বেড়েছে সেকেলে কোটিপতির হিসাবের সংখ্যা
১৬ মার্চ ২০২৪, ১২:১৫ এএম | আপডেট: ১৬ মার্চ ২০২৪, ১২:১৫ এএম
এক সময় ‘লাখোপতি’ শুনলে মানুষ মনে করতেন বিশাল বিত্তবৈভবের মালিক। যার লাখ টাকা রয়েছে সেই লাখোপতি। পরবর্তীতে সেটা বাড়িয়ে ‘কোটিপতি’ হয়। মানুষের মধ্যে বলাবলি হতো ওনি কোটি টাকার মালিক (কোটিপতি) এখন সারাবিশ্বের মানুষের মতো বাংলাদেশের বিত্তবানের সংখ্যাও বাড়ছে। ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্প প্রতিষ্ঠানসহ নানাভাবে মানুষ অর্থবিত্তের পাহাড় গড়ছে। এখন গণিতের টাকার অংকের বদলে ডলারের অংশে অর্থের হিসাব হয়। মিলিয়ন, বিলিয়ন, ট্রিলিয়ন, কোয়াড্রিলিয়ন এবং কুইন্টিলিয়ন অর্থের হিসাব হয়ে থাকে। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংক সেকেলে হিসেবে ‘কোটিপতি’তে পড়ে রয়েছে। আর সেই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ ব্যাংক কোটিপতি অ্যাকাউন্টধারীর সংখ্যা জানা গেছে। অবশ্য দেশে অর্থনৈতিক সঙ্কট থাকা সত্তে¡ও ২০২৩ সালে ব্যাংকে কোটিপতি অ্যাকাউন্টধারীর সেংখ্যা বেড়েছে। যদিও এ বছর কোটিপতি অ্যাকাউন্টধারীর সংখ্যা বৃদ্ধির হার আগের বছরের তুলনায় কিছুটা কম। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, এক বছরের ব্যবধানে দেশে কোটিপতি অ্যাকাউন্টধারীর সংখ্যা বেড়েছে ৬ হাজার ৯৬২টি। ২০২৩ সালের ডিসেম্বর শেষে ব্যক্তিগত ও প্রাতিষ্ঠানিক কোটিপতি অ্যাকাউন্টধারীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ১৬ হাজার ৯০৮টিতে। হিসাব অনুযায়ী, ২০২৩ সালে কোটিপাতি অ্যাকাউন্ট বৃদ্ধির হার ছিল ৬ দশমিক ৩৩ শতাংশ। তবে ২০২২ সালে এ হার ছিল ৭ দশমিক ৮০ শতাংশ। ব্যাংকাররা বলছেন, অর্থনৈতিক সঙ্কটের কারণে অনেকেই ব্যবসায় লোকসান করেছেন। বাধ্য হয়ে ব্যবসা ছোট অথবা কেউ কেউ ব্যবসা গুটিয়ে নিয়েছেন। সা¤প্রতিক সময়ে নানা সঙ্কট আর দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির যাঁতাকলে পিষ্ট নিম্ন ও মধ্যবিত্তরা। সাধারণ মানুষ সংসারের ব্যয় মেটাতে পারছেন না। ছোট ছোট অনেক প্রতিষ্ঠান ব্যবসা করতে পারছে না। ব্যাংকে টাকা জমানো তো দূরের কথা, অনেকে উল্টো সঞ্চয় ভেঙে খাচ্ছেন।
অবশ্য বাংলাদেশ ব্যাংকের এই কোটপতি ‘হিসাব’ প্রকাশ নিয়ে বিশেষজ্ঞরা ভিন্নমত প্রকাশ করেছেন। থাদের মতে, দেশের ব্যাংকগুলো এখনো সেকেলে কোটিপতির হিসাব প্রকাশ নিয়েই পড়ে রয়েছেন। ব্যাংকিং সেক্টরে দায়িত্বশীলদের এই সেকেলে চেতনা থেকে সরে এসে বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলা উচিত বলে মনে করছেন আর্থিক খাতের বিশ্লেষকরা।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আবদুল মজিদ বলেছেন, বিশ্বব্যাপী ধনীদের এক সময়ে মিলিয়নার বা কোটিপতি হিসাব করা হতো। এখন বিলিয়নার হিসাব করা হয়। আমাদের দেশে বাংলাদেশ ব্যাংক এখনও কোটিপতির হিসাব করছে। এটি এখন একটি দুর্বল সংখ্যা। এই হিসাব অবান্তর। এই হিসাবের কোনো যৌক্তিকতা নেই। তাছাড়া ব্যাংক হিসাবের ভিত্তিতে কোটিপতির সংখ্যা হ্রাস-বৃদ্ধির পরিসংখ্যান দেয়াও সম্ভব নয় বলেন তিনি।
অবশ্য ব্যাংকাররা বলছেন, অর্থনৈতিক সঙ্কটের এমন পরিস্থিতিতেও সমাজের একশ্রেণির মানুষের আয় বেড়েছে, যা সমাজে বৈষম্যের প্রতিফলন। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত ডিসেম্বর শেষে মোট ব্যাংক অ্যাকাউন্টের সংখ্যা ছিল ১৫ দশমিক ৩৫ কোটি। এসব অ্যাকাউন্টে মোট আমানতের পরিমাণ ১৭ দশমিক ৪৯ লাখ কোটি টাকা। এর মধ্যে ১ লাখ ১৬ হাজার ৯০৮টি অ্যাকাউন্টে ১ কোটি টাকার বেশি জমা রয়েছে। গত সেপ্টেম্বর শেষে কোটিপতি অ্যাকাউন্টের সংখ্যা ছিল ১ লাখ ১৪ হাজার ৫৫টি।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের ফেলো প্রফেসর ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, দেশের সঙ্কটের সময় বেশিরভাগ মানুষ ভোগান্তিতে রয়েছে। কিন্ত একটা শ্রেণি তার সুযোগ নিচ্ছে। আমরা বেশি দামে পণ্য কিনছি মানে কেউ না কেউ সেটা বেশি দামে বিক্রি করছে। তাই তাদের অ্যাকাউন্টে টাকা বৃদ্ধি পাচ্ছে। সম্পদের সুষম বণ্টন হচ্ছে না। দেশের সম্পদ কেন্দ্রীভূত হয়ে যাচ্ছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
কোটিপতি অ্যাকাউন্টধারীর সংখ্যা বৃদ্ধির হার কমার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বৃদ্ধির হার কমার সাথে আয় বৃদ্ধির কোনো সম্পর্ক নেই। একটা শ্রেণি সম্পদ কেন্দ্রীভূত করছে। আবার তাদের মধ্যে কেউ কেউ বিদেশে পাচারও করছে। তিনি বলেন, সর্বোপরি আমাদের দেশে দারিদ্র্য নিরসন হচ্ছে ঠিকই, কিন্তু বৈষম্য বাড়ছে আশঙ্কাজনকভাবে। এসব সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশ ব্যাংক ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) একত্রে ডিজিটালি কাজ করতে হবে। কোটিপতি বাড়লেও আমাদের রাজস্ব বাড়ছে না কেন? এখানে দুর্বলতা রয়েছে। দুই সংস্থা একসঙ্গে কাজ করলে দেশের রাজস্ব বাড়বে বলে মনে করেন ড. মোস্তাফিজুর রহমান।
সবচেয়ে বেশি টাকা রয়েছে দুই ধরনের অ্যাকাউন্টে। সেগুলোর মধ্যে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যানুসারে, ২০২৩ সালের ডিসেম্বরের শেষে ১-৫ কোটি টাকা ধারণকারী কোটিপতি অ্যাকাউন্টের সংখ্যা ছিল ৯২ হাজার ৫১৬টি। এসব অ্যাকাউন্টে মোট জমা ছিল ১ দশমিক ৯৪ লাখ কোটি টাকা। এছাড়া ৫-১০ কোটি টাকা আছে এমন অ্যাকাউন্টের সংখ্যা ছিল ১২ হাজার ৬৫২টি। এসব অ্যাকাউন্টে মোট অর্থের পরিমাণ ছিল ৮৯ হাজার ৪৫১ কোটি টাকা। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য বিশ্লেষণে জানা যায়, স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে দেশে ব্যাংকে কোটিপতি হিসাব ছিল মাত্র ৫টি। ১৯৭৫ সালে এ সংখ্যা দাঁড়ায় ৪৭টিতে। এরপর তা পর্যায়ক্রমে বৃদ্ধি পেয়ে ২০০৮ সালে ১৯ হাজার ১৬৩টিতে উন্নীত হয়। গত মাসে এনবিআরের সঙ্গে প্রাক-বাজেট বৈঠকে অর্থনীতি সমিতি জানায়, দেশে মাত্র ১৮ লাখ মানুষ কর দেন। তাদের মধ্যে ১০ লাখ সরকারি চাকরিজীবী এবং অন্যান্য চাকরিতে নিয়োজিত আছেন। অর্থনীতি সমিতির হিসাবে, দেশে ধনী ও উচ্চমধ্যবিত্তদের মধ্যে আয়কর দেওয়া লোকের সংখ্যা ৯-১০ লাখ হবে। কিন্তু এই সংখ্যা হওয়ার কথা ৭৮ লাখ। এর মানে, ধনী ও উচ্চমধ্যবিত্তদের ৮৭ শতাংশই কোনো ধরনের আয়কর দেন না।
অর্থনীতি সমিতি আরও জানায়, এনবিআর কখনোই রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য অর্জন করতে পারে না। আইএমফ’র ঋণের শর্তের মধ্যে অন্যতম হলো রাজস্ব আদায় বাড়ানো এবং কর প্রশাসনের দক্ষতা ও সক্ষমতা বৃদ্ধি। কিন্তু চলতি অর্থবছরেও এনবিআর রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা কমিয়েছে ২০ হাজার কোটি টাকা। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে প্রথমে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। লক্ষ্যমাত্রা কমানোয় এখন তা ৪ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
শেষ মিনিটের গোলে পয়েন্ট হারাল মায়ামি
ভিনিসিউস-এমবাপ্পে ঝলকে রিয়ালের বড় জয়
ফের বিবর্ণ ইউনাইটেড হারাল পয়েন্ট
দিয়াজের জোড়া গোলে চূড়ায় অলরেডসরা
এবার বুন্দেসলীগায়ও বায়ার্নের গোল উৎসব
দিয়াজের জোড়া গোলে চূড়ায় অলরেডসরা
দ্বিতীয় ওয়ানডেতেও অজিদের অনায়স জয়
প্লটবঞ্চিত পূর্বাচলের আদিবাসিন্দাদের ৩শ’ ফুট সড়কে অবস্থান : বিক্ষোভ অব্যাহত
দেশে সংস্কার ও জবাবদিহি প্রতিষ্ঠার আহ্বান
ছাত্রলীগের হামলার শিকার শিক্ষার্থীদের মামলা করতে বললেন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ
উম্মাহর কল্যাণে মুসলমানদের ঐক্যের বিকল্প নেই
বৈরুতে ইসরাইলি হামলায় হিজবুল্লাহর শীর্ষ কমান্ডারসহ নিহত ১৪
পুলিশের লুট হওয়া অস্ত্র অপরাধে ব্যবহারের আশঙ্কা
মস্কোয় হামলার উপযুক্ত ক্ষেপণাস্ত্র কিয়েভে পাঠাবে না জার্মানি
জিয়ার ভূমিকাকে অবহেলা করায় পাহাড়ে সমস্যা হচ্ছে : জামায়াত নেতা শাহজাহান চৌধুরী
মানুষের প্রত্যাশা পূরণ করতে ঐক্যবদ্ধ থাকার কোনো বিকল্প নেই: তারেক রহমান
বিচার বিভাগে দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা প্রধান বিচারপতির
একদিনে ৮৪৩ জনের ডেঙ্গু শনাক্ত, মৃত্যু ১
কুষ্টিয়ায় বিদ্যুৎস্পৃষ্টে সুগার মিলের নিরাপত্তা প্রহরীর মৃত্যু
সাজেক ভ্রমণে আটকা পড়েছেন ৮০০ পর্যটক