জাতীয় বাজেট অর্থনীতিকে স্থিতিশীল করবে
০৭ জুন ২০২৪, ১২:১৩ এএম | আপডেট: ০৭ জুন ২০২৪, ১২:১৩ এএম
প্রস্তাবিত বাংলাদেশ জাতীয় বাজেট গভীরভাবে পর্যালোচনা করার পর, আমরা সরকারের সমন্বিত অর্থনৈতিক পরিকল্পনা তৈরির প্রচেষ্টাকে সাধুবাদ জানাই; যা গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জগুলি মোকাবেলা করে ব্যবসার বৃদ্ধির জন্য একটি অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করবে। মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, সামগ্রিক চাহিদা হ্রাস, এবং বাজারের সরবরাহের দিকে নজর দেয়ার ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে এই বাজেট অর্থনীতি স্থিতিশীল করার জন্য একটি শক্তিশালী ভিত্তি স্থাপন করবে বলে মনে করে ফরেন ইনভেস্টরস চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফআইসিসিআই)।
বাজেটে মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ এবং অর্থনীতি স্থিতিশীল করার জন্য বেশ কয়েকটি ব্যবস্থা উল্লেখ করা হয়েছে, যার মধ্যে সুদের হার ৮ দশমিক ৫ শতাংশ বৃদ্ধি করে কঠোর মুদ্রানীতি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। স্ট্যান্ডিং লেন্ডিং ফ্যাসিলিটি (এসএলএফ) এবং স্ট্যান্ডিং ডিপোজিট ফ্যাসিলিটি (এসডিএফ) হার যথাক্রমে ১০ শতাংশ এবং ৭ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে; যাতে মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা যায় এবং সঞ্চয়কে উৎসাহিত করা যায়। এছাড়াও, প্রযুক্তিগত অগ্রগতির মাধ্যমে কৃষি উৎপাদনশীলতা ২০ শতাংশ এবং শিল্প উৎপাদন ১৫ শতাংশ বাড়ানোর জন্য উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগ করা হয়েছে। এটি চাহিদা ও সরবরাহের ভারসাম্য রক্ষা করবে এবং অর্থনীতিকে স্থিতিশীল করবে বলে আশা করা হচ্ছে। প্রস্তাবিত বাজেটে নিম্ন নিম্নলিখিত প্রস্তাবনাগুলিকে চেম্বার সাধুবাদ জানায় তবে আমরা বিশ্বাস করি যে প্রস্তাবিত বাজেট বাস্তবায়নের লক্ষে আরও কিছু বিষয় বিবেচনায় আনা উচিৎ।
এফআইসিসিআই মনে করে, এই বাজেটের একটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হল- এর প্রগতিশীল ব্যবসাবান্ধব দৃষ্টিভঙ্গি, যা ভোক্তাদের জন্য খরচ কমানোর উপর ফোকাস করে। একটি ভবিষ্যতাপেক্ষ কর ব্যবস্থা প্রবর্তন দীর্ঘদিনের চাহিদা পূরণ করেছে, যা ব্যবসায় সঠিক কর পরিকল্পনা করতে সক্ষম হবে। শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত নয় এমন কোম্পানির করপোরেট করহার নগদ লেনদেনের শর্ত পরিপালন সাপেক্ষে ২৭ দশমিক ৫ শতাংশ হতে আড়াই শতাংশ কমিয়ে ২৫ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে; যাকে আমরা সাধুবাধ জানাই। কর হার হ্রাসের প্রস্তাব বেসরকারী বিনোয়োগ উৎসাহিত করবে আশা করা যায়।
প্রস্তাবিত বাজেটটি কর সংস্কারের উপর ফোকাস করে; যা কর ব্যবস্থাকে সরল এবং স্পষ্ট করে তোলেছে। এর মধ্যে করের আওতা ২৫ শতাংশ বৃদ্ধি, ইলেকট্রনিক ফিস্কাল ডিভাইস প্রবর্তন এবং কর সংগ্রহকে সহজতর করতে এবং খরচ কমাতে ই-পেমেন্ট সিস্টেম প্রচার করা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। করদাতাদের সংখ্যা ২ মিলিয়ন থেকে ২.৫ মিলিয়ন বাড়ানোর আশা করা হচ্ছে, যা একটি ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ তৈরি করবে এবং কর ব্যবস্থার পূর্বানুমানযোগ্যতা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করবে। সরাসরি কর বৃদ্ধি এবং ইলেকট্রনিক ট্যাক্স ডিডাকশন অ্যাট সোর্স (ই-টিডিএস) সিস্টেম প্রয়োগের মাধ্যমে প্রস্তাবিত বাজেট কর প্রতিপালন এবং কর ফাঁকি হ্রাস করার লক্ষ্য রাখে।
তবে, প্রস্তাবিত বাজেটে কর, ভ্যাট এবং কাস্টমস প্রশাসনের অটোমেশনের জন্য কোনও বরাদ্দ বা নির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা দেয় হয়নি। এই ধরনের সংস্কারের অভাবে ভ্যাট ক্রেডিট সম্পর্কিত জটিলতা এবং ব্যবসার উপর সম্ভাব্য আর্থিক চাপ অব্যাহত থাকবে। ভ্যাট প্রক্রিয়াগুলি সরল করতে এবং ব্যবসায়সমূহের উপর প্রশাসনিক বোঝা কমাতে ধারাবাহিক সংস্কার প্রয়োজন।
আমরা প্রস্তাবিত বাজেটে দেশের অগ্রগতির বিষয়সমূহকে সাধুবাদ জানাই, আমরা বিশ্বাস করি যে স্বাস্থ্য ও শিক্ষায় উচ্চতর বরাদ্দ সরকারের মানবসম্পদ উন্নয়নের প্রতিশ্রুতিকে আরও সুদৃঢ় করবে। স্বাস্থ্য খাতে মোট বাজেটের ৮ শতাংশ এবং শিক্ষা খাতে মোট বাজেটের ১২ শতাংশ বরাদ্দ করা হয়েছে। ইহা স্বাস্থ্যসেবা এবং শিক্ষাগত সুযোগসমূহকে বর্ধিত করবে, যার ফলে দেশে একটি দক্ষ ও স্বাস্থ্যবান জনগোষ্ঠী তৈরি হবে; যাহা একটি দেশের টেকসই উন্নয়নের জন্য অপরিহার্য বলে আমরা মনে করি। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন যে, স্বাস্থ্য খাতে ১০ শতাংশ এবং শিক্ষা খাতে ১৫ শতাংশ বরাদ্দ করা হলে বর্তমান সময়ের চাহিদাসমূহ মেটাতে এবং মানসম্পন্ন পরিষেবা নিশ্চিত করতে সক্ষম হবে।
তাছাড়া, কর প্রশাসনের দক্ষতা এবং স্বচ্ছতা বাড়াতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)-এর ডিজিটালাইজেশনের জন্য সম্পদ বরাদ্দ অপরিহার্য। এই উদ্দেশ্যে ৫০০ মিলিয়ন টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। এর মধ্যে উন্নত তথ্য বিশ্লেষণ, ইলেকট্রনিক কর ফাইলিং সিস্টেম এবং করদাতাদের জন্য উন্নত ডিজিটাল ইন্টারফেস বাস্তবায়ন অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এই ডিজিটাল রূপান্তর বাজেটের রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা অর্জন এবং সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নয়নকে সমর্থন করার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পরবর্তী তিন বছরের মধ্যে কর-জিডিপি অনুপাত বর্তমান ৮ শতাংশ থেকে ১০ শতাংশ বাড়ানোর লক্ষ্য রয়েছে প্রস্তাবিত বাজেটে।
উচ্চ আয়ের ব্যক্তিদের জন্য সর্বাধিক কর হার ২৫ শতাংশ থেকে ৩০ শতাংশ বৃদ্ধি একটি আরও প্রগতিশীল কর ব্যবস্থা তৈরি করে, যা ন্যায্য কর নিশ্চিত করে। তবে, এটি ডিসপোজেবল আয় হ্রাস করবে, যার ফলে ব্যয় এবং সঞ্চয়ে প্রভাব পড়বে। মুদ্রাস্ফীতির জন্য করমুক্ত আয়ের সীমা সামঞ্জস্য না করলে নিম্ন এবং মধ্যম আয়ের ব্যক্তিদের উপর আর্থিক চাপ বাড়তে পারে। আমরা কাস্টমস অ্যাক্ট ২০২৩ প্রবর্তনকে স্বাগত জানাই, কিন্তু ন্যাশনাল সিঙ্গেল উইন্ডো (এনএসডব্লিউ) প্রকল্প বাস্তবায়ন না হলে এই আইন সঠিকভাবে কার্যকর করা সম্ভব হবে না।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
এবার প্রকাশ্যে এলো চবি ছাত্রশিবিরের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক
আগামীর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় নিজেদের প্রস্তুত করতে হবে: ডিএমপি কমিশনার
অবশেষে স্বস্তির বৃষ্টি পঞ্চগড়ে
সেনা কর্মকর্তা হত্যাকারীদের অবিলম্বে সর্বোচ্চ শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে
সকল অপকর্মে জড়িতদের বিরুদ্ধে যার যার অবস্থান থেকে সামাজিক আন্দোলন জোরদার করতে হবে -চকরিয়ায় নারী সমাবেশে বক্তারা
সাগরে লঘুচাপ, চার সমুদ্রবন্দরে বন্দরে ৩ নম্বর সতর্কতা সংকেত
বান্দরবানে জামাতুল আনসারের ৩১ সদস্য কে ৪ মামলায় জামিন
হামজাকে পাওয়ার আরও কাছে বাংলাদেশ
বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উপাচার্য চায় পবিপ্রবির গ্রাজুয়েটবৃন্দ
সোনারগাঁওয়ে তিতাসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ওপর হামলা, আহত ৮
ভারতীয় সাংবাদিকদের এড়িয়ে গেলেন ড. ইউনূস
প্রকৃত আসামি ছাড়া কাউকে হয়রানি করা হবে না : ডিএমপি
কুষ্টিয়ায় ভূমির অফিস সহায়ককে তুলে নেওয়ার অভিযোগ সাবেক চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে
হাসিনার বিচার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হতে হবে: ববি হাজ্জাজ
রাজশাহী মহানগরীতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র জনতার উপর গুলি বর্ষণকারী সন্ত্রাসী রবি গ্রেপ্তার
দ্রুত রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের আশ্বাস ত্রাণ উপদেষ্টার
বিদেশে যেতে অনুমোদন লাগবে না প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের: আসিফ নজরুল
বিদেশে যেতে প্রবাসী মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন লাগবে না
চীনের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ ০.৫ শতাংশ কমানোর ঘোষণা
ইবি ভিসির যোগদান 'বিশ্ববিদ্যালয়কে শিক্ষার্থীদের স্বার্থে গড়ে তুলবো'