ঢাকা   শুক্রবার, ১৭ জানুয়ারি ২০২৫ | ৩ মাঘ ১৪৩১
জুলাই ঘোষণাপত্র নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সর্বদলীয় বৈঠক

ঐক্যবদ্ধ থাকলে সাফল্য আসবেই

Daily Inqilab ইনকিলাব

১৭ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০৪ এএম | আপডেট: ১৭ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০৪ এএম

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র চ‚ড়ান্ত করতে খসড়া ঘোষণাপত্র নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ঐতিহাসিক সংলাপ করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস। ঐতিহাসিক একই কারণে যে, এর আগে কোনো সরকারপ্রধানকে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত নেয়ার ঘটনা ঘটেনি। গতকাল বৃহস্পতিবার আয়োজিত সংলাপে রাজনৈতিক দলগুলো সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার প্রতি জোর দিয়েছেন। আলোচনায় অংশ নেয়া প্রায় সব দল জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র প্রণয়নে রাজনৈতিক দলগুলো ঐকমত্য হয়েছে। তবে এটি প্রণয়নে তাড়াহুড়ো না করে বিশদ আলোচনার ভিত্তিতে প্রণয়নের পক্ষে তারা। সবাই বলেছেন, এই ধরনের একটি ঘোষণাপত্র করার দরকার আছে। তবে এখানে অনেক সাজেশন আসছেÑ মোটাদাগে হলো, ঘোষণাপত্রে সবার অবদান বলতে হবে, ধারাবাহিকতা উল্লেখ করতে হবে। ঘোষণাপত্রের রাজনৈতিক বা আইনগত প্রকৃতি কী হবে সেটি স্পষ্ট করতে হবে। প্রধান উপদেষ্টাও রাজনৈতিক দলগুলোকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহŸান জানিয়ে বলেছেন, সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থেকে ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের চেতনা বাস্তবায়ন করতে হবে। ঐক্যে ফাটল ধরলে ষড়যন্ত্রকারীরা বিপর্যয় ঘটাতে পারে।
হেয়ার রোডে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে অনুষ্ঠিত বৈঠকে বিএনপি, জামায়াত, গণঅধিকার পরিষদ, এবি পার্টি, খেলাফত মজলিস, হেফাজতে ইসলামী, গণতন্ত্র মঞ্চ, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, এনডিএমসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা অংশ নেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির নেতারাও বৈঠকে অংশ নেন। প্রায় সবাই ঘোষণাপত্র প্রণয়নের বিষয়ে ঐকমত্য পোষণ করেছেন। বৈঠক শেষে গণমাধ্যমকে এমনটিই জানিয়েছেন সরকারের আইন বিচার ও সংসদ-বিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতারা। তবে বৈঠকে ছিল না এলডিপি, সিপিবি, ১২ দলীয় জোট, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের কোনো প্রতিনিধি। আলোচনায় অংশ না নেয়া দলগুলোর নেতারা জানান, তারা ইচ্ছা থাকা সত্তে¡ও আলোচনায় অংশ নিতে পারেননি। মূলত যে বিষয়ে মতামত দেবেন সে ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র’ যথাসময়ে পাননি।
মূলত প্রধান উপদেষ্টা কার্যালয় থেকে হঠাৎ করে রাজনৈতিক দলগুলোকে আমন্ত্রণ, আমন্ত্রণ প্রক্রিয়া যথাযথ না হওয়া, অনেক নেতাকে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ম্যাসেজ দিয়ে দাওয়াত দেয়া এবং তড়িঘড়ি করে ‘অনুষ্ঠান আয়োজন’ করায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়। সোশ্যাল মিডিয়ায় নেটিজেনদের অনেকেই লিখেছেন, প্রধান উপদেষ্টার আন্তরিকতা থাকলেও তার কার্যালয়ে দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের মূল কাজের চেয়ে সেমিনার-সিম্পোজিয়ামে বেশি মনোযোগ দেয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও সংবিধান বিশেষজ্ঞরা মনে করেন ছাত্র-জনতার অভ্যূত্থানের মধ্য দিয়ে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র’ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই ঘোষণাপত্র সরকারের সব ধরনের কাজ করার বৈধতা নিশ্চিত করবে। সম্প্রতি সংবিধান বিশেষজ্ঞ বিচারপতি আবদুর রহমান বলেছেন, গণ-অভ্যুত্থান বা বিপ্লব-পরবর্তী অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য ১০টি জিনিস খুবই প্রয়োজন। প্রথমটি হচ্ছেÑ ঘোষণাপত্র, আর দ্বিতীয়টি জনপ্রত্যাশা অনুযায়ী নির্বাচনের আয়োজন করা।
মূলত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি গত ৩১ ডিসেম্বর ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র’ প্রকাশ করতে চেয়েছিল। এ ঘোষণাপত্র নিয়ে তখন দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে নানা আলোচনা তৈরি হয়। কয়েক ঘণ্টা আগে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব সংবাদ সম্মেলন করে ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র’ সরকার ঘোষণা দেবে জানানোর পর ছাত্ররা সেদিন কর্মসূচি পরিবর্তন করে ‘মার্চ ফর ইউনিটি’ (ঐক্যের জন্য যাত্রা) কর্মসূচি পালন করে। তবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এই ‘ঘোষণাপত্র’ প্রকাশের জন্য ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত সময়সীমা বেঁধে দিয়েছিল।
জানা যায়, ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র’ খসড়া নিয়ে আলোচনার জন্য সব রাজনৈতিক দলকে আমন্ত্রণ জানানো হলেও অনেক দলের কাছে যথাসময়ে ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র’ খসড়া পাঠানো হয়নি। তাদের কেউ কেউ বলছেন, যে ঘোষণাপত্র নিয়ে মতামত দিতে হবে সেটি যথাসময়ে হাতে এলে তা পড়ে বুঝে মতামত দেয়া যেত।
বিএনপির অভিমত : বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, আমাদের কাছে সবচাইতে জরুরি ফ্যাসিবাদবিরোধী জাতীয় ঐক্যকে ধরে রাখা। যে জাতীয় ঐক্য তৈরি হয়েছে জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে। সেই জাতীয় ঐক্যকে গণঐক্যে রূপান্তরিত করে সেটিকে রাজনৈতিকভাবে আমরা যেন সাংস্কৃতিক চর্চা করতে পারি, রাজনৈতিক সংস্কৃতির মধ্যে নিয়ে আসতে পারি এবং সেই ঐক্যকে ধরে রেখে জাতিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারিÑ সেটিই আমাদের জন্য এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। তিনি বলেন, আমাদেরকে প্রধান উপদেষ্টা আহŸান করেছিলেন, আমরা কথা বলেছি, আমাদের পরামর্শ যা দরকার রাষ্ট্র পরিচালনা হিসেবে এবং বিভিন্ন বিষয়ে সেটি আমরা দিয়েছি। জুলাই গণ-অভ্যুত্থান সম্পর্কিত ঘোষণাপত্র নিয়ে কিছু আলোচনা হয়েছে, সব রাজনৈতিক দলের নেতারা তাদের বিভিন্ন পরামর্শমূলক বক্তব্য দিয়েছেন। আমরা প্রশ্ন করেছি, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র আসলেই সাড়ে পাঁচ মাস পরে কোনো প্রয়োজন ছিল কি-না? যদি থেকে থাকে তার রাজনৈতিক গুরুত্ব, ঐতিহাসিক গুরুত্ব ও আইনি গুরুত্ব কী? সেটি নির্ধারণ করতে হবে।
জামায়াত : জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, আমরা প্রধান উপদেষ্টার আমন্ত্রণে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র প্রস্তুত করার জন্য বৈঠকে উপস্থিত ছিলাম। সেখানে রাজনৈতিক দলের কাছ থেকে মতামত চাওয়া হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে একটি খসড়া পাঠানো হয়েছে। আলোচনায় প্রত্যেক দলের এবং বিশিষ্টজনের মতামত চাওয়া হয়েছে। তবে বিস্তারিত আলোচনা হয়নি। একটি কথা মোটাদাগে বলতে পারি, প্রত্যেকটি দল একটি ঘোষণাপত্র হওয়া প্রয়োজন, সেটি অনুভব করেছে। তবে তাড়াহুড়ো করলে ৫ আগস্টে গণ-অভ্যুত্থানের মূল চেতনাকে ধারণ করে ঘোষণাপত্র তৈরিতে ভুলভ্রান্তি হতে পারে। সময় নিতে হবে। সবার সাথে মতবিনিময় করতে হবে। তবে খুব বিলম্ব করে অন্য কোনো অরাজকতা ও ষড়যন্ত্রের জন্য অপেক্ষা করে তারা যেন সুযোগ না পায়।
হেফাজত : হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ ঢাকা মহানগরীর সভাপতি জুনায়েদ আল হাবিব বলেন, ঘোষণাপত্রের জন্য আমরা একটি কথা বলে এসেছি, অনেকগুলো বিষয় যেহেতু এখানে উল্লেখ করা হয়েছে কিন্তু সেই জায়গায় ২০১৩ সালের শাপলা চত্বরের গণহত্যাকেও সেখানে সংযোগ করতে হবে। সে কথাটি আমরা বলে এসেছি। ২০২১ সালে পাখির মতো গুলি করে ওলামায়ে কেরামকে হত্যা করা হয়েছে, হাজার হাজার ওলামায়ে কেরামকে গ্রেফতার করে বছরের পর বছর জেলখানায় বিনাবিচারে আটক রাখা হয়েছে, সেটিও এখানে উল্লেখ থাকতে হবে।
গণতন্ত্র মঞ্চ : ঘোষণাপত্র তৈরিতে তাড়াহুড়ো ও যেনতেন প্রক্রিয়া যেন না করা হয় সেদিকে খেয়াল রাখার আহŸান জানিয়ে গণতন্ত্র মঞ্চের শীর্ষ নেতা ও গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বলেন, আমরা বলেছি, এটি যেন তাড়াহুড়ো করে, যেনতেন প্রক্রিয়া না করা হয়। ঘোষণাপত্র তৈরির জন্য সরকারের দিক থেকে এই উদ্যোগটি নেয়া দরকার। যে প্রেক্ষাপট ও গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে জনগণের আকাক্সক্ষা প্রকাশ পেয়েছে ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের যেই দিকনির্দেশনা দেয়, এ বিষয়গুলো একটি দলিলে একত্রিত হতে পারে। তবে তার একটা পদ্ধতিগত দিক কী হবে? দলিলটি কীভাবে তৈরি হবে? এ বিষয়ে আমরা আমাদের প্রস্তাবগুলো তুলে ধরেছি। আশা করি, সেই অনুযায়ী অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কর্মপন্থা তৈরি করবে।
এবি পার্টি : আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান ফুয়াদ বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে উপদেষ্টা মাহফুজ আলম জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের খসড়া এবি পার্টিকে দিয়েছিলেন। আমরা একটি লিখিত পরামর্শ দিয়েছি। ঐতিহাসিক দলিল তৈরিতে উদ্যোগ নেয়ায় সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়ে ফুয়াদ বলেন, শব্দে শব্দে সব দলের একমত হওয়া কঠিন বা দরকারও নেই। আমাদের প্রক্রিয়ায় একমত হওয়া দরকার। কোন প্রক্রিয়া অনুসরণ করে গণ-অভ্যুত্থানের ফরমান লিখিত হবে, সব দল তা সম্মতির ভিত্তিতে গ্রহণ করবে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রের মতো।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র : বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্য সচিব আরিফ সোহেল বলেন, যদিও আমরা ১৫ জানুয়ারি মধ্যে ঘোষণাপত্র জারি করতে পারবে বলে আশা করেছিলাম। কিন্তু সরকারকে সেভাবে ত্বরিত পদক্ষেপ নিতে দেখিনি। তারপরও তারা যে উদ্যোগ গ্রহণ করছে তার জন্য সাধুবাদ জানিয়েছি। গণ-অভ্যুত্থানের অংশীজন মিলে আমরা ঐকমত্যে পৌঁছাতে পেরেছি। গণ-অভ্যুত্থানের অংশীজন ও সব গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলের ঐকমত্যের ভিত্তিতে জুলাই ঘোষণাপত্র জারি করা হবে, এটি এখন নিশ্চিত। পরবর্তী ধাপে আলোচনা করব জুলাই ঘোষণাপত্রে কী কী থাকবে। যা জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে রাজপথে নেমে আসা ছাত্র-জনতার আকাক্সক্ষার প্রতিফলন হবে। আমরা আশাবাদী, অবিলম্বে ঐকমত্যে পৌঁছে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের আশা-আকাক্সক্ষাকে জনগণের সামনে উপস্থাপন করতে পারব।
গণসংহতি আন্দোলন : জনসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বলেন, আমরা বলেছি, এটি যেন তাড়াহুড়ো করে, যেনতেন প্রক্রিয়ায় না করা হয়। ঘোষণাপত্র তৈরির জন্য সরকারের দিক থেকে এই উদ্যোগটি নেয়া দরকার। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধানের আমন্ত্রণে রাজনৈতিক দলসহ বিভিন্ন অংশীজনকে ডাকা হয়েছিল। সেই বৈঠকের উদ্দেশ্য ছিল জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের একটি ঘোষণাপত্র কিভাবে তৈরি করা যাবে। গণ-অভ্যুত্থানের যে প্রেক্ষাপট, গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে জনগণের চেয়ে আকাক্সক্ষা প্রকাশ ঘটেছে, গণ-অভ্যুত্থান ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের যেই দিকনির্দেশনা দেয়, এ বিষয়গুলো একটি দলিলে একত্রিত হতে পারে। তবে তার একটি পদ্ধতিগত দিক কী হবে? দলিলটি কীভাবে তৈরি হবে? এ বিষয়ে আমরা আমাদের প্রস্তাবগুলো তুলে ধরেছি। আশা করি, সেই অনুযায়ী অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কর্মপন্থা তৈরি করবে।
বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. নেতৃত্বে জুলাই অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র প্রণয়নের বিষয়ে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় বিএনপি, জামায়াত, হেফাজত ইসলাম, বামমঞ্চ, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, জাতীয় নাগরিক কমিটিসহ জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সব রাজনৈতিক শক্তি অংশগ্রহণ করেছে। বৈঠক জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র প্রণয়নের বিষয়ে সবাই একমত হয়েছে। সবাই বলেছেন, এ ধরনের একটি ঘোষণাপত্র করার দরকার আছে। তবে এখানে অনেক সাজেশন আসছে, মোটাদাগে হলোÑ ঘোষণাপত্রে সবার অবদান বলতে হবে, ধারাবাহিকতা উল্লেখ করতে হবে। তিনি বলেন, ঘোষণাপত্রের রাজনৈতিক নেচার বা লিগ্যাল নেচার কী হবে সেটি স্পষ্ট করতে হবে। বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে এই ঘোষণাপত্র আরো বেশি আলোচনার ভিত্তিতে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পক্ষে রাজনৈতিক শক্তি ছাত্র-জনতার সবার মধ্যে আলোচনা করে সর্বসম্মতিতে এটিকে প্রণয়ন করতে হবে। এর জন্য যত সময় প্রয়োজন নেয়া যেতে পারে, তবে এটিও বলছেÑ যাতে অযথা কালবিলম্ব না করা হয়, সেই মতামত দিয়েছে। সবাই ঐকমত্য হয়েছে, আরো নিবিড় পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে এ ধরনের ঘোষণাপত্র হওয়া উচিত। সবাই আশাবাদ ব্যক্ত করেছেনÑ এই প্রক্রিয়ায় আমরা সফল হতে সক্ষম হবো। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে সবাই একত্রিতভাবে ফ্যাসিস্ট গণহত্যাকারী শেখ হাসিনাকে পালিয়ে যেতে বাধ্য করেছি, তেমনি সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে এই ঘোষণাপত্র তৈরি করতে পারব। সময়সীমা নিয়ে কোনো আলোচনা হয়েছে কিনা, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, সব রাজনৈতিক দল ও ছাত্রদের সংগঠনের যারা অংশ নিয়েছে, সবাই বলেছেÑ ঐকমত্য পোষণ করে সর্বসম্মতিক্রমে একটি ঘোষণাপত্র তৈরি করার জন্য। যত সময় লাগুক তা যেন নেয়া হয়। তাড়াহুড়ো যেন না করা হয়। অযথা কালক্ষেপণ না করা হয়। এই লক্ষ্যে অনেকে প্রস্তাব করেছে আলোচনা করার জন্য একটি কমিটি গঠন করার জন্য। আমরা এই প্রস্তাবগুলো দ্রæত বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেবো। ঘোষণাপত্র নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে দূরত্ব সৃষ্টি হচ্ছে কি-না এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে কোনোরকম দূরত্ব সৃষ্টি হয়নি। শুধু কী পদ্ধতিতে করা হবেÑ বিভিন্ন রকম মতামত আসছে। সব মতামতকে আমরা স্বাগত জানাই। কোথাও আমরা অনৈক্যের সুর দেখি না; বরং সবাই বলছেÑ এই ঘোষণায় যেন সবার মালিকানা থাকে, সেই বিষয়ে বিভিন্ন মতামত আসছে। আমরা এমন মতামত ঐক্য আরো সুদৃঢ় হবে। ঘোষণাপত্র নিয়ে আরো আলোচনা হবে কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন, আলোচনা হতে পারে, কমিটি হতে পারে, ওনাদের (রাজনৈতিক দল) মতামত নিয়ে খুব দ্রæত একটি কর্মকৌশল ঠিক করব।
যা আছে ঘোষণাপত্রের খসড়ায় : জুলাই ঘোষণাপত্রের খসড়ায় এই ভ‚খÐের মানুষের স্বাধীনতা অর্জনের জন্য যুগের পর যুগ সংগ্রামের প্রসঙ্গ তুলে ধরা হয়। পাকিস্তান আন্দোলনের মাধ্যমে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন থেকে ১৯৪৭ সালে স্বাধীনতা অর্জন, ১৯৭১ সালে রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার কথা তুলে ধরা হয়।
এর পরের বিভিন্ন প্রেক্ষাপট তুলে কীভাবে ছাত্র-জনতার উত্তাল গণবিক্ষোভ গণ-অভ্যুত্থানে রূপ নেয় এবং প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যান, সে প্রসঙ্গও রয়েছে জুলাই ঘোষণাপত্রের খসড়ায়।
খসড়ায় বলা হয়, ‘...আমরা, ছাত্র-জনতা সেই অভিপ্রায়বলে আত্মমর্যাদা, সাম্য ও সামাজিক ন্যায়বিচারের যে আদর্শে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালিত হয়েছে, সেই আদর্শ বাস্তবায়নের জন্য সার্বভৌম জনগোষ্ঠী হিসেবে নিজেদের সংগঠিত করিলাম। আমরা, প্রহসনের নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত সংসদ ভেঙে দেয়ার আহŸান জানাচ্ছি এবং ছাত্র-জনতার পক্ষ থেকে রাষ্ট্রের নিরাপত্তা, স্থিতিশীলতা ও অখÐতা রক্ষার্থে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের আহŸান জানালাম। আমরা সুশাসন ও সুষ্ঠু নির্বাচন এবং ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার পুনরাবৃত্তি রোধ নিশ্চিত করার জন্য অন্তর্বর্তী সরকার প্রয়োজনীয় সংস্কার সম্পন্ন করবে, এই অভিপ্রায় ব্যক্ত করলাম।’
খসড়ায় আরো বলা হয়, ‘আমরা ফ্যাসিবাদ ও স্বৈরাচারকে লালন করার দলিল ১৯৭২ সালের সংবিধান সংশোধন বা প্রয়োজনে বাতিল করার অভিপ্রায় ব্যক্ত করলাম। আমরা জুলাই গণ-অভ্যুত্থানকালে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকার কর্তৃক সংঘটিত গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ এবং রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি লুটপাটের অপরাধগুলোর উপযুক্ত বিচার করা হবে, এই অভিপ্রায় ব্যক্ত করলাম।’
এতে আরো বলা হয়, ‘আমরা এই ঘোষণা প্রদান করলাম যে, ১৯৭২ এবং ১/১১ কালের রাজনৈতিক বন্দোবস্তের পরিবর্তন ঘটানোর জন্য আমাদের একটি নতুন জনতন্ত্র (রিপাবলিক) প্রয়োজন, যা রাষ্ট্রে সব ধরনের নিপীড়ন, শোষণ ও বৈষম্যের অবসান ঘটাবে এবং এ দেশের তরুণসমাজের প্রত্যাশাকে ধারণ করতে পারবে। আমরা এই অভিপ্রায় ব্যক্ত করলাম যে, এই ঘোষণাপত্রকে উপযুক্ত রাষ্ট্রীয় ও সাংবিধানিক স্বীকৃতি দেয়া হবে।’

 


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

জুলাই বিপ্লবে আহত ১৪ জনকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানো হচ্ছে : পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়
ভারতে নির্যাতনের ভিডিও বাংলাদেশের সা¤প্রতিক ঘটনা হিসেবে প্রচার
নওফেল পরিবারের ২৫টি ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ
কী আছে জুলাই অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্রের খসড়ায়
‘আরও আলোচনার ভিত্তিতে ঘোষণাপত্র প্রণয়নে গুরুত্ব দিয়েছেন সবাই’
আরও

আরও পড়ুন

জুলাই বিপ্লবে আহত ১৪ জনকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানো হচ্ছে : পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

জুলাই বিপ্লবে আহত ১৪ জনকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানো হচ্ছে : পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

আইএমএফসহ আন্তর্জাতিক সংস্থার শীর্ষ পদে এখনো ভারতীয়রা

আইএমএফসহ আন্তর্জাতিক সংস্থার শীর্ষ পদে এখনো ভারতীয়রা

ভারতে নির্যাতনের ভিডিও বাংলাদেশের সা¤প্রতিক ঘটনা হিসেবে প্রচার

ভারতে নির্যাতনের ভিডিও বাংলাদেশের সা¤প্রতিক ঘটনা হিসেবে প্রচার

দাদাবাড়ি বেড়াতে এসে খুন হলো শিশু সাফওয়ান, আটক ২

দাদাবাড়ি বেড়াতে এসে খুন হলো শিশু সাফওয়ান, আটক ২

নরসিংদীতে ভ্রাম্যমাণ আদালতকে লক্ষ্য করে বালুদস্যুদের গুলিবর্ষণ

নরসিংদীতে ভ্রাম্যমাণ আদালতকে লক্ষ্য করে বালুদস্যুদের গুলিবর্ষণ

নরসিংদীতে রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির মানববন্ধন

নরসিংদীতে রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির মানববন্ধন

রাঙামাটিতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ

রাঙামাটিতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ

আখাউড়ায় মর্টার সেল উদ্ধার

আখাউড়ায় মর্টার সেল উদ্ধার

রাজবাড়ীতে আ.লীগ দুই নেতা কারাগারে

রাজবাড়ীতে আ.লীগ দুই নেতা কারাগারে

কমলগঞ্জে ৮২ শতক সরকারি খাস জমি উদ্ধার

কমলগঞ্জে ৮২ শতক সরকারি খাস জমি উদ্ধার

প্রিমিয়ার ভার্সিটি ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান হলেন চসিক মেয়র

প্রিমিয়ার ভার্সিটি ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান হলেন চসিক মেয়র

কুষ্টিয়ায় প্লাইউড বোর্ড কারখানায় আগুন

কুষ্টিয়ায় প্লাইউড বোর্ড কারখানায় আগুন

বিএনপি নেতা কায়কোবাদের দারুল উলূম হাটহাজারীসহ বিভিন্ন মাদরাসা পরিদর্শন

বিএনপি নেতা কায়কোবাদের দারুল উলূম হাটহাজারীসহ বিভিন্ন মাদরাসা পরিদর্শন

মাদারীপুরে পদ্মা-আড়িয়াল খাঁ নদীতে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন অব্যাহত

মাদারীপুরে পদ্মা-আড়িয়াল খাঁ নদীতে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন অব্যাহত

গফরগাঁও সাবেক এমপি বাবেল গোলন্দাজ দম্পতির বিরুদ্ধে দুদকের ২ মামলা

গফরগাঁও সাবেক এমপি বাবেল গোলন্দাজ দম্পতির বিরুদ্ধে দুদকের ২ মামলা

ময়মনসিংহে পুলিশ রেঞ্জ কমান্ড অ্যান্ড কন্ট্রোল সেন্টারের উদ্বোধন

ময়মনসিংহে পুলিশ রেঞ্জ কমান্ড অ্যান্ড কন্ট্রোল সেন্টারের উদ্বোধন

নওফেল পরিবারের ২৫টি ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ

নওফেল পরিবারের ২৫টি ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ

নিজ বাড়িতে ক্ষতিগ্রস্ত বন্ধুদের থাকার ব্যবস্থা করেছেন অ্যাঞ্জেলিনা জোলি

নিজ বাড়িতে ক্ষতিগ্রস্ত বন্ধুদের থাকার ব্যবস্থা করেছেন অ্যাঞ্জেলিনা জোলি

যুবদল নেতার বিরুদ্ধে মিথ্যা অপপ্রচারের অভিযোগ

যুবদল নেতার বিরুদ্ধে মিথ্যা অপপ্রচারের অভিযোগ

ট্রাভেল ব্যান্ড হ্যালির ধুমকেতুর দুই গান

ট্রাভেল ব্যান্ড হ্যালির ধুমকেতুর দুই গান