চট্টগ্রামে কথিত জনপ্রতিনিধিদের ধরে এনে বিচারের দাবি
১৬ আগস্ট ২০২৪, ১২:২৮ এএম | আপডেট: ১৬ আগস্ট ২০২৪, ১২:২৮ এএম
ছাত্র-জনতার নজিরবিহীন গণঅভ‚্যত্থানে জালিম শেখ হাসিনা পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নেওয়ার পর একে একে পালিয়েছেন চট্টগ্রামের মন্ত্রী, মেয়র এমপি, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানসহ কথিত জনপ্রতিনিধিরা। পৌর মেয়র থেকে শুরু করে জেলা পরিষদের সদস্য, ইউপি চেয়ারম্যান-মেম্বার কেউই এখন প্রকাশ্যে নেই। যাদের দাপটে বিগত দেড় দশক বিরোধী দলের নেতাকমৃীসহ সাধারণ মানুষ ছিল অসহায়। তারাই এখন গর্তে ঢুকে গেছেন।
নির্বাচনের নামে প্রহসনের মাধ্যমে তারা জনপ্রতিনিধি বনে যান। দেশের নির্বাচনী ব্যবস্থাকে পুরোপুরি ধ্বংস করে দেওয়া হয়। বিনা ভোটে নির্বাচিত এসব জনপ্রতিনিধিদের অনেকের বিরুদ্ধেই আছে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের নেতাকর্মীদের নির্বিচারে খুন, দখলবাজি, বিদেশে অর্থপাচারসহ নানা অভিযোগ। আর তাই ইতিহাসের নিকৃষ্টতম স্বৈরাচার শেখ হাসিনার দোসর এসব লুটেরাদের ধরে এনে বিচারের মুখোমুখি করার দাবি উঠেছে সর্বত্রই।
শেখ হাসিনার পতনের পর বিজয় উল্লাসে ফেটে পড়া মানুষ এখনও রাস্তায়। রাজপথে আছে বিএনপি, জামায়াত, ইসলামি আন্দোলনসহ সব রাজনৈতিক দল। আছেন বিপ্লবের কারিগর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরাও। আধিপত্যবাদি ভারতের প্রত্যক্ষ মদদে প্রতিবিপ্লবের আশঙ্কায় সর্বস্তুরের মানুষ এখন রাজপথে। চলছে সভা, সমাবেশ, বিক্ষোভ-প্রতিবাদ। এসব কর্মসূচি থেকে খুনি হাসিনা এবং চট্টগ্রাম অঞ্চলে তার দোসরদেরও বিচারের দাবি উচ্চারিত হচ্ছে।
শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদী শাসনামলে মন্ত্রী, এমপি, মেয়র, চেয়ারম্যান-মেম্বার হয়ে যারা লুটপাট আর ত্রাসের রাজত্ব কায়েক করেছিলেন তাদের বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠেছে সাধারণ মানুষ। এসব গণদুশমনের বিরুদ্ধে এলাকায় এলাকায় গড়ে উঠেছে সর্বাত্মক প্রতিরোধ। তাদের দেখা মাত্র শায়েস্তা করার প্রস্তুতিও নিয়ে রাখা হয়েছে।
জানা গেছে, হাসিনার পতন নিশ্চিত বুঝতে পেরে আগেভাগেই পালিয়েছেন সাবেক ভ‚মিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ। তার পথ ধরেছেন অর্থপ্রতিমন্ত্রী ওয়াশিকা খান। পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদকে পালানোর পথে ঢাকায় বিমানবন্দরে আটক করার খবর আসে আগেই। তার বিরুদ্ধে ফুঁসে আছেন তার নির্বাচনী এলাকা রাঙ্গুনিয়াসহ চট্টগ্রামের সাধারণ মানুষ। শেখ হাসিনার জালিম শাসনের সময় সবচেয়ে বেশি অর্থ সম্পদের মালিক হয়েছেন বিতর্কিত এই হাছান মাহমুদ ও তার পরিবারের সদস্যরা। রাউজানের স্বঘোষিত রাজা এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী জুনুও পাতালে চলে গেছেন।
পতিত সরকারের শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান নওফেলও গর্তে ঢুকে গেছেন। দেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যেতে ভ‚মিকা পালনকারী স্বঘোতি ইসকন সদস্য এই গণদুশমনকেও খুঁজছে ছাত্র-জনতা। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন দমাতে তার নির্দেশেই যুবলীগ ও ছাত্রলীগের সশস্ত্র ক্যাডারেরা প্রকাশ্যে অস্ত্রহাতে মাঠে নামে। তারা নির্বিচারে গুলি করে শিক্ষার্থীদের উপর। তাদের গুলিতেই নগরীর মুরাদপুর ও বহদ্দারহাটে দুই দিনের সংঘাতে ছয়জনের মৃত্যু হয়। নওফেলের অনুসারি যুবলীগের ক্যাডার হেলাল আকবর বাবর, নুরুল আজিম রনিসহ ক্যাডারেরা অস্ত্রহাতে মাঠে নামে।
এসব অস্ত্রধারীদের ছবিসহ দেশের প্রায় সব কটি মিডিয়ায় সংবাদ প্রকাশিত ও প্রচারিত হয়। তাদের কাউকেই এখনও ধরা যায়নি। ছাত্র-জনতা এসব খুনিদের পাকড়াও করার দাবি জানিয়ে আসছে। জানা গেছে, চট্টগ্রামের মুরাদপুর ও বহদ্দারহাটে ছয়জনসহ ১২ জন নিহত হয়েছে। প্রতিটি ঘটনায় হত্যা মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। এসব মামলায় নওফেল ও তার অনুসারীদের আসামি করা হবে বলে জানা গেছে।
হাসিনার পতনের পর থেকে লাপাত্তা সিটি মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরী ও কাউন্সিলরেরা। কাউন্সিলরদের অনেকের বিরুদ্ধে রয়েছে দখল, অস্ত্রবাজি, মাদক ব্যবসাসহ নানা অভিযোগ। জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এটিএম পেয়ারুল ইসলামসহ পরিষদের সদস্যরাও পলাতক। পলাতক আছেন সিডিএ চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইউনুচসহ বোর্ডের বেশির ভাগ সদস্য। সাবেক এমপি থেকে শুরু করে জেলা, উপজেলা, থানা, ইউনিয়নের নেতারাও হাওয়া। পালিয়ে গেছেন ইউপি চেয়ারম্যান থেকে শুরু করে সদস্যরাও।
এদিকে আত্মগোপনে থাকা স্থানীয় সরকার পরিষদের অনেকে বিএনপি-জামায়াতের নেতাদের সাথে যোগাযোগ করে প্রকাশ্যে আসার চেষ্টা করছেন বলেও খবর পাওয়া গেছে। বিএনপির কতিপয় জনবিচ্ছিন্ন নেতা তাদের আশ্রয় দিচ্ছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। চট্টগ্রামে ফটিকছড়ি উপজেলা চেয়ারম্যান নাজিম উদ্দিন মুহুরি ও পৌরসভার মেয়র মোহাম্মদ ইসমাইল পাতাল জগত থেকে বেরিয়ে আসতে বিএনপির নেতাদের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে চলছেন বলেও খবর পাওয়া গেছে। প্রশাসনের কিছু কর্মকর্তাও তাদের রক্ষায় তলে তলে কাজ করছে বলে জানা গেছে। তবে ফটিকছড়ির উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী গতকাল বিকেলে ইনকিলাবকে বলেন, উপজেলা চেয়ারম্যান এবং পৌর মেয়র অনুপস্থিত রয়েছেন। রোববার পর্যন্ত তারা কর্মস্থলে ফিরে না এলে স্থানীয় সরকার বিভাগের নির্দেশনা অনুযায়ী জনসেবা এবং প্রশাসনিক কার্যক্রম তিনি নিজেই দেখভাল করবেন বলে জানান ইউএনও।
জনপ্রতিনিধিরা পালিয়ে যাওয়ায় সেবাপ্রার্থী সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ বাড়ছে। এই দুর্ভোগ লাঘবে গতকাল স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে এসব কার্যক্রম চালিয়ে নিতে ইউএনওদের দায়িত্ব দিয়ে আদেশ জারি করা হয়।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
কম্বল নিয়ে রাতে অসহায় শীতার্তদের পাশে ইউএনও
গফরগাঁওয়ে রাতে সড়কের ১জনের মৃত্যু আহত ২
কুমিল্লায় শিক্ষার্থীদের ওপর হামলাকারী ও হত্যা মামলার প্রধান আসামি আটক
কালীগঞ্জে মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা দিলো বিএনপি
আলবেনিয়ায় ভুয়া ভিসার নামে ২৫ লাখ টাকা নিয়ে উধাও
ধামরাই পৌরসভার সাবেক মেয়র গোলাম কবিরের ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর
ঢাকা মহানগর মিশুক চালক ও শ্রমিক ইউনিয়নের নির্বাচনী সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত
খুলনায় সন্ত্রাসীদের গুলিতে যুবক আহত
কুমিল্লা জজকোর্টের ৩ পিপি-এপিপিকে সংবর্ধনা
চুয়াডাঙ্গার রেলস্টেশন এলাকা থেকে ১৪টি অবৈধ স্বর্ণেরবার উদ্ধার, আটক ৩
জাহাজে ৭ খুনের ঘটনার দ্রুত সুরাহা হবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
‘ছাত্র-জনতা সংস্কারের মাধ্যমে মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় জীবন দিয়েছে’
পঞ্চগড়ে ঐতিহ্যবাহী গ্রামীণ খেলা অনুষ্ঠিত
সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বন্ধনকে মজবুত করতে হবে: পীর সাহেব চরমোনাই
‘ট্রানজিটের নামে দিল্লিকে দেয়া করিডর জনগণ মেনে নেয়নি’
বদলির ৩ মাস পরই পূর্বের কর্মস্থলে ফিরলেন শরীয়তপুরে সদর হাসপাতালের ক্যাশিয়ার বজলুর রশিদ
বগুড়ায় যথাযথ মর্যাদায় বড়দিন পালন
শ্রীপুরে ভুয়া মেজর আটক
সাবেক দুদক কমিশনার জহরুল হকের পাসপোর্ট বাতিল, দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের প্রশংসা করলেন রাহাত, জানালেন নিজ অনুভূতি