ঢাকা   সোমবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৮ আশ্বিন ১৪৩১

বেইলি রোডে ট্রাজেডির জন্য দায়ি অবহেলা ও সীমাহিন লোভ : বাংলাদেশ ন্যাপ

Daily Inqilab অনলাইন ডেস্ক

০৪ মার্চ ২০২৪, ০৩:৫৫ পিএম | আপডেট: ০৪ মার্চ ২০২৪, ০৩:৫৫ পিএম

 

 রাজধানী ঢাকায় একের পর এক অগ্নিট্রাজেডিতে শতশত মানুষের প্রাণহানির মধ্যে বেইলি রোডের দুর্ঘটনাকে বিচ্ছিন্ন করে ভাবার কোন উপায় নাই। বেইলি রোডে ট্রাজেডি সহ এ ধরনের দুর্ঘটনার জন্য দায়ি সরকারের যথাযথ কর্তৃপক্ষের অবহেলা ও মানুষের অতিরিক্ত লোভ বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি-বাংলাদেশ ন্যাপ চেয়ারম্যান জেবেল রহমান গানি ও ম,হাসচিব এম. গোলাম মোস্তফা ভুইয়া।

সোমবার ( ৪ মার্চ) গণমাধ্যমে প্রেরিত এক বিবৃতিতে নেতৃদ্বয় এ মন্তব্য করে এ ধরনের ঘটনায় প্রাণহানির পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে প্রতিষ্ঠানের মালিকসহ অবহেলায় জড়িত সরকারি কর্তৃপক্ষের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের দায় অনুযায়ী শাস্তি নিশ্চিত করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। তারা বলেন, দেশের সার্বিক অবস্থা বিবেচনা করলে মনে হয় মানুষ মরল নাকি বাঁচল, তা নিয়ে কারও কোনো ভ্রুক্ষেপ নাই। রাজধানীর বেইলি রোডের ভবনটিতে যে ধরনের অগ্নিদুর্ঘটনা ঘটেছে, তা আসলে গাফিলতিজনিত হত্যাকাণ্ড। অগ্নিকাণ্ডে মানুষের মৃত্যুর অন্যতম কারণ ভবনমালিক ও ব্যবসায়ীদের অতি মুনাফার লোভ। একই সঙ্গে সরকারি বিভিন্ন সংস্থার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের গাফিলতি, উদাসীনতা, দায়িত্বহীন এবং অন্যায় আচরণও এ ধরনের ‘হত্যাকাণ্ডের’ জন্য দায়ী।

নেতৃদ্বয় বলেন, সবকিছুর মূল্য বৃদ্ধি পেলেও মানুষের জীবনের মূল্য বৃদ্ধি পায় নাই। রোডের ভয়াবহ আগুনে ৪৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। এই মৃত্যুর দায় কার-জনমনে প্রশ্ন ? ভবন মালিক, রেস্টুরেন্ট ব্যবসায়ী, ফায়ার সার্ভিস, রাজউক, নাকি আমাদের পুরো ব্যবস্থার ? কমবেশি সবার অবহেলার নিষ্ঠুর খেসারত দিতে হয় এই ধরনের অগ্নিকান্ডের ফলে। কোনোভাবে এত মৃত্যু, এত আগুন মেনে নেয়া যায় না। তারা বলেন, এর আগে ২০১০ সালে পুরাতন ঢাকার নিমতলীতে একটি রাসায়নিক গুদামে অনুরূপ দুর্ঘটনায় ১২৪ জনের মৃত্যু হয়। ২০১৯ সালে চকবাজারে একই ধরনের দুর্ঘটনায় ৭১ জন মানুষ মৃত্যুবরণ করেন। একই বছর বনানীর এফ আর টাওয়ারে আগুন লেগে ২৭ জন মানুষ প্রান হারান। হাসেম ফুড ইন্ডাস্ট্রিজ এবং তাজরিন গার্মেন্টসহ এর আগে যে সকল অগ্নি দুর্ঘটনা ঘটেছে তা থেকে বেইলি রোডের দুর্ঘটনাকে বিচ্ছিন্ন ভাবার উপায় নেই।

তারা আরও বলেন, মনুষ্যত্বের শিক্ষাটাই চরম শিক্ষা আর সমস্তই তার অধীন। কিন্তু সমাজে এই শিক্ষার খুবই অভাব রয়েছে। তবে একজন সুশিক্ষিত মানুষের ন্যায়টাই তার জীবনের মূল হাতিয়ার। বর্তমান পরিস্থিতির দিকে তাকালে আর সুশিক্ষার ব্যাখ্যার সঙ্গে মানুষকে মেলালে সমাজে সুশিক্ষা আছে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ দেখা দেয়।” বহুকাল আগে লিখেছিলেন রবীন্দ্রনাথ। বড় বেচাল শব্দ এই মনুষ্যত্ব। কোথায় যে কীভাবে, কাকে ধরে চিন্তার বিষয়। নেতৃদ্বয় বলেন, এ শহরের একমাত্র বিনোদন’ রসনা তৃপ্তির বা পরিবারের ও স্বজনদের সাথে কিছু আনন্দের মুহূর্ত কাটানোর জন্য হতভাগ্য কিছু মানুষ বেইলি রোডের গ্রিন কোজি কটেজকে বেছে নিয়েছিলেন। নামে কটেজ হলে কী হবে, বাস্তবে বহুতল। শুধু বানিয়ে ক্ষান্ত তাঁরা হননি। নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে শুধু বিত্তের দাপটে সেটাকে জতুগৃহ বানাতে কুণ্ঠিত বোধ করেননি। তাদের সেই লালসার বলি এখন পর্যন্ত ৪৬ জন মানুষ।

তারা বলেন, বেইলি রোডের ঘটনার রেশ ধরে সংশ্লিষ্ট সব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে। কিন্তু, এ দাবী কি আসলেই পূরণ হবে ? দুই দিন পর সবাই সব ভুলে যাবে। তদন্ত কমিটি লোকদেখানো একটা রিপোর্ট দেবে। ভবন মালিক কমবেশি দায়ী হবে। রাজউক, পরিবেশ অধিদফতর, সিটি করপোরেশন আড়াল হবে। রেস্টুরেন্টের অনুমতি প্রদানকারীদের ব্যর্থতা, অনিয়মে জড়িত থাকার রিপোর্টও হারিয়ে যাবে। অতীতেও তাই ঘটেছে। ভবিষ্যতেও তাই ঘটবে নাই এই বিষয়ে কেউ আসত্ব হতে পারে না।

ন্যাপ নেতৃদ্বয় বলেন, বঙ্গবাজার, চুড়িহাট্টা, নিমতলীর বিভীষিকার রেশ এখনো কাটেনি। পুরান ঢাকার বাসাবাড়ি থেকে কেমিক্যাল গোডাউন এখনো পুরোপুরি উচ্ছেদ হয়নি। ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলো আগের মতোই দাঁড়িয়ে আছে। মনিটর করার কেউ নেই। আর নেই বলেই ঢাকাজুড়ে বাণিজ্যিক ভবন আর পুরাতন মার্কেটগুলোর বেহাল দশা। সবাই ভবন গড়েন, ব্যবসা-বাণিজ্যর জন্য ভাড়া দেন, নিয়ম মানেন না। সিটি করপোরেশন কোনো কিছুর খবর রাখে না। রেস্টুরেন্ট অনুমতি দেওয়ার দায়িত্ব ছিল তাদের। পরিবেশ অধিদফতর দিয়েছিল ছাড়পত্র। কী করে সবাই অনুমতি দিলেন? তাজরীন গার্মেন্ট, রানা প্লাজা বড় শিক্ষা দিয়েছিল। তারপরও কেউই ঠিক হননি। তারা বলেন, বাংলাদেশ এগিয়ে চলছে, এগিয়ে যাবে। এখন মানুষগুলোর পরিবর্তন জরুরি। মুখে শেখ ফরিদ, বগলে ইট থাকলে চলবে না। মানুষকে রক্ষা করতে হবে। শহরকে বাঁচাতে হবে। যেখানে-সেখানে বহুতল ভবন নির্মাণের অনুমতি দেওয়া যাবে না। আশপাশের পরিবেশ, আগুন নেভানোর ব্যবস্থা বিবেচনায় আনতে হবে। বড় দুর্ঘটনার পর জানতে পারি সেই গাড়ির ফিটনেস ছিল না। ভুল চিকিৎসায় মৃত্যুর পর প্রকাশ পায় সেই হাসপাতাল এতদিন চলেছিল অনুমোদন ছাড়া। ভয়াবহ আগুনে মৃত্যুর মিছিলের পর খবর বের হয় ভবনের নকশার ত্রুটি ছিল। আগুন নেভানোর ব্যবস্থা ছিল না। দুর্ঘটনার আগে কোনো কিছু বের হয় না।

নেতৃদ্বয় বলেন, এটা সত্য আমাদের বিশাল জনগোষ্ঠীর দেশ। তারপরও নিয়ম বাস্তবায়ন কঠিন কিছু নয়। দূষণমুক্ত শহর গড়া অসম্ভব নয়। রক্ষণাবেক্ষণের জন্য পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ নেওয়া মানুষ দরকার। যা আমাদের এখন কম রয়েছে। নিয়ম সঠিকভাবে তৈরি হলে সবাই মানবে। বজ্র আঁটুনি ফসকা গেরো হলে চলবে না। মানসিকতার পরিবর্তন না আনলে সমস্যা থেকেই যাবে। এই বিশাল জনগোষ্ঠীর দেশে সমস্যার অভাব নেই। নিয়ম না মানলে সমাধান আসবে না। তারা অগ্নিকাণ্ডে হতাহতদের পরিবার ও সর্বস্ব হারানো মানুষের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করেন এবং সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে অগ্নিকাণ্ডের কারণ উদঘাটন, ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করার দাবি জানান একই সাথে অগ্নিকাণ্ডের জন্য দায়ীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করে নিহতদের পরিবারকে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দেওয়া এবং আহতদের সুচিকিৎসা ও পুনর্বাসনের দাবি জানান।

 


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

আসাদের সঙ্গে বৈঠকের জন্য প্রস্তুত এরদোগান

আসাদের সঙ্গে বৈঠকের জন্য প্রস্তুত এরদোগান

পানি সম্পদ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানার সঙ্গে নোবিপ্রবি ভিসির সৌজন্য সাক্ষাৎ

পানি সম্পদ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানার সঙ্গে নোবিপ্রবি ভিসির সৌজন্য সাক্ষাৎ

পুলিশের গুলিতে আহত শিশু রাতুলের মৃত্যু ঢাকায়

পুলিশের গুলিতে আহত শিশু রাতুলের মৃত্যু ঢাকায়

কেজরিওয়ালের আসন ফাঁকা রেখেই মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব নিলেন অতিশী

কেজরিওয়ালের আসন ফাঁকা রেখেই মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব নিলেন অতিশী

যুক্তরাষ্ট্রে ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সাক্ষাৎ মোদির

যুক্তরাষ্ট্রে ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সাক্ষাৎ মোদির

ঘণ্টায় ঘণ্টায় লোডশেডিং, গরমে সর্বত্র ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা গারো পাহাড় সীমান্তাঞ্চলের মানুষের!

ঘণ্টায় ঘণ্টায় লোডশেডিং, গরমে সর্বত্র ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা গারো পাহাড় সীমান্তাঞ্চলের মানুষের!

পিছিয়ে গেল আর জি কর মামলার শুনানি, নতুন দিন ঘোষণা

পিছিয়ে গেল আর জি কর মামলার শুনানি, নতুন দিন ঘোষণা

ত্রিশঙ্কুর ভয়ে কাশ্মীরে কংগ্রেসের সঙ্গে জোট ওমরের

ত্রিশঙ্কুর ভয়ে কাশ্মীরে কংগ্রেসের সঙ্গে জোট ওমরের

ইটালিতে বাড়ি ভেঙে মা ও দুই শিশুর মৃত্যু

ইটালিতে বাড়ি ভেঙে মা ও দুই শিশুর মৃত্যু

এনবিসি সমীক্ষায় ট্রাম্পের থেকে এগিয়ে হ্যারিস

এনবিসি সমীক্ষায় ট্রাম্পের থেকে এগিয়ে হ্যারিস

বকেয়া বেতনের দাবিতে আশুলিয়ায় সড়ক অবরোধ বিক্ষোভ, বন্ধ ৫১টি   ছুটি ৮টি কারখানা

বকেয়া বেতনের দাবিতে আশুলিয়ায় সড়ক অবরোধ বিক্ষোভ, বন্ধ ৫১টি ছুটি ৮টি কারখানা

ব্র্যান্ডেনবুর্গের নির্বাচনে এক নম্বর দল হতে চলেছে এসপিডি

ব্র্যান্ডেনবুর্গের নির্বাচনে এক নম্বর দল হতে চলেছে এসপিডি

জম্মুর হিন্দুদের দিয়ে অধিকৃত কাশ্মীর জেতা বিজেপির পক্ষে সম্ভব হবে?

জম্মুর হিন্দুদের দিয়ে অধিকৃত কাশ্মীর জেতা বিজেপির পক্ষে সম্ভব হবে?

রাজবাড়ীতে গৃহবধূর রহস্যজনক মৃত্যু স্বামী আটক

রাজবাড়ীতে গৃহবধূর রহস্যজনক মৃত্যু স্বামী আটক

কর্মস্থলে অনুপস্থিত পুলিশ সদস্যদের বিধি অনুযায়ী বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে: ডিএমপি

কর্মস্থলে অনুপস্থিত পুলিশ সদস্যদের বিধি অনুযায়ী বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে: ডিএমপি

কক্সবাজারে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র জনতার মিছিলে গুলি বর্ষণকারী চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আটক

কক্সবাজারে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র জনতার মিছিলে গুলি বর্ষণকারী চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আটক

মহিপুরে ইটালী পরিবহন রাস্তার বাইরে আহত -১৫

মহিপুরে ইটালী পরিবহন রাস্তার বাইরে আহত -১৫

কমবে গরম, বাড়বে বৃষ্টি

কমবে গরম, বাড়বে বৃষ্টি

কুলাউড়ায় প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে কর্মচারী নিয়োগে ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগ

কুলাউড়ায় প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে কর্মচারী নিয়োগে ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগ

রাইসির হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত করেছিল ইসরাইল

রাইসির হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত করেছিল ইসরাইল