রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে তারেক রহমানকে সাজা দেওয়া হয়: ব্যারিস্টার কায়সার
০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৪:৪৯ পিএম | আপডেট: ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৪:৪৯ পিএম
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির আইনবিষয়ক সম্পাদক ও জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের মহাসচিব ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেছেন, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার ঘটনায় দায়ের করা মামলায় প্রকৃত আসামিকে বাদ দিয়ে রাজনৈতিক হীন উদ্দেশ্যে আসামি বানিয়ে বিচার করায় মামলার সব আসামিকে খালাস দিয়েছেন হাইকোর্ট।
রোববার (১ ডিসেম্বর) ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার ঘটনায় হত্যা ও বিস্ফোরক দ্রব্য আইনের মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর এবং যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ সব আসামিকে খালাস দিয়ে হাইকোর্টের রায় ঘোষণার পর এক প্রতিক্রিয়াই এমন মন্তব্য করেন তিনি।
তিনি বলেন, রায় ঘোষণার পর বিএনপির আইনজীবীরা তাদের প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে তারেক রহমানকে সাজা দেওয়া হয়েছিল।
এ মামলায় বিএনপির অন্যতম আইনজীবী কায়সার কামাল বলেন, এই মামলায় মোট চারটি চার্জশিট দেওয়া হয়েছে। প্রথম তিনটি চার্জশিটে তারেক রহমানের নাম ছিল না। শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর চতুর্থ চাজশিটে তারেক রহমানের নাম অন্তর্ভুক্ত করে। তার রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিকে ঘায়েল করার জন্য রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে তারেক রহমানসহ বিচএনপির অন্যান্য নেতাদের আসামি করে দণ্ড দিয়েছেন।
তিনি বলেন, আজ প্রমাণিত হয়েছে এই চার্জশিট আইন বহির্ভূত ছিল। তাই এই চার্জশিটে যাদের নাম অন্তর্ভুক্ত ছিল তারা এই মামলা থেকে খালাস পেয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, যারা এ মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত ছিলেন এবং আপিল করেছেন বা আপিল করেননি সবাইকে এই মামলা থেকে খালাস দেওয়া হয়েছে। এভাবে তারেক রহমান ন্যায়বিচার পেয়েছেন। আজ প্রমাণিত হয়েছে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে তারেক রহমানকে যে মামলায় সাজা দেওয়া হয়েছিল, সেই মামলায় আইনগতভাবে মোকাবিলার মাধ্যমে তিনি আজ বেকসুর খালাস পেয়েছেন।
বিএনপির সিনিয়র আইনীজীবীদের একজন জয়নুল আবেদীন বলেন, ২১ অগাস্টে বিরোধী দল আওয়ামী লীগকে জনসভার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল পাশের একটি ময়দানে। কিন্তু তারা সরকারকে না জানিয়ে স্থান পরিবর্তন করে রাস্তার মধ্যে সমাবেশ করেন। এটা ছিল উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং তৎকালীন সরকারকে বেকায়দায় ফেলার জন্য তিনি (শেখ হাসিনা) এই কাজটি করেছেন। এই গ্রেনেড হামলা রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত ছিল।
তিনি বলেন, আদালত সব সাক্ষী-প্রমাণ বিশ্লেষণ করে দেখেছেন যে চার্জশিটের আলোকে তাদের দণ্ড দেওয়া হয়েছে, তা টিকতে পারে না। কেননা সরাসরি প্রমাণ ছাড়া কাউকে মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন দেওয়া যায় না।
২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় তারেক রহমান ও বাবরসহ সব আসামি খালাস দিয়ে রায় ঘোষণা করেছেন হাইকোর্ট। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় সম্পূরক অভিযোগপত্রের ভিত্তিতে বিচারিক আদালতের বিচার অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করে এই রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট। বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে ডেথ রেফারেন্স নাকচ করে এবং আসামিদের আপিল মঞ্জুর করে এই রায় দেওয়া হয়। ফলে এই মামলায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরসহ দণ্ডিত সব আসামি খালাস পেলেন।
হাইকোর্টের বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি সৈয়দ এনায়েত হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ রায় দেন।
এর আগে হাইকোর্টের একই বেঞ্চ ২১ নভেম্বর আসামিদের ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের ওপর শুনানি গ্রহণ শেষ করেন। সেদিন আদালত মামলা দুটি রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ (সিএভি) রাখেন। আজ রায় ঘোষণা করা হলো।
রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় করা মামলায় (হত্যা ও বিস্ফোরক মামলা) ২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ রায় দেন। রায়ে সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর ও সাবেক শিক্ষা উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুসহ ১৯ জনের মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ ১৯ জনকে দেওয়া হয় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। এ ছাড়া ১১ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড দেন বিচারিক আদালত।
রায়ের পর ২০১৮ সালে বিচারিক আদালতের রায়সহ মামলা দুটির নথিপত্র হাইকোর্টে এসে পৌঁছায়। এটি সংশ্লিষ্ট শাখায় ডেথ রেফারেন্স মামলা হিসেবে নথিভুক্ত হয়। আইনজীবীরা বলেন, কোনো ফৌজদারি মামলায় বিচারিক আদালতের রায়ে কোনো আসামির মৃত্যুদণ্ড হলে তা কার্যকরে হাইকোর্টের অনুমোদন লাগে। এটি ডেথ রেফারেন্স মামলা হিসেবে পরিচিত। পাশাপাশি দণ্ডাদেশের রায়ের বিরুদ্ধে আসামিদের জেল আপিল, নিয়মিত আপিল ও বিবিধ আবেদন করার সুযোগ রয়েছে। ডেথ রেফারেন্স এবং এসব আপিল ও আবেদনের ওপর সাধারণত একসঙ্গে শুনানি হয়ে থাকে।
২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার ডেথ রেফারেন্স, আসামিদের আপিল ও জেল আপিলের ওপর হাইকোর্টে গত ৩১ অক্টোবর শুনানি শুরু হয়। তারই ধারাবাহিকতায় আজ রায় ঘোষণা করা হলো।
২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার ঘটনায় মতিঝিল থানায় হত্যা ও বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে দুটি মামলা হয়। ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা ও হত্যাযজ্ঞের ঘটনার তদন্তকে ভিন্ন খাতে নিতে তৎকালীন বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার নানা তৎপরতা চালায় বলে অভিযোগ ওঠে। ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার এ-সংক্রান্ত মামলা দুটির (হত্যা ও বিস্ফোরক) নতুনভাবে তদন্ত শুরু করে।
২০০৮ সালে ২২ জনকে আসামি করে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। এতে বলা হয়, শেখ হাসিনাকে হত্যা করে আওয়ামী লীগকে নেতৃত্বশূন্য করতে ওই হামলা চালিয়েছিল জঙ্গিরা। পরে আওয়ামী লীগ সরকার আমলে মামলার অধিকতর তদন্ত হয়। এরপর তারেক রহমানসহ ৩০ জনকে আসামি করে সম্পূরক অভিযোগপত্র দেওয়া হয়। ওই অভিযোগের আলোকে এই রায় ঘোষণা করা হয়েছিল বিচারিক আদালতে।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
জুলাই বিপ্লবে আহত ১৪ জনকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানো হচ্ছে : পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়
আইএমএফসহ আন্তর্জাতিক সংস্থার শীর্ষ পদে এখনো ভারতীয়রা
ভারতে নির্যাতনের ভিডিও বাংলাদেশের সা¤প্রতিক ঘটনা হিসেবে প্রচার
দাদাবাড়ি বেড়াতে এসে খুন হলো শিশু সাফওয়ান, আটক ২
নরসিংদীতে ভ্রাম্যমাণ আদালতকে লক্ষ্য করে বালুদস্যুদের গুলিবর্ষণ
নরসিংদীতে রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির মানববন্ধন
রাঙামাটিতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ
আখাউড়ায় মর্টার সেল উদ্ধার
রাজবাড়ীতে আ.লীগ দুই নেতা কারাগারে
কমলগঞ্জে ৮২ শতক সরকারি খাস জমি উদ্ধার
প্রিমিয়ার ভার্সিটি ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান হলেন চসিক মেয়র
কুষ্টিয়ায় প্লাইউড বোর্ড কারখানায় আগুন
বিএনপি নেতা কায়কোবাদের দারুল উলূম হাটহাজারীসহ বিভিন্ন মাদরাসা পরিদর্শন
মাদারীপুরে পদ্মা-আড়িয়াল খাঁ নদীতে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন অব্যাহত
গফরগাঁও সাবেক এমপি বাবেল গোলন্দাজ দম্পতির বিরুদ্ধে দুদকের ২ মামলা
ময়মনসিংহে পুলিশ রেঞ্জ কমান্ড অ্যান্ড কন্ট্রোল সেন্টারের উদ্বোধন
নওফেল পরিবারের ২৫টি ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ
নিজ বাড়িতে ক্ষতিগ্রস্ত বন্ধুদের থাকার ব্যবস্থা করেছেন অ্যাঞ্জেলিনা জোলি
যুবদল নেতার বিরুদ্ধে মিথ্যা অপপ্রচারের অভিযোগ
ট্রাভেল ব্যান্ড হ্যালির ধুমকেতুর দুই গান