বিডিআর হত্যাকাণ্ডসহ গুম-খুনে জড়িতদের বিচার দাবি সাবেক সামরিক কর্মকর্তাদের

Daily Inqilab স্টাফ রিপোর্টার

১০ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৬:১৬ পিএম | আপডেট: ১০ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৬:২২ পিএম

বিডিআর বিদ্রোহের নামে ৫৭ সেনা কর্মকর্তাকে হত্যা, মেজর সিনহা হত্যাসহ বিগত সরকারের সময়ে বিভিন্ন গুম-খুন ও আয়নাঘরের সঙ্গে যারা জড়িত সকলকে গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন সাবেক সামরিক কর্মকর্তারা। সেই সঙ্গে বিভিন্ন সময়ে সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর চাকরিচ্যুত প্রায় এক হাজার সদস্যকে যাদের চাকরির বয়স রয়েছে, তাদেরকে পুনর্বহালের দাবিও করেন তারা। গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক সংবাদ সম্মেলনে অবসরপ্রাপ্ত সামরিক অফিসারদের সংগঠন ‘জাস্টিস ফর কমরেডস’-এর পক্ষ থেকে এসব দাবি জানানো হয়।

 


এসময় লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন মেজর (অব.) শাকিল নেওয়াজ। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন লে. কর্নেল (অব.) ইমরান কাজল, লে.কর্নেল (অব.) সাইফুল আলম পাইকদার, লে.কর্নেল (অব.) মেহেদী হাসান, লে. কর্নেল (অব.) সাহানুর রহমান, কর্নেল সামস ও সেনা সদস্য নাইমুল ইসলাম প্রমুখ।

 


লিখিত বক্তব্যে শাকিল নেওয়াজ বলেন, ২০০৯ সালে বিডিআর হত্যাকা-ে নিহত ৫৭ জন সেনা অফিসার হত্যার এখনো পূর্ণাঙ্গ তদন্ত হয়নি। এমনকি প্রকৃত দোষীদেরও বিচার হয়নি। ঢাকা দক্ষিণ সিটির সাবেক মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস মেধাবী অফিসারদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করেন। পরে তাদেরকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে এবং তাদের অন্যায়ভাবে জেল দেওয়া হয়েছে। আমরা এই ঘটনার পুনঃতদন্ত দাবি করে জড়িতদের বিচারের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি। আলোচিত আয়নাঘরের মাস্টারমাইন্ড ছিলেন লে. জেনারেল মামুন খালেদ, লে. জেনারেল সাইফ, লে. জেনারেল আবেদিন, লে. জেনারেল মুজিব, মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসান, মেজর জেনারেল হামিদ। তাদের অতিসত্বর আইনের আওতায় আনতে হবে। ভবিষ্যতে যাতে বাংলার মাটিতে এরকম আয়নাঘর সৃষ্টি না হয়, সে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি করছি।

 


পুলিশের সাবেক আইজি বেনজীর আহমেদ এবং সাবেক ডিবি প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদসহ বেশ কয়েকজন উচ্চপদস্থ ব্যক্তির বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে গুম-খুন, হত্যার মতো গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত তাদের বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। অতিসত্বর তাদেরকে গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় আনা হোক। সাবেক সেনা অফিসার সিনহাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। কিন্তু সেই ওসি প্রদীপের স্ত্রীকে বেকসুর খালাস দেয়া হয়েছে। প্রদীপের মতো একজন হত্যাকারীর স্ত্রীকে আপনারা এভাবে ছেড়ে দেবেন! কারা এর পেছনে বিহাইন্ড দ্যা সিন রয়েছে তাদের খুঁজে বের করে আমরা বিচারের দাবি জানাচ্ছি।

 


এসময় তিনি বলেন, বিগত সরকারের সময় প্রায় এক হাজার সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর অফিসার এবং সদস্যকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। তারা বাচ্চাদের জন্য দুধ কিনতে পারে না। পরিবারে অশাস্তি হয়েছে। এসব চাকরিচ্যুত সামরিক অফিসার ও সদস্যদের যাদের বয়স রয়েছে তাদেরকে চাকরি পুনর্বহালের দাবি জানাচ্ছি। এসময় সংগঠনটির নেতারা দাবি করেন, বাংলাদেশ পুলিশের অনেক অফিসার বিগত সময়ে যারা বঞ্চিত ছিল তাদেরকে প্রমোশন দেয়া হচ্ছে। কিন্তু সামরিক বাহিনীর বঞ্চিত অফিসারদের যাদের জোর করে অবসর ও চাকরিচ্যুত করা হয়েছিল, তাদের ব্যাপারে এখনো সরকার কোনো উদ্যোগ নেয়নি। তেমন কোনো উদ্যোগ দেখাও যাচ্ছে না।

 


সংগঠনটির অন্যতম নেতা শাকিল নেওয়াজ বলেন, আমরা তো আন্দোলন করতে পারি না। এমন প্রশিক্ষণ আমাদের দেয়া হয়নি। এভাবে যদি একটি শ্রেণিকে প্রমোশন দেয়া হয় এবং আরেকটি শ্রেণিকে বঞ্চিত করা হয়, তবে সমাজে বৈষম্য সৃষ্টি হবে। একটি শ্রেণি ওপরে থাকবে, আরেকটি শ্রেণি নিচে থাকবে। যদি সুবিধা দেন সবাইকে দেন, না দিলে কাউকে দেবেন না। আমরা অতিসত্বর সরকারকে এবিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য দাবি জানাচ্ছি।

 


অন্যায়ভাবে ছয় সামরিক সদস্যকে তুলে নিয়ে হয়রানির বিচার দাবি: গত ৯ নভেম্বর দুইজন নৌ অফিসার ও চারজন সেনা সদস্যকে ট্রাস্ট শর্মা নামে খিলক্ষেতের একটি রেস্টেরেন্ট থেকে ডিজিএফআই পরিচয়ে তুলে নেয়া হয়। পরে তাদেরকে ২৪ ঘণ্টা থানায় আটকে রাখা হয়। যদিও জাস্টিস ফর কমরেডস ও সাবেক সামরিক কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপে তাদেরকে ছেড়ে দেয়া হয়। কিন্তু কেন তাদেরকে তুলে নেয়া হয়েছিল, তার কোনো ব্যাখ্যা এখনো দেয়া হয়নি। এ বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে শাকিল নেওয়াজ বলেন, ছয় সামরিক সদস্যকে অনাকাঙ্খিতভাবে বরখাস্ত করায় তাদের জীবনে নেমে এসেছে দুর্বিসহ কষ্ট। তারা বিষয়গুলোর জন্য সেই স্টেরেন্টে বসেছিল। কিন্তু সেখান থেকে তাদেরকে ডিজিএফআই ও র‌্যাবের গোয়েন্দা পরিচয়ে বেআইনিভাবে আটক করা হয়। যার জন্য আমরা আন্দোলন করেছি সেই ঘটনা ৫ আগস্টের পর কিভাবে হয় তা আমাদের মাথায় আসে না। আমরা চাই, একটি সুন্দর কমিশন গঠন করে এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হয়। কারা এভাবে কাজ করে অন্তবর্তীকালীন সরকার ও সেনা প্রধানকে বিব্রত করার চেষ্টা করছে তাদেরকে খুঁজে বের করতে হবে। জাস্টিস ফর কমরেডস নামের সংগঠনটি সাবেক সামরিক অফিসারদের একটি ছাতার তলে সংঘবদ্ধ করার কারণে ফ্যাস্টিস্ট হাসিনার দোসররা এটি পরিকল্পিতভাবে করেছে। তাদেরকে খুঁজে বের করে শাস্তির আওতায় আনতে হবে। না হলে দেশের সার্বভৌমত্ব থাকবে না। সেনা প্রধানকে বিব্রত করতেই ছয়জন সামরিক অফিসার ও সদস্যকে তুলে নিয়ে এমন কাজ করা হয়েছে বলে মনে করেন শাকিল নেওয়াজ।

 


ভুক্তভোগী লে. ক (অব.) মেহেদী হাসান বলেন, আমাদেরকে তুলে নেয়ার পর থানায় নিয়ে রাখা হয়। সেখানে কোনো খাবার দেয়া হয়নি। এমনকি পানিও না। আমি বারবার তাদেরকে বলেছি আমাদের অপরাধ কী আপনারা বলেন। কিন্তু তারা কোনো জবাব দেয়নি। উল্টো আমাদেরকে হয়রানি করেছে। তিনি বলেন, এমন আচরণ আমরা তাদের কাছ থেকে প্রত্যাশা করিনি। সেই সময় লে. কর্নেল মাহবুব সেনাবাহিনীর ৫৭তম দীর্ঘমেয়াদী কোর্সের আর্টিলারি কোরের একজন অফিসার, তিনি উপস্থিত থেকে এতে নেতৃত্ব দেন। আমরা এ বিষয়ে গত ১৬ নভেম্বর খিলক্ষেত থানায় জিডি করতে গেলেও পুলিশ তা গ্রহণ করেনি।

 


মেহেদী হাসান বলেন, এখন আমাদের ওপর বিভিন্ন রাষ্ট্রবিরোধী কার্যকলাপের দায় চাপিয়ে দিয়ে অপরাধী বানিয়ে নিজেদের অপরাধ ঢাকার চেষ্টা করছেন। এমনকি আমাদেরকে পুনরায় তুলে নিয়ে গিয়ে অনির্দিষ্টকালের জন্য গুম করা হতে পারে বলেও আমরা আশঙ্কা করছি।


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

কুষ্টিয়ায় পাওনা টাকা চাওয়াকে কেন্দ্র করে স্কুল ছাত্র খুন

কুষ্টিয়ায় পাওনা টাকা চাওয়াকে কেন্দ্র করে স্কুল ছাত্র খুন

ইউক্রেনীয় যুদ্ধবন্দীদের মুক্তির জন্য উ.কোরিয়ার সৈন্য বিনিময়ে প্রস্তুত জেলেনস্কি

ইউক্রেনীয় যুদ্ধবন্দীদের মুক্তির জন্য উ.কোরিয়ার সৈন্য বিনিময়ে প্রস্তুত জেলেনস্কি

তারুণ্যের উৎসব উপলক্ষে ঈশ্বরগঞ্জে ফুটবল টুর্নামেন্ট উদ্বোধন

তারুণ্যের উৎসব উপলক্ষে ঈশ্বরগঞ্জে ফুটবল টুর্নামেন্ট উদ্বোধন

কিয়ার স্টারমার ‘ভালো বন্ধু’ টিউলিপকে কি বরখাস্ত করতে পারবেন ?

কিয়ার স্টারমার ‘ভালো বন্ধু’ টিউলিপকে কি বরখাস্ত করতে পারবেন ?

রেহানার কাছ থেকে রেহাই মিলত না কোনো ব্যাংকের

রেহানার কাছ থেকে রেহাই মিলত না কোনো ব্যাংকের

টিউলিপ সিদ্দিকের বিতর্কিত সেই ফ্ল্যাট কীভাবে কেনা হয়েছিল?যে তথ্য জানা গেল

টিউলিপ সিদ্দিকের বিতর্কিত সেই ফ্ল্যাট কীভাবে কেনা হয়েছিল?যে তথ্য জানা গেল

লস অ্যাঞ্জেলসের দাবানলে হলিউড তারকার মৃত্যু

লস অ্যাঞ্জেলসের দাবানলে হলিউড তারকার মৃত্যু

কুবিতে ছাত্রলীগ নেতাকে গণপিটুনি শেষে পুলিশে দিল শিক্ষার্থীরা

কুবিতে ছাত্রলীগ নেতাকে গণপিটুনি শেষে পুলিশে দিল শিক্ষার্থীরা

সাতক্ষীরা  সীমান্তে  চাষে বাধা দিয়েছে বিএসএফ

সাতক্ষীরা সীমান্তে চাষে বাধা দিয়েছে বিএসএফ

"তালেবান নারীদের মানুষ মনে করে না" : মালালা

"তালেবান নারীদের মানুষ মনে করে না" : মালালা

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ১৩ কিলোমিটার যানজট

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ১৩ কিলোমিটার যানজট

মোবাইল ইন্টারনেটে সুখবর ‘শর্ত শিথিল’, থাকছে ১ ঘণ্টার প্যাকেজও

মোবাইল ইন্টারনেটে সুখবর ‘শর্ত শিথিল’, থাকছে ১ ঘণ্টার প্যাকেজও

গভীর রাতে গরিব অসহায় শীতার্ত  মাঝে ইউএনও'র কম্বল বিতরন

গভীর রাতে গরিব অসহায় শীতার্ত মাঝে ইউএনও'র কম্বল বিতরন

বরিশালে ক্যান্সার চিকিৎসা ব্যবস্থা মুখ থুবড়ে পড়ে আছে

বরিশালে ক্যান্সার চিকিৎসা ব্যবস্থা মুখ থুবড়ে পড়ে আছে

সেবা বঞ্চিত হলে অভিযোগ করা যাবে ইসির বিরুদ্ধে

সেবা বঞ্চিত হলে অভিযোগ করা যাবে ইসির বিরুদ্ধে

এমপিওভুক্ত হচ্ছেন আরও ৩ হাজার শিক্ষক

এমপিওভুক্ত হচ্ছেন আরও ৩ হাজার শিক্ষক

চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের নবনিযুক্ত সচিব ছাগলনাইয়ার সন্তান সামছু উদ্দিন

চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের নবনিযুক্ত সচিব ছাগলনাইয়ার সন্তান সামছু উদ্দিন

বাংলাদেশে শনাক্ত হলো 'রিওভাইরাস’, রোগটি সম্পর্কে যা জানা যায়

বাংলাদেশে শনাক্ত হলো 'রিওভাইরাস’, রোগটি সম্পর্কে যা জানা যায়

আন্দোলনের মুখে পাঠ্যবই থেকে বাদ পড়লো ‘আদিবাসী’ শব্দযুক্ত গ্রাফিতি

আন্দোলনের মুখে পাঠ্যবই থেকে বাদ পড়লো ‘আদিবাসী’ শব্দযুক্ত গ্রাফিতি

মাসের শেষে আবারো আসছে শৈত্যপ্রবাহ

মাসের শেষে আবারো আসছে শৈত্যপ্রবাহ