মুসলিম ইতিহাসের পুনর্গঠন : নীতি ও তত্ত্ব

Daily Inqilab মুসা আল হাফিজ

২৬ মার্চ ২০২৫, ০১:৩০ এএম | আপডেট: ২৬ মার্চ ২০২৫, ০১:৩০ এএম

ইতিহাসের প্রকৃতি এবং ইতিহাস শব্দটির বিভিন্ন ব্যবহারের মধ্যে পার্থক্য করতে ভাষার অক্ষমতা রয়েছে। তবুও সত্তা হিসেবে ইতিহাসকে পরিচিত করা যায়। সে অর্থে ইতিহাস হল ইতিহাসবিদ এবং তার তথ্যের মধ্যে মিথস্ক্রিয়ার একটি ক্রমাগত প্রক্রিয়া। কিংবা ইতিহাস হলো, অতীত এবং বর্তমানের মধ্যে একটি অবিচ্ছিন্ন কথোপকথন। অনেকেই মনে করেন, ইতিহাস হলো প্রতিষ্ঠিত সত্যের অনুসন্ধান। ঊনবিংশ শতাব্দীতে এই মতের প্রচলন ছিলো খুব। পরবর্তীতে এর প্রভাব সঙ্কুচিত হয়ে গেছে। বহু লোক ইতিহাসকে তথ্যের ব্যাখ্যা এবং সেগুলোকে বিন্যস্ত করার প্রকল্প হিসেবে দেখেন। প্রকৃতপক্ষে ইতিহাসবিদ সত্যসৃষ্টি যেমন করেন না, তেমনি সত্য নির্বাচনও করেন না। বরং তিনি তথ্য অনুসন্ধান করেন, সেগুলি সংগ্রহ করেন, তারপরে নিজের ঐতিহাসিক ধারণার মাধ্যমে সেগুলোর ব্যবহার ঘটান, যার মাধ্যমে সত্য ও যথার্থতার একটি প্রস্তাবনা স্পষ্ট হয়ে উঠে।

কিন্তু এ প্রস্তাবনার সাথে ইতিহাসবিদের মন-মানস, রুচি, অবস্থান এবং আত্মবিনিয়োগের মাত্রা ও বিচারসামর্থ্যের সম্পর্ক গভীর, যা সীমাবদ্ধতার পরিসরকে অতিক্রম করতে পারে না। অতএব ঐতিহাসিক বক্তব্য প্রকৃতপক্ষে বিচার ও প্রস্তাবনা। প্রশ্নহীন সত্য নয়। এর যথার্থ্য ঐতিহাসিক যাচাই প্রক্রিয়ার যথার্থতার সাথে সম্পর্কিত। এসব জায়গায় পারদর্শিতা না থাকলে ইতিহাস চর্চা একটা স্টুপিড অকুপেশনে পরিণত হয়। ইতিহাসের অধঃপতন ঘটে, আসে বিকৃতি।

সময়ের পরিবর্তনের পরিক্রমাকে অধ্যয়ন করা ইতিহাসের কাজ। মানব সমাজের প্রতিটি দিক তার দৃষ্টিসীমায় থাকে। ঘটনাচক্র ও জীবনের চলমান ধারাবাহিকতাকে সে ভেতর ও বাইরের চিত্র ও চরিত্রের সমবায়ে বুঝার চেষ্টা করে। এক্ষেত্রে রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক, বৈজ্ঞানিক, প্রযুক্তিগত, চিকিৎসা, সাংস্কৃতিক, বুদ্ধিবৃত্তিক, ধর্মীয় এবং সামরিক উন্নয়ন সবই তার দৃষ্টিসীমায় থাকে। সবই তার আলোচ্য। প্রতিটি ভূবনে সে বিহার করে। সেই বিহার কোনো বিচ্ছিন্ন পরিক্রমা নয়। বরং এর মধ্যে রয়েছে শৃঙ্খলা। ইতিহাস তাই একটি বিজ্ঞান। যা পদ্ধতিগত চিত্রায়ন করে অতীতের ঘটনা ও তার অনুক্রমকে, এর কারণ ও প্রক্রিয়াকে। এই চিত্রায়নে ব্যবহৃত হয় তথ্যের উৎস ও ক্রনিকলস, ভাষ্য ও ভাষ্যকার, প্রতœতাত্ত্বিক উপাদান ও সরকারি নথি, অধ্যয়ন, বিবেচনা ও যুক্তিবিজ্ঞান।

সমসাময়িক সাহিত্য, পরিবেশ, প্রতিবেশ, ভূপ্রকৃতি, জীবনবিকাশের অব্যাহত অভিজ্ঞতা এবং জীবনধারার অধ্যয়ন মানুষের অগ্রগতিকে ব্যাখ্যা করার ঐতিহাসিক শৃঙ্খলায় যুক্ত। এই শঙ্খলার প্রয়োজনে জন্ম নিয়েছে ইতিহাস পাঠ ও বিচারের বিভিন্ন পন্থা ও অধ্যয়ন পদ্ধতি। আধুনিক জ্ঞানকলায় স্বীকৃত পদ্ধতিগুলোকে মোটাদাগে তিন ভাগে ভাগ করা হয়। এক. সাধারণ বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি। দুই. ঐতিহাসিক পদ্ধতি, তিন. ঐতিহাসিকদের দ্বারা বিজ্ঞানের বিভিন্ন এলাকা থেকে ধার করা সূত্র, ধারণা ও পরিকল্পনার সমাবেশ, যা ঐতিহাসিক ভাষ্য গঠন করে।

ইতিহাসের কোনো এক নির্দিষ্ট সংজ্ঞার সাথে একমত নন ইতিহাসবিদগণ। তবে ইতিহাসকে সংজ্ঞায়িত করার ক্ষেত্রে ইতিহাস কথাটার তিনটি স্তরকে বিবেচনায় রাখতে হবে। প্রথমত ইতিহাস মানব- কার্যকলাপের সামগ্রিকতাকে বোঝায়। অর্থাৎ মানুষ তাদের ইতিহাস জুড়ে যে সব কাজ সম্পন্ন করেছে, সেগুলো ইতিহাসের খাবার। তবে প্রতিটি ঘটনা ইতিহাসে পরিণত হবে, বিষয়টি এমন নয়। ইতিহাস তার নিজস্ব চলার স্রোতে যা কিছুকে অঙ্গীভূত করে নেবে, সেগুলো ঐতিহাসিক ব্যাপার হয়ে উঠবে। দ্বিতীয়ত, ইতিহাস তার বিবরণীসমূহকে কালানুক্রমিক রেকর্ড হিসাবে শৃঙ্খলা দান করে। ঘটনাকে তার পূর্বসূরী ঘটনার পরম্পরা থেকে বিচ্ছিন্নভাবে দেখে না। ঐতিহাসিক পরম্পরায় দু‘টি উপস্থর রয়েছে। পয়লা স্তর উদ্দেশ্যের প্রতি মনোযোগী। অর্থাৎ ঘটনার পিছনে ন্যায্যতা আছে কি না, বিবরণ ও ঘটনার মধ্যে সমন্বয় ও যথার্থতা আছে কি না এবং ঐতিহাসিক পরিক্রমায় ঘটনা ও বিবরণসমূহের ব্যাখ্যাগুলো কী ও কেমন, সে বিষয়ক জ্ঞান জরুরি। দুসরা স্তর হল, ঐতিহাসিক বিষয়বস্তুর পরিপ্রেক্ষিতে ঘটনাসমূহের এমন রেকর্ডিং, যা থেকে শিক্ষা ও বার্তাসমূহ সুষ্পষ্ট হয়ে উঠবে। আল কুরআন বার বার আমাদেরকে ঐতিহাসিক ঘটনার মুখোমুখি করে, ভ্রমণ করতে, ধ্যান করতে এবং পাঠ করতে বলে, এর মূলে আছে সেই ইবরত হাসিলের তাড়না, যেন অতীতের ভেতর থেকে বর্তমান ও ভবিষ্যতের পঠন-পুনর্পঠন করতে পারে মানুষ, সেখান থেকে লাভ করে শিক্ষা, পথের দিশা।

তৃতীয়ত, ইতিহাস একটি বিজ্ঞান, একটি একাডেমিক সিস্টেম, যা বৈজ্ঞানিক উপায় ও প্রক্রিয়া সত্যতা ও যথার্থতা যাচাই ও বিশ্লেষণে জ্ঞানপ্রাজ্ঞ অন্তর্দৃষ্টি সরবরাহ করবে।

সেই উসূল আসলে কী, যা দিয়ে আমরা ইতিহাসের নামে চলতি বয়ানকে যাচাই করবো? ইবনে খালদুন বয়ন করেছেন এর কাঠামো। ইতিহাসবিদের বয়ান কতোটা সত্যের কাছাকাছি, তা নির্ণয়ে দেখতে হবে, যে ঘটনার বিবরণ তিনি দিচ্ছেন, সেই ঘটনা ঘটার কারণগুলো পরিপূর্ণ মাত্রায় তিনি জেনেছেন কি না, ঘটনার সাথে সম্পর্কিত প্রেক্ষাপট সমূহ, তার শুরু, বিকাশ ও মাত্রা তলিয়ে দেখেছেন কি না। এসব করতে গিয়ে তিনি ঐতিহাসিক তথ্যের বিকৃতি ঘটিয়েছেন কি না। ঐতিহাসিক কখন সত্যের বিকৃতি ঘটান কিংবা ইতিহাসের নামে অসত্যকে চালিয়ে দেন? মোটা অর্থে কেন ও কখন ভুল করেন ইতিহাসবিদ? ইবনে খালদুনের মতে, এর আছে সাত কারণ।

১। কোন বিশেষ দল বা মতের প্রতি পক্ষপাতিত্ব
২। তথ্যের যোগানদাতা বা সূত্রের উপর নির্ভরশীলতা
৩। কোন বিশেষ ঘটনা ঘটার উদ্দেশ্য না-জানা
৪। কোন বিশেষ অনুমানের উপর অগাধ বিশ্বাস
৫। কন্ডিশন বা অবস্থার প্রকৃত চেহারা না দেখা এবং এর সাথে সামাজিক-রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক রিয়েলিটির সম্ভাব্য যোগসূত্র না বুঝা।

৬। সমাজের উচ্চ অবস্থানে থাকা মানুষের প্রতি বাড়াবাড়ি রকমের ভক্তি ও অতিপ্রশংসা। যা প্রকৃত তথ্যকে বিনষ্ট করে, অতিরঞ্জন করে। (আবার কারো প্রতি অতিমাত্রায় নিন্দা, যা প্রকৃত বাস্তবতার বদলে লেখকের মানসিকও অবস্থানগত বাস্তবতাকে বাস্তবতা হিসেবে চাপিয়ে দিতে চায়।)
৭। সভ্যতা ও সংস্কৃতির বিচিত্র অবস্থা ও চরিত্র সম্পর্কে না জানা।

অতএব, ইতিহাস অধ্যয়নের মূলনীতি এসব কারণের সাথে সম্পর্কিত। ইতিহাসের জন্য উসূলী মানদ- প্রতিষ্ঠায় ইবনে খালদুনের পন্থা বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত। বস্তুত জনগোষ্ঠীর মানসিক আচার-আয়তন, আবহাওয়া, ভৌগোলিক গঠন, ভূ-প্রকৃতি, বাস্তব উপযোগ ইত্যাদিকে বাদ দিয়ে কোনো ঘটনার বিচার করা যায় না। আগে ঘটনা ও বর্ণনা সমূহ স্বীকৃতি ও প্রসিদ্ধির বিচারে ইতিহাসে গৃহীত হতো। ইবনে খালদুন এর মধ্যে বিকৃতির নজিরসমূহ দেখালেন। ইতিহাস বিচারের বিচারপতি বানালেন সম্ভাব্যতা, বৌদ্ধিক যাচাই প্রক্রিয়া ও বাস্তব কার্য-কারণকে। তিনি দেখালেন ইতিহাস কোনো রাজা-বাদশা বা বীরপুরুষদের কাহিনীর সমাহার নয়, ইতিহাস হচ্ছে জীবন ও কাল সম্পর্কিত মৌলিক দৃষ্টিভঙ্গিসমূহের রূপায়ন। কিংবদন্তী থেকে ইতিহাসকে সমালোচনামূলক মেথডলোজির অধিনে নিয়ে এলেন। এর সহায়তায় মুসলিম ইতিহাসচর্চায় প্রাচীন ও পরবর্তী ধারার সমন্বয়ে কতিপয় মৌলিক উসূল স্বীকৃত হলো। যেমন -
(ক) বর্ণনার সনদ যাচাই করা: সনদ বা বর্ণনার সূত্র ও পরম্পরা জরুরী। তবে ঐতিহাসিক সনদের ক্ষেত্রে মুহাদ্দিসদের মতো কঠোরতার শর্ত আরোপ করেন না ইতিহাসবিদগণ। ইতিহাস রচনায় কখনো মুরসাল, কখনো মুনকাতে বর্ণনা গ্রহণ করা হয়েছে। এক্ষেত্রে হাদীসের অনুরূপ শর্ত ও নীতিমালা প্রযোজ্য হয়নি।

(খ) বর্ণনার বক্তব্য যাচাই করা : সনদ শুদ্ধ হলেই বর্ণনাকে গ্রহণ করেনি মুসলিম ঐতিহাসিক জ্ঞানকলা। এর জন্য মতন বা ভাষ্যকেও যাচাই করা হয়েছে। এজন্য অবলম্বন করা হয়েছে সূক্ষ্ম মানদ-। আধুনিক ইতিহাসবিদ্যায় যাকে বলে আভ্যন্তরীণ যাচাই প্রক্রিয়া, সেটা মুসলিম জ্ঞানকা-ে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে হাদীসের প্রয়োজনে। ইমাম মুসলিম রহ. এর আততাময়িজ হাদীসের মতন বা বক্তব্য যাচাইয়ের উপায় ও প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা করেছে। ইবনে জাওজি রহ. এর আল মাউজুয়াত, ইবনুল কায়্যিম রহ এর আল মানারুল মুনীফ ফিস সাহিহি ওয়ায যায়ীফ গ্রন্থ দেখিয়েছে বর্ণনার ভাষ্য যাচাইয়ের প্রক্রিয়া। এসব কিতাবে এমন মূলনীতি রয়েছে, যার আলোকে সনদ বিচার না করে শুধু মতন দিয়েই বর্ণনার মান নির্ণয় করা যায়।

ঐতিহাসিক বর্ণনা যখন (১) অতিমাত্রার কোনো সংখ্যা উল্লেখ করে, (২) অস্বাভাবিক ফলাফলসমূহ উল্লেখ করতে থাকে (৩) স্বভাববিরুদ্ধ বিষয়কে প্রদর্শন করে, (৪) সস্তা শৈলী দিয়ে ধোয়াসা তৈরি করে (৫) নিচু স্তরের বক্তব্য ও কটু মানসিকতা প্রদর্শন করে কিংবা (৬) কুরআন-সুন্নাহ ও শরয়ী বিধির বিপরীতে অবস্থান গ্রহণ করে, তখন তার মতন বা ভাষ্যের দুর্বলতা প্রমাণিত হবে। মুসলিম ইতিহাসকলার বিচারপদ্ধতি এই নীতিমালা স্থির করেছে।

(গ) তথ্যসূত্রের স্তর বা ধাপ জানা : প্রত্যেক শাস্ত্রে উৎসসূত্রের গুরুত্ব বিপুল, ব্যাপক। যে কোনো বিষয়ে গাদা গাদা গ্রন্থের রেফারেন্স দিলেই চলবে না, গ্রন্থগুলোকে হতে হবে আকরগ্রন্থ। আবার একই গ্রন্থ সকল ক্ষেত্রে সমান গুরুত্বপূর্ণ হবে, তাও নয়। তেমনি ব্যক্তিত্ব বা রিসোর্স পার্সনও গুরুত্বপূর্ণ। সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মহলে বরেণ্য এবং কর্তৃপক্ষীয় ব্যক্তিত্ব ও ব্যক্তিবর্গ এবং তাদের স্তর ও অবস্থান জানা থাকতে হবে। সে ভিত্তিতে তাদের রেফারেন্সের প্রভাব ও ক্রিয়াশীলতা স্বীকৃত হবে। প্রত্যেক জাতি ও বিষয়ের ইতিহাসে রয়েছে বৈচিত্র্য ও ভিন্নতা। প্রত্যেকের উৎসসূত্রও আলাদা।

(ঘ) স্বভাবগত স্বভাবিকতা ও প্রাকৃতিক নিয়মাবলীর প্রতি লক্ষ্য রাখা : প্রাকৃতিক নিয়মাবলী আল্লাহ তায়ালার সুন্নাতে কাওনি বা মহাজাগতিক শরিয়া। এই নিয়মের ব্যত্যয় হয় না। ব্যক্তিতে, সমাজে, রাষ্ট্রে, জাতিতে যুগ যুগ ধরে এই সব নিয়মের প্রতিফলন হচ্ছে। প্রকৃতির সহজাত নিয়মের লঙ্গন না হওয়াটাই যেহেতু আল্লাহর নিয়ম, তার বিপরীত অস্বাভাবিকতা দিয়ে যেহেতু জগত পরিচালিত হয় না। ফলে এই সব অনিয়ম ও অস্বাভাবিকতা ইতিহাসের কোনো স্বাভাবিক বাস্তবতা নয়। ফিতরতের পরিপন্থী বিষয়, বক্তব্য ও ব্যাখ্যা দিয়ে ইতিহাসকে আচ্ছন্ন করা হলে সেটা হবে অনৈতিহাসিকতা। মুজিজা ও কারামাতের উপস্থিতি যেখানে থাকবে, সেখানে সুস্পষ্ট ও প্রমাণিত সূত্র থাকতে হবে। কেবল কেবল সম্ভাব্যতা দিয়ে কোনো স্বভাববিরুদ্ধ বিষয়কে আরোপ করে ঐতিহাসিকতাকে কল্প-কাহিনীর স্তরে নিয়ে যাবার প্রক্রিয়াকে কবুল করে না মুসলিম ইতিহাসকলা। বস্তুত মুসলিমদের ইতিহাস চর্চার বড় বৈশিষ্ট হলো বাস্তবতা ও স্বভাবসম্মত ঐতিহাসিক নীতিমালা। ইসলামপূর্ব যুগে ইতিহাসের উপর অলৌকিকতার প্রাধান্য ছিলো। তা ছিলো লোককথনের লিখিতরূপ। মুসলিম ইতিহাসকলা একটি ঘটনাকে সমস্ত প্রাকৃতিক বাস্তবতার সাথে মিলিতভাবে বিচার করে। এমনকি যে এলাকায় তা ঘটেছে, সেটা গ্রীষ্মপ্রধান না শীতপ্রধান, সেটাও ভুলে না। এতে মানুষ ও মেজাজ কীভাবে প্রভাবিত ও রূপায়িত হতে পারে, সেটাও খেয়ালে রাখে।

(ঙ) গ্রন্থকারের দৃষ্টিভঙ্গি, অবস্থান ও রচনাপদ্ধতি অবগত হওয়া: গ্রন্থকারের লেখার নীতি ও চিন্তা সম্পর্কে ধারণা থাকতে হবে। একজন শিয়া ও একজন সুন্নীর কাছে মুসলিম ইতিহাসের একই ঘটনা একইভাবে ধরা দেয় না। বিশেষত যখন তারা ঘটনার বিশ্লেষণ করেন। ইসলামের ইতিহাসে নিজস্ব রঙ চড়িয়ে ঘটনাসমূহের বর্ণনা, ব্যাখ্যা ও ফলাফলকে নিজেদের স্বার্থের অনুকূলে নেবার প্রবণতা ইবনে সাবার অনুসারীরা শুরু করে। একে নতুন মাত্রা দেয় খারিজিরা।

এর মাধ্যমে খারেজরিা রাজনৈতিক অবস্থান তৈরী করে, যার কেন্দ্রমূলে ছিলো নিজেদের আকিদার আলোকে কুরআন-সুন্নাহের নিজস্ব চিত্রায়ন এবং ঐতিহাসিক ঘটনাবলীর উপর নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গির রঙ লাগানো। একে নিজেদের আকিদা ও রাজনৈতিক অবস্থানের অনুকূলে কাজে লাগানো। শিয়াদের ইতিহাসচর্চা এই বিষয়টাকে স্থায়ী ভেদনীতির বিষয়ে পরিণত করে। নিপীড়ক শাসকগোষ্ঠী নিজেদের স্বার্থ ও অবস্থানের আলোকে কাউকে মহিমান্বিত, কাউকে তিরস্কৃত করতে চেয়েছে পছন্দের ইতিহাসবিদদের মধ্যস্ততায়। আবার সালাফি প্রবণতা নিজেদের ধারা ও ঘরানার বয়ান সমূহকে এতো তীব্রভাবে সত্য ও একমাত্র সত্য বলে ধরে নেয়, যা এক ধরণের আকিদার চরিত্র লাভ করে।

এ জাতীয় ইতিহাস চর্চা শেষ অবধি ঐতিহাসিকতা থেকে বিচ্যুত হয়, বিকৃতিকে চাপিয়ে দেয়। কিন্তু মুসলিম ইতিহাসকলা ভারসাম্য ও সত্যসন্ধানের যথার্থতাকেই প্রাধান্য দিয়েছে গ্রহণ-বর্জনের প্রশ্নে। এমনকি কেউ যদি শিয়াদের বিরুদ্ধে বাড়াবাড়ি করেন, তাকেও বলা হয়েছে গালি বা গোড়া শিয়াবিরোধী, কেউ যদি সুন্নীদের বিরুদ্ধে বাড়াবাড়ি করেন, তার ব্যাপারেও সত্য উচ্চারণ করেছেন প্রকৃত ঐতিহাসিক, যদিও তিনি শিয়া হয়ে থাকেন। এখানে অবশ্য ইবনে সাদ, তাবারি, ওয়াকেদী, যাহাবী, ইবনে কাসির, ইবনে কুতাইবা, দিনাওয়ারী, মাসউদী, আল বেরুনী, ইয়াকুবী, বালাজুরি, খতীবে বাগদাদী, ইবনুল আসির,ইবনে আসাকির, ইবনে খাল্লিকান, ইবনে খালদুন, মিনহাজ উস সিরাজ, আবুল কাসেম ফেরেশতা থেকে নিয়ে আধুনিককালের শিবলী নোমানী, সোলায়মান নদবী, ত্বহা হোসাইন, আমীর আলী, শাকির আরসালান, সুহাইল তাক্কুশ প্রমুখের ঐতিহাসিক পদ্ধতি ও সবলতা-দুর্বলতা আলোচনার আওতায় আসবে। যখন আপনি ইউরোপ, আমেরিকা, চীন কিংবা রাশিয়ার ইতিহাস নিয়ে বলবেন, সেখানেও রয়েছে কর্তৃপক্ষীয় ব্যক্তিত্ব, স্বতসিদ্ধ গ্রন্থ, প্রামাণ্যতার ঐতিহ্য এবং তর্কাতর্কি।

অন্য জাতির ইতিহাস চর্চায় তাদের স্বীকৃত উপাদানসমূহকে অবিকৃত ও যথাযথভাবে কাজে লাগানো মুসলিম ইতিহাসের শিক্ষা। ইবনে জরীর তাবারী, ইবনে হাযম, ইমাম বায়হাকি, আল বেরুনী প্রমুখের ঐতিহাসিক পদ্ধতিতে রয়েছে এর স্পষ্ট প্রতিফলন।
(চ) বিবরণের পূর্ণতা: ইতিহাসের ঘটনাগুলির আংশিক ও খ-িত বিবরণ সমস্যা তৈরী করে। উদ্বৃতিগুলো খ-িত হলে আরো জটিলতা তৈরী হয়। তা ঘটনাবলীর প্রতি এমন মনোভাব তৈরি করে, বাস্তবতার সাথে যার আছে ভিন্নতা। এ প্রক্রিয়া মানুষ ও সত্যের প্রতি অবিচার করে। এমন বিবরণের শিকার হলে যে কেউ আব্বাসীয় রাষ্ট্রকে হিংস্র, কঠোর ও স্বৈরাচারী হিসেবে দেখবে। আব্বাসী বিরোধীদের বক্তব্যকে সে অনুসরণ করবে। গোটা শাসনামলকে অন্যায়ভাবে বিচার করবে।

কেউ যদি কেবল সামরিক তথ্যের আলোকে উসমানী সালতানাতের দিকে তাকায়, সে ভুলভাবে বিচার করবে। তার মনে হবে উসমানীয়রা কেবল সামরিক দিকগুলিতে সফল হয়েছিল এবং অন্য সমস্ত দিকগুলিতে ব্যর্থ হয়েছিল। কেউ যদি জায়দী, ইমামী কিংবা বাতেনী-ইসমাইলী শিয়া রাষ্ট্রগুলোকে বিশ্বাসের দিকে না তাকিয়ে কেবল বাহ্যিক কৃতিত্বের দিক থেকে দেখে, তাহলে সে ভুল বিচার করবে। সে দেখবে সভ্যতা ও সংস্কৃতিতে তাদের কতো প্রভাব! অপরদিকে সে তাদের বিপজ্জনক দিকসমূহের প্রশ্নে অন্ধ থেকে যাবে। অতএব এখানে তাদের সাংস্কৃতিক প্রভাব যেমন আলোচ্য, তেমনি আকিদার বিপজ্জনক প্রয়োগ সম্পর্কেও আলোচনা হচ্ছে ঐতিহাসিকতার দাবি।

(ছ) পরিভাষার ব্যবহার : প্রতিটি জাতি, ধর্ম, সভ্যতা, সংস্কৃতি ও শাস্ত্রের স্বতন্ত্র পরিভাষা রয়েছে। এগুলোকে যথাস্থানে ব্যবহার করতে হবে। পরিভাষার অপপ্রয়োগ বা ভ্রষ্ট ব্যবহার চলবে না। প্রতিটি শব্দের সাথে যুক্ত আছে তার ঐতিহ্য। পরিভাষাসমূহ, আপন অর্থ, কৃতিত্ব এবং মাত্রা থেকে বিচ্ছিন্ন হবে না। ইসলামের পরিভাষা সমূহের সুষ্ঠু, পূর্ণাঙ্গ ও যথাস্থানে যথাযথ ব্যবহার ঐতিহাসিকতার দাবি।

(জ) সাধারণীকরণ পরিহার:
সাধারণীকরণের পদ্ধতি ঐতিহাসিকতার শত্রু। কেউ যদি দেখান, বিদ্রোহীরা প্রতিরোধ ছাড়া হযরত উসমান রা.কে হত্যা করতে পারলো। ফলে বুঝা যায়, মদিনার সমস্ত লোক উসমান বিন আফফানকে সমর্থন করতে ব্যর্থ হয়েছিলেন অথবা তাকে হত্যা করতে চেয়েছিলেন! এমন সিদ্ধান্ত যেমন অনৈতিহাসিক, তেমনি কোনো এক কালের দু‘চারজন কবির কবিতা দিয়ে সে সময়ের সমস্ত মানুষের নৈতিকতা বিচার করাও শিশুসূলভ। দু-একজন ব্যক্তি, দু-চারটি ঘটনা বা সমকালিন বাস্তবতার বিচ্ছিন্ন কোনো প্রবণতাকে প্রধান বিষয় বানিয়ে গোটা সময়কালকে এর মাধ্যমে ব্যাখ্যা করা এমন এক অন্যায়, যা মুসলিম ইতিহাসের সাথে সংঘটিত হয় দেদার। এরকম অনৈতিহাসিক ও জ্ঞানবিরোধী সাধারণীকরণের ক্ষতি থেকে সাবধান থাকবেন ইতিহাসলেখক, ইতিহাসের পাঠক।

(ঝ) ঘটনাবলীর ব্যাখ্যায় গ্রন্থকার নিজের মসলক, মানসিক ঝোক ও দৃষ্টিভঙ্গির প্রচারক না হওয়া। নিরপেক্ষ, সত্যনিষ্ঠ ও নির্মোহ অবস্থানে থাকা। ঐতিহাসিক ঘটনার ব্যাখ্যা -বিশ্লেষণের সাথে ব্যাখ্যাকারীর চিন্তা-চেতনা ও পারিপার্শিকতার সম্পর্ক প্রগাঢ়। একজন মনে করেন সড়ক দুর্ঘটনা মূলত ঘটে অনিয়ন্ত্রিত গতির কারণে। তিনি যখন সড়ক দুর্ঘটনার বিবরণ দিচ্ছেন বা বিশ্লেষণ করছেন, সেখানে তার এই মনে করার প্রভাব থেকে যাচ্ছে নানাভাবে। হয়তো তিনি একেই কারণ বানিয়ে দিচ্ছেন। অথচ, ঘটনাটি ঘটতে পারে অন্য কারণেও। কিছু সুফি ইতিহাস রচনা করতে গিয়ে মুসলিমদের বিভিন্ন পতনের পেছনে আখলাকি সঙ্কট কিংবা তাসাউফের অনুপস্থিতিকেই মূল কারণ বানিয়েছেন। কেউ কেউ দাওয়াহকে প্রধান গুরুত্বের বিষয় মনে করেন। তারা ঘটনাটির বিবরণ ও ব্যাখ্যা এমনভাবে করেছেন, যেন উত্থান ঘটেছে এর ফলে, পতন ঘটেছে এরই অনুপস্থিতিতে। কেউ কেউ জিহাদের প্রশ্নেও একই আচরণ করেছেন। আবার অনেকেই একটি ঘটনার সাথে আরো কিছু কারণকে যুক্ত করে শেষ অবধি নিজের মনের ভেতরে থাকা কারণকেই প্রাধান্য দিয়েছেন নানা উপায়ে। এর ফলে ইতিহাস প্রকৃত ঐতিহাসিকতা থেকে মতাদর্শের প্রচারের ময়দান হয়ে উঠে।

প্রকৃত ইতিহাসবিদ একটি বিশেষ লক্ষ্য ও বার্তা পৌছে দেবার জন্য ঐতিহাসিক ঘটনা বা সময়কালকে অধ্যয়ন করেন না। ঘটনাকে তিনি স্টেজ বানান না, যাকে নিজের পূর্বস্থির মতামতের পক্ষে রঞ্জিত করবেন এবং উপস্থাপন করবেন। এ জাতীয় বিবরণ ঘটনার পাঠ এবং এর সামগ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে পাঠকদের বিভ্রান্ত করে। এর ফলে ইতিহাসে যা যেভাবে ঘটেনি, তাকে সেভাবে চিহ্নিত ও চিত্রিত করার মজমা শুরু হয়।

এই ধারা একটি ঘটনা বা পরিস্থিতিতে নিজের মতাদর্শের পক্ষের ভূমিকায় যাকে দেখে বা দেখায়, তার উপর এক ধরনের ফেরেশতা-বৈশিষ্ট্য আরোপ করে। যেভাবেই হোক, মহিমান্বিত করে তাকে। নিজের মতের পক্ষের ভূমিকায় যাকে দেখে না, তার উপর এক ধরনের শয়তানের বৈশিষ্ট্য আরোপ করে। কিন্তু ইতিহাসের খুব কম ঘটনায় কেউ ছিলেন নিরেট শয়তান, কেউ ছিলেন নিরেট ফেরেশতা। এখানে রাজনীতি, সমাজ-সংস্কৃতি, মতাদর্শ, পরিবেশ-প্রতিবেশ, আঞ্চলিক বাস্তবতা, অর্থনৈতিক ও নিরাপত্তা পরিস্থিতি গুরুতরভাবে কাজ করেছে। এখনকার একটা ঘটনায়, ধরা যাক বিদ্যমান বাংলাদেশের রাজনীতিতে কেউই নিরঙ্কুশভাবে ভালো করছেন না। আবার যে শাসক শ্রেণী আলেমবৈরী হিসেবে বিপুলভাবে অভিযুক্ত, তাদের অনুকূলেও অনেক সাক্ষ্য রয়েছে, যাতে দেখা যায় সমকালীন শ্রেষ্ঠ আলেম তাদেরকে ইসলামের পক্ষে এমন কাজের কৃতিত্ব দিচ্ছেন,যা পৃথিবীতে কেউ করেনি!

পঞ্চাশ বছর পরে একে ভিত্তি করে তাদেরকে ইসলামের শ্রেষ্ঠ খাদিম বানানোর চেষ্টা যেমন ইতিহাস হবে না, তেমনি প্রশ্নহীনভাবে তাদেরকে ইসলামের দুশমন সাব্যস্ত করার সুযোগও থাকবে না। বরং তাদের অনুকূলে রাবিয়া বসরির স্বীকৃতি, কওমি জননীর উপাধি থাকার পরেও তাদের অন্যান্য কাজকে নির্মোহভাবে দেখতে হবে। কেন ও কীভাবে সাক্ষ্যগুলো এসেছে, তার উপরও তদন্ত করতে হবে। ইতিহাস তাই কোনো মনীষীর পক্ষ থেকে সত্যায়ন দেখলেই বা কারো বিরুদ্ধে কারো কোনো এক বক্তব্য দেখলেই চক্ষু বন্ধ করে রায় দিয়ে দেয় না।

লেখক: ইসলামী চিন্তাবিদ ও গবেষক।


বিভাগ : বিশেষ সংখ্যা


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

জাগ্রত ভয় মনের মাঝে
আর কেউ বেঁচে নেই
সময়
মার্চের পদাবলি
অপসৃয়মাণ রেলগাড়ি
আরও
X

আরও পড়ুন

৮ গোলের অবিশ্বাস্য লড়াই শেষে ফাইনালে রিয়াল মাদ্রিদ

৮ গোলের অবিশ্বাস্য লড়াই শেষে ফাইনালে রিয়াল মাদ্রিদ

ঈদ মিছিলে মূর্তি ঈদের মূল স্পিরিটের সঙ্গে সাংঘর্ষিক: হেফাজত

ঈদ মিছিলে মূর্তি ঈদের মূল স্পিরিটের সঙ্গে সাংঘর্ষিক: হেফাজত

ফার্নান্দেসের রিয়ালে যাওয়ার ব্যাপারে যা বললেন তার কোচ

ফার্নান্দেসের রিয়ালে যাওয়ার ব্যাপারে যা বললেন তার কোচ

রোনালদোকে ছাড়িয়ে যেতে পারেন এমবাপে: আনচেলত্তি

রোনালদোকে ছাড়িয়ে যেতে পারেন এমবাপে: আনচেলত্তি

উইন্ডিজের নেতৃত্ব ছাড়লেন ব্র্যাথওয়েট

উইন্ডিজের নেতৃত্ব ছাড়লেন ব্র্যাথওয়েট

ঈদের আনন্দ ৫ আগস্ট শুরু হয়েছে : শিবির সভাপতি

ঈদের আনন্দ ৫ আগস্ট শুরু হয়েছে : শিবির সভাপতি

আমাকে যুদ্ধাপরাধের মামলায় ফাঁসানোর ভয় দেখানো হয়েছিল: জামায়াত আমির

আমাকে যুদ্ধাপরাধের মামলায় ফাঁসানোর ভয় দেখানো হয়েছিল: জামায়াত আমির

বাকিটা জীবন বুড়িচং-ব্রাহ্মণপাড়াবাসীর পাশে থাকতে চাই : ব্যারিস্টার আব্দুল্লাহ আল মামুন

বাকিটা জীবন বুড়িচং-ব্রাহ্মণপাড়াবাসীর পাশে থাকতে চাই : ব্যারিস্টার আব্দুল্লাহ আল মামুন

পশ্চিমবঙ্গ-গুজরাটে আতশবাজি কারখানায় বিস্ফোরণ, নিহত ২১

পশ্চিমবঙ্গ-গুজরাটে আতশবাজি কারখানায় বিস্ফোরণ, নিহত ২১

আমাদের চেতনার প্রাণপুরুষ আল্লামা ফুলতলী (র.)

আমাদের চেতনার প্রাণপুরুষ আল্লামা ফুলতলী (র.)

লক্ষ্মীপুরে অস্ত্রধারীদের গুলিতে শিশু গুলিবিদ্ধ

লক্ষ্মীপুরে অস্ত্রধারীদের গুলিতে শিশু গুলিবিদ্ধ

রামুতে গুলিতে নিহতের ঘটনায় ২ টি দেশীয় তৈরি অস্ত্র উদ্ধার আটক ২

রামুতে গুলিতে নিহতের ঘটনায় ২ টি দেশীয় তৈরি অস্ত্র উদ্ধার আটক ২

সিলেটে ৬ তলা ভবন থেকে লাফ দিয়ে এক গৃহবধুর আত্মহত্যা

সিলেটে ৬ তলা ভবন থেকে লাফ দিয়ে এক গৃহবধুর আত্মহত্যা

ঈদ পরবর্তী শুভেচ্ছা বিনিময়ে মোরেলগঞ্জের পথে প্রান্তরে বিএনপি নেতা কাজী শিপন

ঈদ পরবর্তী শুভেচ্ছা বিনিময়ে মোরেলগঞ্জের পথে প্রান্তরে বিএনপি নেতা কাজী শিপন

ঈদে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত পর্যটকে মুখরিত

ঈদে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত পর্যটকে মুখরিত

কুমিল্লায় বিদ্যুতের খুঁটিতে ধাক্কা বাসের, নিহত ৩

কুমিল্লায় বিদ্যুতের খুঁটিতে ধাক্কা বাসের, নিহত ৩

দাউদকান্দিতে এক যুবকের লাশ উদ্ধার

দাউদকান্দিতে এক যুবকের লাশ উদ্ধার

ঈদের পাঞ্জাবি নিয়ে বিপাকে বাবর, ডিজাইনারকে ছাঁটাই করতে বললেন ভক্তরা

ঈদের পাঞ্জাবি নিয়ে বিপাকে বাবর, ডিজাইনারকে ছাঁটাই করতে বললেন ভক্তরা

লন্ডনে ঈদের জামাতে প্রকাশ্যে হাছান মাহমুদ

লন্ডনে ঈদের জামাতে প্রকাশ্যে হাছান মাহমুদ

সুপ্রিম কোর্টে মুখ পুড়ল যোগী আদিত্যনাথের

সুপ্রিম কোর্টে মুখ পুড়ল যোগী আদিত্যনাথের