ঢাকা   রোববার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৭ আশ্বিন ১৪৩১

আশুলিয়ায় জরিমানাও থামছে না ফসলি মাটি বিক্রির উৎসব

Daily Inqilab সেলিম আহমেদ, সাভার থেকে

১৬ মার্চ ২০২৪, ১২:১৫ এএম | আপডেট: ১৬ মার্চ ২০২৪, ১২:১৫ এএম

ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযানের পরেও থেমে নেই সাভারের আশুলিয়া ফসলি জমির মাটি কেটে গভীর খনন করে বিভিন্ন ইটভাটায় বিক্রি। ফসলি জমির মাটি কেটে বিক্রির কারণে ঐসব এলাকায় আশঙ্কাজনক হারে কমছে কৃষি জমির পরিমাণ এবং সেই সাথে লুট হয়ে যাচ্ছে সরকারি খাস জমির মাটিসহ নদীর মাটিও। এসব চক্রের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমান আদালত অভিযান চালিয়ে জরিমানা আদায় করলেও থেমে থাকেনি মাটি খেকোদের মহোৎসব।
স্থানীয়রা জানায়, এলাকার শত শত বিঘা ফসলি জমিতে ভেকু দিয়ে ২৫ থেকে ৩০ ফুট গভীর খনন করে মাটি করছে। দিনরাত বিরতিহীনভাবে সেই মাটি বড় বড় ড্রাম ট্রাকে করে বিভিন্ন ইটভাটায় বিক্রয় করছেন চক্রটি।
এই চক্রের কারণে কৃষকরা হারাচ্ছেন তাদের উর্বর ফসলি জমি, অন্যদিকে আঙুল ফুলে কলাগাছ হচ্ছে এক শ্রেণির প্রভাবশালী মাটি ব্যবসায়ীরা। অথচ, শ্রেণিভেদে ওই এলাকায় প্রায় সকল জমিতেই সারা বছর কোনো না কোনো ধরনের ফসল হয়।
এলাকাবাসীর অভিযোগের ভিত্তিতে অবৈধভাবে ফসলী জমির মাটি কেটে বিক্রি করার অভিযোগে বৃহস্পতিবার বিকালে রমজান আলী ও জহিরুল ইসলামকে আটক করে নগদ এক লক্ষ ৩০ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। তবে মাটি খেকো চক্রের রবি পালিয়ে যাওয়ায় তাদের আটক করতে পারেনি কিন্তু মাটিসহ দুটি ড্রাম ট্রাকও জব্দ করা হয়েছে। শিমুলিয়া ইউনিয়নের রাঙামাটির মেশিনপাড় এলাকায় এ অভিযান পরিচালনা করেন আশুলিয়া রাজস্ব সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভ‚মি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আশরাফুর রহমান।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জানান, দীর্ঘদিন ধরে রাঙামাটির মেশিনপাড় এলাকায় রবি নামের এক যুবক ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে কৃষকদের ভয়ভীতি প্রদর্শন করে ফসলি জমি বিলিন করে মাটি কেটে ইট ভাটায় বিক্রি করে আসছিলো। পরে এলাকাবাসীর অভিযোগ শুনে সেখানে অভিযান চালিয়ে ফসলি জমির মাটি কাটার অপরাধে নগদ এক লক্ষ ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আরো জানান, নতুন করে কেউ ফসলি জমির মাটি কাটলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শিমুলিয়ার রাঙ্গামাটি এলাকার বিষখালী নদী ও তার আশপাশের প্রতিটা কৃষিজমিসহ খাস জমির মাটি ভেকু দিয়ে কেটে বিভিন্ন ইটভাটায় বিক্রি করছেন ওই এলাকার মাটি খেকো ও ভুমিদস্যু সামছুল। তিন ফসলি জমিসহ খাস জমি থেকে গভীর খনন করে মাটি কেটে বিক্রি করায় চারপাশের ফসলি জমি চাষাবাদে হুমকির মুখে পড়েছে বলে জানিয়েছেন একাধিক ভ‚মি মালিক।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, আশুলিয়ার শিমুলিয়া ইউনিয়নের নদীর কুল ঘেঁষা বেশ কয়েকটি স্থান থেকে ভেকু দিয়ে মাটি কেটে নেয়া হচ্ছে ইটভাটায়। এর ফলে একদিকে যেমন ঝুঁকিতে রয়েছে নদীর তীর ঘেষা বসতবাড়ি অন্যদিকে কমছে ফসলি জমি।
স¤প্রতি আশুলিয়ার শিমুলিয়া ইউনিয়নের রাঙ্গামাটি ও গাজিখাল এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে এসব স্থানের ফসলি জমি থেকে ভেকু দিয়ে মাটি ট্রাকযোগে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে বিভিন্ন ইটভাটায়।
অভিযোগ রয়েছে, শিমুলিয়ার ঋষিপাড়া এলাকার লাল মিয়া ওরফে মেমো নামের এক মাটি খেকু প্রায় ২০ ফিট গর্ত করে ফসলি জমির মাটি বিভিন্ন ইটভাটায় বিক্রি করছেন।
এরআগে ফসলি জমির মাটি বিক্রির কথা স্বীকার করে লাল মিয়া বলেছেন, প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই মাটি কেটে বিভিন্ন ইটভাটায় বিক্রি করছি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শিমুলিয়ার কোদালটেকি থেকে মাটি কাটছে হাবীবুর রহমান, রণস্থল এলাকার ফেদা বেপারীর ছেলে রসুল ওরফে গেদা বংশি নদীর পাশ থেকে মাটি কাটছে, বাগবাড়ি এলাকা থেকে মাটি কেটে ইট ভাটায় বিক্রি করছে পলাশ। এছাড়াও ফসলি জমির মাটি বিক্রি চক্রের অন্যরা হচ্ছে গাজীবাড়ি মহল্লার আনিস পীরসাব, দীঘির পাড়ের রাসেল, রবি, কোহিনুর, গুচ্ছগ্রামের রাসেলসহ অন্যরা।
এদের মধ্যে আনিস মাটি কেটে ইট ভাটায় বিক্রির কথা অকোপটে স্বীকার করে বলেন, আমিতো বেশ কয়েক বছর ধরে ফসলি জমি, নদীর পরের মাটি কেটে ইটভাটায় বিক্রি করছি।
রাঙ্গামাটি এলাকায় বংশী নদীর পাশে ফসলি জমি থেকে ১০ থেকে ১৫ ফুট গর্ত করে ভেকুর সাহায্যে মাটি কাটছে স্থানীয় জসিম উদ্দিন মাস্টার নামের এক ব্যক্তি। মাটি ট্রাকযোগে নিয়ে যাচ্ছে পাশের ক্লাস ব্রিকস এন্ড সিরামিক্স নামের একটি ইট ভাটায়।
মাটি কাটা শ্রমিকদের সাথে কথা বলতে গেলে তারা জানায়, স্থানীয় জসিম উদ্দিন মাস্টারের নির্দেশে মাটি কেটে পাশের চায়না ইটভাটায় দেয়া হয়। মাটি খেকো চক্রটি এতো ভয়ানক যে তাদের ভয়ে কোন কৃষক কিংবা ভুক্তভোগ কেউ মুখ খুলতে চাচ্ছে না।
এ বিষয়ে নির্বাহী ম্যাজিস্টেট আশরাফুর রহমান জানান, নতুন করে কেউ ফসলি জমির মাটি কাটলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।

 

 


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

তামিমকে টপকে শীর্ষে মুশফিক

তামিমকে টপকে শীর্ষে মুশফিক

শেষ মিনিটের গোলে পয়েন্ট হারাল মায়ামি

শেষ মিনিটের গোলে পয়েন্ট হারাল মায়ামি

ভিনিসিউস-এমবাপ্পে ঝলকে রিয়ালের বড় জয়

ভিনিসিউস-এমবাপ্পে ঝলকে রিয়ালের বড় জয়

ফের বিবর্ণ ইউনাইটেড হারাল পয়েন্ট

ফের বিবর্ণ ইউনাইটেড হারাল পয়েন্ট

দিয়াজের জোড়া গোলে চূড়ায় অলরেডসরা

দিয়াজের জোড়া গোলে চূড়ায় অলরেডসরা

এবার বুন্দেসলীগায়ও বায়ার্নের গোল উৎসব

এবার বুন্দেসলীগায়ও বায়ার্নের গোল উৎসব

দিয়াজের জোড়া গোলে চূড়ায় অলরেডসরা

দিয়াজের জোড়া গোলে চূড়ায় অলরেডসরা

দ্বিতীয় ওয়ানডেতেও অজিদের অনায়স জয়

দ্বিতীয় ওয়ানডেতেও অজিদের অনায়স জয়

প্লটবঞ্চিত পূর্বাচলের আদিবাসিন্দাদের ৩শ’ ফুট সড়কে অবস্থান : বিক্ষোভ অব্যাহত

প্লটবঞ্চিত পূর্বাচলের আদিবাসিন্দাদের ৩শ’ ফুট সড়কে অবস্থান : বিক্ষোভ অব্যাহত

দেশে সংস্কার  ও জবাবদিহি প্রতিষ্ঠার আহ্বান

দেশে সংস্কার ও জবাবদিহি প্রতিষ্ঠার আহ্বান

ছাত্রলীগের হামলার শিকার শিক্ষার্থীদের মামলা করতে বললেন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ

ছাত্রলীগের হামলার শিকার শিক্ষার্থীদের মামলা করতে বললেন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ

উম্মাহর কল্যাণে মুসলমানদের ঐক্যের বিকল্প নেই

উম্মাহর কল্যাণে মুসলমানদের ঐক্যের বিকল্প নেই

বৈরুতে ইসরাইলি হামলায় হিজবুল্লাহর শীর্ষ কমান্ডারসহ নিহত ১৪

বৈরুতে ইসরাইলি হামলায় হিজবুল্লাহর শীর্ষ কমান্ডারসহ নিহত ১৪

পুলিশের লুট হওয়া অস্ত্র অপরাধে ব্যবহারের আশঙ্কা

পুলিশের লুট হওয়া অস্ত্র অপরাধে ব্যবহারের আশঙ্কা

মস্কোয় হামলার উপযুক্ত ক্ষেপণাস্ত্র কিয়েভে পাঠাবে না জার্মানি

মস্কোয় হামলার উপযুক্ত ক্ষেপণাস্ত্র কিয়েভে পাঠাবে না জার্মানি

জিয়ার ভূমিকাকে অবহেলা করায় পাহাড়ে সমস্যা হচ্ছে : জামায়াত নেতা শাহজাহান চৌধুরী

জিয়ার ভূমিকাকে অবহেলা করায় পাহাড়ে সমস্যা হচ্ছে : জামায়াত নেতা শাহজাহান চৌধুরী

মানুষের প্রত্যাশা পূরণ করতে ঐক্যবদ্ধ থাকার কোনো বিকল্প নেই: তারেক রহমান

মানুষের প্রত্যাশা পূরণ করতে ঐক্যবদ্ধ থাকার কোনো বিকল্প নেই: তারেক রহমান

বিচার বিভাগে দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা প্রধান বিচারপতির

বিচার বিভাগে দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা প্রধান বিচারপতির

একদিনে ৮৪৩ জনের ডেঙ্গু শনাক্ত, মৃত্যু ১

একদিনে ৮৪৩ জনের ডেঙ্গু শনাক্ত, মৃত্যু ১

কুষ্টিয়ায় বিদ্যুৎস্পৃষ্টে সুগার মিলের নিরাপত্তা প্রহরীর মৃত্যু

কুষ্টিয়ায় বিদ্যুৎস্পৃষ্টে সুগার মিলের নিরাপত্তা প্রহরীর মৃত্যু