স্বাধীনতার অপরিহার্য আকাক্সক্ষা গণতন্ত্র

Daily Inqilab সরদার সিরাজ

২৬ মার্চ ২০২৫, ০১:৩০ এএম | আপডেট: ২৬ মার্চ ২০২৫, ০১:৩০ এএম

আজ ২৬ মার্চ দেশের ৫৫তম স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস। গণতন্ত্র ও অর্থনৈতিক মুক্তির আকাক্সক্ষায় ১৯৭১ সালের এ দিনে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের সূচনা ঘটে। ২৫ মার্চ রাতে পাক হানাদার বাহিনী ঢাকায় অতর্কিত ব্যাপক আক্রমণ চালায় নিরহ ও নিরস্ত মানুষের উপর। তাতে নারী ও শিশুসহ বহু মানুষ নিহত ও আহত হয়। রাজনৈতিক দিকনির্দেশনাহীন অবস্থায় সমগ্র জাতি আতংকিত ও হতবিহবল হয়ে পড়ে। এই অবস্থায় চট্টগ্রামস্থ বেঙ্গল রেজিমেন্টের বাঙালি মেজর জিয়াউর রহমান বিদ্রোহ করে কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে মহান স্বাধীনতার ঘোষণা দেন, যা বেতারে প্রচারিত হয়। সাথে সাথে বাঙালি সেনা, ইপিআর ও পুলিশ বিদ্রোহ করে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে লিপ্ত হয়। যুদ্ধে সর্বস্তরের মানুষ সম্পৃক্ত হয়। তন্মধ্যে যুব সম্প্রদায় বেশি। সাধারণ মানুষের অধিকাংশই স্বাধীনতা যুদ্ধে সার্বিক সহায়তা করে। কিছু বাঙালি বিভিন্ন বাহিনী তৈরি করে পাক হানাদার বাহিনীকে সহায়তা করে। প্রায় এক কোটি মানুষ প্রাণভয়ে পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নেয়। এ যুদ্ধে ভারত পূর্ণ সহায়তা করে। দীর্ঘ ৯ মাস মরণপণ যুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদ ও কয়েক লাখ মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে ১৬ ডিসেম্বর, ১৯৭১ মহান স্বাধীনতার পূর্ণতা অর্জিত হয়। বিশ্বের বুকে লাল-সবুজের পতাকার স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটে। সে স্বাধীনতা ৫৪টি বছর অতিক্রম করে ৫৫তম দিবসে পদার্পণ করেছে। এই ৫৪টি বছর বিশ্ব ইতিহাসের কালপরিক্রমায় তেমন কিছুই নয়- সামান্য। কিন্তু দেশ পরিক্রমায় অনেক দীর্ঘ। এই দীর্ঘ সময়েও কি দেশের স্বাধীনতার আকাক্সক্ষার অন্যতম গণতন্ত্র ও বাকস্বাধীনতা প্রতিষ্ঠা এবং অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জিত হয়েছে? কোনটিই হয়নি! দেশে দীর্ঘকাল চলেছে সেনা শাসন ও একদলীয় শাসন। বাকী সময় চলেছে গণতন্ত্র ও হাইব্রিড গণতন্ত্র। এখন চলছে নির্দলীয় নিরপেক্ষ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের শাসন। বিশ্বের নিকৃষ্টতম ফ্যাসিস্ট সরকারকে হটিয়ে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার দীর্ঘ আন্দোলন চলা অবস্থায় গত ৫ আগস্ট, ২০২৪ ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটেছে ব্যাপক প্রাণ হানির মাধ্যমে। অতঃপর বর্তমান সরকার ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়েছে বিশ্ববরেণ্য ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে। জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাসমূহ এবং বিশ্বের অধিকাংশ দেশ এই সরকারকে সমর্থন করেছে এবং সার্বিক সহায়তা করছে। দেশে অবাধ গণতন্ত্র ও বাকস্বাধীনতা প্রবর্তিত হয়েছে। কিন্তু এই সরকার নির্বাচিত নয়। তাই নির্বাচিত সরকার প্রতিষ্ঠার জন্য রাজনৈতিক দলগুলো জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য প্রবল দাবি জানাচ্ছে। অন্যদিকে, শেখ হাসিনা ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন। ফ্যাসিস্টদের অনেকেই দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছে, অনেকে গ্রেফতার হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে বহু মামলা হয়েছে। তন্মধ্যে অনেকগুলো হত্যা মামলা। উপরন্তু আ’লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবি উঠেছে। অপরদিকে, বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান এবং বিএনপির কিছু নেতার বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলা থেকে অব্যাহতি পেয়েছেন আদালতে। গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্বদানকারী ছাত্র নেতারা জাতীয় নাগরিক পার্টি নামে নতুন একটি রাজনৈতিক দল গঠন করেছে। দেশের বেশিরভাগ মানুষ ধর্মপ্রাণ এবং ধর্মীয় সম্প্রীতি বিশ্বখ্যাত।

লীগ সরকার কর্তৃক অর্থনীতিসহ দেশের সব খাত ধ্বংস হয়ে গেছে। প্রকাশ, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট তারিখে সরকারের অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক ঋণের মোট স্থিতি দাঁড়িয়েছে ১৮ লাখ ৩৫ হাজার কোটি টাকারও বেশি। এছাড়া, বেসরকারি ঋণও বিপুল পরিমাণে রয়েছে। অর্থাৎ দেশ ঋণের ফাঁদে পড়েছে, যার পরিমাণ জিডিপির অর্ধেকের বেশি। সেই ঋণের কিস্তি ও সুদ পরিশোধ করতে এখন নতুন করে ঋণ করতে হচ্ছে। অপরদিকে, ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৭ লাখ কোটি টাকার অধিক, যার বেশিরভাগ আদায়ের সম্ভাবনা কম। ফলে খেলাপি ঋণের ভারে ব্যাংকখাত ন্যূজ্ব হয়ে পড়েছে। এই অবস্থায় আন্তর্জাতিক ক্রেডিট রেটিং সংস্থাগুলো বাংলাদেশের ঋণমান অনেক কমিয়ে দিয়েছে কয়েকবার। এছাড়া, আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোরও বকেয়ার পরিমাণ অনেক। গত সরকারের সময়ে প্রায় ১৯ লাখ কোটি টাকা পাচার হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। তাই পতিত সরকার এতদিন ক্ষমতায় থাকলে ব্যাংকসহ বহু আর্থিক প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যেত। অন্যদিকে, টাকার মানের অনেক অধোগতি হয়েছে। মূল্যস্ফীতি বিশ্বের মধ্যে সর্বাধিক। ফলে সাধারণ মানুষের অবস্থা খারাপ হয়েছে। বর্তমান সরকার পাচারকৃত টাকা ফেরত আনা এবং প্রায় ধ্বংস হয়ে যাওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোকে পুনর্গঠন এবং মূল্যস্ফীতি কমানোর চেষ্টা করছে। আর্থিক খাতে স্থিতিশীলতা ফিরে এসেছে। রিজার্ভ, রেমিটেন্স ও রফতানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। মূল্যস্ফীতি কিছু কমেছে। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি।
দেশের সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলো ও স্থানীয় সরকারকে পূর্ণ স্বাধীন করা হয়েছে। কিন্তু দীর্ঘদিনেও তা কার্যকর হয়নি। যখন যারা ক্ষমতায় এসেছে, তখন তারা এসব ইচ্ছামত ব্যবহার করেছে! ফলে গণতন্ত্র ও সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হয়নি। তাতে দুর্নীতি বাড়তে বাড়তে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নের তকমা মিলেছে বার বার। আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়নি কখনো। মাদকে দেশ সয়লাব হয়ে যুব সম্পদায় ধ্বংসের দিকে ধাবিত হয়েছে। সব ধরনের দূষণে দেশ বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ও রানার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। নদী, খাল, বিল, হাওরের অধিকাংশ পানিশূন্য হয়ে পড়েছে ভারতের পানি আগ্রাসন ও সংস্কার না করায়! প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষার জন্য যে বনাঞ্চল থাকা দরকার, তার অর্ধেকও নেই দেশে। এভাবে দেশ মরুপ্রায় হয়ে পড়েছে। বায়ু দূষণের ক্ষেত্রে দেশ বিশ্বে প্রথম/দ্বিতীয় পর্যায়ে থাকছে প্রায়ই। তাতে বছরে লক্ষাধিক লোকের অকাল মৃত্যু হচ্ছে। তবুও বায়ু দূষণ রোধের কোন ব্যবস্থা নেই! আইকিউএয়ারের ‘বৈশ্বিক বায়ু মান প্রতিবেদন ২০২৪’ মতে, বায়ু দূষণে দেশ হিসাবে বাংলাদেশ দ্বিতীয় এবং নগর হিসাবে ঢাকা তৃতীয়। বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ ৭ম। ফলে প্রায়ই দেশে বড় ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ হচ্ছে। তাতে জানমালের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। সে ক্ষতিপূরণও পাচ্ছে না বাংলাদেশ!

বিশ্বায়নের প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে দেশের বড় শিল্পের বেশিরভাগ বন্ধ হয়ে শ্রমিকরা বেকার হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে। কোন মতে টিকে আছে ওষুধ, গার্মেন্ট ও ক্ষুদ্র ও কুঠির শিল্প। কিন্তু সেখানের শ্রমিকের মজুরি ও সুবিধাদি কাক্সিক্ষত নয়। আইএলওর তথ্য মতে, আনুষ্ঠানিক কর্মসংস্থানে বিশ্বে পিছিয়ে থাকা দেশগুলোর তালিকায় বাংলাদেশ সপ্তম। দেশের অনানুষ্ঠানিক কর্মসংস্থান খাতের শ্রমিকের অবস্থা আরো খারাপ! এছাড়া, দেশ বিদেশি পণ্য নির্ভর হয়ে রয়েছে। বিদ্যুৎ খাত চরম ভঙ্গুর। তাই লোডশেডিংয়ের মাত্রা ব্যাপক। অন্য জ্বালানিও আমদানিনির্ভর। দেশে খনিজ ও প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর। কিন্তু তা আহরণের চেষ্টা নেই তেমন। বিশাল সামুদ্রিক এলাকারও সদ্ব্যবহার হয়নি! কৃষি প্রধান দেশ হিসাবে বাংলাদেশের কৃষির অনেক উন্নতি হয়েছে। কিন্তু সরকারি সহায়তা না পাওয়ায়, কৃষি উপকরণের মূল্য অধিক হওয়ায় এবং কৃষিপণ্যের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত না হওয়ায় কৃষকের কোন উন্নতি হয়নি, বরং আর্থিক অধোগতি হয়েছে! বিনিয়োগের অবস্থা ভালো নয়। তাই কাক্সিক্ষত কর্মসংস্থান সৃষ্টি হচ্ছে না। ফলে বেকারত্ব মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। দেড় কোটির মতো লোক প্রবাসী রয়েছে। কিন্তু তারা দক্ষ না হওয়ায় মজুরি খুব কম। তবুও রেমিটেন্স দেশের অর্থনীতির প্রাণভোমরা। দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা সেকেলে, মানও খারাপ। কারিগরি শিক্ষার হার সরকারি হিসাবে ১৪% আর বেসরকারি মতে ৮-৯%। তাই একদিকে চলছে চরম বেকারত্ব অন্যদিকে দক্ষ লোকের ঘাটতি রয়েছে ব্যাপক। বিদেশ থেকে দক্ষ লোক এনে কাজ করতে হচ্ছে। তাতে রেমিটেন্সের যে আউট গোয়িং হচ্ছে তা রেমিটেন্স ইনকামিংয়ের প্রায় অর্ধেক! দেশে উদ্ভাবন ও প্রযুক্তির ব্যবহার খুব কম। ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়নি। বিচারাধীন মামলার সংখ্যা ৪২ লাখ,যার অধিকাংশ দীর্ঘদিনের। মামলা পরিচালনার ব্যয় অত্যধিক। তাই মামলা পরিচালনা করতে গিয়ে বহু মানুষ নিঃস্ব হয়ে পড়ছে। সামাজিক বিচার তথা গ্রামীণ বিচার নেই বললেই চলে। ফলে দেশে জোর যার মূলক তার অবস্থা চলছে! পর্যটন, বিনিয়োগ ও ব্যবসার পরিবেশ অনুকূল নয়, কর জিডিপির হার এক অংকের নীচে, যা বিশ্বে নিম্নতর। দেশের যোগাযোগ ও পরিবহন ব্যবস্থা প্রয়োজনানুগ নয়। যেটুকু আছে, তার মান খুব খারাপ। যানজট বিশ্বের মধ্যে সর্বাধিক। দেশে ১২ লাখের মতো রোহিঙ্গা শরণার্থী রয়েছে অনেকদিন থেকে। তাতে পরিবেশ ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ক্ষতি হয়েছে। ড. ইউনূসের আহ্বানে সাড়া দিয়ে জাতিসংঘের মহাসচিব গুতেরেস গত ১৩ মার্চ থেকে ৪ দিন বাংলাদেশ সফর করেছেন এবং রোহিঙ্গাদের দুর্দশা স্বচক্ষে দেখেছেন ও উখিয়ায় তাদের সাথে ইফতার করেছেন। বলেছেন, ‘শরণার্থীরা বাড়ি ফিরতে চায়, মিয়ানমার তাদের মাতৃভূমি। নিরাপদ, মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসন এই সংকটের প্রধান সমাধান। তিনি প্রধান উপদেষ্টার সাথে বৈঠকে বলেছেন, বাংলাদেশের সাম্প্রতিক সংস্কার ও রূপান্তরের এই গুরুত্বপূর্ণ সময়ে একটি টেকসই ও ন্যায়সঙ্গত ভবিষ্যৎ গড়ে তোলার লক্ষ্যে জাতিসংঘ সর্বদা আপনাদের পাশে থাকবে।’

স্বাধীনতাত্তোর থেকে দেশের উপর ভারতের আধিপত্য জেঁকে বসেছে! দেশের শিল্প-সাহিত্য, খেলাধুলা ও মিডিয়ার উন্নতি হয়নি তেমন। তাই দেশ বিদেশি সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের শিকার হয়েছে! বিশেষ করে ভারতের। অপরদিকে, আধুনিক যুগে উন্নতির প্রধান হাতিয়ার ইন্টারনেট, দেশে তার অবস্থা ভাল নয়। শুধুমাত্র শহর ভিত্তিক, গতিও খুব কম! এই অবস্থায় ড. ইউনূসের আহবানে সাড়া দিয়ে বর্তমান বিশ্বের প্রধান ধনী ও প্রযুক্তির গডফাদার ইলন মাস্ক বাংলাদেশে স্টারলিংক স্থাপনে সম্মত হয়েছেন। এটা হলে দেশে এক নবদিগন্ত উন্মোচিত হবে। দেশের সর্বত্রই সার্বক্ষণিক উচ্চগতির ইন্টারনেট সেবা পাওয়া যাবে। বাংলাদেশ বর্তমানে নিম্ন-মধ্য আয়ের দেশ হিসাবে রয়েছে। তবে, আগামী ২০২৬ সালের ২৪ নভেম্বর থেকে বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশের স্বীকৃতি পাবে। তখন ঋণ ও ব্যবসায়িক সুবিধা কমে যাবে। তাতে সংকটে পড়ার আশংকা রয়েছে। ড. ইউনূসের চীন ও জাপান সফর নিয়ে ব্যাপক কৌতূহল সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে চীন সফর নিয়ে। কারণ, এই সফরের পর তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত হতে পারে। এটা হলে মঙ্গা অঞ্চলের ভাগ্য খুলে যাবে। দ্বিতীয়ত: তিস্তার পানি চুক্তির জন্য ভারতের পিছে আর ছুটতে হবে না।

বিশ্বে দেশের অবস্থান সম্পর্কে কয়েকটি উদাহরণ হচ্ছে: ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের বিশ্ব গণতান্ত্রিক সূচক-২০২৪ মতে, ১৬৭টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ১০০তম। টিআই’র দুর্নীতির ধারণা সূচক-২০২৪ মতে, বিশ্বের ১৮০টি দেশের মধ্যে ‘সবচেয়ে দুর্নীতি গ্রস্ত’ দেশের তালিকায় বাংলাদেশ ১৪তম। হাঙ্গার হিলফের বিশ্ব ক্ষুধা সূচক-২০২৪ মতে, ১২৭টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ৮৪তম (মাঝারি মাত্রার ক্ষুধা পীড়িত দেশের তালিকাভুক্ত)। অক্সফামের ‘দ্য কমিটমেন্ট টু রিডিউসিং ইনইক্যুয়ালিটি ইনডেক্স-২০২৪ মতে, ১৬৪টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান শ্রমনীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে ১৬১তম ও শ্রমিকের অধিকার রক্ষায় ১৫৫তম। বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের ‘গ্লোবাল জেন্ডার গ্যাপ’-২০২৪ মতে, ১৪৬টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ৯৯তম। জাতি সংঘের মানব উন্নয়ন সূচক-২০২৪ মতে, বাংলাদেশ ১২৯তম। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম প্রণীত ভ্রমণ ও পর্যটন সূচক-২০২৪ মতে, বিশ্বের ১১৯টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ১০৯তম।

৫ আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের আকাক্সক্ষা অনুযায়ী সরকার সংস্কার করার লক্ষ্যে ৬টি সংস্কার কমিশনের সুপারিশ নিয়ে জাতীয় ঐকমত্য সৃষ্টি করার চেষ্টা করছে, যা বাস্তবায়িত হলে গণতন্ত্র ও সুশাসন প্রতিষ্ঠার স্থায়ী পথ সৃষ্টি হবে। ড. ইউনূস বহুবার বলেছেন, আগামী ডিসেম্বরে জাতীয় নির্বাচন হবে। তিনি গত ১৪ মার্চ জাতিসংঘের মহাসচিবের সাথে বৈঠকে বলেছেন, রাজনৈতিক দলগুলো যদি ‘সংক্ষিপ্ত সংস্কার প্যাকেজ’ নিয়ে একমত হয়, তবে নির্বাচন ডিসেম্বরেই হতে পারে। তবে তারা যদি ‘বৃহৎ সংস্কার প্যাকেজ’ গ্রহণ করে, তাহলে নির্বাচন আগামী বছরের জুনে অনুষ্ঠিত হবে। কিন্তু রাজনৈতিক দলগুলো সংস্কারের চেয়ে নির্বাচনকেই প্রাধান্য দিচ্ছে বেশি। এই অবস্থায় দেশের নতুন করে সংকট সৃষ্টি হওয়ার আশংকা রয়েছে! সর্বোপরি রাজনৈতিক দলগুলো দলের মধ্যে সংস্কারের দিকে গুরুত্ব দিচ্ছে না। কিন্তু রাজনৈতিক দলে সংস্কার না হলে, গণতন্ত্র না থাকলে রাষ্ট্রীয় গণতন্ত্র ও সংস্কার টেকসই হবে না। সংস্কারের প্রধান হচ্ছে- সাংবিধানিক সব প্রতিষ্ঠান ও স্থানীয় সরকারকে পূর্ণ স্বাধীন ও শক্তিশালীকরণ এবং নির্বাহী বিভাগের আওতামুক্ত করা, জাতীয় সংসদকে সার্বভৌম করা এবং প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য সৃষ্টি করা এবং কেউই সরকার ও দল মিলে একাধিক পদে এবং দুই মেয়াদের বেশি পদে আসীন হতে না পারা। এসব হলে কারো মধ্যে স্বৈরতান্ত্রিক মানসিকতা সৃষ্টি হবে না। দেশে অনেক নতুন ভালো নেতা সৃষ্টি হবে। দেশের মঙ্গল হবে। উপরন্তু গণতন্ত্র ও সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হবে। স্মরণীয় যে, ভালো নেতৃত্বের অভাবে ব্যাপক সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও দেশের কাক্সিক্ষত ও সার্বিক উন্নতি হয়নি। কিছু লোক লুটপাট করে অতি ধনী হয়েছে। এ ক্ষেত্রে কয়েকবার বিশ্ব চ্যাম্পিয়নও হয়েছে। বর্তমানে ব্যাংকে কোটিপতি হিসাবধারীর সংখ্যা এক লাখের অধিক। অন্যদিকে, ৭৩% লোকের পুষ্টিকর খাদ্য কেনার সক্ষমতা নেই বলে বিশ্ব ব্যাংকের অভিমত। অর্থাৎ দেশে আয় বৈষম্য জিনি সহগ অনুযায়ী প্রায় সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে, যা মহান স্বাধীনতার আকাক্সক্ষার পরিপন্থী। তাই স্বাধীনতার আকাক্সক্ষা পূরণ করার জন্য দেশে প্রকৃত গণতন্ত্র ও সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা আবশ্যক।এটাই হোক এবারের স্বাধীনতা দিবসের অঙ্গীকার।

লেখক:সাংবাদিক ও কলামিস্ট।


বিভাগ : বিশেষ সংখ্যা


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

জাগ্রত ভয় মনের মাঝে
আর কেউ বেঁচে নেই
সময়
মার্চের পদাবলি
অপসৃয়মাণ রেলগাড়ি
আরও
X

আরও পড়ুন

৮ গোলের অবিশ্বাস্য লড়াই শেষে ফাইনালে রিয়াল মাদ্রিদ

৮ গোলের অবিশ্বাস্য লড়াই শেষে ফাইনালে রিয়াল মাদ্রিদ

ঈদ মিছিলে মূর্তি ঈদের মূল স্পিরিটের সঙ্গে সাংঘর্ষিক: হেফাজত

ঈদ মিছিলে মূর্তি ঈদের মূল স্পিরিটের সঙ্গে সাংঘর্ষিক: হেফাজত

ফার্নান্দেসের রিয়ালে যাওয়ার ব্যাপারে যা বললেন তার কোচ

ফার্নান্দেসের রিয়ালে যাওয়ার ব্যাপারে যা বললেন তার কোচ

রোনালদোকে ছাড়িয়ে যেতে পারেন এমবাপে: আনচেলত্তি

রোনালদোকে ছাড়িয়ে যেতে পারেন এমবাপে: আনচেলত্তি

উইন্ডিজের নেতৃত্ব ছাড়লেন ব্র্যাথওয়েট

উইন্ডিজের নেতৃত্ব ছাড়লেন ব্র্যাথওয়েট

ঈদের আনন্দ ৫ আগস্ট শুরু হয়েছে : শিবির সভাপতি

ঈদের আনন্দ ৫ আগস্ট শুরু হয়েছে : শিবির সভাপতি

আমাকে যুদ্ধাপরাধের মামলায় ফাঁসানোর ভয় দেখানো হয়েছিল: জামায়াত আমির

আমাকে যুদ্ধাপরাধের মামলায় ফাঁসানোর ভয় দেখানো হয়েছিল: জামায়াত আমির

বাকিটা জীবন বুড়িচং-ব্রাহ্মণপাড়াবাসীর পাশে থাকতে চাই : ব্যারিস্টার আব্দুল্লাহ আল মামুন

বাকিটা জীবন বুড়িচং-ব্রাহ্মণপাড়াবাসীর পাশে থাকতে চাই : ব্যারিস্টার আব্দুল্লাহ আল মামুন

পশ্চিমবঙ্গ-গুজরাটে আতশবাজি কারখানায় বিস্ফোরণ, নিহত ২১

পশ্চিমবঙ্গ-গুজরাটে আতশবাজি কারখানায় বিস্ফোরণ, নিহত ২১

আমাদের চেতনার প্রাণপুরুষ আল্লামা ফুলতলী (র.)

আমাদের চেতনার প্রাণপুরুষ আল্লামা ফুলতলী (র.)

লক্ষ্মীপুরে অস্ত্রধারীদের গুলিতে শিশু গুলিবিদ্ধ

লক্ষ্মীপুরে অস্ত্রধারীদের গুলিতে শিশু গুলিবিদ্ধ

রামুতে গুলিতে নিহতের ঘটনায় ২ টি দেশীয় তৈরি অস্ত্র উদ্ধার আটক ২

রামুতে গুলিতে নিহতের ঘটনায় ২ টি দেশীয় তৈরি অস্ত্র উদ্ধার আটক ২

সিলেটে ৬ তলা ভবন থেকে লাফ দিয়ে এক গৃহবধুর আত্মহত্যা

সিলেটে ৬ তলা ভবন থেকে লাফ দিয়ে এক গৃহবধুর আত্মহত্যা

ঈদ পরবর্তী শুভেচ্ছা বিনিময়ে মোরেলগঞ্জের পথে প্রান্তরে বিএনপি নেতা কাজী শিপন

ঈদ পরবর্তী শুভেচ্ছা বিনিময়ে মোরেলগঞ্জের পথে প্রান্তরে বিএনপি নেতা কাজী শিপন

ঈদে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত পর্যটকে মুখরিত

ঈদে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত পর্যটকে মুখরিত

কুমিল্লায় বিদ্যুতের খুঁটিতে ধাক্কা বাসের, নিহত ৩

কুমিল্লায় বিদ্যুতের খুঁটিতে ধাক্কা বাসের, নিহত ৩

দাউদকান্দিতে এক যুবকের লাশ উদ্ধার

দাউদকান্দিতে এক যুবকের লাশ উদ্ধার

ঈদের পাঞ্জাবি নিয়ে বিপাকে বাবর, ডিজাইনারকে ছাঁটাই করতে বললেন ভক্তরা

ঈদের পাঞ্জাবি নিয়ে বিপাকে বাবর, ডিজাইনারকে ছাঁটাই করতে বললেন ভক্তরা

লন্ডনে ঈদের জামাতে প্রকাশ্যে হাছান মাহমুদ

লন্ডনে ঈদের জামাতে প্রকাশ্যে হাছান মাহমুদ

সুপ্রিম কোর্টে মুখ পুড়ল যোগী আদিত্যনাথের

সুপ্রিম কোর্টে মুখ পুড়ল যোগী আদিত্যনাথের