গুপ্ত হত্যা ও ফরমায়েশি রায়ে সাজা দিয়ে অধিকার আদায়ের আন্দোলনকে স্তব্ধ করা যাবে না : দেলাওয়ার হোসেন

রাজধানীতে ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ জামায়াতের বিক্ষোভ

Daily Inqilab ইনকিলাব ডেস্ক

০৯ ডিসেম্বর ২০২৩, ০১:০০ পিএম | আপডেট: ০৯ ডিসেম্বর ২০২৩, ০১:০০ পিএম

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারি দেলাওয়ার হোসেন বলেন, ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য স্বৈরাচার আওয়ামী সরকার রাষ্ট্রের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও বিচার ব্যবস্থার অপব্যবহার করে প্রহসনের বিচারের মাধ্যমে বিরোধীদলের নেতাকর্মীদের সাজা দিচ্ছে। এই সরকার জনগণের ভোটাধিকার, বেঁচে থাকা ও মত প্রকাশের অধিকার, স্বাধীনভাবে চলাফেরার অধিকারসহ সকল মৌলিক মানবাধিকার হরণ করেছে। সরকার নির্বাচনের নামে প্রহসনের নাটক মঞ্চস্থ করতে আজ্ঞাবহ নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে তফসিল ঘোষণা করেছে।

তিনি বলেন, ইতোমধ্যেই এই ফরমায়েসি তফসিল সকল বিরোধী রাজনৈতিক দল, সামাজিক ও পেশাজীবি সংগঠন প্রত্যাখ্যান করেছে। অথচ সরকার নির্বাচনী বৈতরণী পার করতে বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদেরকে মিথ্যা ও বায়বীয় মামলায় গ্রেফতার করে কারারুদ্ধ করে রেখেছে। আদালত মানুষের সর্বশেষ আশ্রয়স্থল অথচ সরকার আদালতকে অপব্যবহার করে বিরোধীদলের নেতাকর্মীদের ওপর দমন-পীড়ন চালিয়ে মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে। যা আইনের শাসনকে ভূলুন্ঠিত ও বিচার বিভাগকেও প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। তিনি সরকারের এহেন হীন কর্মকাণ্ডের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে স্পষ্ট ভাষায় বলেন, গ্রেফতার করে, মামলা দিয়ে, গুপ্ত হত্যা ও ফরমায়েশি রায়ে সাজা দিয়ে অধিকার আদায়ের আন্দোলনকে স্তব্ধ করা যাবে না। আন্দোলন সংগ্রামের মাধ্যমেই জনগণ তার দাবী আদায় করেই ঘরে ফিরবে ইনশাআল্লাহ।

তিনি আজ শনিবার সকালে রাজধানীর মতিঝিলে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ আয়োজিত নিম্ন আদালতে প্রহসনের বিচার, ফরমায়েশি রায় ও গুপ্ত হত্যার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশে একথা বলেন। বিক্ষোভ মিছিলটি রাজধানীর মতিঝিল থেকে শুরু হয়ে আশেপাশের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়। এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারি ড. আব্দুল মান্নান, কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের কর্মপরিষদ সদস্য অধ্যাপক মোকাররম হোসাইন, শামছুর রহমান, ড. মোবারক হোসাইন, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের কর্মপরিষদ সদস্য আব্দুস সালাম, আব্দুর রহমান, কামরুল আহসান, মহানগরীর মজলিশে শুরা সদস্য শাহীন আহমেদ খান, এডভোকেট শাহ মাহফুজুর রহমান, ইসলামী ছাত্রশিবিরের ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সভাপতি তৌহিদুল ইসলাম, ঢাকা মহানগরী পুর্বের সভাপতি তাকরিম হাসান, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ, ঢাকা কলেজ সভাপতি আসিফ তাজওয়ার শিশির সহ ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের বিভিন্ন থানা আমীর ও সেক্রেটারীবৃন্দ।

দেলাওয়ার হোসেন বলেন, বর্তমান গণবিরোধী সরকার আদালতকে অত্যন্ত ন্যক্কারজনকভাবে ব্যবহার করে দেশের বিচার বিভাগকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। সরকারের ছক অনুযায়ী নিম্ন আদালতে বিচারকার্য পরিচালনা করে বিরোধী রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে শাস্তি দেয়া হচ্ছে। এমনকি সকল নিয়ম লঙ্ঘন করে গভীর রাত পর্যন্ত সাক্ষ্য গ্রহণ করে এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে শুনানি ছাড়াই বিরোধীদলের সম্ভাব্য নির্বাচনী প্রার্থীদেরকে দ্রুত সাজা দিয়ে নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করা হয়েছে। এ পর্যন্ত ৭ শতাধিক বিরোধী রাজনৈতিক নেতাকর্মীকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। যা বিচারক ও বিচার ব্যবস্থাকে কলঙ্কিত করেছে। আমীরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমান, নায়েবে আমীর ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মোঃ তাহের, সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খানসহ কেন্দ্রীয় ও মহানগরী নেতৃবৃন্দকে মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে নির্বাচনে অযোগ্য করার ষড়যন্ত্র অব্যাহত রয়েছে। আওয়ামী লীগের এসকল ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করতে, আমীরে জামায়াতসহ সকল নেতৃবৃন্দ ও আলেম ওলামাদের মুক্তির জন্য এবং জনগণের অধিকার আদায়ে চলমান আন্দোলনকে আরও তীব্র থেকে তীব্রতর করতে হবে। এজন্য তিনি সকলকে রাজপথে আরও কার্যকর ঐতিহাসিক ভুমিকা পালনের আহবান জানান।

তিনি আরও বলেন, ফ্যাসিস্ট সরকার বিরোধীদলের ন্যায়সঙ্গত ও গণতান্ত্রিক অধিকারের উপর অন্যায়ভাবে হস্তক্ষেপ করছে। দেশব্যাপী আন্দোলনরত বিরোধী দলগুলোর নেতাকর্মীদের গণগ্রেফতার শুরু করেছে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বাসা-বাড়িতে হানা দিয়ে নেতাকর্মীদের না পেলে পরিবারের অন্য সদস্যদের গ্রেফতার করে জুলুম-নির্যাতন চালাচ্ছে। এমনকি তাদের হাত থেকে নারী, শিশু ও বৃদ্ধরাও রেহাই পাচ্ছেনা। মানবতা বিরোধী এই সরকার দলীয় বাহিনী এবং প্রশাসনকে ব্যবহার করে আবারো গুপ্ত হত্যা শুরু করেছে। সম্প্রতি রাজশাহী, নাটোর, নওগাঁসহ বিভিন্ন স্থানে সরকারি দলের সন্ত্রাসীরা নম্বরবিহীন গাড়ীতে চড়ে জামায়াতসহ বিরোধীদলের নেতাকর্মীদের তুলে নিয়ে গিয়ে নির্যাতন করে গুরুতর আহত ও হাত-পা ভেঙ্গে দিচ্ছে এবং নির্মমভাবে হত্যা করছে। ইতোমধ্যে রাজশাহী ও রংপুরে জনপ্রতিনিধি ও অভিজ্ঞ ডাক্তার সহ ৩ জনকে অত্যন্ত নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। আমরা সরকারের এই সকল গুপ্ত হত্যা ও অপরাজনীতির ধৃক্কার জানাচ্ছি। অবিলম্বে খুনি ও হামলাকারীদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমুলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি। অন্যথায় জনগণ গণ-আদালতে এই সকল হত্যাকারী ও তাদের মদদদাতা এই সরকারের বিচার করে দৃষ্টান্ত মুলক শাস্তির আওতায় নিয়ে আসবে।

তিনি বলেন, আমাদের এই মাতৃভূমি এই সরকারের কাছে এক মুহূর্তের জন্য নিরাপদ নয়। সরকারের দুঃশাসনের কারনেই পশ্চিমা বিশ্ব দেশের অর্থনীতি, বাণিজ্য ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপর নিষেধাজ্ঞার হুমকি দিচ্ছে। সুতরাং এই সরকার ক্ষমতায় থাকলে অর্থনীতি ধ্বংস হয়ে যাবে। তাই দেশ ও দেশের মানুষকে বাঁচাতে এই সরকারের পতনের বিকল্প নেই। দেশবাসীকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, নিজেদের অধিকার আদায়ে, দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় রাজপথে নেমে আসুন, এই ফ্যাসিস্ট স্বৈরাচার সরকার পালাবার পথ খুজে পাবে না।

 

 


বিভাগ : রাজনীতি


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

কাশিমপুর কারাগার হতে জামিনে মুক্ত হলেন আল্লামা মামুনুল হক

কাশিমপুর কারাগার হতে জামিনে মুক্ত হলেন আল্লামা মামুনুল হক

খালেদা জিয়ার চিকিৎসা বাংলাদেশে নেই : চিকিৎসক

খালেদা জিয়ার চিকিৎসা বাংলাদেশে নেই : চিকিৎসক

উখিয়া থেকে অপহৃত ১০ জেলেকে দীর্ঘ ৩৬ ঘন্টা পর ছেড়ে দিল আরাকান আর্মি'র সদস্যরা

উখিয়া থেকে অপহৃত ১০ জেলেকে দীর্ঘ ৩৬ ঘন্টা পর ছেড়ে দিল আরাকান আর্মি'র সদস্যরা

বিশ্বের দেশে দেশে নিষেধাজ্ঞার মুখে ভারতীয় খাদ্যপণ্য

বিশ্বের দেশে দেশে নিষেধাজ্ঞার মুখে ভারতীয় খাদ্যপণ্য

নাইজারে মার্কিন ঘাঁটিতে অবস্থান নিল রুশ সেনা

নাইজারে মার্কিন ঘাঁটিতে অবস্থান নিল রুশ সেনা

মুদ্রাপাচার নিয়ে সরকার ও আইএমএফ রহস্যজনক কারণে নীরব : ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দীন

মুদ্রাপাচার নিয়ে সরকার ও আইএমএফ রহস্যজনক কারণে নীরব : ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দীন

বাইডেন না ট্রাম্প, কে হবেন প্রেসিডেন্ট? জানালেন বিখ্যাত ভোটকুশলী

বাইডেন না ট্রাম্প, কে হবেন প্রেসিডেন্ট? জানালেন বিখ্যাত ভোটকুশলী

তথ্য পাঠাচ্ছে চীনের বৃষ্টিপাত পরিমাপক স্যাটেলাইট

তথ্য পাঠাচ্ছে চীনের বৃষ্টিপাত পরিমাপক স্যাটেলাইট

ইইউ-তে ফ্রান্স চীনের তৃতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার

ইইউ-তে ফ্রান্স চীনের তৃতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার

বাইডেনের জনপ্রিয়তায় ভয়াবহ ধস

বাইডেনের জনপ্রিয়তায় ভয়াবহ ধস

পুরুষদের থেকে বেশি সময় বাঁচলেও অসুস্থ থাকেন মহিলারা, গবেষণাপত্রে প্রকাশ

পুরুষদের থেকে বেশি সময় বাঁচলেও অসুস্থ থাকেন মহিলারা, গবেষণাপত্রে প্রকাশ

তাইওয়ান ইস্যুতে ডব্লিউএইচও-কে ব্যবহার না করতে যুক্তরাষ্ট্রকে চীনের তাগিদ

তাইওয়ান ইস্যুতে ডব্লিউএইচও-কে ব্যবহার না করতে যুক্তরাষ্ট্রকে চীনের তাগিদ

বজ্রপাতে ৫ জেলায় প্রাণ গেল ১১ জনের

বজ্রপাতে ৫ জেলায় প্রাণ গেল ১১ জনের

ভারী বর্ষণে ফের ডুবল দুবাই, বন্ধ স্কুল ও অফিস

ভারী বর্ষণে ফের ডুবল দুবাই, বন্ধ স্কুল ও অফিস

ওমানে বজ্রসহ প্রবল বৃষ্টিপাতের রেকর্ড, ছুটি ঘোষণা

ওমানে বজ্রসহ প্রবল বৃষ্টিপাতের রেকর্ড, ছুটি ঘোষণা

পালক পুত্রের সঙ্গে বিছানায় থাই রাজনীতিবিদ

পালক পুত্রের সঙ্গে বিছানায় থাই রাজনীতিবিদ

ইসরাইল বিরোধী বিক্ষোভ দমাতে শিক্ষার্থীদের উপরে অকথ্য নির্যাতন মার্কিন পুলিশের

ইসরাইল বিরোধী বিক্ষোভ দমাতে শিক্ষার্থীদের উপরে অকথ্য নির্যাতন মার্কিন পুলিশের

ফিলিস্তিনিপন্থী বিক্ষোভ : যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন ক্যাম্পাস থেকে ২০০০ গ্রেফতার

ফিলিস্তিনিপন্থী বিক্ষোভ : যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন ক্যাম্পাস থেকে ২০০০ গ্রেফতার

পর্তুগালে ১৭ বছর ধরে ক্রীতদাস রাখার অভিযোগ, গ্রেপ্তার ৪

পর্তুগালে ১৭ বছর ধরে ক্রীতদাস রাখার অভিযোগ, গ্রেপ্তার ৪

এবার যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দিল ইরান

এবার যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দিল ইরান