হাসিনা ভোটে আস্থা রাখেননি, টিকে ছিলেন প্রশাসনে ভর করে: সারজিস আলম

Daily Inqilab অনলাইন ডেস্ক:

১৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:২৫ এএম | আপডেট: ১৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:২৫ এএম

জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক ও জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম বলেছেন, খুনি হাসিনা বাংলাদেশের ক্ষমতায় থাকার জন্য জনগণের ভোটের ওপর নির্ভর করেননি, খুনি হাসিনা টিকে ছিলেন আমলা ও প্রশাসনের ওপর নির্ভর করে। এ কারণে জনগণের সঙ্গে সরকারের দূরত্ব তৈরি হয়েছিল। সেই বাংলাদেশের জনগণ এই গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে প্রমাণ করে দিয়ে খুনি হাসিনাকে দেশছাড়া করেছে।

 

রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে বুধবার কাউন্সিলর সমাবেশে সারজিদ এসব কথা বলেন।

 

ছাত্র গণহত্যা ও ফ্যাসিবাদ বিরোধী সিটি কর্পোরেশন ও পৌর কাউন্সিলরদের জনস্বার্থে পুনর্বহালের দাবি ও বর্তমান সরকারকে সহযোগিতার লক্ষ্যে এ কাউন্সিলর সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ সিটি কর্পোরেশন কাউন্সিলর অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি গাসিকের সদ্য সাবেক কাউন্সিলর সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট নজরুল ইসলাম খান। অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি ছিলেন এবি পার্টির যুগ্ম সদস্য সচিব ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ, জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসির উদ্দিন পাটোয়ারী, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ, বাংলাদেশ পৌর কাউন্সিলর অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সাইফুল ইসলাম মধু, সিটি কর্পোরেশন কাউন্সিলর অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক কাজী গোলাম কিবরিয়া, পৌর কাউন্সিলর অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক জাহিদুর রহমান জাহিদ প্রমুখ।

 

সারজিদ বলেন, ছাত্র জনতার রক্ত দেওয়া নতুন বাংলাদেশে প্রত্যাশা হচ্ছে আমরা কোনো ব্যক্তির হয়ে কাজ করব না। আমাদের সব কিছু হবে দেশ ও মানুষের জন্য।

 

সদ্য অপসারণ করা কাউন্সিলরদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনারা যদি দেশের মানুষের জন্য হন, আমরা আপনাদের জন্য জীবন কুরবানি হব। বাংলাদেশের মানুষ বিগত ১৬ বছরে যে অন্যায়, নির্যাতন নিপীড়নের শিকার হয়েছেন, আমরা বিশ্বাস করি, আপনাদের ভেতরে সাহস ও নৈতিকতা আছে বলেই চব্বিশের যোদ্ধাদের সামনে এসে বসেছেন। আগামী তরুণ প্রজন্ম চায় আমরা দলকানা ও ব্যক্তিকানা হবো না। আমরা কোন গোষ্ঠীর স্বার্থ উদ্ধার করব না। আমরা নতুন একটি স্বপ্ন দেখব, আমরা জনগণের কাছে যাব জনগণের কথা শুনব। জনগণের কাছে জবাবদিহি করার মানসিকতা থাকবে। জনগণের ভোটে নির্বাচিত হওয়ার যোগ্যতা থাকবে।

 

সারজিদ আরও বলেন, আমরা অবশ্যই চাই যারা নিজের যোগ্যতায় প্রায় সিস্টেমের বিরুদ্ধে লড়াই করে সংগ্রাম করে জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছেন, তারা জনগণের প্রতিনিধি হিসেবেই থাকবে। কিন্তু আপনাদের জায়গা থেকে নিশ্চয়তা দিতে হবে যে, আপনাদের পক্ষ হয়ে যে আমরা লড়াই করব আপনাদেরও প্রতিজ্ঞা রক্ষা করতে হবে। ফ্যাসিস্টের সঙ্গে কারো প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সম্পর্ক রাখার ক্ষেত্রেও হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন তিনি।

অনুষ্ঠানে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, কাউন্সিলররা শুধু নয়টা পাঁচটা অফিস করেন না, তারা সামাজিক অনুষ্ঠানে যোগদানসহ ২৪ ঘণ্টা মানুষের সঙ্গে সংযুক্ত থাকেন। ফ্যাসিবাদবিরোধী কাউন্সিলররা তিন কোটি মানুষের প্রতিনিধিত্ব করছে। ওই তিন কোটি মানুষ ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। আজকে যদি আপনাদেরকে (কাউন্সিলর) সরিয়ে দেওয়া হয়, তাহলে জনগণের সেই অবস্থান ভুল প্রমাণিত হবে। অতি দ্রুত এ বিষয়ে একটি কমিশন গঠন করে ফ্যাসিবাদ বিরোধী কাউন্সিলরদেরকে পুনর্বহালের জন্য এলজিইডি উপদেষ্টার প্রতি অনুরোধ জানান হাসনাত।

 

জনগণ এলাকার কাউন্সিলরদের কাছে তাদের সমস্যার কথা বলতে চায় উল্লেখ করে হাসনাত বলেন, তাদেরকে কখনও আপনি অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ অফিসারের কাছে পাঠাতে পারবেন না। একজন অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ অফিসার তার রুটিন কাজ সম্পন্ন করে জন্ম নিবন্ধনসহ বিভিন্ন নাগরিক সেবা দেওয়া সম্ভব নয়। অনেক কাউন্সিলর ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়ায় অনেকে জেলে যেতে হয়েছে। আমি অনেককেই চিনি যারা, জেলে থেকে থেকে নির্বাচন করে জয়লাভ করেছেন। ওই মানুষগুলোকে আমরা সম্মান জানাতে চাই। আমি বিশ্বাস করি এখানে যারা রয়েছেন, সবাই ফ্যাসিবাদ বিরোধী শক্তি। এটা যদি না হত তারা কখনোই আমাদের সামনে সেমিনার রুমে আসতো না। আমাদের এই ন্যায্য দাবি বাস্তবায়নে আমরা অবশ্যই কাজ করব।

 

সমাবেশে ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ বলেন, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মেম্বারদের বহাল রেখে সিটি ও পৌর কাউন্সিলরদের বাতিল করা গ্রহণযোগ্য নয়। অথচ আওয়ামী লীগের সবচেয়ে বেশি সুবিধাভোগী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মেম্বার ও আমলারা এখনও বহাল তবিয়তে।

তিনি বলেন, যে আমলারা আওয়ামী লীগের দালালি করেছেন তাদেরকে সিটি করপোরেশন ও পৌরসভার দায়িত্ব দেওয়া গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।

 

তিনি বলেন, কমিটি গঠন করে যারা আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলীয় জোটের বেনিফিশিয়ারি কাউন্সিলর বা জনপ্রতিধিদের আছেন তাদের চিহ্নিত করতে হবে। তাদের তালিকা করতে হবে। যারা ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনে ভূমিকা রেখেছেন সেসব জনপ্রতিনিধিদের বহাল রাখতে হবে।

 

সভাপতির বক্তব্যে অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি নজরুল ইসলাম খান বলেন, আমরা জনগণের হাজার হাজার ভোটে নির্বাচিত হয়েছি। স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে দেড় দশক ধরে আন্দোলন করে জেল-জুলুমের শিকার হয়েছি। জনগণের পাশে থেকে সারাজীবন রাজনীতি করেছি। জুলাই-আগস্টে ফ্যাসিস্ট সরকারের রক্ষুচক্ষু উপেক্ষা করে রাজপথে থেকেছি। রাজপথে থেকেই ছাত্র-জনতার কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানে ভূমিকা রেখেছি। যারা ফ্যাসিবাদের সমর্থক যারা আওয়ামী লীগের সুবিধাভোগী তাদের পদচ্যুত করার পক্ষে আমরা। কিন্তু আমরা যারা ফ্যাসিবাদ ও গণহত্যার বিপক্ষে রাজপথে সোচ্চার ছিলাম তাদেরকে অনতিবিলম্বে সিটি কর্পোরেশন ও পৌরসভায় পুনর্বহাল করা হোক। সারাদেশে সিটি করপোরেশন ও পৌরসভাগুলোতে ফ্যাসিবাদের সমর্থক আমলাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তাদের কাছে সিটি কর্পোরশন ও পৌরসভা নিরাপদ নয়। জনভোগান্তি সৃষ্টি হয়েছে; সাধারণ মানুষ সেবা না পেয়ে বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠছে। বিষয়টি অনুধাবন করে সরকারসহ সংশ্লিষ্টদের অনুরোধ করব এ বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে।

 

বাংলাদেশ পৌর কাউন্সিল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সাইফুল ইসলাম মধু বলেন, আমরা চাইলে ঢাকায় ৫০ লাখ মানুষ সমবেত করতে পারি। কিন্তু আমরা এসব করতে চাই না। আমরা আমাদের ন্যায্য অধিকার চাই।

 

তিনি বলেন, আমাকে রাজপথ থেকে গ্রেফতার করে ভাতের হোটেলের হারুন গুম করে রেখেছিল। আমার এক হাত ভেঙে দিয়েছে। কিন্তু আমরা দমে যাইনি।


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

এখনো দেশে সাড়ে ৩৩ হাজার অবৈধ বিদেশি: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
বদলে যাচ্ছে পুলিশ, র‌্যাব ও আনসার সদস্যদের পোশাক
সাবেক এমপি মোস্তফা জালাল গ্রেপ্তার
সারা দেশে কমবে রাতের তাপমাত্রা,জানালো আবহাওয়া অধিদপ্তর
অস্ত্র মামলায় ১০ বছরের দণ্ড থেকে খালাস পেলেন মামুন
আরও

আরও পড়ুন

বাগেরহাটে এ্যাথলেটিক প্রতিযোগীতা ও গ্রামীন খেলা অনুষ্ঠিত

বাগেরহাটে এ্যাথলেটিক প্রতিযোগীতা ও গ্রামীন খেলা অনুষ্ঠিত

গাজা পুনর্গঠনে কার হাতে থাকবে প্রশাসনিক দায়িত্ব ?

গাজা পুনর্গঠনে কার হাতে থাকবে প্রশাসনিক দায়িত্ব ?

রামগড়ে ভ্রাম্যমাণ আদালতের ৫টি ইটভাটায় জরিমানা

রামগড়ে ভ্রাম্যমাণ আদালতের ৫টি ইটভাটায় জরিমানা

এখনো দেশে সাড়ে ৩৩ হাজার অবৈধ বিদেশি: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

এখনো দেশে সাড়ে ৩৩ হাজার অবৈধ বিদেশি: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

কম মূল্যে জমি বিক্রি না করায় দাউদকান্দিতে ছাত্রদলের নেতার বিরুদ্ধে অপপ্রচারের প্রতিবাদ

কম মূল্যে জমি বিক্রি না করায় দাউদকান্দিতে ছাত্রদলের নেতার বিরুদ্ধে অপপ্রচারের প্রতিবাদ

মুক্ত তিন ইসরাইলি জিম্মিকে যে ‘উপহারের ব্যাগ’ দিলো হামাস

মুক্ত তিন ইসরাইলি জিম্মিকে যে ‘উপহারের ব্যাগ’ দিলো হামাস

জেরায় অবশেষে দোষ স্বীকার সাইফের হামলাকারীর

জেরায় অবশেষে দোষ স্বীকার সাইফের হামলাকারীর

ঈশ্বরগঞ্জে ব্রেস্ট ক্যান্সার প্রতিরোধ বিষয়ক কর্মশালা

ঈশ্বরগঞ্জে ব্রেস্ট ক্যান্সার প্রতিরোধ বিষয়ক কর্মশালা

বনানীতে সড়কে সিএনজি চালকদের বিক্ষোভ, রাস্তা বন্ধ

বনানীতে সড়কে সিএনজি চালকদের বিক্ষোভ, রাস্তা বন্ধ

বগুড়া সেনানিবাসে সাঁজোয়া কোরের ৪৪তম বাৎসরিক অধিনায়ক সম্মেলনে যোগ দিলেন সেনা প্রধান

বগুড়া সেনানিবাসে সাঁজোয়া কোরের ৪৪তম বাৎসরিক অধিনায়ক সম্মেলনে যোগ দিলেন সেনা প্রধান

গাজীপুরে এ্যাপারেলস্ কারখানায় বয়লার বিস্ফোরণে আহত ১২

গাজীপুরে এ্যাপারেলস্ কারখানায় বয়লার বিস্ফোরণে আহত ১২

ব্যবহারকারীদের আশ্বাস ট্রাম্পের, যুক্তরাষ্ট্রে ফের চালু টিকটক

ব্যবহারকারীদের আশ্বাস ট্রাম্পের, যুক্তরাষ্ট্রে ফের চালু টিকটক

পদ্মায় ধরা পড়লো ৪২ কেজির মহা বিপন্ন বাঘাইড় মাছ

পদ্মায় ধরা পড়লো ৪২ কেজির মহা বিপন্ন বাঘাইড় মাছ

আরও বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রিয়ালের প্রেসিডেন্ট পেরেজ

আরও বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রিয়ালের প্রেসিডেন্ট পেরেজ

সিলেটে প্রখ্যাত আলেম ইসহাক আল মাদানির ইন্তেকাল!

সিলেটে প্রখ্যাত আলেম ইসহাক আল মাদানির ইন্তেকাল!

গাজার ধ্বংসস্তূপে নতুন স্বপ্ন বুনছেন যুদ্ধবিধ্বস্ত মানুষ

গাজার ধ্বংসস্তূপে নতুন স্বপ্ন বুনছেন যুদ্ধবিধ্বস্ত মানুষ

গাজা চুক্তিকে যেকারণে ‘হামাসের জয়’ বলছে ইসরায়েলি গণমাধ্যম

গাজা চুক্তিকে যেকারণে ‘হামাসের জয়’ বলছে ইসরায়েলি গণমাধ্যম

সত্যিকারের সুখী হওয়া অনেক কঠিনঃ মিশা

সত্যিকারের সুখী হওয়া অনেক কঠিনঃ মিশা

গাজায় ব্যাংক সেবা পুনরায় চালুর প্রস্তুতি শুরু ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের

গাজায় ব্যাংক সেবা পুনরায় চালুর প্রস্তুতি শুরু ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের

বদলে যাচ্ছে পুলিশ, র‌্যাব ও আনসার সদস্যদের পোশাক

বদলে যাচ্ছে পুলিশ, র‌্যাব ও আনসার সদস্যদের পোশাক