ঢাকা   মঙ্গলবার, ২৮ জানুয়ারি ২০২৫ | ১৪ মাঘ ১৪৩১

রাজনীতির কবি

Daily Inqilab ইনকিলাব

১৭ মার্চ ২০২৩, ১২:৩৬ এএম | আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২৩, ১০:২৮ পিএম

বিশ্ব বিখ্যাত সাপ্তাহিক পত্রিকা ‘নিউজ উইক’ ১৯৭১ সালের ৫ এপ্রিল সংখ্যার কভার স্টোরি করে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে। সেই কভার স্টোরিতেই বঙ্গবন্ধুকে রাজনীতির কবি বা ‘পোয়েট অফ পলিটিকস’ হিসেবে আখ্যা দেয়া হয়। সেই লেখাটি বাংলায় নি¤েœ দেয়া হলো:
গত সপ্তাহে শেখ মুজিবুর রহমান যখন বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন, তার সমালোচকেরা বলতে শুরু করলেন, মুজিব তাঁর চরমপন্থি সমর্থকদের চাপে এই ঘোষণা দিয়েছেন, ¯্রােতে ডুবে যাওয়ার বদলে ¯্রােতের টানে চলার কৌশল নিয়েছেন। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে মুজিবের উত্থান হয়েছে যুদ্ধবিধ্বস্ত বাঙালি জাতির একজন নেতা হিসেবে। জাতীয়তাবাদের জন্য বাঙালিরা যৌক্তিকভাবে লড়াই করে যাচ্ছিলো দীর্ঘদিন ধরে। যদিও বা মনে হতে পারে মুজিব ¯্রােতের টানে চলছেন, কিন্তু আদতে তার উত্থান কাকতালীয় নয়। ৫১ বছর আগে ঢাকার নিকটবর্তী একটি গ্রামে একজন স্বচ্ছল জমির মালিকের ঘরে জন্ম নেওয়া মুজিব বিরাট কোনো শিক্ষাগত অর্জন ছাড়াই প্রাথমিক লেখাপড়া শেষ করেন। সময়ের সাথে সাথে তিনি একজন জনপ্রিয় ছাত্রনেতায় পরিণত হলেন। মানুষের সাথে কথা বলতে পছন্দ করতেন। চলনে বলনে খেলাধুলায় তিনি সময়ের সাথে হয়ে উঠলেন অসামান্য। কলকাতার ইসলামিয়া কলেজে যখন তিনি লিবারেল আর্টস ডিগ্রির জন্য পড়াশুনা করতে গেলেন, তখন সেখানকার মুসলিম লীগের কিছু জ্যেষ্ঠ নেতাকর্মীর নজরে আসেন। তাঁর রাজনৈতিক গুরু ছিলেন তখন এইচ এস সোহরাওয়ার্দী, যিনি ব্রিটিশরাজের অধীনে বাংলার প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। পরবর্তীতে তিনি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে এক বছর দায়িত্ব পালন করেন। সোহরাওয়ার্দী, যিনি ছিলেন মধ্যপন্থী, মুজিব তার পদাঙ্ক অনুসরণ না করে সরাসরি পদক্ষেপের দিকে ঝুঁকে পড়েন। চল্লিশ দশকের শেষ দিকে তাঁরা দুজনেই অনুধাবন করলেন যে, নব গঠিত পাকিস্তানের অন্যতম প্রধান বাংলা প্রদেশকে নানা সুবিধা থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। ১৯৪৯ সালে ‘বাংলার বাঙালিদের জন্য’ আওয়ামী লীগ নামে নতুন রাজনৈতিক দল প্রতিষ্ঠিত হয়। মুজিব রাজপথে নেমে গেলেন এবং তাকে দুইবার গ্রেফতার করে কারাগারে প্রেরণ করা হলো অবৈধ হরতাল এবং তার সাথে সংশ্লিষ্ট থাকার অপরাধে।
জেল হতে বের হয়েই মুজিব হয়ে গেলেন আওয়ামী লীগে সোহরাওয়ার্দীর ডান-হাত। কিন্তু অন্যান্য দলের সাথে জোট গঠন করে তার নেতৃত্ব দেবার সম্ভাবনাকে ধ্বংস করে দেয়া হলো। ১৯৫৬ সালে মুজিব সাফল্যের সাথে নব গঠিত পূর্বপাকিস্তানে আওয়ামী লীগকে প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হন। সাত মাস কৃতিত্বের সাথে তিনি শিল্প ও বাণিজ্যমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬৩ সালে সোহরাওয়ার্দীর মৃত্যুর পর মুজিব অনেকটা বিনা বাধায় তাঁর কিছু পুরানো আদর্শিক রীতিনীতিতে পরিবর্তন আনতে সক্ষম হন। তিনি আওয়ামী লীগকে পুনরুজ্জীবিত করেন। রাজনীতিতে যুক্ত করেন ‘স্বতস্ফূর্ততার’ শৈলী এবং দাবি করেন আভ্যন্তরীন নিজস্ব শাসন ব্যবস্থার। পূর্বপাকিস্তান স্বাধীন করার ষড়যন্ত্রের অভিযোগে ১৯৬৬ সালে আইয়ুব খান সরকার তাকে পুনরায় গ্রেফতার করে। পূর্বপাকিস্তানে তখন বিদ্রোহের আগুন জ্বলে উঠলো। ফলে আইয়ুব খান পদত্যাগ করে মুজিবকে মুক্তি দিতে বাধ্য হলেন। জনগণের চোখে মুজিব জাতির নায়ক হিসেবে আবির্ভূত হলেন।
একজন গড়পড়তা বাঙালির তুলনায় লম্বা (তাঁর উচ্চতা ৫ ফুট ১১ ইঞ্চি), চুলে রুপালী আভা, পুরু গোঁফ এবং কালো চোখের অধিকারী মুজিব খুব সহজেই লাখো মানুষের র‌্যালিকে আকর্ষণ করতে পারেন। তাঁর উদ্দীপ্ত ভাষণের মাধ্যমে জনগণকে আপ্লæত করার অসীম ক্ষমতা ছিল তাঁর। একজন ক‚টনৈতিকের মতো ‘তুমি তাঁর সাথে একাকী আলাদাভাবে কথা বললেও তাই হবে এবং তিনি এমনভাবে কথা বলেন, মনে হবে তিনি ৬০ হাজার মানুষের সামনে বক্তব্য দিচ্ছেন’। একাধারে উর্দু, বাংলা এবং ইংরেজিÑ পাকিস্তানের এই তিন ভাষায় তিনি সমান পারদর্শী। মুজিবের মাঝে চিন্তাবিদ হবার ভান নেই, তিনি প্রকৌশলী নন বরং তিনি রাজনীতির কবি । কিন্তু সচরাচর বাঙালিরা কৌশলী নয়, বরং কিছুটা চিন্তক এবং সেজন্যই হয়তো তাঁর রাজনৈতিক কৌশলই দরকার ছিল সকল অঞ্চলের ভিন্ন মতাদর্শ এবং নানা শ্রেণির মানুষকে একত্রীকরণের জন্য।

 


বিভাগ : বিশেষ সংখ্যা


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

জুলাই গণঅভ্যুত্থান ও জিয়ার বাংলাদেশ
শহীদ জিয়ার বিএনপির সাথে কি আজকের বিএনপির মিল আছে?
জিয়াউর রহমানের রাজনীতি
ফিরে দেখা রাজশাহী ২০২৪
বিচারবিভাগ ওলটপালটের বছর
আরও

আরও পড়ুন

নরসিংদীতে ঘরে ঢুকে কিশোরীকে কুপিয়ে হত্যা, গুরুতর আহত মা

নরসিংদীতে ঘরে ঢুকে কিশোরীকে কুপিয়ে হত্যা, গুরুতর আহত মা

কর্মবিরতি : সারা দেশে বন্ধ হলো ট্রেন চলাচল

কর্মবিরতি : সারা দেশে বন্ধ হলো ট্রেন চলাচল

ইউরো জেতানো দে লা ফুয়েন্তে ২০২৮ পর্যন্ত স্পেনের কোচ

ইউরো জেতানো দে লা ফুয়েন্তে ২০২৮ পর্যন্ত স্পেনের কোচ

সিলেটকে হারিয়ে প্লে অফের দৌড়ে এগিয়ে গেল রাজশাহী

সিলেটকে হারিয়ে প্লে অফের দৌড়ে এগিয়ে গেল রাজশাহী

টি-টোয়েন্টিতে ঘুরে দাঁড়াতে মরিয়া বাংলাদেশ

টি-টোয়েন্টিতে ঘুরে দাঁড়াতে মরিয়া বাংলাদেশ

রূপালী ব্যাংকের ‘রূপালী ই-ব্যাংক’ অ্যাপ উদ্বোধন

রূপালী ব্যাংকের ‘রূপালী ই-ব্যাংক’ অ্যাপ উদ্বোধন

বেলকুচিতে ব্রোকলি চাষে সাফল্য

বেলকুচিতে ব্রোকলি চাষে সাফল্য

সালথায় যুবককে ছুরিকাঘাতে হত্যা : তিনজন কারাগারে

সালথায় যুবককে ছুরিকাঘাতে হত্যা : তিনজন কারাগারে

তাহসিনের পাশে বিসিবি

তাহসিনের পাশে বিসিবি

তামাক কোম্পানির ফাঁদে পড়ে মাদকে আসক্ত হচ্ছে তরুণ সমাজ; প্রতিরোধে চাই সমন্বিত উদ্যোগ

তামাক কোম্পানির ফাঁদে পড়ে মাদকে আসক্ত হচ্ছে তরুণ সমাজ; প্রতিরোধে চাই সমন্বিত উদ্যোগ

জিরা চাষে স্বপ্ন দেখছেন গোদাগাড়ীর কৃষকরা

জিরা চাষে স্বপ্ন দেখছেন গোদাগাড়ীর কৃষকরা

ন্যায়বিচারের স্বার্থে হাসিনাকে ফেরত পাঠাবে ভারত

ন্যায়বিচারের স্বার্থে হাসিনাকে ফেরত পাঠাবে ভারত

দেশকে স্বৈরাচার মুক্ত করেছি, নতুনভাবে স্বাধীন হয়েছে বাংলাদেশ: কাহের শামীম

দেশকে স্বৈরাচার মুক্ত করেছি, নতুনভাবে স্বাধীন হয়েছে বাংলাদেশ: কাহের শামীম

হাতিয়ায় বন্দোবস্তকৃত ভূমি বুঝিয়ে দেওয়ার দাবি

হাতিয়ায় বন্দোবস্তকৃত ভূমি বুঝিয়ে দেওয়ার দাবি

আইসিএমএবি’র প্রেসিডেন্ট মাহতাব উদ্দিন, সচিব হাসনাইন তৌফিক

আইসিএমএবি’র প্রেসিডেন্ট মাহতাব উদ্দিন, সচিব হাসনাইন তৌফিক

শৈশবের ক্লাবে ফিরছেন নেইমার

শৈশবের ক্লাবে ফিরছেন নেইমার

অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পড়ে ব্যবসায়ীর মৃত্যু

অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পড়ে ব্যবসায়ীর মৃত্যু

পাকুন্দিয়ায় ব্যবস্থাপত্র ছাড়াই চলছে অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রি

পাকুন্দিয়ায় ব্যবস্থাপত্র ছাড়াই চলছে অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রি

পঞ্চগড়ে চার বিচারকের অপসারণ দাবিতে মহাসড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ

পঞ্চগড়ে চার বিচারকের অপসারণ দাবিতে মহাসড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ

ময়মনসিংহে আস্থা লাইফের ব্যবসায়িক সভা

ময়মনসিংহে আস্থা লাইফের ব্যবসায়িক সভা