রাজনীতির কবি

Daily Inqilab ইনকিলাব

১৭ মার্চ ২০২৩, ১২:৩৬ এএম | আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২৩, ১০:২৮ পিএম

বিশ্ব বিখ্যাত সাপ্তাহিক পত্রিকা ‘নিউজ উইক’ ১৯৭১ সালের ৫ এপ্রিল সংখ্যার কভার স্টোরি করে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে। সেই কভার স্টোরিতেই বঙ্গবন্ধুকে রাজনীতির কবি বা ‘পোয়েট অফ পলিটিকস’ হিসেবে আখ্যা দেয়া হয়। সেই লেখাটি বাংলায় নি¤েœ দেয়া হলো:
গত সপ্তাহে শেখ মুজিবুর রহমান যখন বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন, তার সমালোচকেরা বলতে শুরু করলেন, মুজিব তাঁর চরমপন্থি সমর্থকদের চাপে এই ঘোষণা দিয়েছেন, ¯্রােতে ডুবে যাওয়ার বদলে ¯্রােতের টানে চলার কৌশল নিয়েছেন। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে মুজিবের উত্থান হয়েছে যুদ্ধবিধ্বস্ত বাঙালি জাতির একজন নেতা হিসেবে। জাতীয়তাবাদের জন্য বাঙালিরা যৌক্তিকভাবে লড়াই করে যাচ্ছিলো দীর্ঘদিন ধরে। যদিও বা মনে হতে পারে মুজিব ¯্রােতের টানে চলছেন, কিন্তু আদতে তার উত্থান কাকতালীয় নয়। ৫১ বছর আগে ঢাকার নিকটবর্তী একটি গ্রামে একজন স্বচ্ছল জমির মালিকের ঘরে জন্ম নেওয়া মুজিব বিরাট কোনো শিক্ষাগত অর্জন ছাড়াই প্রাথমিক লেখাপড়া শেষ করেন। সময়ের সাথে সাথে তিনি একজন জনপ্রিয় ছাত্রনেতায় পরিণত হলেন। মানুষের সাথে কথা বলতে পছন্দ করতেন। চলনে বলনে খেলাধুলায় তিনি সময়ের সাথে হয়ে উঠলেন অসামান্য। কলকাতার ইসলামিয়া কলেজে যখন তিনি লিবারেল আর্টস ডিগ্রির জন্য পড়াশুনা করতে গেলেন, তখন সেখানকার মুসলিম লীগের কিছু জ্যেষ্ঠ নেতাকর্মীর নজরে আসেন। তাঁর রাজনৈতিক গুরু ছিলেন তখন এইচ এস সোহরাওয়ার্দী, যিনি ব্রিটিশরাজের অধীনে বাংলার প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। পরবর্তীতে তিনি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে এক বছর দায়িত্ব পালন করেন। সোহরাওয়ার্দী, যিনি ছিলেন মধ্যপন্থী, মুজিব তার পদাঙ্ক অনুসরণ না করে সরাসরি পদক্ষেপের দিকে ঝুঁকে পড়েন। চল্লিশ দশকের শেষ দিকে তাঁরা দুজনেই অনুধাবন করলেন যে, নব গঠিত পাকিস্তানের অন্যতম প্রধান বাংলা প্রদেশকে নানা সুবিধা থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। ১৯৪৯ সালে ‘বাংলার বাঙালিদের জন্য’ আওয়ামী লীগ নামে নতুন রাজনৈতিক দল প্রতিষ্ঠিত হয়। মুজিব রাজপথে নেমে গেলেন এবং তাকে দুইবার গ্রেফতার করে কারাগারে প্রেরণ করা হলো অবৈধ হরতাল এবং তার সাথে সংশ্লিষ্ট থাকার অপরাধে।
জেল হতে বের হয়েই মুজিব হয়ে গেলেন আওয়ামী লীগে সোহরাওয়ার্দীর ডান-হাত। কিন্তু অন্যান্য দলের সাথে জোট গঠন করে তার নেতৃত্ব দেবার সম্ভাবনাকে ধ্বংস করে দেয়া হলো। ১৯৫৬ সালে মুজিব সাফল্যের সাথে নব গঠিত পূর্বপাকিস্তানে আওয়ামী লীগকে প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হন। সাত মাস কৃতিত্বের সাথে তিনি শিল্প ও বাণিজ্যমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬৩ সালে সোহরাওয়ার্দীর মৃত্যুর পর মুজিব অনেকটা বিনা বাধায় তাঁর কিছু পুরানো আদর্শিক রীতিনীতিতে পরিবর্তন আনতে সক্ষম হন। তিনি আওয়ামী লীগকে পুনরুজ্জীবিত করেন। রাজনীতিতে যুক্ত করেন ‘স্বতস্ফূর্ততার’ শৈলী এবং দাবি করেন আভ্যন্তরীন নিজস্ব শাসন ব্যবস্থার। পূর্বপাকিস্তান স্বাধীন করার ষড়যন্ত্রের অভিযোগে ১৯৬৬ সালে আইয়ুব খান সরকার তাকে পুনরায় গ্রেফতার করে। পূর্বপাকিস্তানে তখন বিদ্রোহের আগুন জ্বলে উঠলো। ফলে আইয়ুব খান পদত্যাগ করে মুজিবকে মুক্তি দিতে বাধ্য হলেন। জনগণের চোখে মুজিব জাতির নায়ক হিসেবে আবির্ভূত হলেন।
একজন গড়পড়তা বাঙালির তুলনায় লম্বা (তাঁর উচ্চতা ৫ ফুট ১১ ইঞ্চি), চুলে রুপালী আভা, পুরু গোঁফ এবং কালো চোখের অধিকারী মুজিব খুব সহজেই লাখো মানুষের র‌্যালিকে আকর্ষণ করতে পারেন। তাঁর উদ্দীপ্ত ভাষণের মাধ্যমে জনগণকে আপ্লæত করার অসীম ক্ষমতা ছিল তাঁর। একজন ক‚টনৈতিকের মতো ‘তুমি তাঁর সাথে একাকী আলাদাভাবে কথা বললেও তাই হবে এবং তিনি এমনভাবে কথা বলেন, মনে হবে তিনি ৬০ হাজার মানুষের সামনে বক্তব্য দিচ্ছেন’। একাধারে উর্দু, বাংলা এবং ইংরেজিÑ পাকিস্তানের এই তিন ভাষায় তিনি সমান পারদর্শী। মুজিবের মাঝে চিন্তাবিদ হবার ভান নেই, তিনি প্রকৌশলী নন বরং তিনি রাজনীতির কবি । কিন্তু সচরাচর বাঙালিরা কৌশলী নয়, বরং কিছুটা চিন্তক এবং সেজন্যই হয়তো তাঁর রাজনৈতিক কৌশলই দরকার ছিল সকল অঞ্চলের ভিন্ন মতাদর্শ এবং নানা শ্রেণির মানুষকে একত্রীকরণের জন্য।

 


বিভাগ : বিশেষ সংখ্যা


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

জাগ্রত ভয় মনের মাঝে
আর কেউ বেঁচে নেই
সময়
মার্চের পদাবলি
অপসৃয়মাণ রেলগাড়ি
আরও
X

আরও পড়ুন

সবুজ ভবিষ্যৎ গড়তে টেকসই ও অন্তর্ভুক্তিমূলক উদ্যোক্তা তৈরিতে যুবসমাজকে এগিয়ে আসার আহ্বান সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের

সবুজ ভবিষ্যৎ গড়তে টেকসই ও অন্তর্ভুক্তিমূলক উদ্যোক্তা তৈরিতে যুবসমাজকে এগিয়ে আসার আহ্বান সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের

বায়ুদূষণে পঞ্চমে ঢাকা, শীর্ষে চীনের চারটি শহর

বায়ুদূষণে পঞ্চমে ঢাকা, শীর্ষে চীনের চারটি শহর

চৈত্র সংক্রান্তিতে আজ কনসার্ট, বর্ষবরণে কাল ফিলিস্তিনের প্রতি সংহতি

চৈত্র সংক্রান্তিতে আজ কনসার্ট, বর্ষবরণে কাল ফিলিস্তিনের প্রতি সংহতি

বিদেশ যাওয়া নিয়ে উপহাস করায় প্রতিপক্ষের হামলায় নিহত ১

বিদেশ যাওয়া নিয়ে উপহাস করায় প্রতিপক্ষের হামলায় নিহত ১

এবারও হচ্ছে না সীমান্তে দুই বাংলার মিলনমেলা

এবারও হচ্ছে না সীমান্তে দুই বাংলার মিলনমেলা

ঢাবির ‘গ’ ইউনিটের এমসিকিউ পরীক্ষা নিয়ে রিটের শুনানি আজ

ঢাবির ‘গ’ ইউনিটের এমসিকিউ পরীক্ষা নিয়ে রিটের শুনানি আজ

গুপ্তচরবৃত্তিতে চীনের সাবেক সামরিক কর্মীর যাবজ্জীবন কারাদণ্ড

গুপ্তচরবৃত্তিতে চীনের সাবেক সামরিক কর্মীর যাবজ্জীবন কারাদণ্ড

এবার বরিশালে প্রায় ৩ লাখটন গোলআলু উৎপাদন হলেও দরপতনে হতাশ কৃষিযোদ্ধাগন

এবার বরিশালে প্রায় ৩ লাখটন গোলআলু উৎপাদন হলেও দরপতনে হতাশ কৃষিযোদ্ধাগন

গাজার আবাসিক এলাকায় ২৩ দিনে ২২৪ বার ইসরায়েলি হামলা

গাজার আবাসিক এলাকায় ২৩ দিনে ২২৪ বার ইসরায়েলি হামলা

টিউলিপের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হতে পারে আজ

টিউলিপের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হতে পারে আজ

নামাজ পড়েন শাহরুখ-সালমান! কি বললেন ফারাহ?

নামাজ পড়েন শাহরুখ-সালমান! কি বললেন ফারাহ?

মহাকাশ প্রযুক্তিতে বাংলাদেশ-তুরস্ক যৌথ সহযোগিতায় নতুন সম্ভাবনা

মহাকাশ প্রযুক্তিতে বাংলাদেশ-তুরস্ক যৌথ সহযোগিতায় নতুন সম্ভাবনা

বাংলাদেশে নেতানিয়াহুকে জুতাপেটার খবর ইসরায়েলি গণমাধ্যমে প্রকাশ

বাংলাদেশে নেতানিয়াহুকে জুতাপেটার খবর ইসরায়েলি গণমাধ্যমে প্রকাশ

পারমাণবিক চুক্তি: ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে ‘ইতিবাচক’ আলোচনা

পারমাণবিক চুক্তি: ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে ‘ইতিবাচক’ আলোচনা

চালু হচ্ছে দেশের পরিত্যক্ত ৭ বিমানবন্দর

চালু হচ্ছে দেশের পরিত্যক্ত ৭ বিমানবন্দর

লেবাননে হিজবুল্লাহর অধিকাংশ সামরিকঘাঁটি সেনাবাহিনীর কাছে হস্তান্তর

লেবাননে হিজবুল্লাহর অধিকাংশ সামরিকঘাঁটি সেনাবাহিনীর কাছে হস্তান্তর

ট্রাম্পের শুল্কে ছাড়, বাঁচল মোবাইল ও কম্পিউটার

ট্রাম্পের শুল্কে ছাড়, বাঁচল মোবাইল ও কম্পিউটার

ওয়াকফ আইন পশ্চিমবঙ্গে বলবৎ হবে না: মমতা

ওয়াকফ আইন পশ্চিমবঙ্গে বলবৎ হবে না: মমতা

কোন দলের কে কে ছিলেন ‘মার্চ ফর গাজা’ কর্মসূচিতে

কোন দলের কে কে ছিলেন ‘মার্চ ফর গাজা’ কর্মসূচিতে

কিয়েভে রুশ ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ধ্বংস ভারতীয় ওষুধ কোম্পানির গুদাম

কিয়েভে রুশ ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ধ্বংস ভারতীয় ওষুধ কোম্পানির গুদাম