সাদ-লীগের তাণ্ডবে স্তব্ধ মুসলিম সমাজ, নেপথ্যে ভারতীয় ষড়যন্ত্র!
১৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৬:৫০ পিএম | আপডেট: ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৭:০৩ পিএম
উগ্র হিন্দুত্ববাদী নরেন্দ্র মোদির আস্থাভাজন হিসেবে খ্যাত সা’দ কান্দলভী গ্রুপের আজকের নৃশংস তাণ্ডবে স্তব্ধ গোটা মুসলিম সমাজ। টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমা ময়দান দখলকে কেন্দ্র করে যোবায়েরপন্থীদের ওপর সাদ অনুসারীরা পূর্বপরিকল্পিত হামলায় ক্ষোভ ও নিন্দায় ভাসছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। দেশকে অস্থিতিশীল করতে ভারতীয় ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে সাদপন্থী সন্ত্রাসীরা এই তাণ্ডব চালিয়েছে বলে মনে করেন সচেতন মহল। তুমুল ওই সংঘর্ষে ৪ জন মুসল্লি নিহত ও প্রায় শতাধিক আহত হয়েছেন।
বিশ্লেষকদের মতে, সাধারণ মানুষকে ইসলামমুখী করতে দেশব্যাপী তাবলীগ জামায়াতের দীর্ঘদিন থেকে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে। মুসলিমদের চির শত্রু ভারত ও ইসরাইল যা কখনই পছন্দ করে না। তাই মুসলিম গণহত্যাকারী দুই দেশ, নিজেদের এজেন্ট ঢুকিয়ে পরিকল্পিতভাবে তাবলীগ জামায়াতকে বিভক্ত করে মানুষের মাঝে ক্ষোভ সৃষ্টি করতে তৎপরতা চালিয়ে আসছে। সেইসাথে পতিত স্বৈরাচার আওয়ামী লীগের সাথেও সাদপন্থীদের যোগসাজস রয়েছে বলে মনে করেন অনেকেই।
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, দেশকে অশান্ত করার জন্য আওয়ামী লীগ বিভিন্ন সময় বিভিন্ন রূপে ফিরে এসেছে। শেষ পর্যন্ত তারা সাদ-লীগ হয়ে মাঠে নেমেছে। তাদের টার্গেট, বিশ্বের কাছে ছাত্র-জনতার নতুন বাংলাদেশকে উগ্র ইসলামি দেশ হিসেবে তুলে ধরা এবং হাসিনাকে পুনর্বাসন করে ভারতীয় নীলনকশা বাস্তবায়ন করা।
অভিযোগ রয়েছে, সাদপন্থীরা ফ্যাসিস্ট হাসিনার দোসরদের সাথে সম্পৃক্ত থেকে আগে থেকেই কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। তাই তাদের কোন কার্যক্রম পরিচালনা করার অধিকার নতুন বাংলাদেশে নেই বলে মনে করেন একটি বড় অংশ।
সচেতন মহল বলছেন, ভারত আওয়ামী লীগকে পূনর্বাসনের জন্য বাংলাদেশের শান্ত পরিবেশ নষ্ট করে বহির্বিশ্বকে দেখিয়ে ফায়দা নিতে চায়। আর তাদের সর্বশেষ হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে সাদপন্থীরা। অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, যুবায়েরপন্থীদের আজকে মিমাংসার জন্য মাঠে থাকার কথা ছিল। তাহলে রাত ৩টায় মাঠ দখল করতে কেন যাবে ভারতীয় সাদপন্থীরা? তাদের দাবি, ভারতীয় গুপ্তচরদের প্রত্যক্ষ মদদে পরিকল্পিতভাবে এই সহিংসতা চালানো হয়েছে।
এদিকে, পুলিশের ‘ডাক্তার আসার পূর্বে রোগীটি মারা গেল’ টাইপের ভূমিকায় ক্ষোভ জানিয়েছেন নেটিজেনরা। প্রশাসনের কড়া সমালোচনা করে তারা বলেন, তাবলীগের দুইপক্ষের মধ্যে উত্তেজনা ও হামকি-ধামকির ঘটনা আগে থেকেই চলে আসছিল। কিন্তু প্রশাসনের মধ্যে ঘাঁপটি মেরে থাকা আওয়ামী ফ্যাসিবাদের দোসরদের কারণে পুলিশ নীরব দর্শকের ভূমিকায় ছিল। তারা আগে থেকে কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় তিনজন মানুষের প্রাণ ঝরল। হাসিনার নির্দেশে বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করতেই প্রশাসনের দোসররা নিষ্ক্রিয় ছিল বলে মনে করেন অনেকে।
অন্যদিকে, ড. ইউনূসের সুদক্ষ নেতৃত্বে বাংলাদেশ সকল বাধা অতিক্রম করে সামনে এগিয়ে চলেছে। ভারতের প্রভাবমুক্ত নতুন বাংলাদেশের এই অগ্রযাত্রা ব্যাহত করতে ভারতীয় মিডিয়া প্রতিনিয়ত ড. ইউনূসকে ‘মোল্লা ইউনূস’ হিসেবে চিত্রিত করে চলেছে এবং বাংলাদেশে ইসলামি উগ্রবাদের উত্থান ঘটছে এমন প্রপাগান্ডা চলাচ্ছে। এটা প্রমাণ করতেই ভারতীয় গুপ্তচররা সাদপন্থীদের ঘাড়ে সাওর হয়ে প্রাণঘাতি এই সহিংসতা চালিয়েছে এমন দাবিও জোরদার হচ্ছে।
আজকের সহিংসতার ঘটনায় মাওলানা সাদের কঠোর সমালোচনা করেছেন ধর্মপ্রাণ নেটিজেনরা। তারা বলছেন, ভারতে প্রতিনিয়ত সংখ্যালঘু মুসলিমদের পশুর মত হত্যা করা হচ্ছে, কাশ্মীরে নারীদের ধর্ষণ করা হচ্ছে, মসজিদ ভেঙে মন্দির নির্মাণ করা হচ্ছে, দখলদার ইসরাইল ফিলিস্তিনে ভয়াবহ গণহত্যা চালাচ্ছে- এসব কোনো ইস্যুতেই কখনও প্রতিবাদ করেননি সাদ। কিন্তু আজ তিনি কিছু তাৎপর্যহীন ধর্মীয় মাসলা-মাসায়েল প্রতিষ্ঠা এবং ভারতীয় ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নে মুসলমানদের রক্ত ঝরালেন। ভারতপন্থী হওয়ায় তার উচিত ভারতে ইজতেমা আয়োজন করার। আর তিনি ইজতেমা করার সুযোগ পেলেও কি পারবেন নিহত মুসল্লিদের জীবন ফিরিয়ে দিতে?
জোবায়েরপন্থিরাসহ দেশের অধিকাংশ ধমপ্রাণ মুসলিম মনে করেন বলছেন, সাদ একজন গোমরাহ ব্যক্তি এবং তার সকল অনুসারীরাও গোমরাহ ভন্ড এবং মুসলমানদের শত্রু। তারা ইসরাইলের মোসাদ ও ভারতের 'র' এর এজেন্ট হয়ে এদের এজেন্ডা বাস্তবায়নে লিপ্ত। বিশ্ব ইজতেমার ময়দানে গভীর রাতে ঘুমন্ত নিরীহ তাবলীগের সাথীদের উপর আক্রমণ করে তিন জন নিরপরাধ মুসল্লিকে হত্যা করেছে।তারা পূর্বেও বিশ্ব ইজতেমা ময়দানে আলেম ওলামাদের উপর আক্রমণ করে ঘৃণিত হত্যাকান্ড ঘঠিয়েছিল। সা’দপন্থীরা পতিত ফ্যাসিবাদ হাসিনার দোসরদের সঙ্গে মিলে এদেশে একটা ধর্মীয় দাঙ্গা বাধানোর চেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে।
ধমপ্রাণ তাবলীগভক্ত মানুষরা বলছেন, দেশের এই মুমূর্ষু পরিস্থিতিতে ধর্মীয় নেতাদের এইরকম বিভেদ-বিশৃঙ্খলা সার্বিক পরিস্থিতিকে আরো অস্থিতিশীল করে তুলবে। ভারত ও ফ্যাসিবাদের দোসররা এই সুযোগে দেশকে বহির্বিশ্বের কাছে অনিরাপদ হিসেবে উপস্থাপন করবে! এরকম বিশৃঙ্খলা এবং ধ্বংসাত্মক কাজ ইসলাম সমর্থন করে না। অতএব ধর্মীয় নেতাদের উচিত বাংলাদেশী মুসলিম হিসেবে পরস্পর বিরোধী মনোভাব থেকে বেরিয়ে এসে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে এই মহাসম্মেলন সুষ্ঠুভাবে সম্পূর্ণ করা।
বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব মাওলানা মো. মামুনুল হক বলেছেন, ‘ইজতেমা মাঠে সংগঠিত হত্যাকাণ্ডকে অনেকে দুই পক্ষের সংঘর্ষের কথা বলেছেন। আসলে এটা সংঘর্ষ ছিল না। এখানে সাদপন্থীরা হামলা করে চারজনকে হত্যা করেছেন। এ হামলায় কারা জড়িত, তার ভিডিও ফুটেজ আছে। আমাদের দাবি, হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের শিগগিরই গ্রেপ্তার করতে হবে।’
আজ বুধবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে তাবলিগ জামাতের দুই পক্ষ মাওলানা জুবায়েরপন্থী ও সাদপন্থীদের সঙ্গে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী আলাদাভাবে বৈঠক করেন। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন মামুনুল হক। তিনি সাদপন্থীদের সন্ত্রাসী সংগঠন বলে আখ্যায়িত করে নিষিদ্ধের দাবি করেন। তিনি বলেন, ২০১৮ সালেও তাঁরা হামলা করেছিলেন। তখনো তাঁদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।সাদপন্থীরা বাংলাদেশ রাষ্ট্রকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন। তাঁদের সঙ্গে দুই দিন ধরে আলোচনা চলছে। আলোচনা চলার মধ্যেই তাঁরা হামলা করে ঘুমন্ত মানুষকে হত্যা করেছেন।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
ইসলামি অর্থনীতির স্বরূপইসলামি অর্থনীতির স্বরূপ
পুঠিয়া পৌরসভা সাবেক মেয়র মামুনের বাবার দাফন সম্পন্ন
বিজয় দিবস উপলক্ষে মানিকগঞ্জে জাসাসের উদ্যোগে সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা
আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে 'পুতুলনাচের ইতিকথা'
মেঘনা সেতুতে ট্রাক-মোটরসাইকেল সংঘর্ষ, নিহত-২
নোবিপ্রবিতে ১৮০ কৃতী শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণে ‘মিট আপ উইথ ভাইস-চ্যান্সেলর’ অনুষ্ঠিত
নির্যাতনের জবাব হিংসায় নয়, ৩১ দফা বাস্তবায়নের মাধ্যমে অন্যায়ের জবাব দিতে হবে: তারেক রহমান
কয়েকদিনের মধ্যেই শিক্ষা কমিশন ঘোষণা করা হবে
কায়রোতে প্রধান উপদেষ্টার সাথে মালয়েশিয়ার মন্ত্রীর সাক্ষাৎ
চার দাবিতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে শিশু বিশেষজ্ঞদের অবস্থান কর্মসূচি
গুমের সাথে জড়িত ২০ সরকারী কর্মকর্তার পাসপোর্ট স্থগিত, দেশ ত্যাগে নিষেধাজ্ঞা
ঝিকরগাছায় নিখোঁজ স্ত্রীকে খুঁজে পেতে থানায় অভিযোগ স্বামীর
চতুর্থ কিস্তিতে ৬৪ কোটি ডলার পাচ্ছে বাংলাদেশ নতুন ঋণ পাবে ৭৫ কোটি ডলার
অন্তর্বরতী সরকার আন্তরিক হলে জুনের মধ্যে সুষ্ঠু নির্বাচন দেওয়া সম্ভব- খুলনায় হেলাল
ই-ল্যাপ: বাংলাদেশের ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের ঋণপ্রাপ্তির প্রক্রিয়া সহজ করে দিয়েছে যে প্ল্যাটফর্ম
আওয়ামীলীগের ছেলে ভুলানো গল্প আর কেউ শুনবে না- শহিদুল ইসলাম
জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন সংশোধনের দাবি: বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস এসোসিয়েশন
ন্যায়বিচার- সমতা এবং সাংবিধানিক শাসনের রক্ষক হিসেবে কাজ করছে
চাঁদপুরে প্রবাস মেলায় প্রবাসীদের ঋণ দিল এনআরবিসি ব্যাংক
জাইকার সহযোগিতায় বি-জেট ও বি-মিট প্রোগ্রামের সমাপনী প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠান আয়োজিত