পাহাড়িদের রাস্তায় নামালো কারা?
১৭ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০৪ এএম | আপডেট: ১৭ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০৪ এএম
ফ্যাসিস্ট হাসিনাকে বাংলাদেশে ফেরানোর দিল্লির ঢাকামুখী ষড়যন্ত্রের তীরের তীব্রতা কমে গেছে। দিল্লি বুঝে গেছে, হাসিনাকে আর বাংলাদেশের রাজনীতিতে ফেরানো সম্ভব নয়; এ জন্য তারা ভিন্ন পথ ধরেছে। কিন্তু ঢাকার মতিঝিলে হঠাৎ করে ‘পাহাড়ি ছাত্র-জনতা’ নামক সংগঠন ১৫ জানুয়ারি রাজধানীর মতিঝিলে পাঠ্যপুস্তক ভবন ঘেরাও করতে এলে সংঘর্ষ ঘটে। তারা পাঠ্যপুস্তকে ‘আদিবাসী’ শব্দ দেখতে চায়।
পাহাড়িদের ঠেকাতে স্টুডেন্টস ফর সভারেন্টি নামক সংগঠনের নেতাকর্মীরা মাঠে নামলে দুই পক্ষের সংঘর্ষে কয়েকজন আহত হয়। আবার গতকাল পাহাড়ি ছাত্র-জনতার ব্যানারে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অভিমুখে মিছিল নিয়ে এলে হাইকোর্ট মোড়ে শিক্ষাভবনের সামনে বাধা দেয় পুলিশ। মিছিল ছত্রভঙ্গ করতে লাঠিচার্জ, গরম পানি, টিয়ারশেল ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করা হয়। প্রশ্ন হচ্ছে- এরা কারা? বাংলাদেশের সংবিধানে তো আদিবাসী নামে কোনো শব্দ নেই। পাহাড়ে যারা বসবাস করেন তারা নৃ-গোষ্ঠী। এদের (পাহাড়ি) রাস্তায় নামিয়ে পর্দার আড়াল থেকে কারা কলকাঠি নাড়ছে? আগের দিন মতিঝিলে পরের দিন হাইকোট এলাকায় পাহাড়ি ছাত্র-জনতার ব্যানারে রাজপথ গরমের চেষ্টা- নেপথ্যে কারা রয়েছেন। হঠাৎ করে কিছু পাহাড়ি ছাত্রের মিছিলে সংঘর্ষের ঘটনায় কিছু এনজিও ওই ছাত্র সংগঠনের পক্ষে অবস্থা নিয়ে ‘আদিবাসী’ শব্দটি ব্যবহার করে বিবৃতি দিচ্ছে।
তারা পাঠ্যপুস্তকে অদিবাসী শব্দ সংযোজনের দাবি জানাচ্ছে। তাহলে কী পাঠ্যপুস্তকে ‘আদিবাসী’ শব্দের সংযোজনের দাবির এই আন্দোলনের নেপথ্যে এনজিওগুলো কলকাঠি নাড়ছে? সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ নিয়ে তীব্র বিতর্ক শুরু হয়েছে। ফ্যাসিস্ট হাসিনার সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে ইতিহাস বিকৃতি করা হয়েছে। শেখ মুজিবুর রহমানকে ‘মহান নেতা’ বানানোর চেষ্টায় বাকশালী কায়দায় ইতিহাস রচিত হয়েছে এবং নতুন প্রজন্মের তা বিশ্বাস করাতে পাঠ্যপুস্তকে লিপিবদ্ধ করা হয়েছিল। সেটি পাঠ্যপুস্তক থেকে বাদ দিয়ে প্রকৃত ইতিহাস সংযোজন করা হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় এসে জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী কিছু পাঠপুস্তকে প্রকৃত ইতিহাস সংযোজন করেছে। আগামীতে আরো কিছু সংযোজন-বিয়োজন করা হবে। এ সময় হঠাৎ করে পাহাড়ি ছাত্র-জনতা নামের সংগঠনের এমন দাবি কেন? সংগঠনটি পাঠ্যপুস্তকে ‘আদিবাসী’ শব্দ প্রবেশসহ পাঁচ দফা দাবিতে রাজধানী ঢাকার মতিঝিলের এনসিটিবি ভবন ঘেরাও করতে যায়। এ সময় স্টুডেন্টস ফর সভারেন্টির সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে এবং কয়েকজন আহত হন। প্রশ্ন হচ্ছে হঠাৎ করে পাঠ্যপুস্তকে ‘আদিবাসী’ শব্দ সংযোজন করতে হবে কেন? ফ্যাসিস্ট হাসিনার শাসনামলেও তো পাঠ্যপুস্তকে এ শব্দ ছিল না। দফায় দফায় সংবিধান সংশোধন করা হলেও পাহাড়িতের নৃ-গোষ্ঠী হিসেবেই রাখা হয়েছে। আবার এনজিওগুলো রাষ্ট্রের সংবিধানের বিপক্ষে গিয়ে বিবৃতিতে ‘আদিবাসী’ শব্দ ব্যবহার করে তাদের দাবি বাস্তবায়নের পরামর্শ দিচ্ছে।
বাংলাদেশের পাহাড়ে বসবাসরত নৃ-জনগোষ্ঠী সমতলের অন্য সব নাগরিকের মতোই সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা ভোগ করছেন। সরকারি চাকরি থেকে শুরু করে সর্বত্র তারা কোটা সুবিধা পাচ্ছেন। তারা ইচ্ছা করলে বাংলাদেশের যেকোনো অঞ্চলে জায়গাজমি কিনতে পারছেন, অথচ বাংলাদেশের সমতল ভ‚মির নাগরিকদের ইচ্ছা করলেই পাহাড়ে জমি কেনার সুযোগ নেই। অন্তর্বর্তী সরকার আমজনতার প্রত্যাশা অনুযায়ী পাঠপুস্তকে সংযোজন-বিয়োজন করেছে। এখন পর্যন্ত কোনো শিক্ষাবিদ, রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজ ও সংগঠন এনসিটিবির সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ করেনি। জনগণ পাঠপুস্তকে সংযোজন-বিয়োজন মেনে নিয়েছে। কিন্তু হঠাৎ করে কেন এই ‘আদিবাসী’ শব্দ সংযোজনের দাবির আন্দোলন? আবার এনজিওগুলো থেকে ‘আদিবাসী’ শব্দ ব্যবহার করে বিবৃতি দিচ্ছে? বিদেশি টাকায় পরিচালিত এনজিওগুলো কী সংবিধান সংশোধন করতে চায়?
অপ্রিয় হলেও সত্য, জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হলেও রহস্যজনকভাবে উপদেষ্টা পরিষদে এনজিও প্রতিনিধির সংখ্যাই বেশি। এর নেপথ্যে কোন শক্তির হাত ছিল তা এখনো অজানা। হাজারো মানুষের রক্তের বিনিময়ে ফ্যাসিস্ট হাসিনার বিতাড়িত করে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারে এনজিও প্রতিনিধিদের প্রাধান্য দেয়ার রহস্য নিয়ে বিতর্ক চলছেই। তাহলে কি পাহাড়ে কর্মরত কিছু এনজিও ‘আদিবাসী ছাত্র-জনতা’ নামের সংগঠনের ব্যানারে পাহাড়ি ছাত্রদের মাঠে নামাচ্ছেন?
অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাদের মধ্যে এনজিও কর্মকর্তা বেশি হওয়ায় দেশের এনজিও সেক্টর কার্যত বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। গত কয়েক মাসে তাদের কার্যক্রমে তার প্রকাশ ঘটেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে দেখা যায়, রাজধানীর মতিঝিলে ‘পাহাড়ি ছাত্র-জনতার ওপর হামলার প্রতিবাদ এবং হামলাকারীদের গ্রেফতার ও বিচার’ দাবিতে ‘সংক্ষুব্ধ পাহাড়ি ছাত্র-জনতা’র ব্যানারে অর্ধশতাধিক পাহাড়ি ছাত্র-জনতা মিছিল নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি থেকে সচিবালয় অভিমুখে যাত্রা শুরু করে। মিছিলটি হাইকোর্ট মোড়ে এলে পুলিশ তাদের বাধা দেয়। ছাত্র-জনতা ব্যারিকেড ভেঙে অতিক্রম করতে চাইলে পুলিশের সঙ্গে তাদের ধাক্কাধাক্কি হয়। এই কয়েকজন পাহাড়ি ছাত্র এত শক্তি পেলো কোথায়? পাঠ্যপুস্তকে ‘আদিবাসী’ শব্দ সংযোজনের দাবিতে পাহাড়িদের রাস্তায় নামানোর নেপথ্যের খুঁটি হিসেবে কারা রয়েছেন? হাসিনাকে বাংলাদেশে ফেরানোর অপচেষ্টা ব্যর্থ হয়ে যাওয়ার পর দেশের অভ্যন্তরে এখনো যারা ভারতের তাঁবেদারি করে দিল্লির প্রতি নতজানু মানসিকতা নিয়ে রয়েছেন তারা দেশের ভেতরে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির চেষ্টায় কী পাহাড়ি ছাত্রদের আন্দোলনে বাতাস দিচ্ছেন? দেখা যাচ্ছে, পাহাড়িদের কয়েকজন রাস্তায় নামলে স্টুডেন্টস ফর সভারেন্টি কর্মীদের সঙ্গে হাতাহাতির ঘটনায় ফলাও করে গণমাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে। ছোট্ট খবর এত গুরুত্ব দিয়ে প্রকাশের নেপথ্যের রহস্য কী? তাহলে কি এনজিও আর দিল্লির তাঁবেদার ওই গণমাধ্যমগুলোই পাহাড়িদের মাঠে নামানোর নেপথ্যের কারিগর?
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
জুলাই বিপ্লবে আহত ১৪ জনকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানো হচ্ছে : পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়
আইএমএফসহ আন্তর্জাতিক সংস্থার শীর্ষ পদে এখনো ভারতীয়রা
ভারতে নির্যাতনের ভিডিও বাংলাদেশের সা¤প্রতিক ঘটনা হিসেবে প্রচার
দাদাবাড়ি বেড়াতে এসে খুন হলো শিশু সাফওয়ান, আটক ২
নরসিংদীতে ভ্রাম্যমাণ আদালতকে লক্ষ্য করে বালুদস্যুদের গুলিবর্ষণ
নরসিংদীতে রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির মানববন্ধন
রাঙামাটিতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ
আখাউড়ায় মর্টার সেল উদ্ধার
রাজবাড়ীতে আ.লীগ দুই নেতা কারাগারে
কমলগঞ্জে ৮২ শতক সরকারি খাস জমি উদ্ধার
প্রিমিয়ার ভার্সিটি ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান হলেন চসিক মেয়র
কুষ্টিয়ায় প্লাইউড বোর্ড কারখানায় আগুন
বিএনপি নেতা কায়কোবাদের দারুল উলূম হাটহাজারীসহ বিভিন্ন মাদরাসা পরিদর্শন
মাদারীপুরে পদ্মা-আড়িয়াল খাঁ নদীতে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন অব্যাহত
গফরগাঁও সাবেক এমপি বাবেল গোলন্দাজ দম্পতির বিরুদ্ধে দুদকের ২ মামলা
ময়মনসিংহে পুলিশ রেঞ্জ কমান্ড অ্যান্ড কন্ট্রোল সেন্টারের উদ্বোধন
নওফেল পরিবারের ২৫টি ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ
নিজ বাড়িতে ক্ষতিগ্রস্ত বন্ধুদের থাকার ব্যবস্থা করেছেন অ্যাঞ্জেলিনা জোলি
যুবদল নেতার বিরুদ্ধে মিথ্যা অপপ্রচারের অভিযোগ
ট্রাভেল ব্যান্ড হ্যালির ধুমকেতুর দুই গান