ঢাকা   মঙ্গলবার, ০৭ জানুয়ারি ২০২৫ | ২৩ পৌষ ১৪৩১

মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতাকারীদের ছবক শুনতে জাতি রাজি নয়: গয়েশ্বর

Daily Inqilab স্টাফ রিপোর্টার

০২ জানুয়ারি ২০২৫, ০৪:২৩ পিএম | আপডেট: ০২ জানুয়ারি ২০২৫, ০৪:২৩ পিএম

মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীকারীদের ছবক শুনতে জাতি রাজী নয় বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। তিনি বলেন, ৭১-এ মুক্তিযুদ্ধ ও ৭৫’র ৭ নভেম্বরের পরাজিত শক্তি মিলে যারা জাতীয়তাবাদী শক্তির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করবেন, তাদের রুখে দেওয়ার ক্ষমতা এদেশের জনগণ রাখে। তাদের ছবক শুনতে জাতি রাজী নয়।

 

বৃহস্পতিবার (০২ জানুয়ারি) দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ থানা বিএনপির উদ্যোগে কর্মীসভা ও সদস্য ফরম বিতরণ অনুষ্ঠানে গয়েশ্বর এসব কথা বলেন। এতে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ থানা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট নিপুণ রায় চৌধুরী।

 

রাষ্ট্র সংস্কারের প্রয়োজন আছে উল্লেখ করে গয়েশ্বরচন্দ্র রায় বলেন, আমরাও সংস্কার চাই, এ জন্য আমরা ৩১ দফা দিয়েছি। কিন্তু এই যে তারা ( বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি) যেটা দিতে চায়, সেটা আমাদের না দিলেও আমরা তা কোনো না কোনোভাবে পেয়েছি। সেখানে ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধকে এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। এদের ঘাড়ে চাপছে ৭১ এ যারা মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতা করেছে তারা। আকারে ইঙ্গিতে তারা বলতে চায় ৫ আগস্ট (২০২৪ সাল) দেশ স্বাধীন হয়েছে। তাহলে ৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে গরু ছাগল রক্ত দিয়েছে, নাকি মানুষ রক্ত দিয়েছে? ৭১ সালে যারা মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতা করেছে তাদের ছবক শুনতে জাতি রাজি না।

 

তিনি বলেন, আমরা অনেককেই ক্ষমা করতে পারি, ভুলে যেতে পারি। ক্ষমা মহত্মের লক্ষণ। কিন্তু ক্ষমা করার পর একই কাজ যদি আবার করেন, তাহলে ভুলে গেলে চলবে না। মুক্তিযুদ্ধ ও ৭ নভেম্বরের পরাজিত শক্তি মিলে যারা জাতীয়তাবাদী শক্তির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করবেন, তাদের রুখে দেওয়ার ক্ষমতা এদেশের জনগণ রাখে। সেই নেতৃত্ব দেওয়ার যোগ্য নেতৃত্বও আছে। জিয়াউর রহমান হারিয়ে গেছেন। কিন্তু খালেদা জিয়া সেই জায়গা থেকে শুরু করেছেন। সেখান থেকেও নেতৃত্ব চলে এসেছেন তাদের যোগ্যউত্তরসূরী তারেক রহমান। যুক্তরাজ্য থেকে দল ও দেশবাসীকে সংগঠিত করে বিজয় নিশ্চিত করেছেন। কিন্তু এর ফলাফল যতক্ষণ পর্যন্ত গোলায় না উঠে,ততক্ষণ পর্যন্ত তিনি সক্রিয় আছেন আমরাও সক্রিয় আছি।

গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন,সবচেয়ে সৌভাগ্যের বিষয় আমি মুক্তিযুদ্ধ করতে পেরেছি। বাংলাদেশে স্বাধীনতার যুদ্ধ তো বারবার হবে না, অমরা সেই যুদ্ধটা করতে পেরেছি। সেই ডাকটাই দিয়েছিল রাজনীতির বাইরের একজন মেজর তার নাম জিয়াউর রহমান। যার নাম মানুষের অন্তরে অন্তরে। যে আশা নিয়ে মুক্তিযুদ্ধ করেছি, সেই আশা পূরণ হয়নি বলেই তো আওয়ামী লীগের এমন পরিনতি হয়েছে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট মর্মান্তিক ঘটনার মধ্যদিয়ে শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবারে নিহত হলেও আওয়ামী লীগের নেতৃত্বেই কিন্ত সরকার গঠন করা হয়েছিল, যা নেতৃত্বে ছিলেন আওয়ামী লীগ নেতা খন্দকার মোসতাক।

 

তিনি আরো বলেন, ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর সিপাহী-জনতার সংগঠিত হওয়ার মধ্যদিয়ে ধারাবাহিক প্রক্রিয়ায় জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় আসলেন। বহু দলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করলেন তিনি। ৯০ সালে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে ছাত্রজনতার গণঅভ্যুত্থানে স্বৈরাচারের পতন হয়েছে। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ, ১৯৭৫ সালের সিপাহী-জনতার বিপ্লব এবং ৯০ তে গণঅভ্যুত্থানের মুখে স্বৈরাচারের পতন-এসব কী ইতিহাসের অংশ নয়? এসব কি ইতিহাসের পাতা থেকে বের করে দেবেন? স্বাধীনতা যুদ্ধ থেকে প্রতিটি আন্দোলনে ছাত্রজনতা ছিল। তারা কি রাষ্ট্র ক্ষমতায় বসেছিল?

 

গত ১৬ বছর যাবৎ বিএনপি আন্দোলন করছে উল্লেখ করে গয়েশ্বরচন্দ্র রায় বলেন, ছাত্রদের কোটাবিরোধী ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ৮ দফার মধ্যে সরকার পতনের দাবি ছিল না। তারা যখন এই আন্দোলনে নামছে আমরা পরদিন তাতে প্রকাশ্যে সমর্থন জানিয়েছি, আমি একজন সাক্ষী। ছাত্ররা আন্দোলনে নামার পরপরই আমি আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছে একটি মোবাইলে ক্ষুদে বার্তা পাঠালাম। পাঁচ মিনিটের মধ্যে তিনি আমার মোবাইলে ফোনে কল করলেন। বললেন, বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, তাহলে সবাইকে ডেকে বসি। বিকাল চারটার দিকে কথা, ছয়টায় জরুরী দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠক ডাকলেন তিনি। সেই বৈঠক থেকে ছাত্রদের আন্দোলনের প্রতি নৈতিক সমর্থন জানানো হলো। এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সক্রিয় হয়ে উঠলেন। টেলিফোনে তিনি সবার সাথে যোগাযোগ শুরু করলেন। আমাকে বললেন, শুধু নৈতিক সমর্থন যথেষ্ট না, সবাইকে সক্রিয় করতে হবে। আমি বললাম অবশ্যই সক্রিয় করতে হবে। তবে, দলীয় ব্যানার ছাড়া আমরা সবাই এই আন্দোলনে অংশগ্রহন করব। আমাদের ছাত্র-যুবক নেতাকর্মীরা মাঠে নেমে পড়ল। হাসিনা কিন্তু বার বার বলছে এটা বিএনপির ষড়যন্ত্র। তিনি আরো বলেন, এরপর আমরা সর্বাত্মক সমর্থন জানালাম। আমরা বিএনপির পোশাক ছেড়ে হয়ে গেলাম ছাত্র-জনতা হয়ে। এই আন্দোলনে শুধুমাত্র ছাত্রের বাবা-ই নামেনি, দেশের সব মানুষ নেমেছিল। এদেরকে কে নামিয়েছিল, এই বিএনপি-ই নামিয়েছিল।

 

গয়েশ্বর রায় বলেন, আমরা ছাত্রদের অভিনন্দন জানাই। এখনও অভিনন্দন জানাই। তবে ১৫ দিনের পূজিঁ দিয়ে রাস্তায় বেশিদিন হাটা যায় না। ১৬ বছর ধরে আমরা আন্দোলন করছি। প্রত্যেকটা রক্তের মূল্য আছে- যে সর্বশেষ রক্ত দিয়েছে তারও আছে, যে সবার আগে দিয়েছে তারও আছে।

 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকটি ছাত্র সামনে ঘোরাঘুরি করে উল্লেখ করে গয়েশ্বরচন্দ্র রায় তিনি বলেন, কিন্তু প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে বহু ছাত্র সেদিন মারা গেছে। আমাদের ছাত্ররা গত ১৬ বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রবেশ করতে পারিনি। কিন্তু আপনাদের আওয়ামী লীগ চিনতে পারল না কেন? তাহলে নিশ্চয়ই ডাল মে কুচ কালা হে। তিনি আরো বলেন, ছাত্ররা তিনটি আন্দোলন করেছে। যে আন্দোলনের মাধ্যমে ভিপি নূর নেতা হয়েছেন। দ্বিতীয়ত বাড্ডায় দুই বাসের চাপায় এক শিশুর মৃত্যু হয়েছিল। সেবার শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নেমেছিল। সর্বশেষ জুলাই মাসে কোটার বিরুদ্ধে আন্দোলন করলেন, সেখানে আমরা সমর্থন দিলাম। কিন্তু আমাদের ১৬ বছরের আন্দোলনে আপনারা কবে নেমেছেন? সেই কারণে জনগণের কাছে মূখ্য হচ্ছে গণতন্ত্র, নির্বাচন, নির্বাচিত প্রতিনিধি ও নির্বাচিত সরকার।


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

হাসিনাকে ফিরিয়ে এনে বিচার করতে হবে : মাহমুদুর রহমান
অবৈধ যানবাহনের বিরুদ্ধে অভিযান জোরদারের সিদ্ধান্ত
পুরান ঢাকার হাসেম ম্যানশন : ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে বসবাস
কলকাতায় বিমানবন্দরে আটকে পড়া ২২০ বাংলাদেশির দুর্ভোগ
স্বাধীনতাবিরোধী দল দেশ ধ্বংস করতে চাচ্ছে : আবদুল্লাহ আল নোমান
আরও

আরও পড়ুন

আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ শহরের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে রাশিয়া

আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ শহরের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে রাশিয়া

রাজনীতি ও রাষ্ট্রাচার ব্যবসায়িক পণ্যে পরিণত হয়েছে : সেলিম উদ্দিন

রাজনীতি ও রাষ্ট্রাচার ব্যবসায়িক পণ্যে পরিণত হয়েছে : সেলিম উদ্দিন

ভারতে ঢুকে পড়েছে এইচএমপিভি

ভারতে ঢুকে পড়েছে এইচএমপিভি

আন্তর্জাতিক আইকিউ টেস্টে দ্বিতীয় ইরান

আন্তর্জাতিক আইকিউ টেস্টে দ্বিতীয় ইরান

গণঅধিকার পরিষদের ফারুকের ওপর হামলা : দুই আসামির জামিন

গণঅধিকার পরিষদের ফারুকের ওপর হামলা : দুই আসামির জামিন

লেনদেন ও সূচকের উত্থান পুঁজিবাজারে চাঙাভাব

লেনদেন ও সূচকের উত্থান পুঁজিবাজারে চাঙাভাব

খালেদা জিয়ার নাইকো মামলায় ৩২ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ

খালেদা জিয়ার নাইকো মামলায় ৩২ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ

পাবনায় শীর্ষ সন্ত্রাসী কাঙ্গাল বাবু গ্রেপ্তার

পাবনায় শীর্ষ সন্ত্রাসী কাঙ্গাল বাবু গ্রেপ্তার

১৫ হাজার পিচ ইয়াবার মামলায় প্রবাসীর যাবজ্জীবন কারাদণ্ড

১৫ হাজার পিচ ইয়াবার মামলায় প্রবাসীর যাবজ্জীবন কারাদণ্ড

হাসিনাকে ফিরিয়ে এনে বিচার করতে হবে : মাহমুদুর রহমান

হাসিনাকে ফিরিয়ে এনে বিচার করতে হবে : মাহমুদুর রহমান

বৃদ্ধাশ্রমের বাবা মায়ের পাশে জেলা প্রশাসন সব সময় আছে এবং থাকবে

বৃদ্ধাশ্রমের বাবা মায়ের পাশে জেলা প্রশাসন সব সময় আছে এবং থাকবে

তামিমের দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ের দিন প্রশ্নবিদ্ধ এনামুল

তামিমের দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ের দিন প্রশ্নবিদ্ধ এনামুল

বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে চীনের সহযোগিতা চান পরিবেশ উপদেষ্টা

বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে চীনের সহযোগিতা চান পরিবেশ উপদেষ্টা

গাজীপুরে বিএনপির বিক্ষোভ

গাজীপুরে বিএনপির বিক্ষোভ

সোনারগাঁওয়ে আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে জমি দখলের অভিযোগ

সোনারগাঁওয়ে আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে জমি দখলের অভিযোগ

র‌্যাগিংমুক্ত ক্যাম্পাস গড়ার প্রতিশ্রুতি শেকৃবি ভিসির

র‌্যাগিংমুক্ত ক্যাম্পাস গড়ার প্রতিশ্রুতি শেকৃবি ভিসির

অংশীজনদের সঙ্গে আজ বসছেন অর্থ উপদেষ্টা

অংশীজনদের সঙ্গে আজ বসছেন অর্থ উপদেষ্টা

কোম্পানীগঞ্জের ইউএনওর নাম্বার ক্লোন করে শিক্ষকের কাছে টাকা দাবি

কোম্পানীগঞ্জের ইউএনওর নাম্বার ক্লোন করে শিক্ষকের কাছে টাকা দাবি

সমস্যাগ্রস্ত ৬ ব্যাংকের নিরীক্ষায় ২ বিদেশি প্রতিষ্ঠানকে নিয়োগ দিলো বাংলাদেশ ব্যাংক

সমস্যাগ্রস্ত ৬ ব্যাংকের নিরীক্ষায় ২ বিদেশি প্রতিষ্ঠানকে নিয়োগ দিলো বাংলাদেশ ব্যাংক

অবৈধ যানবাহনের বিরুদ্ধে অভিযান জোরদারের সিদ্ধান্ত

অবৈধ যানবাহনের বিরুদ্ধে অভিযান জোরদারের সিদ্ধান্ত