ইসলামী তাহজিব-তামাদ্দুনের ধারক ও বাহক দৈনিক ইনকিলাব
০৩ জুন ২০২৩, ০৭:২৯ পিএম | আপডেট: ০৪ জুন ২০২৩, ০১:০৩ এএম
কালের বিবর্তনে সকল কিছুই বদলায়। চড়াই-উৎরাই, উত্থান-পতনের প্রভাবে বিশ্বের অনেক কিছুই বিলীন হয়ে যাচ্ছে। আবার নতুন নতুন আবিষ্কার আমাদের বিস্মিত করছে। প্রতিযোগিতার এই যুগে টিকে থাকা বড়ই মুশকিল। হাজারও বাধা-প্রতিবন্ধকতা উপেক্ষা করে সফলতার সাথে ৩৭ বছরের সুদীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে দৈনিক ইনকিলাব আজ ৩৮তম বছরে পদার্পই করতে যাচ্ছে। এ আনন্দঘন সময়ে ইনকিলাব পরিবারের সকল সদস্যের প্রতি রইলো প্রাণঢালা অভিনন্দন। দৈনিক ইনকিলাব, যা শুধু জনগণের কথা বলে, জনগণের সংসদ নামে পরিচিত অন্যান্য দৈনিক পত্রিকা আর ইনকিলাবের মাঝে ব্যাপক পার্থক্য রয়েছে। যেই সময়ে ৯৫ শতাংশ মুসলিমের দেশে ইসলামী ভাবধারা সম্পন্ন সংবাদ মাধ্যম প্রায় অনুপস্থিত বললেই চলে, ঠিক সেই সময়ে দৈনিক ইনকিলাব ইসলামী তাহজিব-তামাদ্দুন আকড়ে ধরে সামনে অগ্রসর হচ্ছে অবিরাম। পাড়া-মহল্লা থেকে জাতীয় পর্যায়ে, দেশ থেকে দেশান্তরে ইসলামের ঝান্ডা উড্ডয়নে অগ্রণী ভূমিকা রেখে আসছে। মুসলমানদের পরাস্থ করার জন্য আন্তর্জাতিকভাবে চক্রান্ত চলাকালে, ইসলাম ও মুসলমানের পক্ষে বলিষ্ঠ ও সাহসী সংবাদ প্রকাশের মাধ্যমে পাঠকদের হৃদয়ে স্থান করে নিতে সক্ষম হয়েছে। বেশ কয়েকবার দিপ্তিমান এ উজ্জ্বল নক্ষত্রকে নিভিয়ে দেয়ার পরিকল্পনা হলেও তা ব্যর্থ হয়েছে। এত কিছুর পরও স্বগৌরবে মাথা উঁচিয়ে দাঁড়িয়ে থাকার পেছনে সব থেকে বড় কারণ হলো আলেম-ওলামা, পীর-মাশায়েখের দোয়া, বিশেষ করে মরহুম মাগফুর মাওলানা এম এ মান্নান (রহ.) এর রূহানী ফায়েজ ও তাওয়াজ্জু।
আমি দেখেছি, ইনকিলাব প্রকাশের পূর্বে এর প্রতিষ্ঠাতা মাওলানা এম এ মান্নান (রহ.) ইনকিলাবের জন্য মক্কা মুকাররামা, মদীনা মুনাওয়ারা, বাগদাদের বড়পীর আব্দুল কাদের জিলানী (রহ.) এর মাজারসহ আরো অসংখ্য পবিত্র স্থান জিয়ারাতের মাধ্যমে আল্লাহর দরবারে প্রার্থনা করেছেন। হক্কানী পীর-মাশায়েখ, আলেম-ওলামার কাছে দোয়া কামনা করেছেন। তারই সুফল আজ গোটা ইনকিলাব পরিবার ও মুসলমানগণ ভোগ করছে। মরহুম হুজুরের স্বপ্ন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে তারই সুযোগ্য পুত্র আলহাজ্ব এ এম এম বাহাউদ্দীনের দূরদর্শী পদক্ষেপ ও সুদূরপ্রসারী ভাবনায় আজও অপরিবর্তিত রয়েছে দৈনিক ইনকিলাব। যুগের সাথে তাল মিলিয়ে নিজ আদর্শ থেকে একটুও বিচ্যুত হয়নি, বরং লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের ভীত আরো সুদৃঢ় হয়েছে।
ইসলামী ভাবধারাসম্পন্ন দৈনিক ইনকিলাব কেবল সংবাদ প্রকাশ করে, এমনটি নয়। বরং জনগণকে আদর্শ ও নিষ্ঠাবান সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার পাশাপাশি সমাজে শান্তি-শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে দেশকে বিশ্বের দরবারে মর্যাদাপূর্ণ আসনে আসীন করার প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। সময়োপযোগী লেখনির মাধ্যমে সাধারণ মানুষের মাঝে ভ্রাতৃত্ব, সম্প্রীতি, অহিংসা, মানবতাবোধ জাগ্রত করার কাজ করছে, যা পত্রিকাটির সম্পাদকীয়, উপসম্পাদকীয়, প্রবন্ধ, নিবন্ধ ও নানাবিধ ফিচারের মাঝে স্পষ্ট ফুটে ওঠে। তথ্য ও প্রযুক্তির অসৎ ব্যবহারে কারণে বিশ্ব আজ হুমকির মুখে, বিশেষ করে এর প্রভাবে যুবসমাজ ক্রমশ অন্ধকারে নিমজ্জিত হচ্ছে। মাদকের ভয়াবহ আগ্রাসন সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে। এসব থেকে সমাজকে মুক্ত রাখতে, দেশের যুবকদের অভিশাপের পথ থেকে ফিরিয়ে আনতে সকলের মাঝে ইসলামী মূল্যবোধ পৌঁছে দিচ্ছে। মুসলমানদের অতীত ইতিহাস বিশেষ করে মুসলিম শাষকদের মর্যাদাশীল শাসন ব্যবস্থা ও ধর্মীয় স্বাধীনতার চির সত্য ইতিহাস সগৌরবে প্রচার করে যাচ্ছে, যা পড়ে অনেকের মাঝে মুসলিম শাসকদের বিষয়ে সুধারণা সৃষ্টি হচ্ছে। এক কথায় বলা যায়, ইসলামী তাহজিব-তামাদ্দুনের ধারক ও বাহক দৈনিক ইনকিলাব।
দৈনিক ইনকিলাব একটি ব্যাতিক্রমধর্মী পত্রিকা, যার সাথে এদেশের আলেম-ওলামা, পীর-মাশায়েখের আত্মার সম্পর্ক বিদ্যমান। ইনকিলাব প্রতিষ্ঠা করে মাওলানা এম এ মান্নান (রহ.) এদেশের ইসলামী শিক্ষা বিশেষ করে মাদরাসা শিক্ষা উন্নয়নে যে অবদান রেখেছেন তা চিরদিন ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণালী অক্ষরে লেখা থাকবে। মাদরাসা শিক্ষা উন্নয়নের প্রয়োজনে তিনি মাদরাসা শিক্ষকদের প্রাণপ্রিয় সংগঠন বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের হাল ধরেন। তাঁর মেধা, বুদ্ধি ও অক্লান্ত পরিশ্রমে জমিয়াতুল মোদার্রেছীনকে আন্তর্জাতিক একটি সংগঠনে রূপ দেন। একই সাথে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন মসজিদে গাউছুল আজম ও জমিয়াতুল মোদার্রেছীন কমপ্লেক্স। একই ধারাবাহিকতায় তিনি প্রতিষ্ঠা করেন দৈনিক ইনকিলাব। দৈনিক ইনকিলাব, বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীন ও এদেশের আলেম সমাজ একই সূত্রে গাঁথা, যার ফলে আলেম ওলামা, পীর-মাশায়েখ, ইসলামী স্কলারদের প্রাণের খোরাক দৈনিক ইনকিলাব। ইনকিলাব প্রতিষ্ঠায় দেশের আলিয়া নেসাবের মাদরাসা শিক্ষকদের আন্তরিকতায় কোনো ধরনের ঘাটতি ছিল না। এ দৈনিক প্রকাশিত হওয়ার পূর্বেই শতস্ফুর্তভাবে সকলেই অগ্রিম গ্রাহক হয়ে নিজেদের ধন্য মনে করেছেন। তাঁরা ছিলেন দেশের সর্বজনশ্রদ্ধেয় আলেম, শিক্ষক নেতা। আজ তাঁরা অনেকেই দুনিয়াতে নেই। রয়ে গেছে ইনকিলাবের প্রতি তাদের নেক দোয়া ও আন্তরিকতা। সেই ধারা আজও অব্যাহত রয়েছে। মাদরাসা শিক্ষক তথা ধর্মপ্রাণ মানুষদের শত বছরের দাবি ইসলামী আরবী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় অনন্য অবদান রেখেছে দৈনিক ইনকিলাব ও জমিয়াতুল মোদার্রেছীন। এককথায় বলা যায় মাওলানা এম এ মান্নান (রহ.) এর প্রতিষ্ঠিত দৈনিক ইনকিলাব, জমিয়াতুল মোদার্রেছীন ও মসজিদে গাউছুল আজম কমপ্লেক্স একই বৃত্তে অঙ্গাঅঙ্গীভাবে পথ চলেছে আপন মহিমায়। আর এ পথচলায় দেশের ইসলাম প্রিয় তৌহিদী জনতা সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে চলেছেন। আশা করবো এ পথচলায় মাওলানা এম এ মান্নান (রহ.) এর চিন্তা চেতনা বাস্তবায়ন হবে ইনশাআল্লাহ্। আল্লাহপাক দৈনিক ইনকিলাবের অগ্রগতি ও সমৃদ্ধিকে আরো বাড়িয়ে দেবেন এই প্রত্যাশা করছি। রাব্বুল আলামীন আমাদের সকলকে কবুল করুন। আমীন।
লেখক: মহাসচিব, বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীন।
বিভাগ : বিশেষ সংখ্যা
বিষয় : year
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
বিলুপ্তির পথে মাটির ঘর
চোর সন্দেহে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ
প্রতিবন্ধী স্কুল শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের অভিযোগ
কেরু চিনিকলে আখ মাড়াই মৌসুমের উদ্বোধন
বিহারিরা কেমন আছে
লক্ষ্মীপুরে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি
আসাদ সরকারের পতন : নতুন সিরিয়ায় ইসরাইলি আগ্রাসন
মেটলাইফ বাংলাদেশের গ্রাহকরা ডিসকাউন্ট পাবেন ওশান প্যারাডাইস হোটেলস ও রিসোর্টে
১৫ নারী ও শিশুকে হস্তান্তর
আবাসন ও গার্মেন্ট খাতের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে
মেহেরপুরে বেড়েছে গরম কাপড় বিক্রি
কাশিয়ানীর হাট-বাজার নিষিদ্ধ পলিথিনে সয়লাব
অ্যানুয়াল বিজনেস কন্টিনিউয়িটি প্ল্যান ড্রিল ২০২৪ আয়োজন করলো ব্র্যাক ব্যাংক
সমস্যায় জর্জরিত আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স
সবুজ গালিচায় হলুদের সমারোহ
আখাউড়ায় ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের মেধা বৃত্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত
নিউ ইয়র্কের আদালতে অভিযুক্ত লুইজি
কিউবায় সমাবেশ
ঈশ্বরদীতে দূর্বৃত্তের হামলায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আহত
থিনেস্ট স্বাস্থ্যের