ঢাকা   সোমবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৮ আশ্বিন ১৪৩১

ব্যক্তিস্বার্থ ব্যাংকখাতে গোষ্ঠীশাসন তৈরি হয়েছে : সিপিডি

Daily Inqilab স্টাফ রিপোর্টার

২৪ মে ২০২৪, ১২:১৭ এএম | আপডেট: ২৪ মে ২০২৪, ১২:১৭ এএম

ব্যাংকখাতে সুশাসন, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার চরম অবনতি হয়েছে। নিজেদের স্বার্থ উদ্ধারের জন্য গোষ্ঠীগত দুঃশাসন তৈরি হয়েছে এ খাতে। এ প্রবণতা আমানতকারীদের আস্থা উঠিয়ে নিচ্ছে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর একটি হোটেলে ব্যাংকখাতের সমসাময়িক ইস্যু নিয়ে আয়োজিত এক গোলটেবিল আলোচনায় এসব মন্তব্য করেন বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন।

সিপিডির সম্মানীয় ফেলো ড. মুস্তাফিজুর রহমানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান, সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ, এবিবির সাবেক চেয়ারম্যান নুরুল আমীন, সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ প্রমুখ।

ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, ২০২২ সাল শেষে দুর্দশাগ্রস্ত ঋণ দেখানো হয়েছে তিন লাখ ৭৮ হাজার কোটি টাকা। এর সঙ্গে অর্থঋণ আদালতের মামলায় আটকে থাকা প্রায় এক লাখ ৭৭ হাজার কোটি টাকা যোগ করলে খারাপ ঋণ আরও বেশি ছিল। আর্থিক খাত ব্যাংকনির্ভর। দেশের উন্নয়নে এ খাতের ভ‚মিকা বেশি। এখন ভঙ্গুরতা দেখা দিয়েছে, সুশাসন-জবাবদিহিতার হরণ ঘটেছে। এখন ঋণ অনুমোদন, পুনঃতফসিল, অবলোপন সবই নিজেদের মতো করে করা হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, বাইরের চাপে কিংবা নিজেরা ইচ্ছা করে স্বাধীনভাবে কাজ করছে না বাংলাদেশ ব্যাংক, এ অবস্থার উন্নয়ন করতে হবে। কোনো ভুল তথ্য প্রকাশিত হলে নীতি ভুল হয়। উন্নত দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওয়েবসাইটে রিয়েল টাইম তথ্য দেওয়া হয়, আজকের তথ্যও রয়েছে। আমাদের এখানে সেটা নিশ্চিত না করে তথ্য সংগ্রহের দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

ব্যাংকের সুশাসন প্রসঙ্গে সিপিডির নির্বাহী পরিচালক বলেন, ব্যাংকের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংকের স্বাধীনতা ক্রমান্বয়ে দুর্বল হচ্ছে। স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিষয়টি আমরা দেখতে পারছি না। বাংলাদেশে ব্যাংকের বাইরেও অর্থ মন্ত্রণালয়ে ব্যাংকিং ডিভিশনের নিয়ন্ত্রকের ভ‚মিকা দেখতে পাচ্ছি। অথচ কেন্দ্রীয় ব্যাংক স্বাধীনভাবে কাজ করার কথা, সেটা পারছে না। তিনি আরো বলেন, ব্যাংকগুলোর সমস্ত তথ্য জনসন্মুখে প্রকাশ পাচ্ছে না। যারা প্রকাশ করে না, তারা লক্ষ্য পূরণ করতে পারে না। যতটুকু প্রকাশিত হয়, তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ থেকে যাচ্ছে। আর একটি বিষয় হচ্ছে তথ্যের দরজা ক্রমান্বয়ে বন্ধ হয়ে যাওয়া।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ মানে শক্তভাবে ব্যবস্থা নেওয়া। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংক এখন সকালে এক রকম নিয়ম করে, বিকেলে আরেকজনের কথা শুনে তা পরিবর্তন করে। এসব সিদ্ধান্ত আবার নেওয়া হয় ব্যবসায়ী-রাজনীতিবিদদের সঙ্গে বসে। বাংলাদেশ ব্যাংক এখন একটা সমবায় সমিতিতে পরিণত হয়েছে। আইনে বাংলাদেশ ব্যাংকের স্বায়ত্তশাসন দেওয়া আছে, কিন্তু তার অভাব দেখা যাচ্ছে। সুদহার, ডলারের দর অনেক আগে বাড়ানো দরকার ছিল, তবে তা না করায় ভালো করতে গিয়ে মানুষের ওপর চাপ বাড়ছে। শুধু সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি, ডলারের দর বাড়িয়ে কিংবা সুদহার বাড়িয়ে বা কলিংপেক করে প্রবৃদ্ধি হবে না, দেশ উন্নত হবে না। প্রবৃদ্ধিতে বাংলাদেশ হংকং-সিঙ্গাপুর হবে না, এজন্য ক্ষুদ্র, মাঝারি শিল্প, কৃষিতে ঋণ বাড়াতে হবে।

প্রফেসর ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ব্যাংকিং খাতের এই অবস্থা থেকে যদি টেনে তুলতে হয়ে, তাহলে সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে এবং স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। কারণ বিগত দিনে আমরা দেখেছি লাভের ব্যক্তিকরণ এবং ক্ষতির রাস্ট্রীয়করণ করা।

আলোচনা সভয় দুর্বল ও সবল ব্যাংকে একীভ‚ত প্রসঙ্গে সিপিডি বলছে, সরকারি ব্যাংকগুলো পুনরুদ্ধারের জন্য সরকার থেকে বহুবার অর্থ দেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকে বার বার দেওয়া হচ্ছে। শুধু বেসরকারি ব্যাংক যেমন পদ্মা ব্যাংককে টেনে তোলার চেষ্টা করা হয়েছে, কিন্তু সেটা রক্ষা হয়নি। এরূপ অবস্থায় সরকারি প্রতিষ্ঠান দিয়ে পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এই প্রক্রিয়া এগিয়ে যদি নিতেই হয়, তাহলে পৃথিবীর স্বনামধন্য এ্যাসেসমেন্ট কোম্পানিকে প্রতিযোগীতার ভিত্তিতে নিয়ে আসুন। যদিও বাংলাদেশের ব্যাংকিং স্বাস্থ্য সেটা বিবেচনায় নিলে তারা আগ্রহী হবে কি না, সেটা বড় প্রশ্ন। আর মার্জ করার বিষয়ে যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, সেটা যাচাই-বাছাই করা হয়েছে কি না। সবার আগে দুর্বল ব্যাংকে স্বাস্থ্য অডিটের মাধ্যমে খতিয়ে দেখা দরকার, সেটা আসলে কতখানি খারাপ। তারপরও ব্যাংকগুলো সিদ্ধান্ত নেবে ভালো ব্যাংকগুলো ওই ব্যাংক কিনবে কি না?


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

রাজধানীতে ট্রাফিক আইনে একদিনে ৮৭০ মামলা, জরিমানা ৩৫ লাখ ৮০ হাজার

রাজধানীতে ট্রাফিক আইনে একদিনে ৮৭০ মামলা, জরিমানা ৩৫ লাখ ৮০ হাজার

তারাকান্দায় বিদ্যুৎপৃষ্টে কলেজ শিক্ষার্থীর মৃত্যু

তারাকান্দায় বিদ্যুৎপৃষ্টে কলেজ শিক্ষার্থীর মৃত্যু

দর্শনায় সংক্ষিপ্ত সিলেবাসের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল মহাসড়ক অবরোধ

দর্শনায় সংক্ষিপ্ত সিলেবাসের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল মহাসড়ক অবরোধ

কেপিএম নতুন এমডি মোহাম্মদ শহীদ উল্লাহ যোগদন

কেপিএম নতুন এমডি মোহাম্মদ শহীদ উল্লাহ যোগদন

কালীগঞ্জে রাস্তার পাশে পড়ে ছিল অজ্ঞাত লাশ

কালীগঞ্জে রাস্তার পাশে পড়ে ছিল অজ্ঞাত লাশ

চীনের মধ্যাঞ্চলের সেতুতে দুর্ঘটনায় ৬ জন নিহত, আহত ৭

চীনের মধ্যাঞ্চলের সেতুতে দুর্ঘটনায় ৬ জন নিহত, আহত ৭

শপথ নিলেন শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট দিশানায়েকে

শপথ নিলেন শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট দিশানায়েকে

নতুন সৃষ্ট পদের এক-তৃতীয়াংশ ক্যাডার বহির্ভূতদের জন্য সংরক্ষণ পরীক্ষায় কমিটি

নতুন সৃষ্ট পদের এক-তৃতীয়াংশ ক্যাডার বহির্ভূতদের জন্য সংরক্ষণ পরীক্ষায় কমিটি

সিলেটের সাংবাদিক তুরাব হত্যা মামলার আসামি সাবেক ওসি মঈন গ্রেপ্তার

সিলেটের সাংবাদিক তুরাব হত্যা মামলার আসামি সাবেক ওসি মঈন গ্রেপ্তার

‘নতুন বাংলাদেশকে’ জাতিসংঘে উপস্থাপন করবেন ড. ইউনূস

‘নতুন বাংলাদেশকে’ জাতিসংঘে উপস্থাপন করবেন ড. ইউনূস

দেশের অর্থনীতির জন্য পায়রা একটি গুরুত্বপূর্ণ বন্দর-উপদেষ্টা বি:.জে:.(অব:) ড.এম সাখাওয়াত হোসেন

দেশের অর্থনীতির জন্য পায়রা একটি গুরুত্বপূর্ণ বন্দর-উপদেষ্টা বি:.জে:.(অব:) ড.এম সাখাওয়াত হোসেন

শ্রীনগরে ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আটক, হত্যা মালা দায়ের।

শ্রীনগরে ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আটক, হত্যা মালা দায়ের।

কারখানা ভাঙচুর চেষ্টার অভিযোগে গাজীপুরে ৬ জন আটক

কারখানা ভাঙচুর চেষ্টার অভিযোগে গাজীপুরে ৬ জন আটক

কিশোরগঞ্জে তীব্র তাপদাহ, হাসপাতালে বাড়ছে রোগীর সংখ্যা

কিশোরগঞ্জে তীব্র তাপদাহ, হাসপাতালে বাড়ছে রোগীর সংখ্যা

খাগড়াছড়ি-রাঙামাটিকে অস্থিতিশীল করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত আ.লীগ

খাগড়াছড়ি-রাঙামাটিকে অস্থিতিশীল করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত আ.লীগ

শ্যামল দত্তকে, কারাগারে প্রেরণ

শ্যামল দত্তকে, কারাগারে প্রেরণ

আরও দুই হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার শাহরিয়ার কবির

আরও দুই হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার শাহরিয়ার কবির

দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারে অনুমতি দেয়নি যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেন: জেলেনস্কি

দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারে অনুমতি দেয়নি যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেন: জেলেনস্কি

মোংলায় গৃহবধূর মরদেহ উদ্ধার, স্বামী পলাতক

মোংলায় গৃহবধূর মরদেহ উদ্ধার, স্বামী পলাতক

আসাদের সঙ্গে বৈঠকের জন্য প্রস্তুত এরদোগান

আসাদের সঙ্গে বৈঠকের জন্য প্রস্তুত এরদোগান