ঢাকা   শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৫ আশ্বিন ১৪৩১

যুদ্ধে ব্যয় না করে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় অর্থ খরচ করুন : প্রধানমন্ত্রী

Daily Inqilab অনলাইন ডেস্ক

২২ এপ্রিল ২০২৪, ০১:০৮ পিএম | আপডেট: ২২ এপ্রিল ২০২৪, ০১:০৮ পিএম

যুদ্ধে ব্যয় না করে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় অর্থ খরচ করলে বিশ্ব রক্ষা পাবে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তিনি আজ সোমবার রাজধানীর চীন মৈত্রি সম্মেলনে ন্যাপ এক্সপো-২০২৪ এবং বাংলাদেশ ক্লাইমেট ডেভলাপমেন্ট পার্টনারশিপ (বিসিডিপি) এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এ মন্তব্য করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশে সংঘটিত ১৯৭০ সালে মহাপ্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে প্রায় পাঁচ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়েছিল। ৯১ সালে আরেকটি ঘুর্ণিঝড়ে দুই লাখ মানুষ মারা যায়। কিন্তু ২০২৩ সালে ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’য় কোন প্রাণহানি ঘটেনি। এটি জলবায়ু পরিবর্তন অভিযোজন এবং দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাসে বাংলাদেশের সক্ষমতার বহিঃপ্রকাশ।

গত ১৫ বছরে আমরা পার্বত্য ও শাল বনাঞ্চলের প্রায় এক লাখ ২৭ হাজার ৫শত ৪৮ হেক্টর এলাকায় বৃক্ষরোপণসহ ৮৯ হাজার ৮৫৩ হেক্টর উপকূলীয় বন সৃজন করা হয়। স্থানীয় জনগণকে সম্পৃক্ত করে আমরা সামাজিক বনায়ন বিধিমালা ২০১০ (সংশোধিত) প্রণয়ন করা হয়েছে।’

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘জলবায়ু উদ্বাস্তু পরিবারের জন্য কক্সবাজার জেলায় আমরা বিশ্বের বৃহত্তম ‘খুরুশকুল বিশেষ আশ্রয়ণ প্রকল্প’ নির্মাণ করেছি। এ প্রকল্পের আওতায় ১৩৯টি বহুতল ভবন নির্মাণ করে চার হাজার ৪০৯টি জলবায়ু উদ্বাস্তু পরিবারকে পুনর্বাসনের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়া আমরা জলবায়ু উদ্বাস্তু, প্রাকৃতিক দুর্যোগে ভূমিহীন, গৃহহীন, সমাজের পিছিয়ে পড়া অন্যান্য সম্প্রদায়ের মানুষকে জমিসহ ঘর প্রদান করেছি এবং তাদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করা হয়েছে। এ পর্যন্ত আমরা প্রায় ৪২ লাখ মানুষকে পুনর্বাসন করেছি। ঢাকায় গ্লোবাল সেন্টার অন অ্যাডাপ্টেশনের দক্ষিণ এশিয়া আঞ্চলিক অফিসের মাধ্যমে সর্বোত্তম অনুশীলনগুলো ভাগ করে নেয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।’

সরকার প্রধোন বলেন, ‘বৈশ্বিক কার্বন নিঃসরণে আমাদের অবদান শূন্য দশমিক ৪৮ শতাংশের কম হলেও এর নেতিবাচক প্রভাবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত ও ঝুঁকিপূর্ণ দেশসমূহের মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। জলবায়ু পরিবর্তনের এ বিরূপ প্রভাব আমাদের সম্ভাব্য উন্নয়ন এবং অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির জন্য হুমকি হিসেবে দেখা দিয়েছে। অব্যাহত বৈশ্বিক উষ্ণায়নের ফলে সমুদ্রতলের উচ্চতা , লবণাক্ততা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর ফলে বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাংশের বিস্তীর্ণ অঞ্চল যা দেশের মোট আয়তনের প্রায় ১২-১৭ শতাংশ, এ শতাব্দীর শেষ দিকে সমুদ্রগর্ভে নিমজ্জিত হওয়ার ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।’

বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডের মধ্যে সীমিত রাখার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘গ্রিন হাউস গ্যাস নিঃসরণ হ্রাসে বাংলাদেশ ২০১৫ সালে ‘Intended Nationally Determind Contribution (INDC) প্রণয়ন করে এবং ২০২১ সালে তা হালনাগাদ করে ইউএনএফসিসিসি তে জমা দেয়। এতে আমরা শর্তহীন ৬ দশমিক ৭৩ এবং শর্তযুক্ত ১৫ দশমিক ১২ শতাংশ গ্রিন হাউস গ্যাস নিঃসরণ হ্রাসের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছি।’

‘বাংলাদেশে আমরা জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার হ্রাস করে নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বৃদ্ধি করেছি যাতে গ্রিন হাউস গ্যাস নিঃসরণ হ্রাস পায়। এ পর্যন্ত প্রায় ৬০ লাখ সোলার হোম সিস্টেম স্থাপন এবং গ্রামাঞ্চলে ৪৫ লাখেরও বেশি উন্নত চুলা বিতরণ করা হয়েছে’, বলেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘২০২৩ সালে মুজিব ক্লাইমেট প্রসপারিটি প্ল্যান (এমসিপিপি) প্রণয়ন করেছি। এতে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলা করে বিপদাপন্নতা থেকে সহিষ্ণুতা এবং সহিষ্ণুতা থেকে সমৃদ্ধি পর্যায়ে পৌঁছানোর লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়া এমসিপিপি তে অভিযোজন ও প্রশমন কার্যক্রমে স্থানীয় জনগণের স্বপ্রণোদিত অংশগ্রহণ, প্রকৃতি-ভিত্তিক সমাধান ও সমাজের সকলের অংশগ্রহণের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ ইতোমধ্যে জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনা (এনএপি) ২০২২-২০৫০ প্রণয়ন করেছে। ২০২২ সালের অক্টোবরে এটি ইউএনএফসিসিসি তে দাখিল করা হয়েছে। এ পরিকল্পনায় আমরা ১১টি জলবায়ু ঝুঁকিযুক্ত এলাকাতে ৮টি খাতে ১১৩টি অগ্রাধিকারমূলক কার্যক্রম চিহ্নিত করেছি।’

আগামী ২৭ বছরে এনএপি গৃহীত কর্মপরিকল্পনাসমূহ বাস্তবায়নের জন্য আমাদের প্রায় ২৩০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের প্রয়োজন। এজন্য সুনির্দিষ্ট তহবিল ও অতিরিক্ত আর্থিক সংস্থানের ব্যবস্থা গ্রহণে আমি ধনী দেশ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, ‘উন্নত দেশসমূহ ব্যাপক কার্বন নিঃসরণের মাধ্যমে বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধিতে অধিক ভূমিকা রেখে চলেছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত জনগণকে রক্ষা করা তাদের নৈতিক দায়িত্ব। আমরা জলবায়ু পরিবর্তনজনিত সম্ভাব্য ক্ষতি হ্রাসে অভিযোজন ও প্রশমন উভয় ক্ষেত্রে উপযোগী কার্যক্রম গ্রহণ করে যাচ্ছি। এক্ষেত্রে ইউএনএফসিসিসি -এর লাস এন্ড ডেমেজ তহবিল হতে অর্থ প্রাপ্তির জন্য বাংলাদেশ প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করবে।’

ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি নিরাপদ ও সুন্দর পৃথিবী গড়ে তুলতে প্রয়োজন অভিযোজন সক্ষমতা বৃদ্ধি করা, সহিষ্ণুতা শক্তিশালী করা এবং ঝুঁকি হ্রাসে সমন্বিতভাবে উদ্যোগ গ্রহণ করাসহ বেশ কয়েকটি পদক্ষেপ তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।

সেগুলো হলো:-

প্রথমত, প্রধান কার্বন-নির্গমনকারী দেশগুলিকে বিশ্বব্যাপী তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে রাখতে তাদের নির্গমন হ্রাস করার জন্য কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে;

দ্বিতীয়ত, উন্নত দেশগুলির দ্বারা জলবায়ু তহবিলে বার্ষিক ১০০ বিলিয়ন ডলারের প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে হবে। অভিযোজন এবং প্রশমনের মধ্যে তা সমানভাবে বণ্টন করতে হবে;

তৃতীয়ত, উন্নত দেশগুলিকে উন্নয়নশীল দেশগুলিতে প্রযুক্তি স্থানান্তরের পাশাপাশি সবচেয়ে কার্যকর জ্বালানি সমাধানে এগিয়ে আসতে হবে;

চতুর্থত, নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে রূপান্তরের সময়, সংশ্লিষ্ট দেশগুলির উন্নয়ন অগ্রাধিকারগুলি তাদের ক্ষতি অনুসারে বিবেচনা করা উচিত;

পঞ্চমত, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, লবণাক্ততা বৃদ্ধি, নদী-ভাঙন, বন্যা এবং খরার কারণে বাস্তুচ্যুত মানুষদের পুনর্বাসনের দায়িত্ব সকল দেশকে ভাগ করে নিতে হবে; এবং

সবশেষে, প্রধান অর্থনীতিসমূহকে পরবর্তী প্রজন্মের জন্য একটি টেকসই ভবিষ্যত নিশ্চিত করতে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে বিশ্বব্যাপী সকল অংশীদারদের সঙ্গে কাজ করতে হবে।


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

তোফাজ্জল হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় আটক ছয়জনের পাঁচজনই ছাত্রলীগের

তোফাজ্জল হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় আটক ছয়জনের পাঁচজনই ছাত্রলীগের

রাঙামাটিতে পাহাড়ি-বাঙালি সংঘর্ষে নিহত ১, থমথমে পরিস্থিতিতে ১৪৪ ধারা জারি, ৭২ ঘন্টার অবরোধের ডাক

রাঙামাটিতে পাহাড়ি-বাঙালি সংঘর্ষে নিহত ১, থমথমে পরিস্থিতিতে ১৪৪ ধারা জারি, ৭২ ঘন্টার অবরোধের ডাক

বাংলাদেশের গণতন্ত্র এখনো বিপদমুক্ত নয় : তারেক রহমান

বাংলাদেশের গণতন্ত্র এখনো বিপদমুক্ত নয় : তারেক রহমান

নিরাপদ ও নির্ভয়ে উদযাপন হবে শারদীয় দূর্গোদসব এবং দূর্গাপূজা- এসএমপি কমিশনার রেজাউল করিম

নিরাপদ ও নির্ভয়ে উদযাপন হবে শারদীয় দূর্গোদসব এবং দূর্গাপূজা- এসএমপি কমিশনার রেজাউল করিম

মব কিলিং সরকার সমর্থন করে না: উপদেষ্টা নাহিদ

মব কিলিং সরকার সমর্থন করে না: উপদেষ্টা নাহিদ

চট্টগ্রামে রাতের আঁধারে বিএনপির কার্যালয় ভাঙচুর

চট্টগ্রামে রাতের আঁধারে বিএনপির কার্যালয় ভাঙচুর

বলিউডে কারিনা কাপুরের ২৫ বছর

বলিউডে কারিনা কাপুরের ২৫ বছর

মব জাস্টিসের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেবে ঢাবি কর্তৃপক্ষ

মব জাস্টিসের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেবে ঢাবি কর্তৃপক্ষ

রাজশাহীতে ট্রেনে বরযাত্রীদের ওপর হামলা

রাজশাহীতে ট্রেনে বরযাত্রীদের ওপর হামলা

চিহ্নিত গোষ্ঠী আবার দখলদারি ও চাঁদাবাজি শুরু করেছে : সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম চরমোনাই

চিহ্নিত গোষ্ঠী আবার দখলদারি ও চাঁদাবাজি শুরু করেছে : সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম চরমোনাই

গায়িকা রুকসানার রহস্যজনক মৃত্যু!

গায়িকা রুকসানার রহস্যজনক মৃত্যু!

যে কোনো মূল্যে লাহোর কর্মসূচি সফল করুন: ইমরান খান

যে কোনো মূল্যে লাহোর কর্মসূচি সফল করুন: ইমরান খান

চৌদ্দগ্রামে সড়ক দুর্ঘটনায় সিএনজি চালকসহ নিহত ২

চৌদ্দগ্রামে সড়ক দুর্ঘটনায় সিএনজি চালকসহ নিহত ২

যুক্তরাষ্ট্রের একটি আদালত ভবনে বিচারককে গুলি করে হত্যা

যুক্তরাষ্ট্রের একটি আদালত ভবনে বিচারককে গুলি করে হত্যা

ডিবির সাবেক ডিসি ৭ দিনের রিমান্ডে দলীয় বিবেচনায় শুদ্ধাচার পুরস্কার পান মশিউর

ডিবির সাবেক ডিসি ৭ দিনের রিমান্ডে দলীয় বিবেচনায় শুদ্ধাচার পুরস্কার পান মশিউর

খাগড়াছড়ি-রাঙামাটিতে সংঘর্ষ: তিন জেলার মানুষকে শান্ত থাকার আহ্বান সরকারের

খাগড়াছড়ি-রাঙামাটিতে সংঘর্ষ: তিন জেলার মানুষকে শান্ত থাকার আহ্বান সরকারের

গরমে যেন শেষ সিলেট !

গরমে যেন শেষ সিলেট !

গল টেস্টে ঘুরে দাঁড়িয়েছে শ্রীলঙ্কা

গল টেস্টে ঘুরে দাঁড়িয়েছে শ্রীলঙ্কা

প্রেতাত্মাদের উসকে দিয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছেন হাসিনা

প্রেতাত্মাদের উসকে দিয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছেন হাসিনা

ময়মনসিংহে অস্ত্রসহ ডাকাত দলের ছয় সদস্য গ্রেপ্তার

ময়মনসিংহে অস্ত্রসহ ডাকাত দলের ছয় সদস্য গ্রেপ্তার