টানতে হবে গতির লাগাম
১০ মে ২০২৪, ১২:১৫ এএম | আপডেট: ১০ মে ২০২৪, ১২:১৫ এএম
দেশের গণপরিবহনগুলোতে চলছে অসুস্থ গতির প্রতিযোগিতা। কে কার আগে যাবে সেই অসুস্থ প্রতিযোগিতায় অকালে প্রাণ হারাচ্ছে মানুষ। পঙ্গুত্ববরণ করে অন্যের বোঝা হয়ে পড়ে রয়েছেন আরও অনেকে। গণপরিবহনগুলোর এই অসুস্থ প্রতিযোগিতা থেকে রেহাই পাচ্ছে না কেউই। দিন দিন এই গতির প্রতিযোগিতায় বাড়ছে সড়কে দুর্ঘটনার সংখ্যা। মৃত্যুর মিছিলে যোগ হচ্ছে নতুন নতুন নাম। এই অসুস্থ প্রতিযোগিতা দেশের প্রধান মহাসড়কগুলো থেকে শুরু করে চলছে গ্রামীণ সড়কগুলোতেও। গণপরিবহনের পাশাপাশি গতির প্রতিযোগিতার অসুস্থ রোগে আক্রান্ত রাস্তায় চলাচলকারী মোটরসাইকেলগুলোও। এসব মোটরসাইকেল উঠতি বয়সের কিশোর ও যুবকদের হাতে চালানোর কারণে বেড়ে যায় গতির প্রতিযোগিতা। সড়ক ও মহাসড়কগুলোতে গতির প্রতিযোগিতা কমাতে না পারলে দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি কমবে না বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে ২০৩০ সালের মধ্যে সড়ক দুর্ঘটনা কমিয়ে আনার জন্য সড়কে যানবাহনের গতি কমিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এজন্য সরকারের সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ মোটরযানের গতিসীমা সংক্রান্ত নির্দেশিকা, ২০২৪ জারি করেছে। সেটি বিআরটিএ প্রজ্ঞাপন আকারে প্রকাশও করেছে। প্রজ্ঞাপনে দেখা গেছে, এক্সপ্রেসওয়ে (দ্রæতগতিতে যানবাহন চালানোর উপযোগী সড়ক) ও জাতীয় মহাসড়কে মোটরকার, বাস-মিনিবাসের সর্বোচ্চ গতি নির্ধারণ করা হয়েছে ঘণ্টায় ৮০ কিলোমিটার, মোটরসাইকেল ৬০ কিলোমিটার এবং ট্রাক, ট্রেইলারযুক্ত গাড়ির ক্ষেত্রে ৫০ কিলোমিটার। অন্যদিকে শহর এলাকার ছোট ও গ্রামীণ সড়কে এই গতিসীমা মোটরকার, বাস-মিনিবাস, ট্রাক, ট্রেইলারযুক্ত গাড়ির ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ঘণ্টায় ৩০ কিলোমিটার এবং মোটরসাইকেলের ক্ষেত্রে ২০/৩০ কিলোমিটার নির্ধারণ করা হয়েছে।
যোগাযোগ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রতিটি দুর্ঘটনার পর দেখা যায় চালকের ড্রাইভিং লাইসেন্স নেই, গাড়ির ফিটনেস নেই। এ দায় তো তাদের। আবার ৩৫০ সিসি মোটরসাইকেল বাজারজাতকরণের অনুমতি দিয়ে ৬০ কিলোমিটারের বেশি গতিতে তা না চালানোর নির্দেশ হাস্যকর। সরকারের সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের অবশ্য স্পষ্ট ঘোষণা সড়কে গাড়ির গতি নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্য হচ্ছে সড়কের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
বিআরটিএর তথ্য বলছে, ২০২৩ সালে সড়কে ৫ হাজার ৪৯৫টি দুর্ঘটনায় ৫ হাজার ২৪ জন নিহত হয়েছেন। আর বেসরকারি সংগঠন বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির তথ্য বলছে, ২০২৩ সালে ৬ হাজার ২৬১টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৭ হাজার ৯০২ জন নিহত এবং ১০ হাজার ৩৭২ জন আহত হয়েছেন।
সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের জারি করা মোটরযানের গতিসীমা নির্দেশিকা রোডক্র্যাশ ও প্রতিরোধযোগ্য অকাল মৃত্যু ঠেকাতে গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা রাখবে বলে জানিয়েছে রোড সেইটি কোয়ালিশন বাংলাদেশ। একই সাথে এই নির্দেশিকার যথাযথ বাস্তবায়ন ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অনুযায়ী সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ও আহতের সংখ্যা অর্ধেকে কমিয়ে আনতে উল্লেখযোগ্য ভ‚মিকা রাখবে। গতকাল বৃহস্পতিবার সংগঠনটির পক্ষ থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব কথা বলা হয়।
সংগঠনটি আরও জানায়, বর্তমান সরকার দেশের সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে অভ‚তপূর্ব ভ‚মিকা রাখছে। এরপরেও রোডক্র্যাশ বাড়ছে ও একইসঙ্গে বাড়ছে হতাহতের সংখ্যা। দেশের সড়ক দুর্ঘটনার অন্যতম প্রধান কারণ দ্রæত ও বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানো। পাশাপাশি মোটর সাইকেলের অনিয়ন্ত্রিত গতি প্রতিনিয়ত দেশের কর্মক্ষম তরুণসহ অনেকের প্রাণ কেড়ে নিচ্ছে। এমতাবস্থায়, রোড সেফটি কোয়ালিশন বাংলাদেশ দীর্ঘদিন ধরে বিশ্বের অন্যান্য দেশসমূহ থেকে প্রাপ্ত অভিজ্ঞতারভিত্তিতে বাংলাদেশের সড়কে গতিসীমা নিয়ন্ত্রণের জন্য সরকারি নির্দেশনার দাবি করে আসছে। রোড সেইটি কোয়ালিশন বাংলাদেশের বলছে, গ্রামাঞ্চল ও শহরের জন্য মোটরসাইকেলের গতি সীমা নির্ধারণ করায় সড়কে চলাচলের জন্য শিশু, নারী ও বৃদ্ধরা উপকৃত হবেন। আবার মোটরসাইকেলের গতি কম থাকার ফলে দুর্ঘটনা ঘটলেও হতাহত কম হবে। এছাড়াও গতি কম থাকার ফলে মোটরসাইকেলের কন্ট্রোলিং-এ বাড়তি সুবিধা পাওয়া যাবে, যা অপ্রত্যাশিক দুর্ঘটনা এড়াতে সহায়তা করবে। বিশ্বের অনেক দেশ শহরাঞ্চলে সড়ক নিরাপত্তার জন্য মোটরসাইকেলের গতির সীমা কমিয়ে দিয়েছে। বাংলাদেশেও অনুরূপভাবে গতি সীমা বাস্তবায়ন করলে সড়কে দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি কমানো সম্ভব হবে।
বাসচালক নয়ন বলেন, গতির কারণেই সবসময় দুর্ঘটনা বাড়ছে। সড়কে বাসগুলো অন্য বাসের সঙ্গে রেষারেষি করে। ডানে-বামে করে বেশি। ফলে একটার সঙ্গে আরেকটা বাড়ি খেয়ে রাস্তার বাইরে চলে যায়। দুর্ঘটনার নানা কারণ আছে। যানবাহনের গতি কমে আসলে দুর্ঘটনা অনেকাংশে কমতে পারে।
রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমান বলেন, বর্তমানে অধিকাংশ দুর্ঘটনা ঘটছে যানবাহন নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে। অর্থাৎ অতিরিক্ত গতির কারণে দুর্ঘটনা ঘটছে। এই গতি নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে দুর্ঘটনা কমানো যাবে না। গতি নিয়ন্ত্রণের জন্য মোটিভেশনাল প্রশিক্ষণ যেমন দরকার, তেমনি দরকার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রযুক্তিগত সক্ষমতা অর্জন। যানবাহনে আধুনিক প্রযুক্তি সংযুক্ত করতে হবে, যার মাধ্যমে গতিসীমা নজরদারি ও রেকর্ড করা যায়। সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণে ‘সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮’ বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে আন্তরিক হতে হবে।
সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নুরী বলেন, বিআরটিএর জায়গা থেকে বিআরটিএ তার চেষ্টা করছে। আমাদের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে সড়কের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। ওইসব বিষয়ে মোবাইল কোর্ট, জরিমানা, গাড়ি ডাম্পিং নিয়মিতভাবে চলছে। গতি নিয়ন্ত্রণের বিষয়টা সড়কের নিরাপত্তার জন্য আরেকটা নতুন উদ্যোগ বলতে পারেন।
যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ ও বুয়েটের প্রফেসর ড. শামসুল হক বলেন, আসলে সড়কের বিশৃঙ্খলা যদি না কমানো যায়, গতির পার্থক্য যদি কমাতে না পারে, তাহলে মূল কারণ বাইরেই থেকে যাবে। সড়কের দুর্ঘটনা হয় বিশৃঙ্খলা থেকে। বিশৃঙ্খলার প্রথম দুটি কারণের একটি হলো গতির পার্থক্য। এক্সপ্রেসওয়েতে মোটরসাইকেলের লিমিট করা হয়েছে ৬০ কিলোমিটার। প্রথম লেনটা কিন্তু সর্বোচ্চ গতির জন্য। তার পরেরটা আরেকটু কম গতির যানবাহনের জন্য। ওই প্রথম লেনে যদি ধীরগতির কেউ থাকে, তাহলে বাধ্যতামূলক ওভারটেকিং হবে। ফলে এই জায়গাটাতেই তো দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা বাড়ে। দুর্ঘটনার অনেক কারণের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে অনিরাপদ চালক।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
তামিমকে টপকে শীর্ষে মুশফিক
শেষ মিনিটের গোলে পয়েন্ট হারাল মায়ামি
ভিনিসিউস-এমবাপ্পে ঝলকে রিয়ালের বড় জয়
ফের বিবর্ণ ইউনাইটেড হারাল পয়েন্ট
দিয়াজের জোড়া গোলে চূড়ায় অলরেডসরা
এবার বুন্দেসলীগায়ও বায়ার্নের গোল উৎসব
দিয়াজের জোড়া গোলে চূড়ায় অলরেডসরা
দ্বিতীয় ওয়ানডেতেও অজিদের অনায়স জয়
প্লটবঞ্চিত পূর্বাচলের আদিবাসিন্দাদের ৩শ’ ফুট সড়কে অবস্থান : বিক্ষোভ অব্যাহত
দেশে সংস্কার ও জবাবদিহি প্রতিষ্ঠার আহ্বান
ছাত্রলীগের হামলার শিকার শিক্ষার্থীদের মামলা করতে বললেন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ
উম্মাহর কল্যাণে মুসলমানদের ঐক্যের বিকল্প নেই
বৈরুতে ইসরাইলি হামলায় হিজবুল্লাহর শীর্ষ কমান্ডারসহ নিহত ১৪
পুলিশের লুট হওয়া অস্ত্র অপরাধে ব্যবহারের আশঙ্কা
মস্কোয় হামলার উপযুক্ত ক্ষেপণাস্ত্র কিয়েভে পাঠাবে না জার্মানি
জিয়ার ভূমিকাকে অবহেলা করায় পাহাড়ে সমস্যা হচ্ছে : জামায়াত নেতা শাহজাহান চৌধুরী
মানুষের প্রত্যাশা পূরণ করতে ঐক্যবদ্ধ থাকার কোনো বিকল্প নেই: তারেক রহমান
বিচার বিভাগে দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা প্রধান বিচারপতির
একদিনে ৮৪৩ জনের ডেঙ্গু শনাক্ত, মৃত্যু ১
কুষ্টিয়ায় বিদ্যুৎস্পৃষ্টে সুগার মিলের নিরাপত্তা প্রহরীর মৃত্যু