রিকশাচালক আছমতের কুল চাষে ভাগ্য বদল
০১ মার্চ ২০২৪, ১২:০৬ এএম | আপডেট: ০১ মার্চ ২০২৪, ১২:০৬ এএম
নিজের মাথাগোঁজার শেষ সম্বল নদীগর্ভে বিলীণ হওয়ার পর ফেনী আসেন কৃষক আছমত আলী। নতুন জেলায় এসে শুরুতে রিকশা চালিয়ে বেঁচে থাকার সংগ্রাম শুরু করেন তিনি। পাশাপাশি বিভিন্ন শাকসবজি আবাদ করলেও সেখানে তেমন সফলতা আসেনি। পরবর্তী কৃষি বিভাগের সহায়তায় শুরু করেন কুল চাষ। এতে অল্প কয়েক বছরের মাথায় দিন বদলের হাতিয়ার হয়েছে এ কুল চাষ। বর্তমানে আছমত আলী ফেনী সদর উপজেলার পূর্ব ফলেশ্বর আলী আজ্জম ইটভাটা সংলগ্ন এলাকায় বসবাস করছেন। পরিবারে তার ৪ ছেলে ও এক কন্যা সন্তান রয়েছে।
কুল চাষের শুরুর পথচলা তুলে ধরে কৃষক আছমত আলী বলেন, ল²ীপুরের রামগতি থেকে ফেনীতে এসে প্রথমে রিকশা চালিয়েছি। তখন ছোট পরিসরে শাকসবজি আবাদ করতাম। শাকসবজি চাষে তেমন সফলতা পাইনি। পরবর্তী সময়ে কৃষি বিভাগের পরামর্শে তিনবছর আগে ৪০ শতক জায়গায় রাজশাহী থেকে চারা এনে কুল চাষ শুরু করি। সফলতা পেয়ে পরে খুলনা থেকে চারা এনে আরো ২০ শতক জায়গায় আরেকটি বাগান করেছি।
তিনি বলেন, প্রথমে করা বাগানটিতে ১০০ চারা লাগালেও কিছুদিন পর প্রায় অর্ধেকের মতো চারা তুলে বাগান ফাঁকা করা হয়েছে। বর্তমানে বাগানে দেড় শতাধিক গাছ রয়েছে। গাছের দূরত্ব কম হলে বরই নষ্ট হয়ে যায়। ফাঁকা রাখলে ফলনও ভালো হয়।
তিনি আরো বলেন, বল সুন্দরী জাতের কুল চাষে বেশি সফলতা পেয়েছি। এ জাতের বরই অনেক সুস্বাদু। ফলনও এখন পর্যন্ত আশানুরূপ পাচ্ছি। বর্তমানে দুইটি বাগানে বল সুন্দরী ও কাশ্মিরী বাউকুল আছে। এখন দৈনিক ২০ থেকে ২৫ কেজির মতো বরই বিক্রি হয়। কেজিপ্রতি ১০০ টাকা করে এলাকার মানুষজন একদম বাগান থেকে কিনতে পেরে খুশি। চলতি মৌসুমে বাগান থেকে প্রায় ২ লাখ টাকার মতো কুল বিক্রি করতে পারবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি। সমন্বিত চাষ পদ্ধতি নিয়ে আছমত আলী বলেন, দু’য়েকমাস ছাড়া বছরের পুরো সময়েই কুল চাষের পাশাপাশি বিভিন্ন সবজি আবাদ করি। এখনও কুল বাগানে আদা ও হলুদ রয়েছে। এছাড়া বছরজুড়ে অন্যান্য ফসলের মতো কুল চাষে খুব বেশি পুঁজি দিতে হয়না। এজন্য লাভের পরিমাণও সন্তোষজনক।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পোকা ও পাখির আক্রমণ থেকে রক্ষায় বাগানের চারপাশে মশারি জালের বেড়া দেওয়া হয়েছে। প্রতিটি গাছের থোকায় থোকায় ঝুলছে লাল-সবুজ রঙের কুল বড়ই। কুলের ভারে মাটিতে নুয়ে পড়েছে গাছের ডাল। সুস্বাদু বাহারি রংয়ের কুল নিজেই গাছে থেকে পারছেন কৃষক আছমত আলী।
দেলোয়ার হোসেন নামে এক ক্রেতা বলেন, ভেজালমুক্ত কুল কিনতে এখানে এসেছি। বাগানে উৎপাদিত কুল কিনতে মানুষের আগ্রহ বেশি। সচরাচর এভাবে সরাসরি বাগান থেকে সংগ্রহ করা সম্ভব হয়না। তাই এখানে এসেছি। হুমায়ুন আহাম্মেদ নামে আরেক ক্রেতা বলেন, এখানে এসে নিজেই গাছ থেকে পছন্দের কুল পেরে বাড়ি নিচ্ছি। বাজারে কিনতে গেলে ভেজাল নিয়ে শঙ্কার মধ্যে থাকতে হয়। কিন্তু এখানে ভেজালমুক্ত কুল কিনতে পারছি।
মোজাম্মেল হোসেন নামে স্থানীয় এক যুবক বলেন, এ উদ্যোগ আমাদের জন্য শিক্ষনীয়। বিশেষ করে তরুণদের আত্মকর্মসংস্থানের উপযুক্ত ক্ষেত্র হিসেবে এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এখানে এসে বাগানের মালিক থেকে কুল চাষের বিষয়ে ধারণা নিচ্ছি। সুযোগ হলে ভবিষ্যতে এমন উদ্যোগ বাস্তবায়নের ইচ্ছে আছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্র জানায়, চলতি মৌসুমে জেলায় ৯০ হেক্টর জমিতে কুলের আবাদ হয়েছে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা এক হাজার মেট্রিক টন। এর আগে ২০২২-২৩ অর্থবছরে জেলায় কুলের আবাদ হয়েছিল ৮৬ হেক্টর জমিতে। ফলন হয়েছিল ৯৩৮ মেট্রিক টন। সদর উপজেলার কাজীরবাগ ইউনিয়নে দায়িত্বরত উপসহকারি কৃষি কর্মকর্তা মো. নাছির উদ্দিন বলেন, কৃষি বিভাগ সবসময় এ চাষির পাশে থেকে কাজ করছে। বিভিন্ন রোগবালাই প্রতিরোধে এবং বাগান পরিচর্যার বিষয়ে পরামর্শসহ দিক-নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। একই জমিতে তিনি (আছমত আলী) কুল চাষের পাশাপাশি বিভিন্ন শীতকালীন সবজিও আবাদ করছে। এতে বাড়তি লাভবান হচ্ছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের অতিরিক্ত উপপরিচালক মো. জগলুল হায়দার বলেন, ফেনীর মাটি ও সামগ্রিক পরিবেশ কুলের আবাদের জন্য ইতিবাচক। আগামীতে এ জেলায় কুলের আবাদ আরো বাড়তে পারে। এটি এ জনপদের জন্য আশার আলো। কুল চাষে কৃষক যে লাভ পাচ্ছে তাতে সে যেমন লাভবান হবে তেমনি দেশও লাভবান হবে।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারে অনুমতি পাচ্ছে না ইউক্রেন
গাজা-লেবাননে নিহত আরো ২২২
আসাদের সঙ্গে বৈঠকের জন্য প্রস্তুত এরদোগান
জাবির সাবেক ছাত্রলীগ নেতাকে পিটিয়ে হত্যা মামলায় রায়হানের দোষ স্বীকার
গণহত্যাকারী কোন রাজনৈতিক দলের রাজনীতি করার অধিকার থাকে না: আসাদুজ্জামান রিপন
ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনা জন্য আমাদের লড়াই চলছে : গয়েশ্বর চন্দ্র রায়
ইনসি ইকো প্লাস সিমেন্ট নিয়ে এলো বাংলাদেশের সমূদ্র তীরবর্তী অঞ্চলের উপযোগী করে দীর্ঘস্থায়ী স্থাপনা নির্মাণের সমাধান
হাত-পা ও চোখ বেঁধে ঝুলিয়ে পেটানো হয় --- আবু বাকের
দৈনিক রাজবাড়ী কন্ঠে" প্রকাশকের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে ফরিদপুর সাংবাদিক জোটের প্রতিবাদ সভা
ডাটা সেন্টারের সক্ষমতা বৃদ্ধির তাগিদ তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টার
শ্রীলঙ্কার চীনপন্থি প্রেসিডেন্ট দিশানায়েকে কি ভারতের জন্য চ্যালেঞ্জ?
ফুটবলের মাঠে চমক দেখাতে চান তাবিথ আউয়াল
এবার ফাঁস হলো রাবি শিবির সভাপতির পরিচয়
নদী দখলকারীদের উচ্ছেদে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে - পানি সম্পদ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান
সাবেক পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক শামিম কারাগারে
স্বৈরাচারের পতন হলেও দোসররা এখনো রয়ে গেছে : তারেক রহমান
মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি রিক্রুটিং এজেন্সি মালিক গ্রেফতার
‘অধ্যাপক’ হিসেবে পদোন্নতি পেলেন শিক্ষা ক্যাডারের ৯২২ জন
ঢাবিতে মতবিনিময় সভায় যৌন নিপীড়ক শিক্ষক, শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ
সেনাবাহিনীর নারী সদস্যরা হিজাব পরতে পারবেন