যশোর সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে লড়াই ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগ ভার্সেস আওয়ামীলীগ
২২ এপ্রিল ২০২৪, ০৩:২৬ পিএম | আপডেট: ২২ এপ্রিল ২০২৪, ০৩:২৬ পিএম
যশোর সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনী ময়দান জমে উঠেছে । নির্বাচনের শিডিউল ঘোষণার সাথে সাথে মাঠ-ঘাট সরগরম হয়ে উঠেছে। সম্ভাব্য প্রার্থীরা ছুটছেন বিভিন্ন এলাকায়। পাশাপাশি উপরি মহলের গ্রিণ সিগন্যাল নিতে মরিয়া এসব সম্ভাব্য প্রার্থী। এক্ষেত্রে নানা নাটকীয়তা যেমন চলছে তেমনি দলের অভ্যন্তরে বাড়ছে ক্ষোভ-বিক্ষোভ। বিরোধের কারণে নেতাকর্মীদের মধ্যে বিভাজনের আশংকাও করা হচ্ছে।
নির্বাচন কমিশনের শিডিউল অনুযায়ী যশোর সদরসহ জেলার তিনটি উপজেলায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে আগামী ২৯ মে। এদিন আরও যে দুই উপজেলায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে সেগুলো হলো বাঘারপাড়া ও অভয়নগর। তবে, জেলার রাজনীতির নিয়ন্ত্রণ করতে পারা না পারা নির্ভর করে সদর উপজেলা কার নিয়ন্ত্রণে থাকছে তার উপর। সে কারণে আলোচনার শীর্ষে এখন সদর উপজেলার নির্বাচন। কারা হচ্ছেন এই উপজেলার প্রার্থী, কাদের সম্ভাবনাই বা কেমন তা নিয়ে আলোচনা থাকলেও বেশি যে বিষয়টি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ভাবাচ্ছে তা হলো নির্বাচনকে কেন্দ্র করে প্রতিদ্ব›দ্বী নেতাদের ক্ষমতার বলয় সংকুচিত হওয়া না হওয়ার বিষয়টি। সা¤প্রতিক কিছু কার্যাবলী এবং নির্বাচনে প্রার্থিতা নিয়ে জেলার রাজনীতির নিয়ন্ত্রক দুই বলয়ের দুই নেতা এমপি কাজী নাবিল আহমেদ এবং সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও দলের জেলা সেক্রেটারি শাহীন চাকলাদারের নেতাকর্মীরা পরস্পরবিরোধী অবস্থানে চলে যাচ্ছেন। যা শেষ পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
যশোর সদর উপজেলার বর্তমান চেয়ারম্যান জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তফা ফরিদ আহমেদ চৌধুরী। তিনি এবারও প্রার্থী হচ্ছেন। পরিষদের বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন বিপুলও এবার চেয়ারম্যান প্রার্থী। এ পদের প্রার্থী হিসেবে আরও যারা মাঠে রয়েছেন তারা হলেন, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মোহিত কুমার নাথ, দলের সদর উপজেলা সাধারণ সম্পাদক ও আরবপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শাহারুল ইসলাম, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মেহেদী হাসান মিন্টু, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক শফিকুল ইসলাম জুয়েল, যুবমহিলালীগ ও মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ড নেতা ফাতেমা আনোয়ার এবং তৌহিদ চাকলাদার ফন্টু।
জেলা জামায়াতের একজন নেতা চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে ঈদুল ফিতরের আগ দিয়ে ব্যাপক পোস্টার মারলেও দলীয় সিদ্ধান্তে তিনি আর মাঠে নেই। ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে এই জামায়াত নেতা নির্বাচন করছেন না বলে ঘোষণা দিয়েছেন। অন্যদিকে, বিএনপিও নির্বাচন বয়কট অব্যাহত রেখে উল্টো প্রতিহত করতে ক্যাম্পেইন করবে বলে ঘোষণা দিয়েছে। জাতীয় পার্টিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলো থেকে এখনো যশোর সদর আসনে কোনো প্রার্থীর নাম শোনা যায়নি। কেউ আলোচনায়ও নেই। ফলে যশোর সদর উপজেলার নির্বাচন যে আওয়ামী লীগ ভার্সেস আওয়ামী লীগ হতে যাচ্ছে তা এক প্রকার নিশ্চিত।
আর সে সুযোগটি নিয়েই নির্বাচনী মাঠে সরব হয়েছেন দলটির একাধিক নেতা। তারা চাচ্ছেন সাধারণ ভোটারদের কাছে নিজেদেরকে যোগ্য প্রমাণ করার মধ্য দিয়ে নেতৃত্বের প্রমাণ করা। কিন্তু, সেখানেও তৈরি হয়েছে বিরোধ। ইতিমধ্যে যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদার তার প্রার্থী হিসেবে তৌহিদ চাকলাদার ফন্টুর নাম ঘোষণা দিয়েছেন। তাতে অবশ্য অসন্তোষ বেড়েছে এ বলয়ের নেতা হিসেবে পরিচিত মোহিত কুমার নাথ ও শফিকুল ইসলাম জুয়েলের মধ্যে।
সদর উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মোহিত কুমার নাথ বলেন, ‘ফন্টুর ইস্যুতে বিভাজন তৈরি হয়েছে, ক্ষোভ-বিক্ষোভ বেড়েছে। পুরো বিষয়টি বুমেরাং হয়ে গেছে। কারণ, আমার উপর সদর উপজেলাবাসীর আস্থা ও ভালোবাসা রয়েছে। মানুষ চান আমি ভোট করি। যদি এ বিষয়ে কেউ সতর্ক না হন তাহলে দায় তার।’
তিনি বলেন, ‘জীবনের শেষ প্রান্তে এসে আমার আর বেশি কিছু চাওয়া পাওয়ার নেই। এখানকার মাটি ও মানুষের সাথে আমার নিবিড় সম্পর্ক। আমি ভোট করবোই। ভোটাররা চাইলে ভালো, না চাইলেও আমি খুশি। আবার কারও ম্যাকানিজম থাকলে সেটাও দেখবো।’
নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী যশোর জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক শফিকুল ইসলাম জুয়েল বলেন, ‘আমরা যারা সংগঠন করি দিনশেষে আশা করি নেতারা একজন দায়িত্বশীলদের পক্ষেই অবস্থান নেবেন। জনপ্রতিনিধি হিসেবে যারা নির্বাচিত হবেন তারা রাজনীতির পরীক্ষিত মানুষই হওয়া উচিত। যারা দিনে ৩০/৪০টি ব্যবসা দেখাশোনা করেন সেইসব মানুষকে মনোনয়ন দেয়া এবং নির্বাচনে পাশ করানোর জন্যে যদি কেউ উদ্যোগী হন তাহলে তা হবে দুঃখজনক।’
তিনি বলেন, ‘পরিস্থিতি যা সেখান থেকে আর পেছনে ফেরার কোনো সুযোগ নেই। আমি মনে করি, নির্বাচনী প্রচারণায় আমি অনেকদূর এগিয়েছি। ফলে নির্বাচনে আমি প্রার্থী হচ্ছি এটা নিশ্চিত। শাহীন চাকলাদার আমারও নেতা। শেষ পর্যন্ত তিনি সঠিক সিদ্ধান্তই নেবেন বলে আমি বিশ্বাস করি।’
এদিকে, যশোরকে নিয়ন্ত্রণে রেখে জেলার রাজনীতিকে নিয়ন্ত্রণ করার কৌশলে এখনো সফল কাজী নাবিল আহমেদ এমপি। তবে আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে তার অনুসারীদের মধ্যেও একাধিক প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনী ময়দান চষে বেড়াচ্ছেন। সকল প্রার্থী তার সাথে একই বহরে রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছেন। প্রার্থী হিসেবে তার আশীর্বাদ বা সিগন্যাল পাবার প্রত্যাশা করলেও তিনি কোনো প্রার্থীর পক্ষে এখনো একটি কথাও বলেননি। অনেকেই বলেছেন, তিনি দলের কেন্দ্রীয় নির্দেশনা মেনে চলছেন।
এমপি কাজী নাবিল আহমেদের অনুসারীদের মধ্যে যারা সদর উপজেলায় প্রার্থী হচ্ছেন তারা হলেন বর্তমান চেয়ারম্যান মোস্তফা ফরিদ আহমেদ চৌধুরী, বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান ও জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন বিপুল, জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মেহেদী হাসান মিন্টু ও যুবমহিলালীগ নেত্রী ফাতেমা আনোয়ার। এসব প্রার্থী প্রায় সবাই মাঠে ব্যাপকভাবে সক্রিয়। তারা প্রতিদিন কোনো না কোনো কর্মসূচি নিয়ে ভোটারদের সাথে দেখা করছেন। নিজেদের পক্ষে ভোট প্রার্থনা করছেন। কেন্দ্র-ভিত্তিক নির্বাচনী কর্মী সংগ্রহও শুরু করেছেন অনেক প্রার্থী। তবে প্রার্থিতা নিয়ে এই পক্ষেও কমবেশি অস্থিরতা বিরাজ করছে।
সদর উপজেলা পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান সাবেক ছাত্রনেতা জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তফা ফরিদ আহমেদ চৌধুরী জানান, দলীয় সিদ্ধান্তের কারণে নির্বাচনী ময়দান উন্মুক্ত। যারা প্রার্থী হবেন সবাই স্বতন্ত্র। সেক্ষেত্রে প্রতিটি প্রার্থীকেই নিজস্ব যোগ্যতা দিয়েই ভোটারদের আস্থা অর্জন করতে হবে। আমি শতভাগ আশাবাদী যে, সেই আস্থা ও বিশ্বাসের জায়গায় আমি সকলের থেকে এগিয়ে থাকবো। সাধারণ ভোটার এবং দলীয় নেতাকর্মীরা আমার পক্ষেই থাকবেন।’
যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম মিলন বলেন, ‘আমি স্পষ্টভাবে বলে দিয়েছি দলীয় কোনো প্রার্থী এবার থাকবে না। যার ইচ্ছা হবে তিনিই নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন। কেন্দ্র থেকে সেই সিদ্ধান্তই জানানো হয়েছে এবার।’
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে প্রার্থিতা নির্বাচন নিয়ে দলের অভ্যন্তরে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির আশংকা তৈরি হয়েছে কি না জানতে চাইলে জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘এটা দেখবে কেন্দ্র। কারণ কেন্দ্রই বলে দিয়েছে নেতারা প্রার্থী নির্বাচনে কোনো হস্তক্ষেপ করবেন না। সেটা করতে যেয়ে যদি খারাপ কিছু হয় তারজন্যে দায়ী থাকবেন সেই নেতা।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
কোন শৃঙ্খলা ভঙ্গকারী, চাঁদাবাজ, দখলবাজ ও অনুপ্রবেশকারীর দলে জায়গা হবে না-কেন্দ্রীয় যুব দলের সাধারণ সম্পাদক নুরল ইসলাম নয়ন।
পার্বত্য চট্টগ্রামে বাঙালিদের ওপর হামলার প্রতিবাদে ঢাবিতে সমাবেশ
বিগত ৫৩ বছরের জঞ্জাল দূর করে একটি কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা সময়ের দাবি
তোফাজ্জল হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় আটক ছয়জনের পাঁচজনই ছাত্রলীগের
রাঙামাটিতে পাহাড়ি-বাঙালি সংঘর্ষে নিহত ১, থমথমে পরিস্থিতিতে ১৪৪ ধারা জারি, ৭২ ঘন্টার অবরোধের ডাক
বাংলাদেশের গণতন্ত্র এখনো বিপদমুক্ত নয় : তারেক রহমান
নিরাপদ ও নির্ভয়ে উদযাপন হবে শারদীয় দূর্গোদসব এবং দূর্গাপূজা- এসএমপি কমিশনার রেজাউল করিম
মব কিলিং সরকার সমর্থন করে না: উপদেষ্টা নাহিদ
চট্টগ্রামে রাতের আঁধারে বিএনপির কার্যালয় ভাঙচুর
বলিউডে কারিনা কাপুরের ২৫ বছর
মব জাস্টিসের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেবে ঢাবি কর্তৃপক্ষ
রাজশাহীতে ট্রেনে বরযাত্রীদের ওপর হামলা
চিহ্নিত গোষ্ঠী আবার দখলদারি ও চাঁদাবাজি শুরু করেছে : সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম চরমোনাই
গায়িকা রুকসানার রহস্যজনক মৃত্যু!
যে কোনো মূল্যে লাহোর কর্মসূচি সফল করুন: ইমরান খান
চৌদ্দগ্রামে সড়ক দুর্ঘটনায় সিএনজি চালকসহ নিহত ২
যুক্তরাষ্ট্রের একটি আদালত ভবনে বিচারককে গুলি করে হত্যা
ডিবির সাবেক ডিসি ৭ দিনের রিমান্ডে দলীয় বিবেচনায় শুদ্ধাচার পুরস্কার পান মশিউর
খাগড়াছড়ি-রাঙামাটিতে সংঘর্ষ: তিন জেলার মানুষকে শান্ত থাকার আহ্বান সরকারের
গরমে যেন শেষ সিলেট !