ঢাকা   সোমবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৮ আশ্বিন ১৪৩১

ঘাঁটি করতে দেইনি ‘তাই সমস্যা’ পাত্তা দিচ্ছি না : প্রধানমন্ত্রী

Daily Inqilab স্টাফ রিপোর্টার

২৪ মে ২০২৪, ১২:১৭ এএম | আপডেট: ২৪ মে ২০২৪, ১২:১৭ এএম

রিজার্ভ নিয়ে চিন্তার কিছু নেই ষ যতই মুরুব্বি ধরুক, এদের আমরা ছাড়বো না
কোনো দেশের কথা উল্লেখ না করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, যদি আমি বাংলাদেশে কারো এয়ারবেজ করতে দেই, ঘাঁটি করতে দেই। তাহলে আবার ক্ষমতায় আসতে কোন অসুবিধা নেই। এমন প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। তিনি বলেছেন, ‘কিন্তু আমি রাজি হইনি’। তিনি আরো বলেছেন, এসব কারণে কিছু সমস্যায় পরতে হচ্ছে, এবং হবে আমি জানি। কিন্তু আমি এসবকে পাত্তা দিচ্ছি না। দেশের মানুষ আমার শক্তি। গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় গণভবনে ১৪ দলীয় জোটের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে তিনি এসব কথা বলেন। বিএনপির প্রতি ইঙ্গিত করে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, যতই মুরুব্বি ধরুক, এদের আমরা ছাড়বো না। এদের বিরুদ্ধে আমাদের ব্যবস্থা অব্যাহত থাকবে।

বঙ্গপোসাগরে এয়ারবেজ করার প্রস্তাব প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোন এক সাদা চামড়ার (নাম উল্লেখ না করে) প্রস্তাব। আমি স্পষ্ট জবাব দিছি, আমি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের মেয়ে। আমরা যুদ্ধ করে বিজয় অর্জন করে দেশ স্বাধীন করেছি। আমরা দেশের কোন অংশ ভাড়া দিয়ে ক্ষমতায় যেতে চাই না। যদি জনগণ চায় তবেই ক্ষমতায় আসবো।

এখনো চক্রান্ত আছে উল্লেখ করে এ সময় তিনি বলেন, চট্টগ্রাম, মিয়ানমারের একটি অংশ নিয়ে একটি খ্রিষ্টান রাষ্ট্র বানাবে। বঙ্গপোসাগরে একটা ঘাটি করবে। তিনি বলেন, বঙ্গপোসাগরের ওপর অনেকেরই নজর। সেটা আমি হতে দিচ্ছি না। এটাও আমার একটা অপরাধ। তিনি আরো বলেন, এখানে (বঙ্গপোসাগরে) এয়ারবেজ করে কার উপরে হামলা করবে। যদি একটা দেশকে দেখানো হয়, সেটাও তো না। আমি তো জানি আরো কোথায় যাবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এসব কারণে কিছু সমস্যায় পরতে হচ্ছে, হবে আমি জানি। কিন্তু আমি এসবকে পাত্তা দিচ্ছি না। দেশের মানুষ আমার শক্তি।

প্রধানমন্ত্রী রিজার্ভ প্রসঙ্গে বলেন, সবচেয়ে সমস্যা ইনফ্লুয়েশন। এটা অনেক দেশের সমস্যা। এটা কমাতে পারলে ভালো হতো। রিজার্ভ আমাদের মতো অনেক দেশেরই কমে যাচ্ছে। তিনি আরো বলেন, আমাদের আপদকালীন সময়ের জন্য খাদ্য মজুত থাকলে রিজার্ভ কম কোনো সমস্যা না। এটা নিয়ে চিন্তার কিছু নেই। তারপরও আমি এটা নিয়ে সচেতন করায়, এখন দেখি সবাই এটা নিয়ে কথা বলছে। এটা ভালো। অন্তত বললে, সবাই সচেতন থাকবে। তবে তিনি জানিয়েছেন, ইনফ্লুয়েশনটা কমাতে পারলে মানুষের কিছুটা স্বস্তি হতো।

নিত্য প্রয়োজনী দ্রব্যমূল্যে কমানো নিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, এটা নিয়ে অনেক খেলা হয়। আজকেও দেখলাম যেখানে আলু রাখে (কোল্ড স্টরেজ) সেখানে ডিম রাখা। আলুর জন্য যে কোল্ড স্টরেজ সেখানে ডিম রাখার কথা না। এমর অনেক ঘটনা বাংলাদেশে ঘটছে। তিনি বলেন, নিজেদের চাহিদা পূরণে অনাবাদি জমি আবাদের আওতায় আনার উদ্যোগ নিতে বলেছি।
শেখ হাসিনা বলেন, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি ছাড়া দেশের মানুষের কল্যাণ হবে না। স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তিকে আরো সুসংগঠিত হতে হবে। মানুষের কাছে যেতে হবে।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের প্রতি ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, গ্রেনেড হামলাকারী, ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলার আসামি; ডিজিটাল বাংলাদেশের সুযোগ নিয়ে রোজই আন্দোলন ও সরকার উৎখাতসহ নানা রকম হুমকি-ধমকি দেয়। যতক্ষণ জনগণ সঙ্গে আছে ওটা আমি কেয়ার করি না। তারপরো এরা যেন দেশে জ্বালাও-পোড়াও, অগ্নিসংযোগ এগুলো করতে না পারে। এগুলো যারা করবে, তাদের কোনো ছাড় নাই। যতই মুরুব্বি ধরুক, আর যা-ই ধরুক, এদের আমরা ছাড়বো না, পরিস্কার কথা। মানুষের ক্ষতি যারা করবে, তাদের বিরুদ্ধে আমাদের ব্যবস্থা অব্যাহত থাকবে।

মুক্তিযুদ্ধের সময় যারা বিরোধী ছিল তারা একটুও বদলায় নি উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যে বাধাগুলো আছে, সেগুলো অতিক্রম করে এগিয়ে যাচ্ছি। গাজায় গণহত্যা চলছে। আমরা এর প্রতিবাদ করছি। যেখানেই যাই, এই যুদ্ধের বিরুদ্ধে কথা বলছি। ইরানের প্রেসিডেন্ট মারা যাওয়ার ঘটনায় আমরা শোক জানিয়েছি। শোক দিবসও পালন করেছি। যেখানেই এমন ঘটনা ঘটছে আমরা কিন্তু নির্যাতিত মানুষের পাশে আছি। সব চেয়ে বড় কথা আমাদের যে পররাষ্ট্রনীতি ‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়’ এটা আমরা ধরে রেখেছি।

রোহিঙ্গাদের নিয়ে উদ্বেগ পুনর্ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গাদের প্রতিনিয়ত বাচ্চা হচ্ছে। তাদের জনসংখ্যা বেড়েই যাচ্ছে। এ দিকে, মিয়ানমারেও পরিস্থিতি ভালো নয়। এরা (রোহিঙ্গারা কবে যে ফেরত যাবে তার কোন ঠিক নেই। তিনি আরো বলেন, তাদের তো আর ঠেলে ফেলে দিতে পারি না। আলাপ-আলোচনা করে যাচ্ছি। যুদ্ধ করতে যাইনি, ঝগড়াও করতে যাইনি। তবে মিয়ানমার সরকারের অবস্থাই এখন ভাল না উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, কখন যে তাদের ফেরাতে পারব, জানি না।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ৭৫ সালে ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর দেশ পিছিয়ে যায়। আর জাতির পিতার হত্যাকারীদের ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ দিয়ে পুরস্কৃত করা হয়। তিনি আরো বলেন, ওই হত্যাকান্ডের মধ্যে দুরভাগ্যজন বিষয় হলো একটি যুদ্ধ বিদ্ধস্ত দেশ গড়ে তুলতে যে সময়ের দরকার হয় সে সময়টায় সমালোচনা, নানা ধরনের ঘটনা ঘটিয়ে স্বাধীনতা বিরোধীদের সুযোগ করে দেওয়া হলো।

শেখ হাসিনা তাঁর ৯৬ সালের সরকারের উল্লেখ করে বলেন, আমরা যখন ক্ষমতায় এসেছি তখনই দেশের মানুষ সুযোগ পেয়েছে, স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তি...। তখনই দেশের মানুষ উপলদ্ধি করেছে যে সরকার জনগণের জন্য কাজ করে।

২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের ক্ষমতায় আসার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় আসে। আপনার জানেন যে, আমার ওপর একটা চাপ ছিল। আমাদের গ্যাস বিক্রি করতে হবে। যারা উত্তলন করে তারা বিক্রি করবে, এক দেশ কিনবে। এবং এটা অনেক দিন থেকে দেন দরবার করা হয়। তিনি আরো বলেন, আমার একটাই কথা ছিল..। গ্যাসের উদবৃত্ত যদি থাকে তাহলে বিক্রি করবো। এত বড় শক্তিশালী দেশকে এমন কথা বলায় তারা সেটা পছন্দ করে নি।

সে সময়ের প্রেক্ষাপট তুলে ধরে শেখ হাসিনা আরো বলেন, গ্যাস বিক্রি করে ক্ষমতায় যেতে হবে এই রাজনীতির জন্য তো আতি ভুগি নি। আমি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মেয়ে। দেশ বেচঁতে আসি নি। ক্ষমতায় না আসলেও আমার কিচ্ছু আসে যায় না।

১/১১ সরকারের সময়ে সময়ের উল্লেখ করে ১৪ দলীয় জোট নেত্রী শেখ হাসিনা বলেন, সবার আগে কিন্তু আমাকেই গ্রেফতার করা হলো। কারণ আমি কিছু সত্যি কথা বলেছিলাম। সেটা আমার অপরাধ হয়ে গেল। তিনি এ প্রসঙ্গে আরো বলেন, তাদের (১/১১ সরকারের) একটাই চেষ্টা ছিল আমি যাতে নির্বাচন করতে না পারি।


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

চৌগাছায় প্রতিমা তৈরীতে ব্যস্ত সময় পার করছেন কারিগরেরা

চৌগাছায় প্রতিমা তৈরীতে ব্যস্ত সময় পার করছেন কারিগরেরা

মজিব সভাপতি, সাইফুল সম্পাদক নাঙ্গলকোট প্রেসক্লাবের কমিটি গঠন

মজিব সভাপতি, সাইফুল সম্পাদক নাঙ্গলকোট প্রেসক্লাবের কমিটি গঠন

রাজধানীতে ট্রাফিক আইনে একদিনে ৮৭০ মামলা, জরিমানা ৩৫ লাখ ৮০ হাজার

রাজধানীতে ট্রাফিক আইনে একদিনে ৮৭০ মামলা, জরিমানা ৩৫ লাখ ৮০ হাজার

তারাকান্দায় বিদ্যুৎপৃষ্টে কলেজ শিক্ষার্থীর মৃত্যু

তারাকান্দায় বিদ্যুৎপৃষ্টে কলেজ শিক্ষার্থীর মৃত্যু

দর্শনায় সংক্ষিপ্ত সিলেবাসের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল মহাসড়ক অবরোধ

দর্শনায় সংক্ষিপ্ত সিলেবাসের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল মহাসড়ক অবরোধ

কেপিএম নতুন এমডি মোহাম্মদ শহীদ উল্লাহ যোগদন

কেপিএম নতুন এমডি মোহাম্মদ শহীদ উল্লাহ যোগদন

কালীগঞ্জে রাস্তার পাশে পড়ে ছিল অজ্ঞাত লাশ

কালীগঞ্জে রাস্তার পাশে পড়ে ছিল অজ্ঞাত লাশ

চীনের মধ্যাঞ্চলের সেতুতে দুর্ঘটনায় ৬ জন নিহত, আহত ৭

চীনের মধ্যাঞ্চলের সেতুতে দুর্ঘটনায় ৬ জন নিহত, আহত ৭

শপথ নিলেন শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট দিশানায়েকে

শপথ নিলেন শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট দিশানায়েকে

নতুন সৃষ্ট পদের এক-তৃতীয়াংশ ক্যাডার বহির্ভূতদের জন্য সংরক্ষণ পরীক্ষায় কমিটি

নতুন সৃষ্ট পদের এক-তৃতীয়াংশ ক্যাডার বহির্ভূতদের জন্য সংরক্ষণ পরীক্ষায় কমিটি

সিলেটের সাংবাদিক তুরাব হত্যা মামলার আসামি সাবেক ওসি মঈন গ্রেপ্তার

সিলেটের সাংবাদিক তুরাব হত্যা মামলার আসামি সাবেক ওসি মঈন গ্রেপ্তার

‘নতুন বাংলাদেশকে’ জাতিসংঘে উপস্থাপন করবেন ড. ইউনূস

‘নতুন বাংলাদেশকে’ জাতিসংঘে উপস্থাপন করবেন ড. ইউনূস

দেশের অর্থনীতির জন্য পায়রা একটি গুরুত্বপূর্ণ বন্দর-উপদেষ্টা বি:.জে:.(অব:) ড.এম সাখাওয়াত হোসেন

দেশের অর্থনীতির জন্য পায়রা একটি গুরুত্বপূর্ণ বন্দর-উপদেষ্টা বি:.জে:.(অব:) ড.এম সাখাওয়াত হোসেন

শ্রীনগরে ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আটক, হত্যা মালা দায়ের।

শ্রীনগরে ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আটক, হত্যা মালা দায়ের।

কারখানা ভাঙচুর চেষ্টার অভিযোগে গাজীপুরে ৬ জন আটক

কারখানা ভাঙচুর চেষ্টার অভিযোগে গাজীপুরে ৬ জন আটক

কিশোরগঞ্জে তীব্র তাপদাহ, হাসপাতালে বাড়ছে রোগীর সংখ্যা

কিশোরগঞ্জে তীব্র তাপদাহ, হাসপাতালে বাড়ছে রোগীর সংখ্যা

খাগড়াছড়ি-রাঙামাটিকে অস্থিতিশীল করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত আ.লীগ

খাগড়াছড়ি-রাঙামাটিকে অস্থিতিশীল করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত আ.লীগ

শ্যামল দত্তকে, কারাগারে প্রেরণ

শ্যামল দত্তকে, কারাগারে প্রেরণ

আরও দুই হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার শাহরিয়ার কবির

আরও দুই হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার শাহরিয়ার কবির

দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারে অনুমতি দেয়নি যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেন: জেলেনস্কি

দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারে অনুমতি দেয়নি যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেন: জেলেনস্কি