ক্যু’ মোকাবেলায় নতুন সরকারকে সতর্ক থাকার আহ্বান
০৬ আগস্ট ২০২৪, ০৬:৪০ পিএম | আপডেট: ০৬ আগস্ট ২০২৪, ০৬:৪০ পিএম
কোটা আন্দোলন থেকে বর্তমান ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর যে সরকার গঠিত হবে সেটা হবে বিপ্লবী সরকার। সেই সরকারকে আগে ‘ক্যু’ মোকাবিলায় সতর্ক করেছেন সাবেক সেনা কর্মকর্তারা। তারা বলছেন, জ্বালাও পোড়াও হামলার মাধ্যমে বর্তমানে যা হচ্ছে সেটা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। কারণ সম্পত্তি ধ্বংস কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।
আমরা মনে করি এটা পরিকল্পিতভাবে করা হচ্ছে। সেনাবাহিনী নিষ্ক্রিয় থাকবে, হিন্দুরা বর্ডারের ওই পাড়ে চলে যাবে। একটা ইস্যু তৈরি হবে। একটা জিও পলিটিক্স তৈরি হবে। এটা হতে দেওয়া যাবে না। সেনাবাহিনী কেন নিষ্কৃত সেটা কোনোভাবেই মানা যায় না। বিপ্লবী সরকারকে সেই দায়িত্ব নিতে হবে। মঙ্গলবার (৬ আগস্ট) ডিআরইউতে গত ১৬ বছরে ‘আয়না ঘরসহ সকল গুমকৃত বন্দিদের মুক্তি দাবি’ শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে এমন দাবি উত্থাপন করেন সাবেক সেনা কর্মকর্তারা।
এসময় উপস্থিত ছিলেন, অবসরপ্রাপ্ত লে. কর্নেল হাসিনুর রহমান, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. হাসান নাসির, সাবেক রাষ্ট্রদূত মারুফ জামান, লে. ক. ফেরদৌস, মেজর জামিল হায়দার, ক্যাপ্টেন শোয়েব, লেফটেন্যান্ট ইমরান, মেজর সাব্বিরসহ অন্যান্য সশস্ত্র বাহিনীর সাবেক কর্মকর্তাবৃন্দ।
অনুষ্ঠানে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. হাসান নাসির বলেন, গত ১৬ বছরে যারা বিনা বিচারে মৃত্যুবরণ করেছেন তাদের বিচার করতে হবে। তাদের পরিবারকে নিশ্চয়ই পরবর্তী সরকার সুন্দর দেখভাল করবেন। এই গণঅভ্যুত্থানের পর যারা নতুন স্বাধীনতা ভোগের দাবিদার তারা হচ্ছেন আয়না ঘরে যারা আটক আছেন। ঠুনকো কারণে বা বিনা বিচারে যেসব রাজনৈতিক নেতাকর্মী আটক আমরা তাদের নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করছি। আমাদের কিছু দাবি আদায় হয়েছে। আজকে সকালে আমরা জানতে পেরেছি ব্যারিস্টার আরমান এবং আব্দুল্লাহিল আযমী মুক্ত হয়েছেন। অবশিষ্ট যারা এখনো মুক্ত হন নাই তারা যেখানে যেভাবে যে পরিস্থিতিতে আছেন তাদের মুক্ত করতে হবে।
তিনি বলেন, আমাদের সন্তানরা আমাদেরকে চরমভাবে ব্যর্থ প্রমাণ করেছেন, সেজন্য আমরা লজ্জিত, আবার গর্বিত। কারণ সন্তানরা আমাদেরকে পথ দেখিয়েছেন৷ আমরা তাদের সাহস দেখানোর জন্য আজকে এখানে একত্রিত হয়েছি। তরুণ প্রজন্মের কাজ চিন্তাধারার স্বপ্নকে আমরা বাস্তবায়ন করতে হবে। কারণ এই তরুণ প্রজন্ম সাহসিকতার সকল পূর্ব রেকর্ড ব্রেক করেছে। এ দেশকে বাঁচাতে হলে তরুণ প্রজন্মকে এগিয়ে যাওয়া ছাড়া কোনও উপায় নেই।
বহিঃশত্রু বা প্রধান শত্রুমুক্ত করতে হলে সম্পূর্ণ বাংলাদেশি মডেলের একটা সরকার গঠন করতে হবে। মুক্তিযুদ্ধে যারা রাজাকার ছিল তারাই পরবর্তীতে চেতনার নামে ৫৩ বছর ধরে দেশকে বিক্রি করে আসছিল। শেষ পর্যন্ত দেশের সার্বভৌমত্ব বিক্রি করে দেয়। সেখান থেকে আমাদের বের হয়ে আসতে হবে। সাবেক এই সেনা কর্মকর্তা বলেন, গত ১৬ বছরে যত চুক্তি হয়েছে সেসব প্রকাশ করতে হবে। যা কিছু রাষ্ট্রের স্বার্থের বিরুদ্ধে হয়েছে সেসব বাতিল করতে হবে। এ দাবি সবখানে উঠেছে। আমরা এসব দাবির প্রতি সমর্থন জানাচ্ছি।
বর্তমানে একটা বিপ্লবের মাধ্যমে বাংলাদেশ নতুন স্বাধীনতা অর্জন করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এখন নতুন যে সরকার গঠন হবে সে সরকার হতে হবে বিপ্লবী সরকার। বিডিআর বিদ্রোহের সঠিক তদন্ত হলে যারা আসামি হবেন তারাই আজ দুদিন ধরে নতুন সরকারের জায়গা পাওয়ার চেষ্টা করছেন। প্রকৃত যারা দেশপ্রেমিক, প্রকৃত যারা সাহসী তারাই আমাদের সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য হবে।
তিনি বলেন, এখন একটা চেষ্টা চলছে যেটা এই আমাদের তরুণ প্রজন্ম ছাত্ররা অর্জন করেছে সেটাকে ম্লান করার জন্য। সেজন্য আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। যখন কোনও বাহিনীতে কোনও একটা অবজেকটিভ দখল করা হয় তখন কয়েকটি ধাপ আছে। আমরা এখন আছি সেটার প্রথম ফেজে বা প্রথম স্টেজে।
কাউন্টার ক্যুর একটা হুমকি এসেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমাদের এখন সমন্বয় ও পুনর্গঠন করতে হবে। যদি সেটা করতে না পারি তাহলে এই হুমকি চলতে থাকবে। পাল্টা ক্যুর কোনোভাবেই হতে দেওয়া যাবে না। আমাদের অর্জনকে কোনোভাবে নষ্ট হতে দেওয়া যাবে না। কারণ এটাই আমাদের প্রকৃত স্বাধীনতা, যেটা গতকাল অর্জিত হয়েছে। যারা হত্যায় জড়িত তাদের বিচার করতে হবে, কোনও অবস্থায় ক্ষমতায় রাখা যাবে না, দ্রুত তাদেরকে চেয়ার থেকে সরাতে হবে।
অবসরপ্রাপ্ত লে. কর্নেল হাসিনুর রহমান বলেন, বিতর্কিত সেনা অফিসার, যেমন- জিয়াউল আহসান, আমার গুম থেকে শুরু করে অনেককে গুমে জড়িত, তারেক সিদ্দিকী, লে. জেনারেল মুজিবসহ ডিজি এনএসআই, ডিজি ডিজিএফআই, তারা দুজন প্রধান সহকারী, নাহিদ আকবরসহ সেই সেনা কর্মকর্তাদের চাকরিচ্যুত করে বিচারের আওতায় আনতে হবে।
এজন্য দ্রুত কমিশন গঠনে আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, বিডিআর বিদ্রোহ হত্যা থেকে শুরু করে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যা, এর আগে ছাত্র আন্দোলনে হত্যাযজ্ঞ, সর্বশেষ এই আন্দোলনে যারা শহীদ হয়েছেন- প্রত্যেক হত্যার হিসাব করতে হবে, তাদের পরিবারের পাশে দাঁড়াতে হবে।
রাষ্ট্রের কিছু সংস্কার অত্যন্ত প্রয়োজন উল্লেখ করে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. হাসান নাসির বলেন, রাজনৈতিক কিছু সংস্কার অত্যন্ত জরুরি। কারণ রাজনীতি তো জনগণের কল্যাণের জন্য। কোনও পারিবারিক রাজনীতি হবে না। এমন রাজনীতি করতে হবে যেটা পৈত্রিক না, বাপের না, ছেলের না, ভাইয়ের না। গত ১৬ বছরে আমাদের ধ্বংসকৃত প্রতিষ্ঠানগুলোকে আবার সাজিয়ে গুছিয়ে আধুনিক করতে হবে।
পুলিশ ও বিচারব্যবস্থাকে পুনর্গঠন করার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, পুলিশকে ও বিচারব্যবস্থাকে সংস্কার ও পুনর্গঠন করতে হবে। বিচারব্যবস্থা হচ্ছে জাতির মেরুদণ্ড। বর্তমান আপিল বিভাগ ইমিডিয়েটলি দরখাস্ত করতে হবে। পুলিশকে রিফর্ম করতে হবে৷ পুলিশে যত গলদ রয়েছে, যোগ্যতা সমস্যা আছে সেগুলো ঠিক করতে হবে।
শুধু ইন্ডিয়ান প্রোডাক্ট আউট নয়, টোটাল ইন্ডিয়া আউট প্রোগ্রামকে জোরদার করতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এজন্য একটি বিপ্লবী কমিশন গঠন করতে হবে। রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের অবমূল্যায়ন নয়। দেশের বাইরে থেকে দেশের পরিবর্তনে যারা অবদান রেখেছেন তাদের ভূমিকা অবশ্যই মূল্যায়ন করতে হবে।
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে প্রথম শহীদ আবু সাঈদকে শুধু বীর শ্রেষ্ঠ উপাধিতে খ্যাত করা নয়, একটা রিকগনিশন সিস্টেম চালু করতে হবে। প্রথম স্বাধীনতার নয় মাসে আমরা একটা বিকৃত স্বাধীনতা পেয়েছিলাম। কিন্তু এবার আমরা অল্প সময়ে একটা সত্যিকারের স্বাধীনতা পেয়েছি। আবু সাঈদসহ কোনও শহীদকে আমাদের ভুলে গেলে চলবে না।
সেনাবাহিনীকে বিভিন্ন সময়ে চাপে রাখার জন্য অসংখ্য কর্মকর্তাকে কোনও কারণ ছাড়াই বিনা বিচারে চাকরিচ্যুত করা আছে, যেটা কোনও সার্ভিসে নেই। এই সশস্ত্র বাহিনীকে রাহুমুক্ত করতে হবে। সুতরাং সশস্ত্র বাহিনীর কোনও অফিসারের শিকার হলে তার জন্য একটা বিচার পাবার জায়গা যেন তৈরি করা হয়। সশস্ত্র বাহিনীকে স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ দিতে হবে। রাজনৈতিক প্রভাব মুক্ত থেকে কাজ করার সুযোগ দিতে হবে। এটা সম্ভব যদি আইনটা শক্ত হয়, পুরনো আইন দিয়ে চলবে না। সুতরাং পুরাতন আইন সংস্কার করতে হবে।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
যুক্তরাষ্ট্র ও লন্ডনে ৩শ’ কোটি টাকা পাচারের অভিযোগে হাসিনা-জয়ের বিরুদ্ধে দুদকের অনুসন্ধান শুরু
রাজশাহী মহানগরীতে ঘন কুয়াশা
আবারও ভানুয়াতুতে দ্বীপপুঞ্জে ৬.২ মাত্রার ভূমিকম্প
হাজীগঞ্জে ভরাট মিঠানিয়া খালের মুখ, হুমকিতে ফসলি জমি
রাহাতের সুরের মুর্ছনায় বিমোহিত দর্শক, বাংলায় বললেন 'আমরা তোমাদের ভালোবাসি'
‘প্রশাসন ক্যাডার নিয়ে ষড়যন্ত্র চলছে’
যুক্তরাজ্যে ট্রাম্পের বিশেষ দূত হিসেবে মার্ক বার্নেট নিযুক্ত
ফাইনালে ভারতের কাছে বাংলাদেশের হার
ফ্রেন্ডলি ফায়ার দুর্ঘটনায় লোহিত সাগরে মার্কিন যুদ্ধবিমান ধ্বংস
ইরানে যাত্রীবাহী বাস খাদে পড়ে নিহত ১০
বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে ধনী নারী কে, জানেন?
বাংলাদেশি রোগী পেতে সীমান্ত পর্যন্ত মেট্রো চালু করবে ভারত
হাত ফসকে আইফোন পড়ে গেল মন্দিরের দানবাক্সে, ফেরত দিতে অস্বীকৃতি
কুয়াশায় ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে একাধিক দুর্ঘটনা: নিহত ১, আহত ১৫
ঢাকার বায়ুমানে উন্নতির কোনো লক্ষণ নেই, বিপজ্জনকের কাছাকাছি
উগ্রবাদী সন্ত্রাসী 'সাদ' পন্থীদের কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে সাতক্ষীরায় মানববন্ধন
বাংলাদেশ সীমান্তে অত্যাধুনিক ড্রোন মোতায়েন ভারতের
নরসিংদীতে দুর্বৃত্তের গুলিতে ছাত্রদলকর্মী নিহত
সিনেটে প্রার্থী হতে সরে দাঁড়ালেন লারা ট্রাম্প
আমাদেরকে আর স্বৈরাচার হতে দিয়েন না : পার্থ