পাসপোর্ট অধিদপ্তর পলাতক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর অনুগতদের নিয়ন্ত্রণে
০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৭:১৬ পিএম | আপডেট: ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৭:১৬ পিএম
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ফ্যাসিস্ট আওয়ামীলীগ সরকার পতনের তিন মাস হলেও ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরে গুরুত্বপূর্ণ পদে এখনও বহাল পলাতক সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালের প্রেতাত্মারা। সাবেক মন্ত্রী-এমপিদের ঘনিষ্ট আত্মীয় এবং নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের ক্যাডার রয়েছেন পাসপোর্ট অধিদপ্তরের অনেক গুরুত্বপূর্ণ পদে। চরম দুর্নীতিবাজ, অপেশাদার ও অযোগ্য কর্মকর্তারা নানা অপরাধ করেও বছরের পর বছর অনৈতিকভাবে বড় পদে থেকে পেশাদার ও সৎ কর্মকর্তাদের হয়রানি করছেন খোদ সংস্থাটির ডিজির ছত্রছায়ায়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঠিক মনিটরিং না থাকায় ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরে একছত্র আধিপত্য বিস্তার করেছেন শীর্ষ এক কর্মকর্তা। ফলে যে কোন সময় রাষ্ট্রের এই গুরুত্বপূর্ণ সংস্থাটিতে বিশৃংখলা দেখা দিতে পারে বলে আশংকা করছেন গোয়েন্দা কর্মকর্তারা। শুধু তাই নয়, সামান্য ভূল বা শীর্ষ কর্মকর্তার সন্তুষ্টি অর্জন করে চলতে না পারলে ওই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা দাযের করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে ব্যবস্থা গ্রহনের মতো অন্যায় কাজও হচ্ছে পাসপোর্ট অধিদপ্তরে। এতে করে অনেকটাই বিরক্ত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের পাসপোর্ট শাখার দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা। আগারগাঁও প্রধান কার্যালয় স্বৈরাচার হাসিনার সরকারের সময়ে যে প্রশাসনিক সেটআপ ছিল সেই সেটআপ দিয়েই এখন পর্যন্ত অধিদপ্তর চলছে। মহাপরিচালক আওয়ামীমনা অফিসারদের নিয়ে অফিস পরিচালনার কারণে সাধারণ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে চরম ক্ষোভ এবং হতাশা বিরাজ করছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের মত গুরুত্বপূর্ণ একটি সরকারী প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের মধ্যে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের দীর্ঘ তিন মাস পরেও পতিত আওয়ামীলীগের সাবেক মন্ত্রী-এমপিদের ঘনিষ্ট আত্মীয় এবং নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের সাবেক ক্যাডার গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকে নানা অনিয়মের সাথে জড়িয়ে পড়ার বিষয়টি দ্রুত তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহন করতে হবে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো একটি গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সাবেক স্পিকার শিরিন শারমিন চৌধুরীকে বর্তমান সরকারের অনুমতি না নিয়েই পাসপোট প্রদান করেন আওয়ামী ক্যাডার হিসেবে পরিচিত ডিডি ইসমাইল হোসেন। এর পরেও তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়নি। পাসপোর্ট অধিদপ্তরের পরিচালক প্রশাসন শিহাব উদ্দিনের বিরুদ্ধে দুনীতিসহ নানা অভিযোগ দীর্ঘ দিনের। আ’লীগ পরিবারের সদস্য হিসেবে পরিচিত এ কর্মকর্তা গত ৯ বছর ধরে একই পদে থেকে সংস্থার প্রধানকে ম্যানেজ করে ব্যাপক দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়লেও তার বিরুদ্ধে তদন্তের কোন উদ্যোগ নেই।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো একটি গোয়েন্দা সংস্থার গোপন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পাসপোর্ট অফিস এখন পরিচালিত হচ্ছে আওয়ামীপন্থী ও পলাতক সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামানের ঘনিষ্ট শীর্ষ কর্মকর্তার নেতৃত্বে ৪/৫ জনের সিন্ডিকেটের মাধ্যমে। যার মূল হোতা অতিরিক্ত মহাপরিচালক সেলিনা বানু ও তার একান্ত ঘনিষ্ঠ সহচর পরিচালক নাদিরা আক্তার। সেলিনা বানুর সাথে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতা মির্জা আজমসহ অনেকের সাথে অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ সখ্যতা ছিল। এডিজি সেলিনা বানু পাসপোর্ট অধিদপ্তরের প্রশাসনিক শাখার কাজের সাথে সংশ্লিষ্ট না হয়েও তিনি যাবতীয় প্রশাসনিক কাজ নিয়ন্ত্রণ করছেন। অতিরিক্ত মহাপরিচালক আবু আসাদ স্বৈরাচার হাসিনা সরকারের আমলে আওয়ামী বিদ্বেষী মতাদর্শের কারণে ২০২১ সালে চাকরির থেকে বরখাস্ত হয়েছিলেন এবং ৫ আগস্ট পরবর্তী অন্তবর্তীকালিন সরকার তাকে স্ব-সম্মানে চাকরিতে আবার পুন:বহাল করেন। মহাপরিচালক প্রশাসনিক কাজে এই অভিজ্ঞ দক্ষ এবং আওয়ামী বিদ্বেষী মতাদর্শে বিশ্বাসী অতিরিক্ত মহাপরিচালক আবু আসাদকে কোন কাজে বিন্দুমাত্র সুযোগ দিচ্ছেন না এবং কোন ভাবে তাকে মূল্যায়নও করছেন না বলে অভিযোগ রয়েছে। অধিদপ্তরের গুরুত্বপূর্ণ কোন বিষয়ে সিদ্ধান্ত, বদলি, পদোন্নতি বা অন্য যেকোনো বিষয়ে অতিরিক্ত মহাপরিচালক সেলিনা বানু এবং পরিচালক নাদিরা আক্তার কোন কোন ক্ষেত্রে পরিচালক শিহাব উদ্দিন খানকে নিয়েই দরজা বন্ধ করে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। বিগত সরকারের সময় সীমাহীন দুর্নীতির কারণে নাদিরা আক্তারের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন মামলা দায়ের করেছিলেন। ওই মামলা চলমান থাকার মন্ত্রণালয় তখন তাকে পদোন্নতি দেয়নি। গত ৫ আগস্ট পরবর্তী আন্তবর্তীকালিন সরকার কর্তৃক বিভিন্ন দপ্তরে বঞ্চিত কর্মকর্তাদের গণপদোন্নতির তালিকায় দূনীতিবাজ এই কর্মকর্তা নিজের নাম লিখিয়ে কৌশলে প্রমোশন বাগিয়ে নিয়েছেন এবং এখন তিনি বিএনপি মতালম্বি বলে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টায় সদা ব্যস্ত।
গোয়েন্দা সংস্থার গোপন প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, আওয়ামীলীগপন্থী কর্মকর্তাদের পোস্টিং দিয়ে তাদের মাধ্যমে স্বৈরাচার হাসিনা সরকারের মন্ত্রী, এমপি, ব্যবসায়ী, রাজনৈতিক কর্মীসহ অন্যান্য দোসরদের বিদেশে পলায়নের জন্য পাসপোর্ট প্রদানসহ যাবতীয় সহযোগিতা করা হচ্ছে ওই সিন্ডিকেটের মাধ্যমে। সাভারে ভ্যানে লাশ পোড়ানোর অন্যতম নির্দেশ দাতা পুলিশ কর্মকর্তা আব্দুল্লাহিল কাফি ও জাতীয় সংসদের সাবেক স্পীকার শিরিন শারমিন চৌধুরীর পাসপোর্ট দেন ওই সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সিেিন্ডকেটের কর্মকর্তারা। যারা এখনও সংস্থার অতিগুরুপূর্ণ ও স্পর্শকাতর পদে রয়েছেন। আওয়ামীপন্থী উপ-পরিচালক মো: ইসমাইল হোসেনকে ঢাকা বিভাগীয় পাসপোর্ট অফিসে নিয়ম বহির্ভূতভাবে পরিচালকের পদে পোস্টিং দিয়ে তার মাধ্যমে এই কাজ করিয়েছেন। এছাড়াও বগুড়া আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে অফিস প্রধানের পদটি উপ-পরিচালকের জন্য মঞ্জুরীকৃত হওয়া সত্ত্বেও কোন নিয়ম কানুনের তোয়াক্কা না করে মো: আনিসুর রহমান নামে একজন সহকারি পরিচালককে পোস্টিং দেয়া হয়েছে, যিনি ছাত্রজীবনে ছাত্রলীগের ক্যাডার হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ে অত্যন্ত সুপরিচিত ছিলেন। তেমনি গাজীপুর আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসটি উপ-পরিচালকের পদ হওয়া সত্ত্বেও নুপুর পারভিন নাসরিন নামে একজন সরকারি পরিচালককে সেখানে পোস্টিং দেওা হয়েছে। এরকম আঞ্চলিক পাসপোর্ট আফতাব নগরে তাজ বিল্লাহ, আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস কক্সবাজারে মোবারক হোসেন, আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস নোয়াখালীতে নাহিদ নেওয়াজসহ বেশ কয়েকটি অফিসে পলাতক সাবেক স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামালের ক্যাডার জুনিয়র অফিসারদের প্রাইস পোস্টিং দিয়ে রাখা হয়েছে।
দক্ষ এবং যোগ্য উপ-পরিচালক যারা আওয়ামী বিদ্বেষী তাদেরকে বিগত হাসিনা স্বৈরশাসকের সময়ে সহকারি পরিচালকের অফিসে ডাম্পিং পোস্টিং দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে গোপালগঞ্জ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে কর্মরত জেষ্ঠ্য উপ-পরিচালক নুরুল হুদা। অথচ এই পদটি সহকারী পরিচালক পদমর্যাদা কর্মকর্তাদের জন্য। মাগুরা আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে কর্মরত উপ-পরিচালক আফজাল হোসেন। অথচ এই পদটি সহকারী পরিচালক পদমর্যাদের কর্মকর্তাদের জন্য নির্ধারিত। এরকম করে মুন্সিগঞ্জে কামাল হোসেন খন্দকার, সাতক্ষীরায় মেহেদী হাসানসহ আরো কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ জেলা পাসপোর্ট অফিসে এবং উত্তরা পার্সোনালাইজেশন কমপ্লেক্সে ১০ থেকে ১২ জন সিনিয়র কর্মকর্তাকে ওএসডির মত করে রাখা হয়েছে। পলাতক সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালের প্রেতাত্মাদের বিরুদ্ধে এখনই ব্যবস্থা গ্রহন করা না হলে অন্তবর্তীকালিন সরকারের স্বপ্ন বাস্তবায়নে বড় ধরনের বাধার মুখে পড়তে হবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
জুলাই বিপ্লবে আহত ১৪ জনকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানো হচ্ছে : পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়
আইএমএফসহ আন্তর্জাতিক সংস্থার শীর্ষ পদে এখনো ভারতীয়রা
ভারতে নির্যাতনের ভিডিও বাংলাদেশের সা¤প্রতিক ঘটনা হিসেবে প্রচার
দাদাবাড়ি বেড়াতে এসে খুন হলো শিশু সাফওয়ান, আটক ২
নরসিংদীতে ভ্রাম্যমাণ আদালতকে লক্ষ্য করে বালুদস্যুদের গুলিবর্ষণ
নরসিংদীতে রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির মানববন্ধন
রাঙামাটিতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ
আখাউড়ায় মর্টার সেল উদ্ধার
রাজবাড়ীতে আ.লীগ দুই নেতা কারাগারে
কমলগঞ্জে ৮২ শতক সরকারি খাস জমি উদ্ধার
প্রিমিয়ার ভার্সিটি ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান হলেন চসিক মেয়র
কুষ্টিয়ায় প্লাইউড বোর্ড কারখানায় আগুন
বিএনপি নেতা কায়কোবাদের দারুল উলূম হাটহাজারীসহ বিভিন্ন মাদরাসা পরিদর্শন
মাদারীপুরে পদ্মা-আড়িয়াল খাঁ নদীতে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন অব্যাহত
গফরগাঁও সাবেক এমপি বাবেল গোলন্দাজ দম্পতির বিরুদ্ধে দুদকের ২ মামলা
ময়মনসিংহে পুলিশ রেঞ্জ কমান্ড অ্যান্ড কন্ট্রোল সেন্টারের উদ্বোধন
নওফেল পরিবারের ২৫টি ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ
নিজ বাড়িতে ক্ষতিগ্রস্ত বন্ধুদের থাকার ব্যবস্থা করেছেন অ্যাঞ্জেলিনা জোলি
যুবদল নেতার বিরুদ্ধে মিথ্যা অপপ্রচারের অভিযোগ
ট্রাভেল ব্যান্ড হ্যালির ধুমকেতুর দুই গান