আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলো কী বলছে?
২২ মার্চ ২০২৫, ০১:২৯ এএম | আপডেট: ২২ মার্চ ২০২৫, ০১:২৯ এএম

'ক্যান্টনমেন্ট থেকে' আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের পরিকল্পনা করা হচ্ছে বলে সদ্য আত্মপ্রকাশ করা দল জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ যে অভিযোগ করেছেন, তা নতুন আলোচনার সৃষ্টি করেছে বাংলাদেশের রাজনীতিতে। রাজনৈতিক দলগুলো থেকে মিশ্র প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেছে।
বর্তমানে সক্রিয় দলগুলোর মধ্যে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর নেতাদের কথায় ভিন্ন ভিন্ন মত প্রকাশ পেয়েছে। বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আজ ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, "গণহত্যা ও লুটপাটের সঙ্গে জড়িত নন, এমন কারও নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে কোনও বাধা নেই।" রিজভীর বক্তব্যে বিএনপির অবস্থানের এমন ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে যে, বিকল্প নেতৃত্ব নিয়ে আওয়ামী লীগ ফিরলে, তাতে তাদের আপত্তি থাকবে না।
তবে জামায়াতে ইসলামীর নেতাদের ভিন্ন অবস্থান দেখা যাচ্ছে। দলটির আমির শফিকুর রহমান বিষয়টি নিয়ে তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে পোস্ট দিয়েছেন। তিনি লিখেছেন, "আওয়ামী লীগের পুনর্বাসন জনগণ মেনে নেবে না।" জামায়াতের আমিরের বক্তব্য এনসিপি'র হাসনাত আব্দুল্লাহর অবস্থানকে সমর্থন করে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা। অন্য দলগুলোর মধ্যেও ভিন্ন ভিন্ন মত রয়েছে।
উল্লেখ্য, হাসনাত আব্দুল্লাহ বৃহস্পতিবার ২০ মার্চ মধ্যরাতে তার ভেরিফায়েড ফেসবুক প্রোফাইল থেকে একটি স্ট্যাটাস দিয়ে দাবি করেন, সেনাবাহিনী থেকে তাদের ওপর চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে, যাতে আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের প্রস্তাব মেনে নেওয়া হয়। বিষয়টিকে তিনি "রিফাইন্ড আওয়ামী লীগ" নামে "নতুন একটি ষড়যন্ত্র" হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
ইতোমধ্যে একাধিক রাজনৈতিক দলকেও এই একই প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে এবং দলগুলো শর্তসাপেক্ষে আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনে রাজি হয়েছে– সেনাবাহিনী থেকে গত ১১ই মার্চ এমনটাই তাকে জানানো হয়েছে বলে স্ট্যাটাসে দাবি করেছেন আব্দুল্লাহ।
একইভাবে, এ বিষয়ে সেনাবাহিনীর প্রতিক্রিয়া কী, তা জানার চেষ্টাও করা হয়েছে। আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা আজ শুক্রবার সকালে জানায়, হাসনাত আব্দুল্লাহ'র স্ট্যাটাসের ব্যাপারে তাদের কোনও বক্তব্য নেই।
বিএনপি নেতা রুহুল কবির রিজভী আজ সকালে একটি অনুষ্ঠানে বক্তব্যে বিষয়টি নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানান। তিনি বলেন, "আওয়ামী লীগের রাজনীতি নিয়ে কথা হচ্ছে, বিচার নিয়ে কথা হচ্ছে না। বিচারের পর আওয়ামী লীগকে জনগণের কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। আর জনগণ ক্ষমা করলে আমাদের কোনও আপত্তি নেই।"
জুলাই আন্দোলনে গণহত্যায় জড়িতদের বিচার নিশ্চিত করার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, "আওয়ামী লীগের যারা অপরাধী তাদের বিচার নিশ্চিত হওয়ার পর যারা হত্যা-লুটপাটে জড়িত নয়, তাদের যদি জনগণ রাজনীতি করার সুযোগ দেয় আমাদের কিছু বলার নেই।"
কিন্তু "যারা ছাত্র হত্যা করেনি, যারা অর্থ লোপাট করেনি, এমন সৎ ব্যক্তি নেতৃত্বে আসলে আওয়ামী লীগ কেন রাজনীতি করতে পারবে না?" এই প্রশ্নও রাখেন মি. রিজভী। দলটির শীর্ষ পর্যায়ের আরও দুজন নেতার সঙ্গে কথা বললে তারাও একই রকম কথা বলেছেন।
তবে হাসনাত আব্দুল্লাহর অবস্থানের সমর্থনে বক্তব্য এসেছে জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে। দলটির আমির শফিকুর রহমান ফেসবুকে পোস্টে লিখেছেন, "আওয়ামী লীগের পুনর্বাসন জনগণ মেনে নেবে না।"
তিনি আরও লিখেন, "আওয়ামী লীগের চ্যাপ্টার ৩৬ জুলাই ক্লোজড হয়ে গিয়েছে। নতুন করে ওপেন করার কোনই অবকাশ নেই।"
জামায়াতে আমির বিচারের প্রসঙ্গটি এনেছেন। তিনি লিখেছেন, এ সময় জনগণ অগ্রাধিকার ভিত্তিতেই গণহত্যার বিচারটাই দেখতে চায়।
"এর বাহিরে অন্য কিছু ভাবার কোনও সুযোগ নেই" বলে উল্লেখ করেন তিনি।
অভিযোগ হাসনাত আব্দুল্লাহর ব্যক্তিগত নাকি দলগত
গত রাতে হাসনাত আব্দুল্লাহ প্রথমে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে সম্বোধন করে লেখেন, "ড. ইউনুস, আওয়ামী লীগ ৫ই আগস্টেই নিষিদ্ধ হয়ে গেছে। উত্তর পাড়া ও ভারতের প্রেসক্রিপশনে আওয়ামী লীগের চ্যাপ্টার ওপেন করার চেষ্টা করে লাভ নেই।"
এখানে উল্লেখ্য, 'উত্তরপাড়া' এই শব্দ ব্যবহার করে বাংলাদেশে অনেকে সেনানিবাসকে বুঝিয়ে থাকেন।
হাসনাত আব্দুল্লাহর ওই প্রথম স্ট্যাটাসের পর এক ঘণ্টার ব্যবধানে তিনি আরেকটি স্ট্যাটাস দেন এবং লিখেন, তিনিসহ আরও দুই জনের কাছে গত ১১ই মার্চ দুপুর আড়াইটায় ক্যান্টনমেন্ট থেকে আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের ওই পরিকল্পনা উপস্থাপন করা হয়। তাদেরকে বলা হয়, তারা যেন আসন সমঝোতার বিনিময়ে ওই 'রিফাইন্ড আওয়ামী লীগ' নামের প্রস্তাব মেনে নেয়।
তিনি দাবি করেছেন, "আমাদেরকে আরো বলা হয়– রিফাইন্ড আওয়ামী লীগ যাদের দিয়ে করা হবে, তারা এপ্রিল-মে থেকে শেখ পরিবারের অপরাধ স্বীকার করবে, হাসিনাকে অস্বীকার করবে এবং তারা বঙ্গবন্ধুর আওয়ামী লীগ করবে এমন প্রতিশ্রুতি নিয়ে জনগণের সামনে হাজির হবে।"
এখন, স্ট্যাটাসের এসব বক্তব্য হাসনাত আব্দুল্লাহ'র ব্যক্তিগত নাকি তাদের দলগত? শুক্রবার দুপুরে হাসনাত আব্দুল্লাহকেই এ বিষয়ে সরাসরি জিজ্ঞেস করেছিলো বিবিসি বাংলা।
কিন্তু তিনি তখন সুনির্দিষ্টভাবে কোনও উত্তর দেননি। তাদের দল এনসিপির প্রথম সারির একাধিক নেতা বলেছেন, হাসনাত আব্দুল্লাহ'র স্ট্যাটাসের বিষয়বস্তু সম্বন্ধে এনসিপি জানতো।
এনসিপি'র সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, "হাসনাত আব্দুল্লাহ'র অভিজ্ঞতা ব্যক্তিগত, দাবি দলগত পর্যায়ের। আমরা শুরু থেকেই আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের দাবি জানিয়ে আসছি।"
কিন্তু হাসনাত আব্দুল্লাহ গতকাল হঠাৎ করে এই স্ট্যাটাস কেন দিলেন?
এই প্রশ্নের উত্তর আসে মি. হোসেনের কথাতেই। তিনি বিবিসিকে বলেন, "গতকাল হঠাৎ করে আবার নতুন করে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা হবে না বা আওয়ামী লীগ চাইলে নির্বাচন করতে পারে, এই ধরনের আলাপগুলো জোরালো হতে শুরু করলো।"
"তখন হাসনাত আব্দুল্লাহ তার মতামত ব্যক্ত করেছেন। স্ট্যাটাস দিবেন, তা আলাপ হয়নি। তবে দলের অবস্থানের বিষয়ে তার বক্তব্য ঠিক আছে," যোগ করেন তিনি।
প্রসঙ্গত, গতকাল প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস কমফোর্ট ইরোর নেতৃত্বে ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের একটি প্রতিনিধি দলের সাথে এক বৈঠকে বলেছিলেন যে, আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার কোনো পরিকল্পনা নেই অন্তর্বর্তী সরকারের। কিন্তু যারা হত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের সাথে জড়িত দেশের আদালতে তাদের বিচার করা হবে।
এরপর থেকেই আ'লীগকে নিষিদ্ধের দাবি ও রাজনীতিতে পুনর্বাসন প্রসঙ্গ আবারও আলোচনায় এসেছে।
এনসিপি'র সদস্য সচিব আখতার হোসেন মনে করেন, আওয়ামী লীগকে পুনরায় রাজনীতিতে ফেরানোর পরিকল্পনা রাষ্ট্রের জন্য হুমকির বিষয়।
পুনর্বাসনের পরিকল্পনা কারা করছে? প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, "শুধু দেশের ভেতর থেকে, মানে ক্যান্টনমেন্ট থেকে নয়, দেশের বাইরে থেকেও আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের চেষ্টা আছে।"
ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি বলেন, "পুনর্বাসনের পরিকল্পনা যে আছে, তা নানা সময়ে বোঝা যায়। ভারত শেখ হাসিনাকে আ'লীগের নেতাকর্মীদের সাথে যোগাযোগের সুযোগ করে দিচ্ছে।"
ক্যান্টনমেন্ট থেকে চেষ্টা হচ্ছে, "এই আশঙ্কাকে উড়িয়ে দেওয়া যায় না"এ কথা জানিয়ে তিনি আরও বলেন, যাদের ন্যূনতম "অনুশোচনারও বোধ নেই", তাদেরকে যদি আবারও রাজনীতি করানোর পরিকল্পনা হয়ে থাকে, তাহলে তারা তার বিরোধিতা করবেন।
এনসিপি'র সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীবও মনে করেন, "একটা প্রমাণিত গণহত্যাকারী দলকে কোনোভাবেই রাজনীতি করতে দেওয়া উচিত না।"
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পতাকা
যেভাবে দেখছে আওয়ামী লীগ
হাসনাত আব্দুল্লাহর অভিযোগ নিয়ে বিএনপি, জামায়াত ছাড়াও বিভিন্ন দল ভিন্ন ভিন্ন মত প্রকাশ করেছে।
আওয়ামী লীগ কিভাবে নিচ্ছে বিষয়টাকে, তা নিয়েও নানাআলোচনা চলছে। কারণ শেখ হাসিনাসহ দলটির মূল নেতৃত্বকে বাদ দিয়ে বিকল্প নেতৃত্বের কথা এসেছে।
দলটির যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম এখন দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বিবিসিকে বলেন, "চলমান বিষয়টি সম্বন্ধে আমার কিছু জানা নেই। কে বলেছে, কারা বলেছে, আমার জানা নেই।"
তার কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিলো যে সাবের হোসেন চৌধুরী, শিরীন শারমিন চৌধুরী এবং শেখ ফজলে নূর তাপসকে সামনে রেখে আওয়ামী লীগ রাজনীতিতে ফিরবে কি না।
উত্তরে তিনি বলেন, "বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা বারবার নির্বাচিত। তিনি তার দায়িত্ব এখনও পালন করছেন। তার নেতৃত্বেই আওয়ামী লীগ কাজ করে যাচ্ছে।"
"আওয়ামী লীগকে ঘিরে যা কিছুই হবে, তার নেতৃত্বে শেখ হাসিনা-ই থাকবেন," যোগ করেন তিনি। সূত্র: বিবিসি বাংলা।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও






আরও পড়ুন

বাংলাদেশ ফার্মাসিস্ট ফোরামের ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত

গফরগাঁওয়ে আস্কর আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের অপসারণের দাবিতে মানববন্ধন

আশুলিয়ায় দাওয়াত না পেয়ে যুবদলের ইফতার মাহফিলে বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে হামলার অভিযোগ

কটিয়াদীতে স্কুল ম্যানেজিং কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে বিএনপির দুই গ্রুপের সংঘর্ষ, নিহত-১,আহত-১০

সাংবাদিক ও মাদরাসা শিক্ষার্থীদের সম্মানে মনোহরগঞ্জ প্রেসক্লাবের ইফতার মাহফিল

নাইজারে মসজিদে হামলায় নিহত অন্তত ৪৪

তারেক রহমানের নেতৃত্বে ফ্যাসিবাদ বিতাড়িত হয়েছে-কামরুল হুদা

ওসমানীনগরে ধানক্ষেত থেকে যুবকের রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার

বিকাশ পে লেটার’ এর মাধ্যমে স্মার্টফোন কেনার সুবিধা আনলো সিটি ব্যাংক ও সেলেক্সট্রা

গত বছরের ভেঙ্গে ফেলা রোজার কাফফারা এ বছর দেওয়া প্রসঙ্গে?

এখনো পুলিশে বহাল সেই ৫০ কর্মকর্তা

রেমিট্যান্স পাঠাতে বিকাশে প্রবাসীদের আস্থা বাড়ছে

মতলবের মেঘনা নদীতে অভিযানে ২শত কেজি জাটকা ইলিশ জব্দ

দেশকে গিলে খেয়েছে শেখ পরিবার আর নোয়াখালীকে কাদের পরিবার - বিএনপি নেতা ফখরুল ইসলাম

ফের আনোয়ারায় আগুনে ভস্মীভূত ২ বসতঘর

সুন্দরবনে আগুন,নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে ফায়ার সার্ভিস

ঝিনাইদহে আ’লীগ নিষিদ্ধ ও শেখ হাসিনার বিচারের দাবীতে বিক্ষোভ সমাবেশ

বগুড়ায় ২৭ বছর পর বিএফএর কমিটিতে রদবদল

বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য বদলাতে কুরআনের সংবিধান প্রয়োজন- অধ্যাপক মাহমুদুল হাসান চৌধুরী

সেনাবাহিনীর সঙ্গে আমাদের কোনো দ্বন্দ্ব নেই: সারজিস আলম