ঢাকা   মঙ্গলবার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৯ আশ্বিন ১৪৩১

দ্রুত বিচার আইন স্থায়ী করতে সংসদে বিল, আপত্তি বিরোধী দলের

Daily Inqilab স্টাফ রিপোর্টার

০১ মার্চ ২০২৪, ১২:০৭ এএম | আপডেট: ০১ মার্চ ২০২৪, ১২:০৭ এএম

দ্রুত বিচার আইন স্থায়ী করতে জাতীয় সংসদে ‘আইন–শৃঙ্খলা বিঘ্ন অপরাধ (দ্রুত বিচার-সংশোধন) বিল-২০২৪’ উত্থাপন করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার বিলটি উত্থাপনকালে বিরোধী দলের পক্ষ থেকে আপত্তি জানান বিরোধী দলীয় চীফ হুইপ মুজিবুল হক চুন্নু। তবে সেই আপত্তি কণ্ঠভোটে নাকচ হয়ে যায়। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের অনুপস্থিতিতে তার পক্ষে বিলটি উত্থাপন করেন আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক। পরে বিলটি অধিকতর পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়। কমিটিকে আগামী দুই দিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে।

বিলটি উত্থাপনের বিরোধিতা করে সংসদে মুজিবুল হক বলেন, ২০০২ সালে বিএনপি যখন আইনটি করে, তখন আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে এবং সব দলের পক্ষ থেকে এই আইনের সমালোচনা করা হয়েছিল। দ্রুত বিচার আইন নাম হলেও কোর্টে কিন্তু নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে খুব কম মামলা শেষ হয়। সিআরপিসি মামলা যেভাবে চলে, সেভাবেই চলে। শুধু গ্রেফতারের বেলায় আইনটা মনে করা হয়। এই আইনটা দিয়ে সরকারের যদি ইনটেনশন থাকে, সাধারণ মানুষ বা প্রতিপক্ষকে হেনস্তা করার সুযোগ আছে। আপনি আজকে ক্ষমতায় আছেন, কালকে ক্ষমতায় যদি অন্য কেউ আসে, এই আইনের মাধ্যমে আপনারাই হয়রানির শিকার হবেন। তিনি বলেন, আইনটি স্থায়ী করবেন না। প্রত্যাহার করেন প্রয়োজনে। এক-দুই বছরের জন্য মেয়াদ বাড়ান। আপনারা ভুগবেন, মানুষ ভুগবে। জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, জনগণের ওপর অত্যাচার করার জন্য আইন বলে বলছেন। কিন্তু যখন এটা করা হয়েছিল, আমরা বিরোধিতা করেছিলাম। আমি বলতে চাই, যখন এই আইন ২০০২ সালে পাস করা হয়, তখন এর উদ্দেশ্য ছিল আওয়ামী লীগ এবং অন্যান্য বিএনপিবিরোধী যেসব দল ছিল, তাদের অত্যাচার করার জন্য। কিন্তু গত ১৫ বছরে এই আইনের প্রয়োগ যেভাবে হয়েছে, সেখানে কিন্তু তার (চুন্নু) বক্তব্য সেটা সঠিক নয়। দ্বিতীয় কথা, এই আইনটা দেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য প্রয়োজন। এই আইন থাকার কারণে অনেক ধরনের বিশৃঙ্খলা গত ১৫ বছরে হয়নি। ২০০১ সাল থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত এই আইন শুধু রাজনৈতিক দল ও রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের ওপর ব্যবহার করা হয়েছে। কিন্তু ২০০৯ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত রাজনৈতিক কর্মী বা নেতাদের জন্য ব্যবহার করা হয়নি। অনেক রকম সহিংসতা, বিশৃঙ্খলা এই আইন প্রতিহত করেছে। এ কারণে এই আইনটি স্থায়ী করা উচিত।

প্রসঙ্গত, ২০০২ সালে প্রথম এই আইনটি করা হয়েছিল দুই বছরের জন্য। এরপর ৭ দফা এই আইনের মেয়াদ বাড়ানো হয়। সর্বশেষ ২০১৯ সালে আইনটি সংশোধন করে মেয়াদ বাড়ানো হয়। আগামী ৯ এপ্রিল এই আইনের মেয়াদ শেষ হচ্ছে। এর মধ্যে আইনটির মেয়াদ না বাড়িয়ে, তা স্থায়ী করার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। গত ২৯ জানুয়ারি মন্ত্রিসভায় এ সিদ্ধান্ত হয়। মন্ত্রিসভায় অনুমোদিত বিলটি সংসদে তোলা হয়েছে। বিলে আইনটি স্থায়ী করা ছাড়া অন্য কোন সংশোধনী প্রস্তাব আনা হয়নি। অর্থাৎ আইনটির বিদ্যমান ধারা এখনকার মতোই থাকবে।

বিলের উদ্দেশ্য ও কারণ সংবলিত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নয়নে দ্রæত ও কার্যকর ভ‚মিকা পালনের উদ্দেশ্যে চাঁদাবাজি, যানবাহন চলাকালে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি, যানবাহনের ক্ষতিসাধন, স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি বিনষ্ট করা, ছিনতাই, দস্যুতা, ত্রাস ও অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি, দরপত্র ক্রয়, বিক্রয়, গ্রহণ বা দাখিলে জোরপূর্বক বাধা প্রদান, যা প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি, ভয়-ভীতি প্রদর্শন ইত্যাদি গুরুতর অপরাধের দ্রæত বিচার নিশ্চিত করার মাধ্যমে দেশের সার্বিক আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অধিকতর উন্নতির লক্ষ্যে ‘আইন- শৃঙ্খলা বিঘœকারী অপরাধ (দ্রæত বিচার) আইন-২০০২’ প্রণয়ন ও জারি করা হয়েছিল। আইনটি প্রণয়নের সময় এর মেয়াদ ছিল ২ বছর। পরবর্তী সময়ে প্রয়োজনীয়তার নিরিখে ক্রমান্বয়ে ৭ বার এর মেয়াদ বাড়িয়ে সর্বশেষ ২০১৯ সালের ১০ এপ্রিল ১৭ বছর থেকে ২২ বছর বাড়ানো হয়, যার মেয়াদ আগামী ৯ এপ্রিল শেষ হবে। দেশের সার্বিক আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখা ও অধিকতর উন্নতির জন্য এই আইনটি মেয়াদ শেষে বারবার সময় বাড়িয়ে স্থায়ীভাবে আইনে পরিণত করা প্রয়োজন।

 


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারে অনুমতি পাচ্ছে না ইউক্রেন

দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারে অনুমতি পাচ্ছে না ইউক্রেন

গাজা-লেবাননে নিহত আরো ২২২

গাজা-লেবাননে নিহত আরো ২২২

আসাদের সঙ্গে বৈঠকের জন্য প্রস্তুত এরদোগান

আসাদের সঙ্গে বৈঠকের জন্য প্রস্তুত এরদোগান

জাবির সাবেক ছাত্রলীগ নেতাকে পিটিয়ে হত্যা মামলায় রায়হানের দোষ স্বীকার

জাবির সাবেক ছাত্রলীগ নেতাকে পিটিয়ে হত্যা মামলায় রায়হানের দোষ স্বীকার

গণহত্যাকারী কোন রাজনৈতিক দলের রাজনীতি করার অধিকার থাকে না: আসাদুজ্জামান রিপন

গণহত্যাকারী কোন রাজনৈতিক দলের রাজনীতি করার অধিকার থাকে না: আসাদুজ্জামান রিপন

ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনা জন্য আমাদের লড়াই চলছে : গয়েশ্বর চন্দ্র রায়

ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনা জন্য আমাদের লড়াই চলছে : গয়েশ্বর চন্দ্র রায়

ইনসি ইকো প্লাস সিমেন্ট নিয়ে এলো বাংলাদেশের সমূদ্র তীরবর্তী অঞ্চলের উপযোগী করে দীর্ঘস্থায়ী স্থাপনা নির্মাণের সমাধান

ইনসি ইকো প্লাস সিমেন্ট নিয়ে এলো বাংলাদেশের সমূদ্র তীরবর্তী অঞ্চলের উপযোগী করে দীর্ঘস্থায়ী স্থাপনা নির্মাণের সমাধান

হাত-পা ও চোখ বেঁধে ঝুলিয়ে পেটানো হয় --- আবু বাকের

হাত-পা ও চোখ বেঁধে ঝুলিয়ে পেটানো হয় --- আবু বাকের

দৈনিক রাজবাড়ী কন্ঠে" প্রকাশকের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে ফরিদপুর সাংবাদিক জোটের প্রতিবাদ সভা

দৈনিক রাজবাড়ী কন্ঠে" প্রকাশকের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে ফরিদপুর সাংবাদিক জোটের প্রতিবাদ সভা

ডাটা সেন্টারের সক্ষমতা বৃদ্ধির তাগিদ তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টার

ডাটা সেন্টারের সক্ষমতা বৃদ্ধির তাগিদ তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টার

শ্রীলঙ্কার চীনপন্থি প্রেসিডেন্ট দিশানায়েকে কি ভারতের জন্য চ্যালেঞ্জ?

শ্রীলঙ্কার চীনপন্থি প্রেসিডেন্ট দিশানায়েকে কি ভারতের জন্য চ্যালেঞ্জ?

ফুটবলের মাঠে চমক দেখাতে চান তাবিথ আউয়াল

ফুটবলের মাঠে চমক দেখাতে চান তাবিথ আউয়াল

এবার ফাঁস হলো রাবি শিবির সভাপতির পরিচয়

এবার ফাঁস হলো রাবি শিবির সভাপতির পরিচয়

নদী দখলকারীদের উচ্ছেদে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে - পানি সম্পদ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান

নদী দখলকারীদের উচ্ছেদে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে - পানি সম্পদ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান

সাবেক পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক শামিম কারাগারে

সাবেক পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক শামিম কারাগারে

স্বৈরাচারের পতন হলেও দোসররা এখনো রয়ে গেছে : তারেক রহমান

স্বৈরাচারের পতন হলেও দোসররা এখনো রয়ে গেছে : তারেক রহমান

মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি রিক্রুটিং এজেন্সি মালিক গ্রেফতার

মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি রিক্রুটিং এজেন্সি মালিক গ্রেফতার

‘অধ্যাপক’ হিসেবে পদোন্নতি পেলেন শিক্ষা ক্যাডারের ৯২২ জন

‘অধ্যাপক’ হিসেবে পদোন্নতি পেলেন শিক্ষা ক্যাডারের ৯২২ জন

ঢাবিতে মতবিনিময় সভায় যৌন নিপীড়ক শিক্ষক, শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ

ঢাবিতে মতবিনিময় সভায় যৌন নিপীড়ক শিক্ষক, শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ

সেনাবাহিনীর নারী সদস্যরা হিজাব পরতে পারবেন

সেনাবাহিনীর নারী সদস্যরা হিজাব পরতে পারবেন