স›দ্বীপের হারামিয়া ইউনিয়নের বিধবা রহিমা বেগমের দুই সন্তান। এর মধ্যে বড় ছেলে তুষার কিছুটা ছন্নছাড়া। মায়ের দুঃখ ঘোচাতে চার বছর আগে ১০ বছর বয়সে চট্টগ্রাম শহরে পাড়ি জমান ছোট ছেলে সাইমন হোসেন। চট্টগ্রাম মহানগরীর বহদ্দারহাটে একটি মুদী দোকানে কাজ করা সাইমনের মনন জুড়ে ছিল শুধুই মায়ের দুঃখ গোছানোর তীব্র বাসনা। সেই বাসনা তাকে মায়ের সঙ্গে ঈদও করতে দেয় না। সর্বশেষ দুই ঈদে আসা যাওয়ায় টাকা খরচ হয়ে যাওয়ার ভয়ে গ্রামে যায়নি সাইমন। তবে বেতনের সব টাকা গ্রামে মায়ের কাছে পাঠিয়ে দেয় সে। যেন মা ভাইয়ের ঈদ ভাল কাটে। সেই সাইমন মায়ের কাছে ফিরলেন লাশ হয়ে।

১৮জুলাই বহদ্দারহাট মোড়ে কোটা সংস্কার আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের সাথে ছাত্রলীগের সংঘর্ষের সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয় সাইমন। ঘটনাস্থল থেকে গুলিবিদ্ধ সাইমনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। শনিবার রাত পর্যন্ত সাইমনের লাশের পরিচয় শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। ওই সময়টুকু অজ্ঞাত লাশ হিসেবেই চট্টগ্রাম মেডিকেলের মর্গে ছিল তার নিথর দেহ। শনিবার রাতে সাইমনের খালু মো. সুমন চট্টগ্রাম মেডিকেলের মর্গে গিয়ে তার লাশ শনাক্ত করেন। স্বজনেরা জানান, সাইমন স›দ্বীপ উপজেলার হারামিয়া ইউনিয়নের ছয় নম্বর ওয়ার্ডের মোল্লা বাড়ির মৃত আমিন রসুলের সন্তান। সে বহদ্দারহাটে খালু মো. সুমনের মুদি দোকানে চাকুরী করত। ১৮ জুলাই সন্ধ্যায় বহদ্দারহাট মোড়ে সংঘর্ষ শুরু হলে মো. সুমনের পরামর্শে দোকান বন্ধ করে বাসায় ফিরছিল সাইমন। তখন থেকেই সাইমন নিখোঁজ ছিল। অনেক খোঁজাখুজি করে সন্ধান না মেলায় শনিবার থানা পুলিশের পরামর্শে চট্টগ্রাম মেডিকেল যান মো. সুমন। পরে চট্টগ্রাম মেডিকেলের মর্গে সাইমনের লাশ শনাক্ত করেন তিনি।

সাইমনের বাবা আমিন রসুল ছিলেন একজন ট্রাক চালক। কয়েক বছর আগে তিনি মারা যান। একেবারে অসহায় পরিবারটি গ্রামে একটি জীর্ণশীর্ণ ঘরে থাকে। বড় ভাই সংসারের ব্যাপারে উদাসিন থাকলেও সাইমন ছোট বেলা থেকেই মা ও পরিবারের প্রতি অনেক দায়িত্বশীল। গত দুই ঈদে বাড়ি যাওয়া আসায় বেশি টাকা খরচ হয়ে যাবে এমন ভয়ে বাড়িতে যায়নি সাইমন। তবে বেতনের টাকা বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছিল সে। অনেকদিন ছেলেকে না দেখা রহিমা বেগম ছেলে দেখতে শহরে এসেছিলেন পিঠা নিয়ে। গত রোববার রহিমা বেগম কাঠের একটি ট্রলারে করে ফিরলেন সেই ছেলের লাশ নিয়ে।