ঢাকা   মঙ্গলবার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৯ আশ্বিন ১৪৩১

আজ ঐতিহাসিক ছয়-দফা দিবস

Daily Inqilab অনলাইন ডেস্ক

০৭ জুন ২০২৪, ০৮:৩৬ এএম | আপডেট: ০৭ জুন ২০২৪, ০৮:৩৬ এএম

আজ ৭ জুন ঐতিহাসিক ছয়-দফা দিবস। ১৯৬৬ সালের এই দিনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঘোষিত বাঙালি জাতির মুক্তির সনদ ৬-দফা দাবির পক্ষে দেশব্যাপী তীব্র গণআন্দোলনের সূচনা হয়। এই দিনে আওয়ামী লীগের ডাকা হরতালে টঙ্গি, ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জে তৎকালীন পুলিশ ও ইপিআর-এর গুলিতে মনু মিয়া, শফিক ও শামসুল হকসহ ১১ জন বাঙালি শহীদ হন। এরপর থেকেই বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আপসহীন সংগ্রামের ধারায় ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের দিকে এগিয়ে যায় পরাধীন বাঙালি জাতি।

প্রতিবছরের মতো এবারো যথাযোগ্য মর্যাদায় বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্যদিয়ে দিবসটি পালিত হবে। ঐতিহাসিক এই দিনটি উপলক্ষে আওয়ামী লীগসহ অন্যান্য সংগঠন বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।

আওয়ামী লীগের কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে সকাল ৬টা ৩০ মিনিটে বঙ্গবন্ধু ভবন, কেন্দ্রীয় কার্যালয় ও দেশব্যাপী আওয়ামী লীগ দলীয় কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন। এছাড়াও সকাল ৮টায় বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করা হবে। অন্যান্য কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে এদিন বিকাল ৪টায় বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আলোচনা সভা। আওয়ামী লীগ সভাপতি এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এতে বক্তব্য রাখবেন।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৬৬ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি তাসখন্দ চুক্তিকে কেন্দ্র করে লাহোরে অনুষ্ঠিত সম্মেলনের সাবজেক্ট কমিটিতে ৬-দফা উত্থাপন করেন এবং পরের দিন সম্মেলনের আলোচ্য সূচিতে যাতে এটি স্থান পায় সে ব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করেন। কিন্তু এই সম্মেলনে বঙ্গবন্ধুর এ দাবির প্রতি আয়োজক পক্ষ গুরুত্ব প্রদান করেনি। তারা এ দাবি প্রত্যাখ্যান করে। প্রতিবাদে বঙ্গবন্ধু সম্মেলনে যোগ না দিয়ে লাহোরে অবস্থানকালেই ৬-দফা উত্থাপন করেন। এ নিয়ে তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানের বিভিন্ন খবরের কাগজে বঙ্গবন্ধুকে বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা বলে চিহ্নিত করা হয়। পরে ঢাকায় ফিরে বঙ্গবন্ধু ১৩ মার্চ ৬-দফা এবং এ ব্যাপারে দলের অন্যান্য বিস্তারিত কর্মসূচি আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদে অনুমোদন করিয়ে নেন।

৬-দফার মূল বক্তব্য ছিল, প্রতিরক্ষা ও পররাষ্ট্র বিষয় ছাড়া সকল ক্ষমতা প্রাদেশিক সরকারের হাতে থাকবে। পূর্ববাংলা ও পশ্চিম পাকিস্তানে দুটি পৃথক ও সহজ বিনিময়যোগ্য মুদ্রা থাকবে। সরকারের কর, শুল্ক ধার্য ও আদায় করার দায়িত্ব প্রাদেশিক সরকারের হাতে থাকাসহ দুই অঞ্চলের অর্জিত বৈদেশিক মুদ্রার আলাদা হিসাব থাকবে এবং পূর্ববাংলার প্রতিরক্ষা ঝুঁকি কমানোর জন্য এখানে আধা-সামরিক বাহিনী গঠন ও নৌবাহিনীর সদরদপ্তর স্থাপন। বঙ্গবন্ধু ঘোষিত ৬-দফা দাবির মুখে পাকিস্তানের তৎকালীন সামরিক শাসক আইয়ুব খান বিচলিত হয়ে পড়েন। তিনি হুমকি দিয়ে বলেন, ৬-দফা নিয়ে বাড়াবাড়ি করলে অস্ত্রের ভাষায় উত্তর দেওয়া হবে।

এদিকে, ৬-দফা কর্মসূচি জনগণের মাঝে পৌঁছে দেওয়ার জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা সমগ্র পূর্ববাংলা সফর করেন এবং ৬-দফাকে বাঙালির বাঁচার দাবি হিসেবে অভিহিত করেন। ফলে শাসকগোষ্ঠী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ অন্যান্য নেতাকে বিভিন্নভাবে হয়রানি করে। যশোর, ময়মনসিংহ ও সিলেটসহ অন্যান্য কয়েকটি স্থানে ৬ দফার পক্ষে প্রচারকালে বঙ্গবন্ধু গ্রেপ্তার হন।

ছয়-দফা দাবি আদায় প্রসঙ্গে ‘কারাগারের রোজনামচা’ গ্রন্থে বঙ্গবন্ধু লিখেছেন, ‘আওয়ামী লীগ কর্মীরা যথেষ্ট নির্যাতন ভোগ করেছে। ছয়-দফা দাবি যখন তারা দেশের কাছে পেশ করেছে তখনই প্রস্তুত হয়ে গিয়াছে যে তাদের দুঃখ কষ্ট ভোগ করতে হবে। এটা ক্ষমতা দখলের সংগ্রাম নয়, জনগণকে শোষণের হাত থেকে বাঁচাবার জন্য সংগ্রাম।’ তিনি আরো লিখেছেন, ‘আমার বিশ্বাস আছে আওয়ামী লীগের ও ছাত্রলীগের নিঃস্বার্থ কর্মীরা, তাদের সাথে আছে। কিছু সংখ্যক শ্রমিক নেতা-যারা সত্যই শ্রমিকদের জন্য আন্দোলন করে-তারাও নিশ্চয়ই সক্রিয় সমর্থন দেবে। এত গ্রেপ্তার করেও এদের দমাইয়া দিতে পারে নাই।’

পরবর্তী সময়ে ঐতিহাসিক ৬-দফাভিত্তিক নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনই ধাপে ধাপে বাঙালির স্বাধীনতা সংগ্রামে পরিণত হয়। এ দাবির সপক্ষে বাঙালি জাতির সর্বাত্মক রায় ঘোষিত হয় ১৯৭০ সালের ঐতিহাসিক সাধারণ নির্বাচনের মধ্যদিয়ে। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে বাঙালিরা বিজয়ী করে।

অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধুর দলকে জনগণ বিজয়ী করলেও স্বৈরাচারী পাকিস্তানের শাসকরা বিজয়ী দলকে সরকার গঠন করতে না দিলে আবারো বঙ্গবন্ধু জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে স্বাধীনতার পক্ষে আন্দোলন শুরু করেন। এরই ধারাবাহিকতায় বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ১৯৭১ সালে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের।

আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতা এবং সেই সময়ের ছাত্রনেতা তোফায়েল আহমেদ একটি নিবন্ধে লিখেছেন, ‘ছয়-দফা’কে প্রতিহত করার জন্য পাকিস্তান শাসকগোষ্ঠী বহু ষড়যন্ত্র করেছে। বঙ্গবন্ধুকে কারাগারে নিক্ষেপ করেছে। তার বিরুদ্ধে একের পর এক মামলা দিয়েছে। তারপরও যখন ‘ছয়-দফা’ আন্দোলন রোধ করা যাচ্ছিল না, তখন বঙ্গবন্ধুকে ফাঁসিকাষ্ঠে ঝুলিয়ে চিরতরে তার কণ্ঠ স্তব্ধ করে দেওয়ার ঘৃণ্য ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নে স্বৈরশাসক আইয়ুব খান ‘রাষ্ট্র বনাম শেখ মুজিব ও অন্যান্য’ তথা আগরতলা মামলা দেন। সেদিন ‘ছয়-দফা’ দাবি আদায় এবং বঙ্গবন্ধুকে কারামুক্ত করতে আমরা ছাত্ররা ’৬৯-এর জানুয়ারির ৪ তারিখে ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর দিনে ৪টি ছাত্র সংগঠনের সমন্বয়ে সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ গঠন করে ছয়-দফাকে এগারো দফায় অন্তর্ভুক্ত করে গ্রামে-গঞ্জে-শহরে-বন্দরে-কলে-কারখানায় ছড়িয়ে দিয়েছিলাম।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য এবং বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) পরিচালনা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আ. আ. ম. স আরেফীন সিদ্দিক বলেন, ৬ দফাই এনে দিয়েছে আমাদের তথা বাংলাদেশের স্বাধীনতা। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর দূরদৃষ্টি, অন্তর্দৃষ্টি ও রাজনৈতিক বিচক্ষণতা এতোই প্রখর ছিল যে, তিনি ৬ দফাকে এক দফার দাবিতে পরিণত করে বাংলার স্বাধীনতার আন্দোলনের ডাক দেন।


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

শ্রদ্ধা-ভালোবাসায় চিরশায়িত সেনা অফিসার লেফটেন্যান্ট নির্জন

শ্রদ্ধা-ভালোবাসায় চিরশায়িত সেনা অফিসার লেফটেন্যান্ট নির্জন

বিএফইউজে সভাপতি রুহুল আমিন গাজীর ইন্তেকাল

বিএফইউজে সভাপতি রুহুল আমিন গাজীর ইন্তেকাল

বিএফইউজে সভাপতি রুহুল আমিন গাজী আর নেই, ইনকিলাব সম্পাদকের শোক

বিএফইউজে সভাপতি রুহুল আমিন গাজী আর নেই, ইনকিলাব সম্পাদকের শোক

মতলবে  ৯ বাল্কহেড, ১টি লোড ড্রেজারসহ আটক ২৮

মতলবে ৯ বাল্কহেড, ১টি লোড ড্রেজারসহ আটক ২৮

জাভেদ পরিবারের ভেল্কি

জাভেদ পরিবারের ভেল্কি

দেশ ও দেশের সার্বভৌমত্ব বিরোধী চক্রান্ত রুখে দিতে হবে -ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ

দেশ ও দেশের সার্বভৌমত্ব বিরোধী চক্রান্ত রুখে দিতে হবে -ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ

মরিচ্যা চেকপোষ্টে ৩০ লাখ টাকার ইয়াবা উদ্ধার করল বিজিবি, আটক -১

মরিচ্যা চেকপোষ্টে ৩০ লাখ টাকার ইয়াবা উদ্ধার করল বিজিবি, আটক -১

জো বাইডেন অন্তর্বর্তী সরকারকে পূর্ণ সমর্থন জানিয়েছেন

জো বাইডেন অন্তর্বর্তী সরকারকে পূর্ণ সমর্থন জানিয়েছেন

জাস্টিন ট্রুডোকে ‘দ্য আর্ট অব ট্রায়াম্ফ’ উপহার দিলেন ইউনূস

জাস্টিন ট্রুডোকে ‘দ্য আর্ট অব ট্রায়াম্ফ’ উপহার দিলেন ইউনূস

শেরপুরে আদালতের হাজতখানা থেকে আসামির পলায়ন- ৩ পুলিশ সদস্য প্রত্যাহার

শেরপুরে আদালতের হাজতখানা থেকে আসামির পলায়ন- ৩ পুলিশ সদস্য প্রত্যাহার

গফরগাঁওয়ে ব্রহ্মপুত্র নদে যুবক নিখোঁজ  লাশ উদ্ধার

গফরগাঁওয়ে ব্রহ্মপুত্র নদে যুবক নিখোঁজ লাশ উদ্ধার

বিভাগীয় কমিশনার, এডিসি ও ইউএনও পরিবর্তন হবে

বিভাগীয় কমিশনার, এডিসি ও ইউএনও পরিবর্তন হবে

হিন্দুরা আমাদের নাগরিক, আমরা তাদের দেখভাল করছি: নিউইয়র্কে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

হিন্দুরা আমাদের নাগরিক, আমরা তাদের দেখভাল করছি: নিউইয়র্কে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

জো বাইডেনের সঙ্গে বৈঠকে ড. ইউনূস

জো বাইডেনের সঙ্গে বৈঠকে ড. ইউনূস

তীব্র দাবদাহে পুড়ছে রংপুরসহ উত্তর জনপদ : বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন

তীব্র দাবদাহে পুড়ছে রংপুরসহ উত্তর জনপদ : বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন

জাস্টিন ট্রুডোর স‌ঙ্গে ড. ইউনূ‌সের সাক্ষাৎ

জাস্টিন ট্রুডোর স‌ঙ্গে ড. ইউনূ‌সের সাক্ষাৎ

সিংগাইরের সড়ক দূর্ঘটনায় ১ নারীর মৃত্যু

সিংগাইরের সড়ক দূর্ঘটনায় ১ নারীর মৃত্যু

ষড়যন্ত্রকারীরা সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে অপতৎপরতায় লিপ্ত : তারেক রহমান

ষড়যন্ত্রকারীরা সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে অপতৎপরতায় লিপ্ত : তারেক রহমান

টেলিটকের আনলিমিটেড ডাটা প্যাকেজ জেন-জি

টেলিটকের আনলিমিটেড ডাটা প্যাকেজ জেন-জি

স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে দৃষ্টি হারানোদের পাশে নগর সভাপতি'র নেতৃত্বে নেতৃবৃন্দ

স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে দৃষ্টি হারানোদের পাশে নগর সভাপতি'র নেতৃত্বে নেতৃবৃন্দ