞতা, ২০২৪ সালেই স্মার্ট গ্লাসে ‘বিপ্লব’ আনতে চলেছে গুগল!

২৬ বছর পর ‘হারিয়ে যাওয়া কিশোরে’র খোঁজ মিলল প্রতিবেশির ঘরে

২৬ বছর পর ‘হারিয়ে যাওয়া কিশোরে’র খোঁজ মিলল প্রতিবেশির ঘরে

কিরগিস্তানে আতঙ্কে বাংলাদেশী শিক্ষার্থীরা

কিরগিস্তানে আতঙ্কে বাংলাদেশী শিক্ষার্থীরা

বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ভিক্ষুক, মোট সম্পত্তি ৭.৫ কোটি

বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ভিক্ষুক, মোট সম্পত্তি ৭.৫ কোটি

মেসির ফেরার ম্যাচে মায়ামির নাটকীয় জয়

মেসির ফেরার ম্যাচে মায়ামির নাটকীয় জয়

ভারতের কোভ্যাক্সিনেও রয়েছে দীর্ঘমেয়াদি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া

ভারতের কোভ্যাক্সিনেও রয়েছে দীর্ঘমেয়াদি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া

নেতানিয়াহুকে গাঞ্জের পদত্যাগের আলটিমেটাম

নেতানিয়াহুকে গাঞ্জের পদত্যাগের আলটিমেটাম

মোদি বাংলাদেশ থেকে শিক্ষা নিয়ে ভারতে নির্বাচনের চেষ্টা করছেন : কেজরিওয়াল

মোদি বাংলাদেশ থেকে শিক্ষা নিয়ে ভারতে নির্বাচনের চেষ্টা করছেন : কেজরিওয়াল

রাজনীতিবিদের সুন্দরী স্ত্রীকে নিয়ে হইচই

রাজনীতিবিদের সুন্দরী স্ত্রীকে নিয়ে হইচই